ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তরুণ ভোটারদের অদম্য ভূমিকার প্রত্যাশা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮
  • / ৩২৩ বার পড়া হয়েছে

প্রায় ১০ বছর পর দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনেক জল্পনা ও আশঙ্কা সত্ত্বেও দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও সকলের প্রত্যাশা অনুসারে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মূল শর্ত। অদ্যাবধি সুষ্ঠু নির্বাচনের সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশের অধিকাংশ স্থানে ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকরা দাঁড়াতেই পারছে না। একদিকে পুলিশি হয়রানি, মামলা, গণগ্রেফতার অন্যদিকে সরকারদলীয় ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়ে প্রতিদিন বিরোধীদলের শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার ও হতাহত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে একপাক্ষিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশাকে সুদূরপরাহত করে তুলেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় শক্ত হাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বদলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে বলে সাফাই গাইছেন। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি পুরোপুরি একপাক্ষিক। ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সরকারি দলের ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই। নির্বাচনের মাঠে এসব ক্যাডাররা বিরোধীদলের কোনো নির্বাচনী কার্যক্রমই সহ্য করতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ ও আইনানুগ ভূমিকা পালনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে দৃশ্যমান। দেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসী যখন বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফলাফল দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন দেশের মানুষের আশ্রয়স্থল পুলিশ ভিনদেশি বাহিনীর মতো ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করছে। মানুষ আশা করেছিল, সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর নির্বাচনের পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে। বিরোধীদলের প্রার্থী ও সমর্থকরা নিরাপদে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাবে। গত ৪ দিনেও জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সেনাবাহিনী মাঠে নামার পরও বিরোধীদলের প্রার্থী ও সমর্থকরা মার খাচ্ছে। গতকাল দেশের উত্তরাঞ্চলে ধানের শীষের একজন প্রার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এহেন পরিস্থিতি কিছুতেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে পারে না। এখনো সময় আছে দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের প্রত্যাশা অনুসারে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া এবং ভোটে জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও সরকারি দলকে আইনানুগ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার। এতকিছুর পরও দেশের মানুষ ভোটের জন্য অপেক্ষমান। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার রয়েছে যারা গত ১০ বছরে কোনো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক জীবনে প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছে। তাছাড়া বয়সের বিচারে দেশের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের অর্ধেকেরই বয়েস ১৮ থেকে ৪০ বছর। এই বিপুল সংখ্যক ভোটার এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষ একটি গণতান্ত্রিক, উন্নয়নমুখী ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণের সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিবেশ এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল নয়। পুলিশের ধরপাকড় ও সরকারি দলের প্রতি পক্ষপাত জনমনে এক ধরনের ভীতি ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে। এরপরও কোটি মানুষ ভোট দিতে যার যার এলাকায় চলে যেতে শুরু করেছে। একদিকে কোটি কোটি তরুণ সচেতন ভোটার, অন্যদিকে এখনো সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। এই দুই অদম্য শক্তির কাছে ভয়ভীতি, ভোট কারচুপি ও সন্ত্রাসের যে কোনো নীলনকশা পরাস্ত হতে বাধ্য। শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জয় হবে, এটাই মানুষের একান্ত প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

তরুণ ভোটারদের অদম্য ভূমিকার প্রত্যাশা

আপলোড টাইম : ১০:২৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রায় ১০ বছর পর দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনেক জল্পনা ও আশঙ্কা সত্ত্বেও দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও সকলের প্রত্যাশা অনুসারে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মূল শর্ত। অদ্যাবধি সুষ্ঠু নির্বাচনের সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশের অধিকাংশ স্থানে ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকরা দাঁড়াতেই পারছে না। একদিকে পুলিশি হয়রানি, মামলা, গণগ্রেফতার অন্যদিকে সরকারদলীয় ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়ে প্রতিদিন বিরোধীদলের শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার ও হতাহত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে একপাক্ষিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশাকে সুদূরপরাহত করে তুলেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় শক্ত হাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বদলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে বলে সাফাই গাইছেন। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি পুরোপুরি একপাক্ষিক। ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সরকারি দলের ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই। নির্বাচনের মাঠে এসব ক্যাডাররা বিরোধীদলের কোনো নির্বাচনী কার্যক্রমই সহ্য করতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ ও আইনানুগ ভূমিকা পালনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে দৃশ্যমান। দেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসী যখন বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফলাফল দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন দেশের মানুষের আশ্রয়স্থল পুলিশ ভিনদেশি বাহিনীর মতো ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করছে। মানুষ আশা করেছিল, সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর নির্বাচনের পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে। বিরোধীদলের প্রার্থী ও সমর্থকরা নিরাপদে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাবে। গত ৪ দিনেও জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সেনাবাহিনী মাঠে নামার পরও বিরোধীদলের প্রার্থী ও সমর্থকরা মার খাচ্ছে। গতকাল দেশের উত্তরাঞ্চলে ধানের শীষের একজন প্রার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এহেন পরিস্থিতি কিছুতেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে পারে না। এখনো সময় আছে দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের প্রত্যাশা অনুসারে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া এবং ভোটে জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও সরকারি দলকে আইনানুগ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার। এতকিছুর পরও দেশের মানুষ ভোটের জন্য অপেক্ষমান। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার রয়েছে যারা গত ১০ বছরে কোনো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক জীবনে প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছে। তাছাড়া বয়সের বিচারে দেশের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের অর্ধেকেরই বয়েস ১৮ থেকে ৪০ বছর। এই বিপুল সংখ্যক ভোটার এবং দেশের ১৬ কোটি মানুষ একটি গণতান্ত্রিক, উন্নয়নমুখী ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণের সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিবেশ এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল নয়। পুলিশের ধরপাকড় ও সরকারি দলের প্রতি পক্ষপাত জনমনে এক ধরনের ভীতি ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে। এরপরও কোটি মানুষ ভোট দিতে যার যার এলাকায় চলে যেতে শুরু করেছে। একদিকে কোটি কোটি তরুণ সচেতন ভোটার, অন্যদিকে এখনো সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। এই দুই অদম্য শক্তির কাছে ভয়ভীতি, ভোট কারচুপি ও সন্ত্রাসের যে কোনো নীলনকশা পরাস্ত হতে বাধ্য। শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জয় হবে, এটাই মানুষের একান্ত প্রত্যাশা।