ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দর্শনা থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত ট্রেন চাই- রাজিব আহমেদ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৪০:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের যতগুলো জেলার মাটি স্পর্শ করে রেললাইন রয়েছে, সবগুলো জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সংযোগ রক্ষাকারী এক বা একাধিক ট্রেন চালু রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী-খ্যাত চুয়াডাঙ্গা হচ্ছে একমাত্র জেলা, যেখান থেকে বিগত ৫০ বছরেও সরাসরি ঢাকাগামী আলাদা কোনো ট্রেন চালু করা হয়নি! দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ রক্ষাকারী সকল ট্রেন এখন পর্যন্ত যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। ট্রেনগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সেতুর দুই পাড়ের স্টেশনে থামতে হয়। তার মানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকায় চলাচলকারী প্রত্যেক ট্রেন সিরাজগঞ্জে যাত্রাবিরতি করে। সিরাজগঞ্জবাসী চাইলে যে কোনো ট্রেনেই যাতায়াত করতে পারেন এবং করেনও। তারপরও ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ বিশেষ ট্রেন চালু রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের প্রথম রেলস্টেশন চুয়াডাঙ্গা হওয়া সত্ত্বেও সেখান থেকে বা তার পূর্ববর্তী সীমান্ত শহর দর্শনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত পৃথক কোনো ট্রেন অদ্যাবধি চালু করা হয়নি। এই লজ্জা কার?! এর দায়ভার কার?

ঢাকা থেকে বেনাপোল হয়ে কলকাতা যেতে যত সময় লাগে, তারচেয়ে অনেক কম সময়ে দর্শনা হয়ে কলকাতায় পৌঁছানো সম্ভব। অথচ দেখুন- বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেন চালু আছে, কিন্তু ঢাকা থেকে দর্শনা পর্যন্ত কোনো ট্রেন চালু করা হয়নি! দর্শনা বাংলাদেশের একমাত্র শিল্প-শহর, যেখানে দুই-দুইটি রেলস্টেশন আছে। শুধু তাই নয়, দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল-সীমান্ত এবং যাত্রা শুরুর স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করার মতো দরকারি অবকাঠামো ব্রিটিশ আমল থেকেই সেখানে প্রস্তুত রয়েছে। কেবলমাত্র উদ্যোগের অভাবে রেলওয়ের এতো বিশাল অবকাঠামো পরিত্যক্ত অবস্থায় ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের দুইটি দীর্ঘতম সেতু হচ্ছে যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতু ও পদ্মা সেতু। এই দুটি সেতু চালু হওয়ার পর দেশের অধিকাংশ জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের ঝাক্কি-ঝামেলা কমেছে। কিন্তু এই দুইটি সেতু চালু হওয়ার পরও দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণবঙ্গের যে দুটি জেলাবাসী বিন্দুমাত্র লাভবান হয়নি (মোট দূরত্ব কমেনি বা যাতায়াতের সময় বাঁচেনি), সেই দুটি দুর্ভাগা জেলা হলো চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। এই দুই জেলাবাসীর চলাচলের কষ্ট কিছুটা লাঘবের জন্য সান্ত্বনাস্বরূপ হলেও সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী দুটি (নিদেনপক্ষে একটি) ট্রেন চালু করা দরকার। কিন্তু সেদিকে কারো ন্যূনতম সুদৃষ্টি নেই।

কিছুদিন আগে পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার তিতুদহ-বেগমপুর এলাকার কৃতীসন্তান। বর্তমানে যমুনা সেতুর পাশ দিয়ে আলাদাভাবে যে রেল সেতু নির্মিত হচ্ছে, সেই প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহসান জাব্বির সুজন চুয়াডাঙ্গার কৃতীসন্তান। সমগ্র রেলওয়ের টিকেটিং ব্যবস্থা সুনিপুণ হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার আরেক কৃতীসন্তান নাহিদ হাসান খান নিপু। কিন্তু তারপরও চুয়াডাঙ্গাবাসীর আশা তথা দাবি পূরণ হচ্ছে না (স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কথা বরং উহ্যই থাক)! অনেকেরই হয়ত জানা নেই যে, চুয়াডাঙ্গার কৃতীসন্তান এম এ বারী (২৪.৫.১৯০১- ২৮.১০.১৯৭১) ছিলেন অবিভক্ত নদীয়ার প্রথম মুসলমান প্রকৌশলী। যিনি ১৯৪৭ সালে দেশভাগেরও আগে পূর্ববঙ্গ রেলওয়েতে যোগ দিয়ে পর্যায়ক্রমে জেনারেল ম্যানেজার (মানে পূর্ববঙ্গ রেলওয়ের প্রধান) পদে সুদীর্ঘকাল সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অথচ তাঁর নিজ জেলা (তৎকালীন মহকুমা) কতটা অবহেলিত!

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সদরসহ বিভিন্ন প্রান্তিক জনপদ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ২৫০টি কোচ-বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সমপরিমাণ পরিবহন ঢাকা থেকে যাত্রী বয়ে নিয়ে আসে। এই ৫০০ ট্রিপ-এ প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ যাওয়া-আসা করেন। এঁদের চলাচলের কষ্ট লাঘব তথা সুবিধার জন্য অন্তত একটি ট্রেন বরাদ্দ করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয় কি?

আমরা জীবননগর, দর্শনা, দামুড়হুদা, মুজিবনগর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গাবাসী রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দিনে-রাতে যোগাযোগ রক্ষাকারী পৃথক দুটি ট্রেন চাই। এই দাবি আদায় করে দিতে না পারলে স্থানীয় কোনো রাজনৈতিক নেতার দরকার নাই (তাঁরা যেন আগামীতে আমাদের কাছে ভোট চাইতে না আসেন)! তবে ট্রেন চালু করা সম্ভব হলে সেই ট্রেনের নাম যদি ‘মুজিবনগর এক্সপ্রেস’ অথবা ‘দর্শনা এক্সপ্রেস’ অথবা ‘মাথাভাঙ্গা এক্সপ্রেস’ অথবা ‘প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেস’ অথবা ‘এম এ বারী এক্সপ্রেস’, এমনকি ‘টগর এক্সপ্রেস’ বা ‘ছেলুন এক্সপ্রেস’ রাখা হয়, তাতেও আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। যে নামেই ডাকুন না কেন, আমরা রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী নিজস্ব ট্রেন চাই- এটাই আমাদের শেষ কথা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দর্শনা থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত ট্রেন চাই- রাজিব আহমেদ

আপলোড টাইম : ০৩:৪০:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের যতগুলো জেলার মাটি স্পর্শ করে রেললাইন রয়েছে, সবগুলো জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সংযোগ রক্ষাকারী এক বা একাধিক ট্রেন চালু রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী-খ্যাত চুয়াডাঙ্গা হচ্ছে একমাত্র জেলা, যেখান থেকে বিগত ৫০ বছরেও সরাসরি ঢাকাগামী আলাদা কোনো ট্রেন চালু করা হয়নি! দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ রক্ষাকারী সকল ট্রেন এখন পর্যন্ত যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। ট্রেনগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সেতুর দুই পাড়ের স্টেশনে থামতে হয়। তার মানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকায় চলাচলকারী প্রত্যেক ট্রেন সিরাজগঞ্জে যাত্রাবিরতি করে। সিরাজগঞ্জবাসী চাইলে যে কোনো ট্রেনেই যাতায়াত করতে পারেন এবং করেনও। তারপরও ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ বিশেষ ট্রেন চালু রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের প্রথম রেলস্টেশন চুয়াডাঙ্গা হওয়া সত্ত্বেও সেখান থেকে বা তার পূর্ববর্তী সীমান্ত শহর দর্শনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত পৃথক কোনো ট্রেন অদ্যাবধি চালু করা হয়নি। এই লজ্জা কার?! এর দায়ভার কার?

ঢাকা থেকে বেনাপোল হয়ে কলকাতা যেতে যত সময় লাগে, তারচেয়ে অনেক কম সময়ে দর্শনা হয়ে কলকাতায় পৌঁছানো সম্ভব। অথচ দেখুন- বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেন চালু আছে, কিন্তু ঢাকা থেকে দর্শনা পর্যন্ত কোনো ট্রেন চালু করা হয়নি! দর্শনা বাংলাদেশের একমাত্র শিল্প-শহর, যেখানে দুই-দুইটি রেলস্টেশন আছে। শুধু তাই নয়, দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল-সীমান্ত এবং যাত্রা শুরুর স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করার মতো দরকারি অবকাঠামো ব্রিটিশ আমল থেকেই সেখানে প্রস্তুত রয়েছে। কেবলমাত্র উদ্যোগের অভাবে রেলওয়ের এতো বিশাল অবকাঠামো পরিত্যক্ত অবস্থায় ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের দুইটি দীর্ঘতম সেতু হচ্ছে যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতু ও পদ্মা সেতু। এই দুটি সেতু চালু হওয়ার পর দেশের অধিকাংশ জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের ঝাক্কি-ঝামেলা কমেছে। কিন্তু এই দুইটি সেতু চালু হওয়ার পরও দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণবঙ্গের যে দুটি জেলাবাসী বিন্দুমাত্র লাভবান হয়নি (মোট দূরত্ব কমেনি বা যাতায়াতের সময় বাঁচেনি), সেই দুটি দুর্ভাগা জেলা হলো চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। এই দুই জেলাবাসীর চলাচলের কষ্ট কিছুটা লাঘবের জন্য সান্ত্বনাস্বরূপ হলেও সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী দুটি (নিদেনপক্ষে একটি) ট্রেন চালু করা দরকার। কিন্তু সেদিকে কারো ন্যূনতম সুদৃষ্টি নেই।

কিছুদিন আগে পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার তিতুদহ-বেগমপুর এলাকার কৃতীসন্তান। বর্তমানে যমুনা সেতুর পাশ দিয়ে আলাদাভাবে যে রেল সেতু নির্মিত হচ্ছে, সেই প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহসান জাব্বির সুজন চুয়াডাঙ্গার কৃতীসন্তান। সমগ্র রেলওয়ের টিকেটিং ব্যবস্থা সুনিপুণ হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার আরেক কৃতীসন্তান নাহিদ হাসান খান নিপু। কিন্তু তারপরও চুয়াডাঙ্গাবাসীর আশা তথা দাবি পূরণ হচ্ছে না (স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কথা বরং উহ্যই থাক)! অনেকেরই হয়ত জানা নেই যে, চুয়াডাঙ্গার কৃতীসন্তান এম এ বারী (২৪.৫.১৯০১- ২৮.১০.১৯৭১) ছিলেন অবিভক্ত নদীয়ার প্রথম মুসলমান প্রকৌশলী। যিনি ১৯৪৭ সালে দেশভাগেরও আগে পূর্ববঙ্গ রেলওয়েতে যোগ দিয়ে পর্যায়ক্রমে জেনারেল ম্যানেজার (মানে পূর্ববঙ্গ রেলওয়ের প্রধান) পদে সুদীর্ঘকাল সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অথচ তাঁর নিজ জেলা (তৎকালীন মহকুমা) কতটা অবহেলিত!

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সদরসহ বিভিন্ন প্রান্তিক জনপদ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ২৫০টি কোচ-বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সমপরিমাণ পরিবহন ঢাকা থেকে যাত্রী বয়ে নিয়ে আসে। এই ৫০০ ট্রিপ-এ প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ যাওয়া-আসা করেন। এঁদের চলাচলের কষ্ট লাঘব তথা সুবিধার জন্য অন্তত একটি ট্রেন বরাদ্দ করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব নয় কি?

আমরা জীবননগর, দর্শনা, দামুড়হুদা, মুজিবনগর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গাবাসী রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দিনে-রাতে যোগাযোগ রক্ষাকারী পৃথক দুটি ট্রেন চাই। এই দাবি আদায় করে দিতে না পারলে স্থানীয় কোনো রাজনৈতিক নেতার দরকার নাই (তাঁরা যেন আগামীতে আমাদের কাছে ভোট চাইতে না আসেন)! তবে ট্রেন চালু করা সম্ভব হলে সেই ট্রেনের নাম যদি ‘মুজিবনগর এক্সপ্রেস’ অথবা ‘দর্শনা এক্সপ্রেস’ অথবা ‘মাথাভাঙ্গা এক্সপ্রেস’ অথবা ‘প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেস’ অথবা ‘এম এ বারী এক্সপ্রেস’, এমনকি ‘টগর এক্সপ্রেস’ বা ‘ছেলুন এক্সপ্রেস’ রাখা হয়, তাতেও আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। যে নামেই ডাকুন না কেন, আমরা রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী নিজস্ব ট্রেন চাই- এটাই আমাদের শেষ কথা।