দল গোছাচ্ছে বিএনপি
- আপলোড টাইম : ১০:৩৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
- / ১৮৪ বার পড়া হয়েছে
নভেম্বর-ডিসেম্বরে কাউন্সিলের প্রস্তুতি, সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন প্রশংসিত
সমীকরণ প্রতিবেদন:
কাউন্সিলকে সামনে রেখে দল গোছাচ্ছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে কাউন্সিল আয়োজনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি চলছে। এবারের কাউন্সিল আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্প্রতি তার তত্ত্বাবধানে ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে প্রশংসিত এবং আলোচিত হয়েছে। ছাত্রদলের সফল কাউন্সিলের পর তারেক রহমান কেন্দ্রীয় নেতাদের বিএনপির কাউন্সিল আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী কাউন্সিল আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি চলছে। ছাত্রদলের মতো বিএনপির নেতাও এবার কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। সে লক্ষ্যে সারাদেশে জেলা এবং মহানগর কমিটি পুনর্গঠন চলছে। ইতোমধ্যে বগুড়া, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব আহ্বায়ক কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে নির্বাচিত কমিটি উপহার দেবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবার তরুণদের প্রধান্য দিয়ে দল পুনর্গঠন করতে চাচ্ছেন। সে লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ের আহ্বায়ক কমিটিতে তরুণদের দেখা যাচ্ছে। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে সাবেক ছাত্রদলের নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তরুণ নেতাদের দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করায় সারা জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বগুড়া, মানিকগঞ্জসহ অন্য জেলাগুলোতে একই রকম উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠন চলছে। সারাদেশে জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাচ্ছেন তৃণমূল পর্যায় থেকে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করতে। তবে সরকার আমাদের এ কর্মকান্ডে বাধা দিচ্ছে। অনেক জেলায় কাউন্সিল করতে দেয়া হচ্ছে না।
দল পুনগঠনের এ বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলেন, বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে বিএনপির যে দুর্বল অবস্থা তা দূর করতে হলে দল পুনর্গঠনের কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে দল পুনর্গঠন করা হলে তাতে সাংগঠনিক গতি অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। তবে প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগাতে হবে বলে তারা মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। সে দিকটায় যাদি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নজর দিয়ে থাকেন তাহলে তা অবশ্যই ইতিবাচক। কেননা বিএনপির চেয়ারপার্সন কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে দলের সিদ্ধান্তহীনতা লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সম্প্রতি দলের যে দু’টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অনেকটাই সময়ের আলোকে সঠিক বলে বিবেচিত হয়েছে। এতে সর্বমহলে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানে ছাত্রদলের যে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। এখন তিনি যদি সরাসরি দায়িত্ব নিয়ে দল পুনর্গঠন করেন, তাহলে সেটা দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে, এমনটাই ধারণা করা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক নজির আছে যে, দেশের বাইরে থেকে বা বন্দি থেকেও অনেকে দল পরিচালনা করেছেন। সেক্ষেত্রে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষতার যুগে তারেক রহমানের দল পরিচালনা করা তো কোনো কঠিন বিষয় নয়।
বর্তমানে দু’টি লক্ষ্য সামনে রেখে বিএনপি অগ্রসর হচ্ছে। এর একটি দল পুনর্গঠন, অন্যটি দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তি। দলের প্রায় সব নেতাই এখন মনে করেন, আইনি প্রক্রিয়ায় চেয়ারপর্সনের মুক্তি সম্ভব নয়। রাজপথে জোরালো আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দলকে শক্তিশালী করে দাঁড় করানোটা অবশ্যই জরুরি। তাই দলকে পুনর্গঠন করার বিষয়টিই এখন প্রধান লক্ষ্য। আর এটাই এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আন্দোলন জোরদার এবং সফল করতে হলে ঢাকা তথা রাজধানীতে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলন হলেও ঢাকায় জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে সফল হওয়া যাবে না। অতীতে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তাই আন্দোলন সফল করতে ঢাকায় দলের সাংগঠনিক শক্তি অত্যন্ত মজবুত করতে হবে। এ জন্য ঢাকা মহানগর কমিটি, ঢাকা জেলা কমিটি এবং এর আশপাশের জেলাগুলোর কমিটিকেও গুরুত্ব দিয়ে পুনর্গঠন করতে হবে। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যে কমিটি রয়েছে তা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে অনেকের মনে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া এসব কমিটির নেতা মনোনীত করা নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। তাই আন্দোলনের স্বার্থে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিকে ছাত্রদলের মতো কাউন্সিল করে দ্রুত পুনর্গঠন করা জরুরি। এ ছাড়া ঢাকা জেলা বিএনপির কমিটিও দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা প্রয়োজন। ঢাকায় আন্দোলন জোরদার করতে হলে এর আশপাশের জেলাগুলো যেমন- গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জ এসব জেলার কমিটি দ্রুত কাউন্সিলের মাধ্যম গঠন করতে হবে। গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন। তিনি একই সাথে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। একই রকমভাবে নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবীর খোকন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব। দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকেও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।
এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী বলেন, বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে তাদের দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। সারাদেশে তাদের প্রচুর জনসমর্থন রয়েছে। তারা যে বিভাগীয় সমাবেশ করছেন তাতে জনতার ঢল দেখা যাচ্ছে। তবে এই জনসমর্থনকে কাজে লাগানোর মতো সংগঠনিক তৎপরতা ও দৃঢ়তা লক্ষ করা যাচ্ছে না। তাই দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করলে বিএনপি জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে সফল হতে পারবে। এজন্য সাংগঠনিক পুনগঠনই বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
দল পুনগঠন প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠন চলছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি পুনগঠন করছেন। তবে সরকার বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বাধা দিচ্ছে। ছাত্রদলের কাউন্সিলেও সরকার নানাভাবে বাধা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সব বাধা পেরিয়ে অত্যন্ত সফল ও সুন্দর একটি কাউন্সিল করতে পেরেছে ছাত্রদল। এভাবেই সরকারের বাধাকে অতিক্রম করে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।