ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুর্ঘটনা রোধে ড্রাইভারদের চাই চাকরি ও নিয়োগপত্র

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৩:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৩১০ বার পড়া হয়েছে

দেশব্যাপী সর্বগ্রাসী সড়ক দুর্ঘটনায় যানবাহনের ড্রাইভারদেরকেই দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ড্রাইভাররাই যাবতীয় দুর্ঘটনার হোতা। এই একটিমাত্র লক্ষ্যবস্তুকে সামনে রেখে ঘুরপাক খাচ্ছে সড়ক নিরাপত্তার সব আলোচনা। অথচ দুর্ঘটনার জন্য ড্রাইভারদের দায় দায়িত্বের পাশাপাশি আরও অনেক কার্যকারণ সম্পৃক্ত। সেসব কার্যকারণ উপেক্ষা করে শুধু ড্রাইভারদের ওপর দোষ চাপালে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ হবে না। দেশে প্রায় ২৯ লাখ যানবাহনের বিপরীতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দেওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে প্রায় ১৭ লাখ। তার মানে কমপক্ষে ১২ লাখ গাড়ির চালকের বৈধ কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তারপরও তারা কোনো না কোনো উপায়ে রাস্তায় গাড়ি চালান। দেশের সরকারি যানবাহন এবং ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের বাদে বাকি বাণিজ্যিক যানবাহন চালকদের নির্ধারিত মাসিক কোনো বেতন নেই। অথচ সড়ক পথের সবচেয়ে দামি গাড়িগুলো বিপুল সংখ্যক জানমালের দায়িত্ব নিয়ে তাদের চালাতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি কোম্পানির অধিকাংশ ড্রাইভারের নিয়োগপত্র থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের কোনো নিয়োগপত্র থাকে না। তারা মাস শেষে বেতন, নির্ধারিত উৎসব বোনাস হয়তো পান কিন্তু তাদের ধারাবাহিক চাকরির নিশ্চয়তা সম্পর্কিত কোনো নিয়োগপত্র নেই। অন্যদিকে দেশব্যাপী হাজার হাজার বাস ট্রাক চালকের তো কোনো নিয়োগপত্রই নেই। মাস শেষে তারা একটি নির্ধারিত অঙ্কের বেতন পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারা একদিন হয়তো হাজার টাকা আয় করেন, অন্যদিন কোনো কাজই থাকে না। এসব ড্রাইভারের ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা। যেদিন আয় বেশি সেদিন খরচ বেশি হয়ে যায়। মালিককে দিয়ে, তেলের খরচ, চাঁদার খরচ, সার্ভিসিংয়ের খরচ দিয়ে তাদের হয়তো সামান্যই হাতে থাকে প্রতিদিন। সারাদিন মোটা অঙ্কের কাঁচা টাকা নাড়াচাড়া করেও তাদের সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না। প্রয়োজনীয় মোটিভেশনের অভাবে তারা নেতিবাচক গতিতে আটকে থাকে। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকতে পারে না। পাওনাদার তাদের পিছু ছাড়ে না। অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। এত দুশ্চিন্তা নিয়ে কীভাবে গাড়ি চালাবে একজন ড্রাইভার? এ জন্যই বাড়তি আয়ের আকাক্সক্ষায় তারা চুক্তিতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে। বেশি যাত্রীর জন্য রাস্তায় অন্য বাসের সঙ্গে রেষারেষি করে। চলন্ত গাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাঝ রাস্তায় যাত্রী তোলে। তার মাথা থেকে বেশি আয়ের চিন্তা দূর করতে হবে। মাস শেষে তার নির্দিষ্ট বেতনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। একজন গাড়ি চালককে সর্বদা চোখ, কান, মস্তিষ্ক, হাত, পা সক্রিয় রাখতে হয়। একসঙ্গে এতগুলো প্রত্যঙ্গের ব্যবহার করেই তাকে গাড়ি চালাতে হয়। গাড়ি চালনা যে কোনো কায়িক পরিশ্রমের চেয়েও কষ্টকর একটি কাজ। গাড়ি চালনা একটি বিশেষ কৌশলের ব্যাপার। কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে মানবিক উৎকর্ষতার ব্যাপার। তাই গাড়ি চালককে উপেক্ষা, অবজ্ঞার কোনো সুযোগ নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দুর্ঘটনা রোধে ড্রাইভারদের চাই চাকরি ও নিয়োগপত্র

আপলোড টাইম : ০৯:৩৩:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশব্যাপী সর্বগ্রাসী সড়ক দুর্ঘটনায় যানবাহনের ড্রাইভারদেরকেই দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ড্রাইভাররাই যাবতীয় দুর্ঘটনার হোতা। এই একটিমাত্র লক্ষ্যবস্তুকে সামনে রেখে ঘুরপাক খাচ্ছে সড়ক নিরাপত্তার সব আলোচনা। অথচ দুর্ঘটনার জন্য ড্রাইভারদের দায় দায়িত্বের পাশাপাশি আরও অনেক কার্যকারণ সম্পৃক্ত। সেসব কার্যকারণ উপেক্ষা করে শুধু ড্রাইভারদের ওপর দোষ চাপালে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ হবে না। দেশে প্রায় ২৯ লাখ যানবাহনের বিপরীতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দেওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে প্রায় ১৭ লাখ। তার মানে কমপক্ষে ১২ লাখ গাড়ির চালকের বৈধ কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তারপরও তারা কোনো না কোনো উপায়ে রাস্তায় গাড়ি চালান। দেশের সরকারি যানবাহন এবং ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের বাদে বাকি বাণিজ্যিক যানবাহন চালকদের নির্ধারিত মাসিক কোনো বেতন নেই। অথচ সড়ক পথের সবচেয়ে দামি গাড়িগুলো বিপুল সংখ্যক জানমালের দায়িত্ব নিয়ে তাদের চালাতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি কোম্পানির অধিকাংশ ড্রাইভারের নিয়োগপত্র থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের কোনো নিয়োগপত্র থাকে না। তারা মাস শেষে বেতন, নির্ধারিত উৎসব বোনাস হয়তো পান কিন্তু তাদের ধারাবাহিক চাকরির নিশ্চয়তা সম্পর্কিত কোনো নিয়োগপত্র নেই। অন্যদিকে দেশব্যাপী হাজার হাজার বাস ট্রাক চালকের তো কোনো নিয়োগপত্রই নেই। মাস শেষে তারা একটি নির্ধারিত অঙ্কের বেতন পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারা একদিন হয়তো হাজার টাকা আয় করেন, অন্যদিন কোনো কাজই থাকে না। এসব ড্রাইভারের ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা। যেদিন আয় বেশি সেদিন খরচ বেশি হয়ে যায়। মালিককে দিয়ে, তেলের খরচ, চাঁদার খরচ, সার্ভিসিংয়ের খরচ দিয়ে তাদের হয়তো সামান্যই হাতে থাকে প্রতিদিন। সারাদিন মোটা অঙ্কের কাঁচা টাকা নাড়াচাড়া করেও তাদের সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না। প্রয়োজনীয় মোটিভেশনের অভাবে তারা নেতিবাচক গতিতে আটকে থাকে। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকতে পারে না। পাওনাদার তাদের পিছু ছাড়ে না। অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। এত দুশ্চিন্তা নিয়ে কীভাবে গাড়ি চালাবে একজন ড্রাইভার? এ জন্যই বাড়তি আয়ের আকাক্সক্ষায় তারা চুক্তিতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে। বেশি যাত্রীর জন্য রাস্তায় অন্য বাসের সঙ্গে রেষারেষি করে। চলন্ত গাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাঝ রাস্তায় যাত্রী তোলে। তার মাথা থেকে বেশি আয়ের চিন্তা দূর করতে হবে। মাস শেষে তার নির্দিষ্ট বেতনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। একজন গাড়ি চালককে সর্বদা চোখ, কান, মস্তিষ্ক, হাত, পা সক্রিয় রাখতে হয়। একসঙ্গে এতগুলো প্রত্যঙ্গের ব্যবহার করেই তাকে গাড়ি চালাতে হয়। গাড়ি চালনা যে কোনো কায়িক পরিশ্রমের চেয়েও কষ্টকর একটি কাজ। গাড়ি চালনা একটি বিশেষ কৌশলের ব্যাপার। কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে মানবিক উৎকর্ষতার ব্যাপার। তাই গাড়ি চালককে উপেক্ষা, অবজ্ঞার কোনো সুযোগ নেই।