ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তীর্থে গিয়ে ভারতে হারিয়ে যাওয়া সফলা নাথ ফিরে পেল পরিবার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৪৮৪ বার পড়া হয়েছে

মানবিকতার পরিচয় দিলো পারকৃষ্ণপুরের মাছুরা বেগম
ওয়াসিম রয়েল: সনাতন ধর্মের প্রথা অনুযায়ী তীর্থে যাওয়া আবশ্যক। আর এ তীর্থে গিয়ে ভারতের বৃন্দাবনে হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ১বছর পর বাংলাদেশী নাগরিক সফলা নাথ (৭৫) ফিরে পেল তার পরিবার। একটি মানুষ যখন বিপদে পড়ে তার পাশে থেকে উপকার করাই বড় ধর্ম। ঠিক তেমনি ধর্মের কথা চিন্তা না করে অন্য ধর্মের একজন পথভ্রষ্ট বৃদ্ধাকে উপকার করে চরম মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন পারকৃষ্ণপুর গ্রামের মাছুরা বেগম।
জানা যায়, গত বছর ৯ নভেম্বর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বাশখালী থানার দক্ষিণ পালেক গ্রামের নাথপাড়ার সনাতন ধর্মের ১২০ জনের একটি দল বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ধর্মীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য তীর্থে যায় ভারতে। এ দলের মধ্যে একই এলাকার মৃত অবন্ন নাথের স্ত্রী সফলা নাথও যায় ওই দলে। সফলা নাথ বৃদ্ধা হওয়ায় তার এক প্রতিবেশী দেখভালের দায়িক্ত নেয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর সফলা নাথ ভারতের বৃন্দাবন তীর্থ স্থান থেকে মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যায়। এসময় সফলা নাথের পাসপোর্ট দেখভাল করা ওই প্রতিবেশীর কাছে থেকে যায়। অনেক খোঁজার পর সফলা নাথের কোন খোঁজ না পেয়ে দলটি ফিরে আসে বাংলাদেশে। এরই মধ্যে সফলাকে ভারতের পুলিশ আটক করে। পাসপোর্ট না থাকায় অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের দ্বায়ে জেলে পাঠায় তাকে।
সফলা নাথ জানায় দীর্ঘ প্রায় ১ বছর জেল খেটে গত রবিবার ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশের বরিশালের জনৈক ৪ ব্যক্তির কাছে একটি চিরকুট লিখে তাদের সাথে বাংলাদেশে পাঠায়। এ সময় ওই ৪ জন ব্যক্তি সফলাকে গেদে জয়নগর সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসে দর্শনায়। এ সময় ওই বৃদ্ধার কাছে দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে যাওয়ার টাকা না থাকায় ওই ৪ ব্যক্তি দর্শনা হল্ট স্টেশনে ফেলে রাজশাহীগামী সাগরদাঁড়ী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে চলে যায়। একদিকে যেমন কোন টাকা নেই ওই বৃদ্ধার কাছে, অন্যদিকে পেটেও ক্ষুদার যন্ত্রণায় ছটপট করছে সফলা নাথ নামের ওই বৃদ্ধা। এ সময় সফলা নাথ দর্শনা হল্ট স্টেশনে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষার পর যখন কোন উপায় খুজে না পায় তখন বিভিন্ন যাত্রীদের ধরে কান্নাকাটি শুরু করে। এসময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে দর্শনা পারকৃষ্ণপুর গ্রামের পুরাতন মসজিদ পাড়ার মৃত আবু তাহেরের স্ত্রী মাছুরা খাতুন তার পিতার বাড়ি আলমডাঙ্গা যাওয়ার জন্য হল্ট স্টেশনে আসে। বৃদ্ধা সফলা নাথের কান্না দেখে তার মনের মধ্যে মানবিকতার দরজা কড়া নাড়ে। এসময় স্থানীয় সকলের সম্মতিক্রমে মাছুরা খাতুন পিতার বাড়িতে না গিয়ে সফলা নাথ নিজ বাড়ি পারকৃষ্ণপুরে নিয়ে যায়। মাছুরা খাতুনের ছেলে আল আমিন হোসেন মুন্না গ্রামীন ব্যাংকে চাকুরী করে।
এ বিষয়ে মুন্না বাড়িতে এসে ঘটনা শোনার পরদিন চট্টগ্রাম সরলা বাসখালী শাখার গ্রামীণ ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলে। পরে ওই ম্যানেজার এলাকার বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে সফলা নাথের পরিবারের খোঁজ পায়। এসময় সফলা নাথের পরিবারের সাথে ভিডিও কলে ছবি দেখালে পরিবারের সদস্যরা চিনে ফেলে। পরে সফলার ছেলে প্রদিপ দেবনাথ চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে গতকাল দুপুরের দিকে দর্শনা পারকৃষ্ণপুর আসে তার মাকে নিতে। গতকাল রাতে তারা দর্শনা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তাকে ফেরত দেয়ার পর পারকৃষ্ণপুর গ্রামের আশ্রয়দানকারী মাছুরা বেগম তার ছেলে মুন্না ও সাগরসহ পরিবারের সকল সদস্যদের মনে সস্তি ফিরে আসে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

তীর্থে গিয়ে ভারতে হারিয়ে যাওয়া সফলা নাথ ফিরে পেল পরিবার

আপলোড টাইম : ০৯:৪৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

মানবিকতার পরিচয় দিলো পারকৃষ্ণপুরের মাছুরা বেগম
ওয়াসিম রয়েল: সনাতন ধর্মের প্রথা অনুযায়ী তীর্থে যাওয়া আবশ্যক। আর এ তীর্থে গিয়ে ভারতের বৃন্দাবনে হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ১বছর পর বাংলাদেশী নাগরিক সফলা নাথ (৭৫) ফিরে পেল তার পরিবার। একটি মানুষ যখন বিপদে পড়ে তার পাশে থেকে উপকার করাই বড় ধর্ম। ঠিক তেমনি ধর্মের কথা চিন্তা না করে অন্য ধর্মের একজন পথভ্রষ্ট বৃদ্ধাকে উপকার করে চরম মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন পারকৃষ্ণপুর গ্রামের মাছুরা বেগম।
জানা যায়, গত বছর ৯ নভেম্বর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বাশখালী থানার দক্ষিণ পালেক গ্রামের নাথপাড়ার সনাতন ধর্মের ১২০ জনের একটি দল বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ধর্মীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য তীর্থে যায় ভারতে। এ দলের মধ্যে একই এলাকার মৃত অবন্ন নাথের স্ত্রী সফলা নাথও যায় ওই দলে। সফলা নাথ বৃদ্ধা হওয়ায় তার এক প্রতিবেশী দেখভালের দায়িক্ত নেয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর সফলা নাথ ভারতের বৃন্দাবন তীর্থ স্থান থেকে মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যায়। এসময় সফলা নাথের পাসপোর্ট দেখভাল করা ওই প্রতিবেশীর কাছে থেকে যায়। অনেক খোঁজার পর সফলা নাথের কোন খোঁজ না পেয়ে দলটি ফিরে আসে বাংলাদেশে। এরই মধ্যে সফলাকে ভারতের পুলিশ আটক করে। পাসপোর্ট না থাকায় অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের দ্বায়ে জেলে পাঠায় তাকে।
সফলা নাথ জানায় দীর্ঘ প্রায় ১ বছর জেল খেটে গত রবিবার ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশের বরিশালের জনৈক ৪ ব্যক্তির কাছে একটি চিরকুট লিখে তাদের সাথে বাংলাদেশে পাঠায়। এ সময় ওই ৪ জন ব্যক্তি সফলাকে গেদে জয়নগর সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসে দর্শনায়। এ সময় ওই বৃদ্ধার কাছে দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে যাওয়ার টাকা না থাকায় ওই ৪ ব্যক্তি দর্শনা হল্ট স্টেশনে ফেলে রাজশাহীগামী সাগরদাঁড়ী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে চলে যায়। একদিকে যেমন কোন টাকা নেই ওই বৃদ্ধার কাছে, অন্যদিকে পেটেও ক্ষুদার যন্ত্রণায় ছটপট করছে সফলা নাথ নামের ওই বৃদ্ধা। এ সময় সফলা নাথ দর্শনা হল্ট স্টেশনে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষার পর যখন কোন উপায় খুজে না পায় তখন বিভিন্ন যাত্রীদের ধরে কান্নাকাটি শুরু করে। এসময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে দর্শনা পারকৃষ্ণপুর গ্রামের পুরাতন মসজিদ পাড়ার মৃত আবু তাহেরের স্ত্রী মাছুরা খাতুন তার পিতার বাড়ি আলমডাঙ্গা যাওয়ার জন্য হল্ট স্টেশনে আসে। বৃদ্ধা সফলা নাথের কান্না দেখে তার মনের মধ্যে মানবিকতার দরজা কড়া নাড়ে। এসময় স্থানীয় সকলের সম্মতিক্রমে মাছুরা খাতুন পিতার বাড়িতে না গিয়ে সফলা নাথ নিজ বাড়ি পারকৃষ্ণপুরে নিয়ে যায়। মাছুরা খাতুনের ছেলে আল আমিন হোসেন মুন্না গ্রামীন ব্যাংকে চাকুরী করে।
এ বিষয়ে মুন্না বাড়িতে এসে ঘটনা শোনার পরদিন চট্টগ্রাম সরলা বাসখালী শাখার গ্রামীণ ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলে। পরে ওই ম্যানেজার এলাকার বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে সফলা নাথের পরিবারের খোঁজ পায়। এসময় সফলা নাথের পরিবারের সাথে ভিডিও কলে ছবি দেখালে পরিবারের সদস্যরা চিনে ফেলে। পরে সফলার ছেলে প্রদিপ দেবনাথ চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে গতকাল দুপুরের দিকে দর্শনা পারকৃষ্ণপুর আসে তার মাকে নিতে। গতকাল রাতে তারা দর্শনা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তাকে ফেরত দেয়ার পর পারকৃষ্ণপুর গ্রামের আশ্রয়দানকারী মাছুরা বেগম তার ছেলে মুন্না ও সাগরসহ পরিবারের সকল সদস্যদের মনে সস্তি ফিরে আসে।