ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৪:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মার্চ ২০১৮
  • / ৪০২ বার পড়া হয়েছে

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে, কারা এজন্য দায়ী, তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এভাবে প্রাণ বলি দিতে হচ্ছে। এক্ষত্রে আইনী পদক্ষেপ বিলম্বতাকে দায়ী করা যায়। লাগামহীন দুর্ঘটনার কারনে এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে সহজেই এই সব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, কেবল গত ফেব্রুয়ারিতেই সড়ক দুর্ঘটনায় দৈনিক গড়ে ১৫ জন নিহত এবং ৩৬ জন আহত হয়েছেন। এক মাসে প্রতিদিন দুর্ঘটনার গড় পরিমান ১৩টি। সড়কের পাশাপাশি এ মাসে রেল দুর্ঘটনায় ২২ জন ও নৌ দুর্ঘটনায় সাতজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২২টি বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ১০টি আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং আটটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর যে গ্যারান্টি রাষ্ট্রকে দেবার কথা এই সব ঘটনা সে গ্যারান্টিকে চ্যালেঞ্চ করছে। এই চিত্র কোনোভাবেই সুখকর নয়। দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহনের চালকদের অসতর্কতা ও খামখেয়ালির কারণে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর যথাযথ নজরদারির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে ক্ষুদ্র যানবাহনের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, সকল টার্মিনালসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজি ও শ্রমিক অসন্তোষসহ সড়ক পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অন্যদিকে মানুষ মোবাইলফোনে কথা বলতে বলতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাঁটা পড়ে বা বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়ার ঘটনা দেশে বিরল নয়।এগুলো অসচেতন মানুষের কাজ। এটা এক ধরনের আত্মহত্যার শামিল। সম্প্রতি এমন ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে আট হাজার জন নিহত হন বলে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যাত্রীকল্যাণ সমিতি নামের একটি সংগঠন। তবে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। একই মত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরও। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্ঘটনা আর অপমৃত্যুর দেশে কেন পরিণত হবে আমাদের প্রিয় দেশটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেবল প্রশিক্ষণই নয়, চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে নজর দিতে হবে। সড়কপথে যেমন মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে তেমনি বাড়ছে নৌরুটেও। সড়ক ও রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও সড়কপথ ব্যবহার, ভ্রমণ ও রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আর সেই সাথে বন্ধ করতে হবে রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোন বা হেডফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার। জনগণ সচেতন হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। পাশাপাশি দক্ষ ও শিক্ষিত চালকের সংখ্যা বাড়ানো গেলে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা শুন্যতে নামিয়ে আনা সম্ভব। তবে এসব বাস্তবায়নের জন্য চাই আইনের সুষ্ঠু ব্যবহার। প্রচলিত আইন দিয়ে যদি সম্ভব না হয় তাহলে নতুন আইন করা প্রয়োজন। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু রোধ করতে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা

আপলোড টাইম : ০৯:২৪:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মার্চ ২০১৮

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে, কারা এজন্য দায়ী, তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এভাবে প্রাণ বলি দিতে হচ্ছে। এক্ষত্রে আইনী পদক্ষেপ বিলম্বতাকে দায়ী করা যায়। লাগামহীন দুর্ঘটনার কারনে এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে সহজেই এই সব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, কেবল গত ফেব্রুয়ারিতেই সড়ক দুর্ঘটনায় দৈনিক গড়ে ১৫ জন নিহত এবং ৩৬ জন আহত হয়েছেন। এক মাসে প্রতিদিন দুর্ঘটনার গড় পরিমান ১৩টি। সড়কের পাশাপাশি এ মাসে রেল দুর্ঘটনায় ২২ জন ও নৌ দুর্ঘটনায় সাতজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২২টি বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ১০টি আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং আটটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর যে গ্যারান্টি রাষ্ট্রকে দেবার কথা এই সব ঘটনা সে গ্যারান্টিকে চ্যালেঞ্চ করছে। এই চিত্র কোনোভাবেই সুখকর নয়। দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহনের চালকদের অসতর্কতা ও খামখেয়ালির কারণে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর যথাযথ নজরদারির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে ক্ষুদ্র যানবাহনের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, সকল টার্মিনালসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজি ও শ্রমিক অসন্তোষসহ সড়ক পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অন্যদিকে মানুষ মোবাইলফোনে কথা বলতে বলতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাঁটা পড়ে বা বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়ার ঘটনা দেশে বিরল নয়।এগুলো অসচেতন মানুষের কাজ। এটা এক ধরনের আত্মহত্যার শামিল। সম্প্রতি এমন ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে আট হাজার জন নিহত হন বলে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যাত্রীকল্যাণ সমিতি নামের একটি সংগঠন। তবে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। একই মত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরও। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্ঘটনা আর অপমৃত্যুর দেশে কেন পরিণত হবে আমাদের প্রিয় দেশটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেবল প্রশিক্ষণই নয়, চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে নজর দিতে হবে। সড়কপথে যেমন মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে তেমনি বাড়ছে নৌরুটেও। সড়ক ও রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও সড়কপথ ব্যবহার, ভ্রমণ ও রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আর সেই সাথে বন্ধ করতে হবে রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোন বা হেডফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার। জনগণ সচেতন হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। পাশাপাশি দক্ষ ও শিক্ষিত চালকের সংখ্যা বাড়ানো গেলে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা শুন্যতে নামিয়ে আনা সম্ভব। তবে এসব বাস্তবায়নের জন্য চাই আইনের সুষ্ঠু ব্যবহার। প্রচলিত আইন দিয়ে যদি সম্ভব না হয় তাহলে নতুন আইন করা প্রয়োজন। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু রোধ করতে।