ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দামুড়হুদায় বাড়ছে ক্ষতিকর ফসল তামাকের আবাদ; উর্বরতা হারাচ্ছে আবাদি জমি; স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিশাল জনগোষ্ঠি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৫৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০১৭
  • / ৬৬৭ বার পড়া হয়েছে

নুরুল আলম বাকু: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যখন সরাকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা একের পর এক স্থানকে ধুমপানমুক্ত (তামাক মুক্ত) ঘোষনা করতে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহুর্তে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবাধে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফসল তামাকের আবাদ বেড়েই চলেছে। যা এ এলাকার জনস্বাস্থ্য ও কৃষির উপর হুমকিস্বরূপ। বিপুল পরিমান জমিতে তামাক আবাদের ফলে এলাকায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। একই জমিতে বারবার তামাক চাষের ফলে উর্বরাশক্তি হারিয়ে বিপুল পরিমান কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তামাক আবাদ বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত ঝুাঁকি, সেইসাথে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। সূত্রে জানা গেছে, বিগত মেসৈুমগুলোর মতো চলতি মৌসুমেও দামুড়হুদা উপজেলায় বৃটিশ আমেরিকা টোবাকো, আবুল খায়ের, ঢাকা টোবাকো কোম্পানীসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানীর আওতায় বিপুল পরিমান জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। তামাক কোম্পানীগুলো প্রতিবারের ন্যায় এবারও মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে তামাকের বীজ এবং ঋণ হিসাবে স্বল্পমূল্যে সার, কীটনাশক এবং নগদ টাকা বিতরন করে।  সেইসাথে তাদের আওতাধীন তামাকচাষীদের উৎপাদিত তামাক কেনার জন্য কার্ডও সরবরাহ করে। ইতোমধ্যেই ঐ কার্ড দেখিয়েই কৃষকরা স্ব স্ব কোম্পানীর কাছে তামাক বিক্রি শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ শ’ ১৮ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। যা গতবার হয়েছিল ২শ’ ১৫ হেক্টর। অর্থাৎ এবছরে আবাদ বেড়েছে প্রায় ১শ’হেক্টর। তবে মাঠ পর্যায়ে এ আবাদের পরিমান কৃষি বিভাগের হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারনা কৃষকদের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই উপজেলার গোপালপুর, দলিয়ারপুর, বিষ্ণুপুর, ছুটিপুর, পোতারপাড়া, ভগিরতপুর, হোগলডাঙ্গা, কালিয়াবকরি, মজলিশপুর, রামনগর, কলাবাড়ী, নাপিতখালি, বদনপুর কার্পাসডাঙ্গা ইত্যাদি গ্রামগুলোতে ব্যপকভাবে তামাক চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে জুড়ানপুর ও নতিপোতা ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি পরিমান জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। অভিজ্ঞ কৃষকদের বক্তব্য, তামাক চাষের ফলে এলাকার কৃষিজমির উর্বরতা, জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়ছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ রাসায়নিক সার সালফার, ডিএফপি ও পটাশ, ব্যবহারের  ফলে মাটি পুষ্টিশূন্য হয়ে পড়ে। একই জমিতে বার বার তামাক চাষের ফলে উর্বরাশক্তি হারিয়ে জমি অনাবাদি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যান্য ফসলের আবাদও কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। তামাক চাষের কারনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া তামাকপাতা শুকাতে প্রতিবছর নানা প্রজাতির হাজার হাজার মন কাঠ পোড়ানের ফলে উজাড় হচ্ছে বনভূমি। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশর উপর। এ আবাদে হাতেগোনা কিছুসংখ্যক মানুষ লাভবান হলেও নানাভাবে এর ক্ষতির প্রভাব পড়ছে বিশাল জনগোষ্ঠির উপর। তামাকচাষীদের অনেকে জানান, আমরা জানি তামাক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তারপরও অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় তামাক চাষ করছি। অনেকে অভিযোগের সুরে বলেন, তামাক চাষের শুরু থেকেই তামাক কোম্পানির লোকজন মাঠ পর্যায়ে যেভাবে সার্বক্ষনিক দেখাশোনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাতে এ চাষে লোকসান হয় না। কিন্তু সেই তুলনায় অন্যান্য ফসল আবাদে কৃষি বিভাগ থেকে তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা বা পরামর্শ পাওয়া যায় না। ফলে অনেক সময় বিভিন্ন ফসল আবাদ করে লোকসনগ্রস্থ হতে হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুফি মোহম্মদ রফিকুজ্জামান চলতি মৌসুমে তামাকের আবাদ বৃদ্ধির কারন হিসাবে বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো নানারকম সুযোগ সুবিধা ও উপঢৌকন দিয়ে কৃষকদেরকে তামাকচাষে আগ্রহী করে থাকে। কোম্পানিগুলো কৃষকদেরকে তামাক আবাদের জন্য বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও নগদ টাকা দিয়ে থাকে। ফলে এ আবাদে তাদের নিজস্ব কোন পুঁজি খাটাতে হয় না। তাই কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে তামাক আবাদে ঝুঁকে পড়ে। নানা ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে আমরা মুলতঃ কৃষকদেরকে তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে থাকি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দামুড়হুদায় বাড়ছে ক্ষতিকর ফসল তামাকের আবাদ; উর্বরতা হারাচ্ছে আবাদি জমি; স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিশাল জনগোষ্ঠি

আপলোড টাইম : ০৪:৫৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০১৭

নুরুল আলম বাকু: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যখন সরাকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা একের পর এক স্থানকে ধুমপানমুক্ত (তামাক মুক্ত) ঘোষনা করতে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহুর্তে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবাধে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফসল তামাকের আবাদ বেড়েই চলেছে। যা এ এলাকার জনস্বাস্থ্য ও কৃষির উপর হুমকিস্বরূপ। বিপুল পরিমান জমিতে তামাক আবাদের ফলে এলাকায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। একই জমিতে বারবার তামাক চাষের ফলে উর্বরাশক্তি হারিয়ে বিপুল পরিমান কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তামাক আবাদ বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত ঝুাঁকি, সেইসাথে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। সূত্রে জানা গেছে, বিগত মেসৈুমগুলোর মতো চলতি মৌসুমেও দামুড়হুদা উপজেলায় বৃটিশ আমেরিকা টোবাকো, আবুল খায়ের, ঢাকা টোবাকো কোম্পানীসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানীর আওতায় বিপুল পরিমান জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। তামাক কোম্পানীগুলো প্রতিবারের ন্যায় এবারও মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে তামাকের বীজ এবং ঋণ হিসাবে স্বল্পমূল্যে সার, কীটনাশক এবং নগদ টাকা বিতরন করে।  সেইসাথে তাদের আওতাধীন তামাকচাষীদের উৎপাদিত তামাক কেনার জন্য কার্ডও সরবরাহ করে। ইতোমধ্যেই ঐ কার্ড দেখিয়েই কৃষকরা স্ব স্ব কোম্পানীর কাছে তামাক বিক্রি শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ শ’ ১৮ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। যা গতবার হয়েছিল ২শ’ ১৫ হেক্টর। অর্থাৎ এবছরে আবাদ বেড়েছে প্রায় ১শ’হেক্টর। তবে মাঠ পর্যায়ে এ আবাদের পরিমান কৃষি বিভাগের হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারনা কৃষকদের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই উপজেলার গোপালপুর, দলিয়ারপুর, বিষ্ণুপুর, ছুটিপুর, পোতারপাড়া, ভগিরতপুর, হোগলডাঙ্গা, কালিয়াবকরি, মজলিশপুর, রামনগর, কলাবাড়ী, নাপিতখালি, বদনপুর কার্পাসডাঙ্গা ইত্যাদি গ্রামগুলোতে ব্যপকভাবে তামাক চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে জুড়ানপুর ও নতিপোতা ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি পরিমান জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। অভিজ্ঞ কৃষকদের বক্তব্য, তামাক চাষের ফলে এলাকার কৃষিজমির উর্বরতা, জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়ছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ রাসায়নিক সার সালফার, ডিএফপি ও পটাশ, ব্যবহারের  ফলে মাটি পুষ্টিশূন্য হয়ে পড়ে। একই জমিতে বার বার তামাক চাষের ফলে উর্বরাশক্তি হারিয়ে জমি অনাবাদি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যান্য ফসলের আবাদও কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। তামাক চাষের কারনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া তামাকপাতা শুকাতে প্রতিবছর নানা প্রজাতির হাজার হাজার মন কাঠ পোড়ানের ফলে উজাড় হচ্ছে বনভূমি। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশর উপর। এ আবাদে হাতেগোনা কিছুসংখ্যক মানুষ লাভবান হলেও নানাভাবে এর ক্ষতির প্রভাব পড়ছে বিশাল জনগোষ্ঠির উপর। তামাকচাষীদের অনেকে জানান, আমরা জানি তামাক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তারপরও অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় তামাক চাষ করছি। অনেকে অভিযোগের সুরে বলেন, তামাক চাষের শুরু থেকেই তামাক কোম্পানির লোকজন মাঠ পর্যায়ে যেভাবে সার্বক্ষনিক দেখাশোনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাতে এ চাষে লোকসান হয় না। কিন্তু সেই তুলনায় অন্যান্য ফসল আবাদে কৃষি বিভাগ থেকে তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা বা পরামর্শ পাওয়া যায় না। ফলে অনেক সময় বিভিন্ন ফসল আবাদ করে লোকসনগ্রস্থ হতে হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুফি মোহম্মদ রফিকুজ্জামান চলতি মৌসুমে তামাকের আবাদ বৃদ্ধির কারন হিসাবে বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো নানারকম সুযোগ সুবিধা ও উপঢৌকন দিয়ে কৃষকদেরকে তামাকচাষে আগ্রহী করে থাকে। কোম্পানিগুলো কৃষকদেরকে তামাক আবাদের জন্য বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও নগদ টাকা দিয়ে থাকে। ফলে এ আবাদে তাদের নিজস্ব কোন পুঁজি খাটাতে হয় না। তাই কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে তামাক আবাদে ঝুঁকে পড়ে। নানা ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে আমরা মুলতঃ কৃষকদেরকে তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে থাকি।