ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তালাক দেওয়ার পরেও গৃহবধূকে নির্যাতন!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৬:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৯৭ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের শাহানাজ খাতুন নামের এক গৃহবধূকে তালাক দেওয়ার পরেও বাড়িতে আটকে রেখে প্রায় একমাস ধরে নির্যাতন করেছে ওই গৃহবধূর সাবেক স্বামী সামির হাসান সুমন ও তার বাড়ির লোকজন বলে অভিযোগ উঠেছে। শাহানাজ খাতুন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শাহাজানের মেয়ে। অবশেষে মুজিবনগর এলাকবাসির সহযোগিতায় শাহানাজের পরিবারের লোকজন তাকে মুক্ত করেছে বলে জানায় তার পরিবারের লোকজন। তবে মুজিবনগর থানায় এবিষয়ে অভিযোগ দিয়ে কোনো সুরাহা পায়নি শাহানাজ ও তার পরিবার।
শাহানাজ খাতুন জানায়, প্রায় ৮ বছর পূর্বে মুজিবনগর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের মুজিবার রহমানের ছেলে সামির হাসান সুমনের সাথে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের বছর ঘুরতেই আমাদের ঘর আলো করে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম নেয়। মেয়ের জন্মের পর তাদের সংসারে নেমে আসে অশান্তি। শুরু হয় আমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তখন আমি জানতে পারে তার বিয়ের আগে থেকেই সুমনের সাথে পাশের বাড়ির আশকার মন্ডলের মেয়ে পাখিছনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি আমি মেনে নিয়ে সুমনকে বুঝিয়ে পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। পাখিছনের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাটায় আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। শুরু হয় আমার ওপর সুমনের অমানুষিক অত্যাচার। একপর্যায়ে গত ১ বছর আগে সুমন আমাকে তালাক দেয়। এরপর স্থানীয় সালিশির মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করে আমাকে পুনরায় ঘরে তুলে নেয়। ঘরে তোলার পর থেকে সুমন ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শুরু করে। আমার পরিবার তাদের চাহিদামত যৌতুক দেবার পরও আমার স্বামী ও শ^শুর পরিবারের লোকজন নির্যাতন বন্ধ করেনি। এরপর গত ১ নভেম্বর সুমন তার পুরানো প্রেমিকাকে নিয়ে উধাও হয়। এরপর থেকে আমি কোনোভাবে তার খবর পাচ্ছিলাম না। এর কয়েকদিন পর আমি জানতে পারি সুমন তার পুরানো প্রেমিকা পাখিছনকে বিয়ে করেছে। আমি তাও মেনে নিয়ে চুপ ছিলাম। কিন্তু সে আমাকে গত ৬ ডিসেম্বর তালাক দেয়। তালাক দেওয়ার পর আমি আমার বাবার বাড়ি চলে যেতে চাইলে সুমনের বাড়ির লোকজন আমাকে আটকে রাখে। সুমনের বাড়ির লোকজন আমাকে বলে যতদিন পর্যন্ত সুমন বাসায় না ফিরবে ততদিন পর্যন্ত আমাকে বাপের বাড়িতে যেতে দিবে না। এরপর গতকাল শনিবার আমার পরিবারের লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে।
শাহানাজের মা ফাতেমা খাতুন জানান, প্রায় ৮ বছর আগে পারিবারিকভাবে আমরা সুমনের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিই। বিয়ের পর মেয়ের সুখের কথা ভেবে সুমনকে একটি মোটরসাইকেল, একটি ল্যাপটপ, সোনার আংটি ও চেনসহ ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র দিই। বিয়ের কয়েকবছর পর আবারও তাকে একটি দোকান নেওয়ার জন্য নগদ দেড় লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। তারপরও সুমন আমার মেয়েকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে থাকে। স্থানীয়দের সাথে কয়েকবার বসে মিমাংসা করে মেয়েকে তার কাছে রেখে আসি। কিন্তু ২ মাস মত আগে সে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে পাশের বাড়ির একটি মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে ২য় বিয়ে করে। তাকে (সুমন) চলে আসতে বলেও সে আমার মেয়ের কাছে ফিরে না আসায় আমরা আমার মেয়েকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে চিরদিনের জন্য নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি।
অভিযুক্ত সুমন বলেন, আটকিয়ে রাখাসহ সকল অভিযোগ মিথ্যা। সে এখানে এমনিই ছিল। গতকাল তার পরিবারের লোকজনসহ কয়েকজন এলাকাবাসী এসে তাকে নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, শাহানাজকে আমি তালাক দিয়েছি। তার প্রাপ্ত খরপোশসহ পাওনাদি মিটিয়ে দেওয়া হবে।
এব্যাপারে মুজিবনগর থানার ডিউটি আফিসার জানান, এ বিষয়টি তদন্ত করে মিটমাটের জন্য মুজিবনগর থানায় বসেছি। কিন্তু সুমনের পরিবার তারা খারাপ প্রকৃতির লোক হওয়ায় বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব হয়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

তালাক দেওয়ার পরেও গৃহবধূকে নির্যাতন!

আপলোড টাইম : ১০:২৬:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ জানুয়ারী ২০২১

প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের শাহানাজ খাতুন নামের এক গৃহবধূকে তালাক দেওয়ার পরেও বাড়িতে আটকে রেখে প্রায় একমাস ধরে নির্যাতন করেছে ওই গৃহবধূর সাবেক স্বামী সামির হাসান সুমন ও তার বাড়ির লোকজন বলে অভিযোগ উঠেছে। শাহানাজ খাতুন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শাহাজানের মেয়ে। অবশেষে মুজিবনগর এলাকবাসির সহযোগিতায় শাহানাজের পরিবারের লোকজন তাকে মুক্ত করেছে বলে জানায় তার পরিবারের লোকজন। তবে মুজিবনগর থানায় এবিষয়ে অভিযোগ দিয়ে কোনো সুরাহা পায়নি শাহানাজ ও তার পরিবার।
শাহানাজ খাতুন জানায়, প্রায় ৮ বছর পূর্বে মুজিবনগর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের মুজিবার রহমানের ছেলে সামির হাসান সুমনের সাথে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের বছর ঘুরতেই আমাদের ঘর আলো করে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম নেয়। মেয়ের জন্মের পর তাদের সংসারে নেমে আসে অশান্তি। শুরু হয় আমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তখন আমি জানতে পারে তার বিয়ের আগে থেকেই সুমনের সাথে পাশের বাড়ির আশকার মন্ডলের মেয়ে পাখিছনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি আমি মেনে নিয়ে সুমনকে বুঝিয়ে পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। পাখিছনের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাটায় আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। শুরু হয় আমার ওপর সুমনের অমানুষিক অত্যাচার। একপর্যায়ে গত ১ বছর আগে সুমন আমাকে তালাক দেয়। এরপর স্থানীয় সালিশির মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করে আমাকে পুনরায় ঘরে তুলে নেয়। ঘরে তোলার পর থেকে সুমন ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শুরু করে। আমার পরিবার তাদের চাহিদামত যৌতুক দেবার পরও আমার স্বামী ও শ^শুর পরিবারের লোকজন নির্যাতন বন্ধ করেনি। এরপর গত ১ নভেম্বর সুমন তার পুরানো প্রেমিকাকে নিয়ে উধাও হয়। এরপর থেকে আমি কোনোভাবে তার খবর পাচ্ছিলাম না। এর কয়েকদিন পর আমি জানতে পারি সুমন তার পুরানো প্রেমিকা পাখিছনকে বিয়ে করেছে। আমি তাও মেনে নিয়ে চুপ ছিলাম। কিন্তু সে আমাকে গত ৬ ডিসেম্বর তালাক দেয়। তালাক দেওয়ার পর আমি আমার বাবার বাড়ি চলে যেতে চাইলে সুমনের বাড়ির লোকজন আমাকে আটকে রাখে। সুমনের বাড়ির লোকজন আমাকে বলে যতদিন পর্যন্ত সুমন বাসায় না ফিরবে ততদিন পর্যন্ত আমাকে বাপের বাড়িতে যেতে দিবে না। এরপর গতকাল শনিবার আমার পরিবারের লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে।
শাহানাজের মা ফাতেমা খাতুন জানান, প্রায় ৮ বছর আগে পারিবারিকভাবে আমরা সুমনের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিই। বিয়ের পর মেয়ের সুখের কথা ভেবে সুমনকে একটি মোটরসাইকেল, একটি ল্যাপটপ, সোনার আংটি ও চেনসহ ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র দিই। বিয়ের কয়েকবছর পর আবারও তাকে একটি দোকান নেওয়ার জন্য নগদ দেড় লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। তারপরও সুমন আমার মেয়েকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে থাকে। স্থানীয়দের সাথে কয়েকবার বসে মিমাংসা করে মেয়েকে তার কাছে রেখে আসি। কিন্তু ২ মাস মত আগে সে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে পাশের বাড়ির একটি মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে ২য় বিয়ে করে। তাকে (সুমন) চলে আসতে বলেও সে আমার মেয়ের কাছে ফিরে না আসায় আমরা আমার মেয়েকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে চিরদিনের জন্য নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি।
অভিযুক্ত সুমন বলেন, আটকিয়ে রাখাসহ সকল অভিযোগ মিথ্যা। সে এখানে এমনিই ছিল। গতকাল তার পরিবারের লোকজনসহ কয়েকজন এলাকাবাসী এসে তাকে নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, শাহানাজকে আমি তালাক দিয়েছি। তার প্রাপ্ত খরপোশসহ পাওনাদি মিটিয়ে দেওয়া হবে।
এব্যাপারে মুজিবনগর থানার ডিউটি আফিসার জানান, এ বিষয়টি তদন্ত করে মিটমাটের জন্য মুজিবনগর থানায় বসেছি। কিন্তু সুমনের পরিবার তারা খারাপ প্রকৃতির লোক হওয়ায় বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব হয়নি।