ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দামুড়হুদার লোকনাথপুরে গাছের ডাল ভেঙে স্কুলছাত্রের মৃত্যু : বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বিঘিœত : বজ্রপাত : চুয়াডাঙ্গায় দুই ঝিনাইদহে তিনজনসহ সারাদেশে নিহত ১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০২:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০১৭
  • / ৪২৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় পৃথক কয়েকটি স্থানে বজ্রপাতে শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চারজন। এছাড়া ঝড়ের সময় গাছের ডাল ভেঙে আরও এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার কানাইডাঙ্গা, কুতুবপুর, লোকনাথপুর ও গোপালপুরে এসব ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে তিনজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতদের প্রত্যেকের বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলায়। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নেই দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে, বজ্রপাতে নিহতদের লাশ কবর থেকে চুরি হওয়ার গুজবে আতঙ্কে রয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। অপরদিকে, ঝড়ে গাছের ডাল-পালা ভেঙে ল-ভ- হয়ে সড়কে চলাচল বিঘ্ন ঘটে। গাছের ডাল ভেঙে পড়ায় চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কে প্রায় এক ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ ও অফিসকক্ষ ভেঙে ল-ভ- হয়ে যায়। মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় দু’জন ও ঝিনাইদহের তিনজনসহ সারাদেশে দিনব্যাপী বজ্রপাতে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ দমকা হাওয়ার সাথে সাথে নেমে আসে বৃষ্টি। আকস্মিক ঝড়-বৃষ্টিতে বাগানের গাছের ফল পড়ছিলো। দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কানাইডাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে আব্দুল মালেক (১০) বাড়ির পাশে একটি আমবাগানে আম কুড়াতে যায়। এসময় আকস্মিক বজ্রাঘাতে গুরুতর জখম হয় মালেক। তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে আব্দুল মালেককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত শিশু আব্দুল মালেক কানাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কারিতাস শিশু শিক্ষা প্রোগ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের কাটাবাগানপাড়ার আব্দুস সামাদ (৩০) মঙ্গলবার দুপুরে মাঠে ধান গোছানোর কাজ করছিলেন। মাঠে কাটা ধান গোছানোর সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন এক সন্তানের জনক সামাদ। তিনি কুতুবপুর গ্রামের কাটাবাগানপাড়ার হায়দার আলীর ছেলে।
এদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুরে ঝড়ের সময় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে স্কুলছাত্র ইমামুল হক (১৪)। এসময় লোকনাথপুরে চটকা গাছের নিচে আশ্রয় নিলে ওই গাছের একটি ডাল ভেঙে পড়লে আহত হয় সে। পরে আহত ইমামুলকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত ইমামুল হক লোকনাথপুর গ্রামের শওকত আলীর ছেলে। সে লোকনাথপুর সহশিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত।
অপরদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মাঠে কাটা ধান গোছানোর সময় বজ্রাঘাতে চারজন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে কয়েকজন কৃষক গ্রামের কুড়ির মাঠে ধান গোছাতে যান। এসময় আকস্মিক বজ্রাঘাতে গোপালপুরের মৃত রিয়াজ বাহারের ছেলে আমির (৪৫), মৃত হামিদুর রহমানের ছেলে রায়হান মিয়া (৪০), মৃত ফকির চাঁদের ছেলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (৫০) ও টুঙ্গী গোপালপুর গ্রামের কদর আলী আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে কদর আলী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও অন্যান্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এছাড়া, ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু ও কালীগঞ্জে বজ্রপাতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন – হরিনাকুন্ডু উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে আমান উল্লা (৪৫), পুলতাডাঙ্গা গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে মিরাজ (৩৫) ও কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাডাঙ্গা গ্রামের শফিয়ার রহমানের স্ত্রী আনজু আরা (৪৫)।  মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। বাড়ির পাশে ধান গোছানোর সময় আনজু আরা এবং মাঠ থেকে ধান আনার সময় আমান উল্লা বজ্রাঘাতে নিহত হন। এছাড়া বজ্রপাতে নিহত হন মিরাজ।
গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় দু’জন ও ঝিনাইদহের তিনজনসহ সারাদেশে দিনব্যাপী বজ্রপাতে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহে ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ১, সুনামগঞ্জে ১, মুন্সিগঞ্জের ১, হবিগঞ্জে ১, মাদারীপুর ১, গাইবান্ধায় ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, চাঁদপুরে ২ জন, নড়াইলে ১, মাদারিপুরে ১ এবং গোপালগঞ্জে একজন মারা গেছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দামুড়হুদার লোকনাথপুরে গাছের ডাল ভেঙে স্কুলছাত্রের মৃত্যু : বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বিঘিœত : বজ্রপাত : চুয়াডাঙ্গায় দুই ঝিনাইদহে তিনজনসহ সারাদেশে নিহত ১৯

আপলোড টাইম : ০৫:০২:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় পৃথক কয়েকটি স্থানে বজ্রপাতে শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও চারজন। এছাড়া ঝড়ের সময় গাছের ডাল ভেঙে আরও এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার কানাইডাঙ্গা, কুতুবপুর, লোকনাথপুর ও গোপালপুরে এসব ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে তিনজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতদের প্রত্যেকের বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলায়। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নেই দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে, বজ্রপাতে নিহতদের লাশ কবর থেকে চুরি হওয়ার গুজবে আতঙ্কে রয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। অপরদিকে, ঝড়ে গাছের ডাল-পালা ভেঙে ল-ভ- হয়ে সড়কে চলাচল বিঘ্ন ঘটে। গাছের ডাল ভেঙে পড়ায় চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কে প্রায় এক ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ ও অফিসকক্ষ ভেঙে ল-ভ- হয়ে যায়। মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় দু’জন ও ঝিনাইদহের তিনজনসহ সারাদেশে দিনব্যাপী বজ্রপাতে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ দমকা হাওয়ার সাথে সাথে নেমে আসে বৃষ্টি। আকস্মিক ঝড়-বৃষ্টিতে বাগানের গাছের ফল পড়ছিলো। দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কানাইডাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে আব্দুল মালেক (১০) বাড়ির পাশে একটি আমবাগানে আম কুড়াতে যায়। এসময় আকস্মিক বজ্রাঘাতে গুরুতর জখম হয় মালেক। তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে আব্দুল মালেককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত শিশু আব্দুল মালেক কানাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কারিতাস শিশু শিক্ষা প্রোগ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের কাটাবাগানপাড়ার আব্দুস সামাদ (৩০) মঙ্গলবার দুপুরে মাঠে ধান গোছানোর কাজ করছিলেন। মাঠে কাটা ধান গোছানোর সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন এক সন্তানের জনক সামাদ। তিনি কুতুবপুর গ্রামের কাটাবাগানপাড়ার হায়দার আলীর ছেলে।
এদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুরে ঝড়ের সময় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে স্কুলছাত্র ইমামুল হক (১৪)। এসময় লোকনাথপুরে চটকা গাছের নিচে আশ্রয় নিলে ওই গাছের একটি ডাল ভেঙে পড়লে আহত হয় সে। পরে আহত ইমামুলকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত ইমামুল হক লোকনাথপুর গ্রামের শওকত আলীর ছেলে। সে লোকনাথপুর সহশিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত।
অপরদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মাঠে কাটা ধান গোছানোর সময় বজ্রাঘাতে চারজন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে কয়েকজন কৃষক গ্রামের কুড়ির মাঠে ধান গোছাতে যান। এসময় আকস্মিক বজ্রাঘাতে গোপালপুরের মৃত রিয়াজ বাহারের ছেলে আমির (৪৫), মৃত হামিদুর রহমানের ছেলে রায়হান মিয়া (৪০), মৃত ফকির চাঁদের ছেলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (৫০) ও টুঙ্গী গোপালপুর গ্রামের কদর আলী আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে কদর আলী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও অন্যান্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এছাড়া, ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু ও কালীগঞ্জে বজ্রপাতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন – হরিনাকুন্ডু উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে আমান উল্লা (৪৫), পুলতাডাঙ্গা গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে মিরাজ (৩৫) ও কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাডাঙ্গা গ্রামের শফিয়ার রহমানের স্ত্রী আনজু আরা (৪৫)।  মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। বাড়ির পাশে ধান গোছানোর সময় আনজু আরা এবং মাঠ থেকে ধান আনার সময় আমান উল্লা বজ্রাঘাতে নিহত হন। এছাড়া বজ্রপাতে নিহত হন মিরাজ।
গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় দু’জন ও ঝিনাইদহের তিনজনসহ সারাদেশে দিনব্যাপী বজ্রপাতে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহে ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ১, সুনামগঞ্জে ১, মুন্সিগঞ্জের ১, হবিগঞ্জে ১, মাদারীপুর ১, গাইবান্ধায় ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, চাঁদপুরে ২ জন, নড়াইলে ১, মাদারিপুরে ১ এবং গোপালগঞ্জে একজন মারা গেছেন।