ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ত্রাণসামগ্রী সংকটে সরকার!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০২০
  • / ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

* শুকনা খাবারে সোয়া কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে
* অর্থবছর শেষ হলেও এখনো হয়নি কেনাকাটা
* ঢেউটিন কেনাকাটাও আটকে গেছে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশে সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হয়। এ সময়টাকে ত্রাণ বিতরণের পিকটাইম ধরে প্রতি বছর আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী কিনে রাখে সরকার; কিন্তু এ বছর দরপত্রের জটিলতায় ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হলেও সেই কেনাকাটায় করতে পারেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এতে চরম ত্রাণসামগ্রী সংকটে পড়তে যাচ্ছে সরকারকে। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং মাঠ প্রশাসনসংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, করোনা মহামারির মধ্যেই দেশে ইতোমধ্যে ১০টি জেলা বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে। সেখানে কয়েক লাখ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। সেসব জেলায় শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সেখানে ত্রাণ বিতরণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর কারণ হিসেবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, চাহিদা দেওয়ার পরও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছেন না তারা। ত্রাণ অধিদপ্তরসংশ্লিষ্টরা বলেন, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের সহযোগিতার জন্য আগের বছরই ১৭০ কোটি টাকার ঢেউটিন, শুকনা খাবার ও কম্বল ক্রয় করে সরকার; কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হলেও এ অর্থবছরের কেনাকাটা শেষ করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। গত জানুয়ারিতে এসব কেনাকাটার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে ক্রয় কমিটির সভাপতি নিয়োগ দেওয়ায় বাদ সাধে মন্ত্রণালয়। এরপর আবারও রি-টেন্ডার করা হয়। অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানিতে বছর শেষ হয়ে গেলেও এখনো হয়নি কেনাকাটা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য অসহায় মানুষের জন্য গত জানুয়ারিতে ৫টি প্যাকেজে ৭৫ কোটি টাকার ঢেউটিন ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। টেন্ডারে ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। গত ৩০ জানুয়ারি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে ৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের নমুনা ঢেউটিনের বুয়েট কর্তৃক গুণগতমান পরীক্ষায় যাচিত মান সঠিক না পাওয়ায় এবং দাখিলকৃত কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে নন-রেসপনসিভ করা হয়। আর ৫টি প্যাকেজে ই কে ওয়াই স্টিল মিলস লিমিটেডকে রেসপনসিভ করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে ক্রয় কমিটি সভাপতি মনোনয়ন দেওয়ায় সে প্রস্তাব অনুমোদন করেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয় মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে।
গত ৩০ মার্চ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, মহাপরিচালক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন সংক্রান্ত যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা যুক্তিসংগত এবং গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ দরপত্রটি ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হওয়ায় বিষয়টি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তুলতে হয়। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঢেউটিন ক্রয়ের স্পেসিফিকেশন এবং প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করে এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে যুগ্ম সচিব এ কে এম টিপু সুলতানকে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্যোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাকে মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি করে, যা বিধিবহির্ভূত। এ অবস্থায় পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর-২০০৮ এর সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন করে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করে চিঠিতে।
সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আমলে নিয়ে দরপত্র মূল্যায়নে নতুন কমিটিকে আবারও দরপত্র আহ্বান করে অধিদপ্তর। নতুন এ কমিটি আগের কমিটি নমুনা ঢেউটিনের বুয়েট কর্তৃক গুণগতমান পরীক্ষায় যাচিত মান সঠিক না পাওয়ায় এবং দাখিলকৃত কাগজপত্র সঠিক না থাকায় নন-রেসপনসিভ হওয়া কর্ণফুলী গ্যালভানাইজিং মিলস লিমিটেডকে ৪টি প্যাকেজে এবং আগের মূল্যায়ন কমিটির ৫টি প্যাকেজেই রেসপনসিভ হওয়া কে.ওয়াই স্টিল মিলস লিমিটেডকে ১ প্যাকেজে রেসপনসিভ করে কাজ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। এরই মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোহসিনকে পদোন্নতি দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। গত সোমবার তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন।
এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বলেন, আমি দুদিন হলো যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। কেনাকাটার সর্বশেষ পরিস্থিতি কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনো পরিচিতি পর্বই শেষ করতে পারেনি, কেনাকাটার বিষয়ে কীভাবে বলল? সদ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মহাপরিচালক থেকে অবমুক্ত হয়ে সদ্য সচিব হওয়া মো. মোহসিন বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান নন-রেসপনসিভ হলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে দ্রম্নত ত্রাণ কেনার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
দুর্যোগ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এর আগের বছরগুলোতে প্রতি বান্ডেল ঢেউটিন ক্রয় করা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকায়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানগুলো টেন্ডারে দর দিয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার টাকায়। দর কমিটির দর রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, তার থেকে কম মূল্যে দিচ্ছে আগের টেন্ডারে নন-রেসপনসিভ হওয়া দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে শুকনা খাবার চাল, ডাল, লবণ, চিনি, চিড়া, সয়াবিন তেল, নুডলসের জন্য ৫টি লটে দরপত্র আহ্বান করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। গত ১ জুন দরপত্র খোলা হয়। এতে দেখা যায়, মেসার্স সরদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২টি লটে, মেসার্স সাম সিন্ডিকেট লিমিটেড ২টি লটে এবং বাকি ১টি লটে সফটাচ নেটওয়ার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হন। এর মধ্যে ৬নং প্যাকেজে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স সরদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স নওশী ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ৮নং প্যাকেজে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স সরদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স আলাল এগ্রোফুড প্রডাক্ট লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় সোয়া কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ত্রাণসামগ্রী সংকটে সরকার!

আপলোড টাইম : ১০:১৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০২০

* শুকনা খাবারে সোয়া কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে
* অর্থবছর শেষ হলেও এখনো হয়নি কেনাকাটা
* ঢেউটিন কেনাকাটাও আটকে গেছে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশে সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হয়। এ সময়টাকে ত্রাণ বিতরণের পিকটাইম ধরে প্রতি বছর আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী কিনে রাখে সরকার; কিন্তু এ বছর দরপত্রের জটিলতায় ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হলেও সেই কেনাকাটায় করতে পারেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এতে চরম ত্রাণসামগ্রী সংকটে পড়তে যাচ্ছে সরকারকে। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং মাঠ প্রশাসনসংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, করোনা মহামারির মধ্যেই দেশে ইতোমধ্যে ১০টি জেলা বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে। সেখানে কয়েক লাখ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। সেসব জেলায় শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সেখানে ত্রাণ বিতরণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর কারণ হিসেবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, চাহিদা দেওয়ার পরও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছেন না তারা। ত্রাণ অধিদপ্তরসংশ্লিষ্টরা বলেন, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের সহযোগিতার জন্য আগের বছরই ১৭০ কোটি টাকার ঢেউটিন, শুকনা খাবার ও কম্বল ক্রয় করে সরকার; কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হলেও এ অর্থবছরের কেনাকাটা শেষ করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। গত জানুয়ারিতে এসব কেনাকাটার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে ক্রয় কমিটির সভাপতি নিয়োগ দেওয়ায় বাদ সাধে মন্ত্রণালয়। এরপর আবারও রি-টেন্ডার করা হয়। অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানিতে বছর শেষ হয়ে গেলেও এখনো হয়নি কেনাকাটা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য অসহায় মানুষের জন্য গত জানুয়ারিতে ৫টি প্যাকেজে ৭৫ কোটি টাকার ঢেউটিন ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। টেন্ডারে ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। গত ৩০ জানুয়ারি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে ৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের নমুনা ঢেউটিনের বুয়েট কর্তৃক গুণগতমান পরীক্ষায় যাচিত মান সঠিক না পাওয়ায় এবং দাখিলকৃত কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে নন-রেসপনসিভ করা হয়। আর ৫টি প্যাকেজে ই কে ওয়াই স্টিল মিলস লিমিটেডকে রেসপনসিভ করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে ক্রয় কমিটি সভাপতি মনোনয়ন দেওয়ায় সে প্রস্তাব অনুমোদন করেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয় মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে।
গত ৩০ মার্চ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, মহাপরিচালক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন সংক্রান্ত যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা যুক্তিসংগত এবং গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ দরপত্রটি ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হওয়ায় বিষয়টি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তুলতে হয়। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঢেউটিন ক্রয়ের স্পেসিফিকেশন এবং প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করে এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে যুগ্ম সচিব এ কে এম টিপু সুলতানকে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্যোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাকে মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি করে, যা বিধিবহির্ভূত। এ অবস্থায় পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর-২০০৮ এর সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন করে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করে চিঠিতে।
সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আমলে নিয়ে দরপত্র মূল্যায়নে নতুন কমিটিকে আবারও দরপত্র আহ্বান করে অধিদপ্তর। নতুন এ কমিটি আগের কমিটি নমুনা ঢেউটিনের বুয়েট কর্তৃক গুণগতমান পরীক্ষায় যাচিত মান সঠিক না পাওয়ায় এবং দাখিলকৃত কাগজপত্র সঠিক না থাকায় নন-রেসপনসিভ হওয়া কর্ণফুলী গ্যালভানাইজিং মিলস লিমিটেডকে ৪টি প্যাকেজে এবং আগের মূল্যায়ন কমিটির ৫টি প্যাকেজেই রেসপনসিভ হওয়া কে.ওয়াই স্টিল মিলস লিমিটেডকে ১ প্যাকেজে রেসপনসিভ করে কাজ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। এরই মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোহসিনকে পদোন্নতি দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। গত সোমবার তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন।
এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বলেন, আমি দুদিন হলো যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। কেনাকাটার সর্বশেষ পরিস্থিতি কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনো পরিচিতি পর্বই শেষ করতে পারেনি, কেনাকাটার বিষয়ে কীভাবে বলল? সদ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মহাপরিচালক থেকে অবমুক্ত হয়ে সদ্য সচিব হওয়া মো. মোহসিন বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান নন-রেসপনসিভ হলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে দ্রম্নত ত্রাণ কেনার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
দুর্যোগ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এর আগের বছরগুলোতে প্রতি বান্ডেল ঢেউটিন ক্রয় করা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকায়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানগুলো টেন্ডারে দর দিয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার টাকায়। দর কমিটির দর রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, তার থেকে কম মূল্যে দিচ্ছে আগের টেন্ডারে নন-রেসপনসিভ হওয়া দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে শুকনা খাবার চাল, ডাল, লবণ, চিনি, চিড়া, সয়াবিন তেল, নুডলসের জন্য ৫টি লটে দরপত্র আহ্বান করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। গত ১ জুন দরপত্র খোলা হয়। এতে দেখা যায়, মেসার্স সরদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২টি লটে, মেসার্স সাম সিন্ডিকেট লিমিটেড ২টি লটে এবং বাকি ১টি লটে সফটাচ নেটওয়ার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হন। এর মধ্যে ৬নং প্যাকেজে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স সরদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স নওশী ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ৮নং প্যাকেজে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স সরদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স আলাল এগ্রোফুড প্রডাক্ট লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় সোয়া কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে।