ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুর্বল হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, চলে যাচ্ছে ডলার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
  • / ৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো নয়, তবে আন্তর্জাতিক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার কারণে ভেতর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ক্ষত তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে দুর্বল হতে শুরু করেছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার মতো ভয়ের কারণ নেই। অবশ্য এটা তো ঠিক, পরিস্থিতি আগের চেয়ে দুর্বল হতে শুরু করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতিও আগের মতো শক্ত নয়। দেশের চলতি হিসাবে বিশাল ঘাটতি, যা শ্রীলঙ্কারও আছে। এবার যে ঘাটতি হতে যাচ্ছে, তা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। সুতরাং উদ্বেগের কিছু জায়গা তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় ডলারের বিনিময় হারে সমন্বয় দরকার ছিল, কিন্তু হয়নি। সর্বশেষ হিসাবে আমদানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ হারে। এই হারে যদি আমদানি বাড়ে, তবে চলতি অর্থবছর শেষে তা ১০ হাজার কোটি ডলার হবে। এটা ভয়ানক উচ্চমাত্রার। আমাদের ৬ হাজার কোটি ডলারের বেশি আমদানি ব্যয় কখনও হয়নি। এই প্রবণতা যদি আর এক বছর চলে, তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও শেষ হয়ে যাবে।
কমছে রিজার্ভ
বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪ হাজার ৪২৫ কোটি (৪৪ বিলিয়ন) ডলারে নেমে এসেছে। ছয় মাস আগেও প্রায় ৪৯ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড উচ্চতায় ছিল রিজার্ভ। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন (২১৬ কোটি) ডলারের রেকর্ড আমদানি বিল পরিশোধের পর গত ৬ মার্চ রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা ছিল গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় একমাসে আবার বেড়ে ৩১ মার্চ তারিখে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে রিজার্ভ। এখনকার আমদানির খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময় আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। অথচ ছয় মাস আগেও ১০ মাসের আমদানি খরচ মেটানোর রিজার্ভ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে।
চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে
আগের অর্থবছরে যেখানে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে, এবার তা ঋণাত্মক। আগের অর্থবছরেও প্রথম সাত মাসে প্রবাসী আয়ে ছিল বড় প্রবৃদ্ধি, এবার সেটিও উল্টোদিকে। যার মানে হলো, দেশে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে তারচেয়ে ব্যয় হচ্ছে ঢের বেশি। এতে করে পরে রিজার্ভের অর্থ অবকাঠামো প্রকল্পে খরচ করার সুযোগ কমে আসবে। বিশেষ করে বড় প্রকল্পে অর্থ ব্যয়, দায় পরিশোধ ও সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক নিয়ে এখনই সতর্ক থাকতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
১২৫ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি
বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষক ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণ ১২৫ শতাংশ বেড়েছে। তার ওপর রেমিটেন্স প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবের ভারসাম্য নেতিবাচক এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের। যা আগের বছর ছিল ২ হাজার ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৮৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি বছরে যা ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সেই হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি ১২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ডলার সংকট
বেশ কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে মার্কিন ডলারের দাম অস্থিতিশীল। আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে টাকার বিপরীতে শক্তিশালী অবস্থায় এ মুদ্রার। সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিপরীতে স্থানীয় টাকার মান কমিয়েছে। এদিন প্রতি ডলার ৮৬ থেকে বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে রফতানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হলেও আমদানিকারকদের খরচ বাড়ছে। এর আগে জানুয়ারির শুরুতে ডলারের মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকাররা বলছেন, ডলার নিয়ে দেশের মুদ্রাবাজার এখন অস্থির। সরবরাহ নেই, অথচ চাহিদা তুঙ্গে। এর প্রভাব পড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোতেও টাকার সংকট তৈরি হচ্ছে।
আমদানি খরচ
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ঋণপত্র খোলার হার (এলসি) বেড়েছে ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ঋণপত্র নিষ্পত্তি বেড়েছে ৫২ দশমিক ১ শতাংশ। এতেও ডলারের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতি
মহামারির ধাক্কা সামলে যখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখনই আমদানির চাপে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঘাটতিতে পড়েছে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুন-জানুয়ারি) এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ কোটি ২০ লাখ ডলারে। দেশের ইতিহাসে লেনদেন ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এত বড় ঘাটতি আর হয়নি। আগের অর্থবছরে এই সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
ঝুঁকি বাড়ছে ব্যাংকের
দেশে ডলার সংকট বাড়ায় ঋণপত্রের দায় পরিশোধে ব্যাংক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার করপোরেট ডিলের আওতায় ৮৬ টাকা ৫ পয়সার বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকের ধারের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে, এতে ব্যাংকের লোকসান ও ঝুঁকি বাড়ছে। তাই গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অনাপত্তিপত্র নেওয়ার নিয়ম চালু করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটি ৫০ হাজার ডলারের বেশি ঋণপত্রের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বিনিময় হারে পরিশোধের জন্য গ্রাহক থেকে অনাপত্তিপত্র বা অঙ্গীকারনামা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করেছে। শাখায় পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে প্রায় ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এতে ঋণপত্রের দায় পরিশোধে ব্যাংক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পাচার হচ্ছে টাকা
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচারের চিত্র তুলে ধরে সংস্থাটি বলেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সাল বাদে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে চার হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৯০ টাকা হিসাবে)। এই পরিমাণ অর্থ দেশের চলতি বছরের (২০২১-২০২২) জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। অর্থপাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। জিএফআই বলেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ২০১৫ সালে বিদেশে পণ্য কেনাবেচার যে খতিয়ান দিয়েছেন, তার ১৮ শতাংশই ভুয়া। আমদানিতে বেশি আর রফতানিতে কম দেখিয়ে ওই বছর গায়েব করা হয়েছে এক হাজার ১৮৭ কোটি ডলার যা, এক লাখ কোটি টাকার বেশি।
১০ বছরে বৈদেশিক ঋণ আড়াই গুণ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ঋণের হার এখন জিডিপির ৩৮ শতাংশ। গত বছরের জুন পর্যন্ত হিসাবে বাংলাদেশের মোট দেনার পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিদেশ থেকে নেওয়া। অর্থাৎ প্রায় ৩৭ শতাংশ এসেছে বিদেশি উৎস থেকে । বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের হার জিডিপির ১৩ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৯২ দশমিক ১১ মার্কিন ডলার গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬৯ দশমিক ৩১ মিলিয়ন বা ১৬ কোটি ৯৩ লাখ। এই হিসাবে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৯২ দশমিক ১১ মার্কিন ডলার। বাজেটের ঘাটতি পূরণে বরাবরই বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় বাংলাদেশকে। তুলনামূলক রাজস্ব আয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্জন কম হওয়ায় এবং দেশের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্যই মূলত বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। একইভাবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন বেশকিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে সরকার। তবে, বিগত দিনের তুলনায় এই বৈদেশিক ঋণ নেয়ার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের স্থিতি। ফলে দিন যত যাচ্ছে, ততই বিদেশি ঋণের বোঝা আরও ভারী হচ্ছে।
বৈদেশিক ঋণের স্থিতি
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের ঋণ বৃদ্ধির হার তুলনামূলক অনেক বেশি। বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে বিগত ৩৯ বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে, গত ১০ বছরেই তা বেড়ে আড়াই গুণে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট স্ট্যাটিসটিক্স-২০২২’ শীর্ষক এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৬ সাল শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। একইভাবে বেড়ে ২০১৭ সালে ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৮১ কোটি ৯০ লাখে। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ২১৩ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৭০৯ কোটি ৪০ লাখ এবং সর্বশেষ ২০২০ সাল শেষে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। নতুন ঋণের সঙ্গে আগের ঋণের সুদ যুক্ত হওয়ায় বছর বছর স্থিতি বেড়েই চলছে। এদিকে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসেই বিদেশি ঋণ সহায়তা নেওয়া হয়েছে ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বৈদেশিক সহায়তা বিষয়ক মাসিক রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত) বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এরমধ্যে অনুদান রয়েছে ৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার, ঋণ ৩০১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছর একই সময়ে অনুদানসহ ঋণের পরিমাণ ছিল ২০৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।
বেসরকারি খাতেও বিদেশি ঋণ
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও বিদেশি ঋণে ঝুঁকছেন। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩০৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সাল শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ ছিল এক হাজার ৪৭৬ কোটি ডলার বা এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। এতে করে এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ বেড়েছে ৮৩২ কোটি ডলার (প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা)। এর আগে এক বছরে এত বেশি হারে বাড়েনি। জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালায় নানা শিথিলতার কারণে এখন বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া সহজ হয়েছে। আবার দেশের উদ্যোক্তাদের বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা ও দরকষাকষির সুযোগও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ এক হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার। বাকি ৭৬১ কোটি ডলার দীর্ঘমেয়াদি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দুর্বল হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, চলে যাচ্ছে ডলার

আপলোড টাইম : ১০:১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন:
পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো নয়, তবে আন্তর্জাতিক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার কারণে ভেতর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ক্ষত তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে দুর্বল হতে শুরু করেছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার মতো ভয়ের কারণ নেই। অবশ্য এটা তো ঠিক, পরিস্থিতি আগের চেয়ে দুর্বল হতে শুরু করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতিও আগের মতো শক্ত নয়। দেশের চলতি হিসাবে বিশাল ঘাটতি, যা শ্রীলঙ্কারও আছে। এবার যে ঘাটতি হতে যাচ্ছে, তা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। সুতরাং উদ্বেগের কিছু জায়গা তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় ডলারের বিনিময় হারে সমন্বয় দরকার ছিল, কিন্তু হয়নি। সর্বশেষ হিসাবে আমদানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ হারে। এই হারে যদি আমদানি বাড়ে, তবে চলতি অর্থবছর শেষে তা ১০ হাজার কোটি ডলার হবে। এটা ভয়ানক উচ্চমাত্রার। আমাদের ৬ হাজার কোটি ডলারের বেশি আমদানি ব্যয় কখনও হয়নি। এই প্রবণতা যদি আর এক বছর চলে, তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও শেষ হয়ে যাবে।
কমছে রিজার্ভ
বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪ হাজার ৪২৫ কোটি (৪৪ বিলিয়ন) ডলারে নেমে এসেছে। ছয় মাস আগেও প্রায় ৪৯ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড উচ্চতায় ছিল রিজার্ভ। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন (২১৬ কোটি) ডলারের রেকর্ড আমদানি বিল পরিশোধের পর গত ৬ মার্চ রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা ছিল গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় একমাসে আবার বেড়ে ৩১ মার্চ তারিখে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে রিজার্ভ। এখনকার আমদানির খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময় আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। অথচ ছয় মাস আগেও ১০ মাসের আমদানি খরচ মেটানোর রিজার্ভ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে।
চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে
আগের অর্থবছরে যেখানে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে, এবার তা ঋণাত্মক। আগের অর্থবছরেও প্রথম সাত মাসে প্রবাসী আয়ে ছিল বড় প্রবৃদ্ধি, এবার সেটিও উল্টোদিকে। যার মানে হলো, দেশে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে তারচেয়ে ব্যয় হচ্ছে ঢের বেশি। এতে করে পরে রিজার্ভের অর্থ অবকাঠামো প্রকল্পে খরচ করার সুযোগ কমে আসবে। বিশেষ করে বড় প্রকল্পে অর্থ ব্যয়, দায় পরিশোধ ও সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক নিয়ে এখনই সতর্ক থাকতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
১২৫ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি
বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষক ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণ ১২৫ শতাংশ বেড়েছে। তার ওপর রেমিটেন্স প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবের ভারসাম্য নেতিবাচক এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের। যা আগের বছর ছিল ২ হাজার ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৮৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি বছরে যা ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সেই হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি ১২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ডলার সংকট
বেশ কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে মার্কিন ডলারের দাম অস্থিতিশীল। আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে টাকার বিপরীতে শক্তিশালী অবস্থায় এ মুদ্রার। সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিপরীতে স্থানীয় টাকার মান কমিয়েছে। এদিন প্রতি ডলার ৮৬ থেকে বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে রফতানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হলেও আমদানিকারকদের খরচ বাড়ছে। এর আগে জানুয়ারির শুরুতে ডলারের মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকাররা বলছেন, ডলার নিয়ে দেশের মুদ্রাবাজার এখন অস্থির। সরবরাহ নেই, অথচ চাহিদা তুঙ্গে। এর প্রভাব পড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোতেও টাকার সংকট তৈরি হচ্ছে।
আমদানি খরচ
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ঋণপত্র খোলার হার (এলসি) বেড়েছে ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ঋণপত্র নিষ্পত্তি বেড়েছে ৫২ দশমিক ১ শতাংশ। এতেও ডলারের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতি
মহামারির ধাক্কা সামলে যখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখনই আমদানির চাপে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঘাটতিতে পড়েছে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুন-জানুয়ারি) এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ কোটি ২০ লাখ ডলারে। দেশের ইতিহাসে লেনদেন ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এত বড় ঘাটতি আর হয়নি। আগের অর্থবছরে এই সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
ঝুঁকি বাড়ছে ব্যাংকের
দেশে ডলার সংকট বাড়ায় ঋণপত্রের দায় পরিশোধে ব্যাংক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার করপোরেট ডিলের আওতায় ৮৬ টাকা ৫ পয়সার বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকের ধারের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে, এতে ব্যাংকের লোকসান ও ঝুঁকি বাড়ছে। তাই গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অনাপত্তিপত্র নেওয়ার নিয়ম চালু করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটি ৫০ হাজার ডলারের বেশি ঋণপত্রের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বিনিময় হারে পরিশোধের জন্য গ্রাহক থেকে অনাপত্তিপত্র বা অঙ্গীকারনামা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করেছে। শাখায় পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে প্রায় ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এতে ঋণপত্রের দায় পরিশোধে ব্যাংক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পাচার হচ্ছে টাকা
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচারের চিত্র তুলে ধরে সংস্থাটি বলেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সাল বাদে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে চার হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৯০ টাকা হিসাবে)। এই পরিমাণ অর্থ দেশের চলতি বছরের (২০২১-২০২২) জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। অর্থপাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। জিএফআই বলেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ২০১৫ সালে বিদেশে পণ্য কেনাবেচার যে খতিয়ান দিয়েছেন, তার ১৮ শতাংশই ভুয়া। আমদানিতে বেশি আর রফতানিতে কম দেখিয়ে ওই বছর গায়েব করা হয়েছে এক হাজার ১৮৭ কোটি ডলার যা, এক লাখ কোটি টাকার বেশি।
১০ বছরে বৈদেশিক ঋণ আড়াই গুণ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ঋণের হার এখন জিডিপির ৩৮ শতাংশ। গত বছরের জুন পর্যন্ত হিসাবে বাংলাদেশের মোট দেনার পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিদেশ থেকে নেওয়া। অর্থাৎ প্রায় ৩৭ শতাংশ এসেছে বিদেশি উৎস থেকে । বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের হার জিডিপির ১৩ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৯২ দশমিক ১১ মার্কিন ডলার গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬৯ দশমিক ৩১ মিলিয়ন বা ১৬ কোটি ৯৩ লাখ। এই হিসাবে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৯২ দশমিক ১১ মার্কিন ডলার। বাজেটের ঘাটতি পূরণে বরাবরই বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় বাংলাদেশকে। তুলনামূলক রাজস্ব আয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্জন কম হওয়ায় এবং দেশের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্যই মূলত বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। একইভাবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন বেশকিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে সরকার। তবে, বিগত দিনের তুলনায় এই বৈদেশিক ঋণ নেয়ার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের স্থিতি। ফলে দিন যত যাচ্ছে, ততই বিদেশি ঋণের বোঝা আরও ভারী হচ্ছে।
বৈদেশিক ঋণের স্থিতি
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের ঋণ বৃদ্ধির হার তুলনামূলক অনেক বেশি। বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে বিগত ৩৯ বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে, গত ১০ বছরেই তা বেড়ে আড়াই গুণে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট স্ট্যাটিসটিক্স-২০২২’ শীর্ষক এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৬ সাল শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। একইভাবে বেড়ে ২০১৭ সালে ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৮১ কোটি ৯০ লাখে। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ২১৩ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৭০৯ কোটি ৪০ লাখ এবং সর্বশেষ ২০২০ সাল শেষে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। নতুন ঋণের সঙ্গে আগের ঋণের সুদ যুক্ত হওয়ায় বছর বছর স্থিতি বেড়েই চলছে। এদিকে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসেই বিদেশি ঋণ সহায়তা নেওয়া হয়েছে ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বৈদেশিক সহায়তা বিষয়ক মাসিক রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত) বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এরমধ্যে অনুদান রয়েছে ৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার, ঋণ ৩০১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছর একই সময়ে অনুদানসহ ঋণের পরিমাণ ছিল ২০৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।
বেসরকারি খাতেও বিদেশি ঋণ
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও বিদেশি ঋণে ঝুঁকছেন। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩০৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সাল শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ ছিল এক হাজার ৪৭৬ কোটি ডলার বা এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। এতে করে এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ বেড়েছে ৮৩২ কোটি ডলার (প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা)। এর আগে এক বছরে এত বেশি হারে বাড়েনি। জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালায় নানা শিথিলতার কারণে এখন বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া সহজ হয়েছে। আবার দেশের উদ্যোক্তাদের বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা ও দরকষাকষির সুযোগও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ এক হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার। বাকি ৭৬১ কোটি ডলার দীর্ঘমেয়াদি।