ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তরল দুধে গুঁড়োদুধের মিশ্রণ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২০
  • / ১৯৬ বার পড়া হয়েছে

আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ কাম্য
পানিতে গুঁড়োদুধ মিশিয়ে ‘পাস্তুরিত তরল দুধ’ তৈরির সংবাদ উদ্বেগজনক। জানা গেছে, দেশের সব ‘নামি-দামি’ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ায় তৈরি তরল দুধ প্যাকেটজাত করে ‘পাস্তুরিত দুধ’ বলে বিক্রি করছে। ভোক্তারা সরল বিশ্বাসে এসব দুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন, তা বলাই বাহুল্য। ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় দ্রুত এ প্রতারণা বন্ধ হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এক গবেষণায় দেশের তরল দুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ গুঁড়োদুধ ক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তরল দুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এত অধিক পরিমাণে গুঁড়োদুধ ক্রয় করে থাকে- এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া একই গবেষণায় পাস্তুরিত তরল দুধে আখের চিনির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে দুধের মধ্যে ‘দুধের চিনি’ অর্থাৎ ‘ল্যাকটোজ’ থাকার কথা। দুধে আখের চিনি কোথা থেকে এলো- এর সদুত্তর খোঁজাও জরুরি। অবশ্য এ ব্যাপারে তরল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তরফ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলা হয়েছে, বর্ষাকালে গাভীর খাবারে তারতম্য ঘটায় ‘এসএনএফের’ মাত্রা কম থাকে। তাদের মতে, ‘এসএনএফের’ মাত্রা ৮ শতাংশসহ অন্যান্য প্যারামিটার ঠিক রাখতেই নাকি পাস্তুরিত দুধের সঙ্গে ‘স্কিমড মিল্ক পাউডার’ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশুদ্ধ তরল দুধে ‘এসএনএফের’ মাত্রা কখনই ৮ শতাংশের কম পাওয়া যায় না। তাই ‘এসএনএফের’ ন্যূনতম মাত্রা ৮ শতাংশ বজায় রাখতে ‘স্কিমড মিল্ক পাউডার’ ব্যবহারের যুক্তি ধোপে টেকে না। একইসঙ্গে দেশের তরল দুধ উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও তারা অভিমত প্রকাশ করেছেন। বস্তুত, পানিতে গুঁড়োদুধ মিশিয়ে তৈরি করা দুধকে পাস্তুরিত বলে বিক্রি করা অনৈতিক তো বটেই, একইসঙ্গে তা দেশ ও দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। গুঁড়োদুধ পানিতে মিশিয়ে বিক্রি করতে হলে প্যাকেটের গায়ে অবশ্যই তা উল্লেখ করতে হবে এবং ‘পাস্তুরিত’ বলে বিক্রি করা যাবে না। ভুলে গেলে চলবে না, দুধ এমন একটি খাবার, যার সঙ্গে কেবল মুনাফা নয়; সুস্থ-সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার মতো মৌলিক বিষয়ও জড়িত। আশঙ্কার বিষয় হল, কেবল দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নয়; দেশে মাছ-মাংস, দুধ-ডিম ও ফল-মূল থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ভেজালের মিশ্রণসহ নানা প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করা হচ্ছে। সংশোধিত ভোক্তা আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে সরকার খাদ্যপণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভেজাল ও প্রতারণার হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে, এটাই প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

তরল দুধে গুঁড়োদুধের মিশ্রণ

আপলোড টাইম : ১০:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২০

আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ কাম্য
পানিতে গুঁড়োদুধ মিশিয়ে ‘পাস্তুরিত তরল দুধ’ তৈরির সংবাদ উদ্বেগজনক। জানা গেছে, দেশের সব ‘নামি-দামি’ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ায় তৈরি তরল দুধ প্যাকেটজাত করে ‘পাস্তুরিত দুধ’ বলে বিক্রি করছে। ভোক্তারা সরল বিশ্বাসে এসব দুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন, তা বলাই বাহুল্য। ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় দ্রুত এ প্রতারণা বন্ধ হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এক গবেষণায় দেশের তরল দুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ গুঁড়োদুধ ক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তরল দুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এত অধিক পরিমাণে গুঁড়োদুধ ক্রয় করে থাকে- এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া একই গবেষণায় পাস্তুরিত তরল দুধে আখের চিনির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে দুধের মধ্যে ‘দুধের চিনি’ অর্থাৎ ‘ল্যাকটোজ’ থাকার কথা। দুধে আখের চিনি কোথা থেকে এলো- এর সদুত্তর খোঁজাও জরুরি। অবশ্য এ ব্যাপারে তরল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তরফ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলা হয়েছে, বর্ষাকালে গাভীর খাবারে তারতম্য ঘটায় ‘এসএনএফের’ মাত্রা কম থাকে। তাদের মতে, ‘এসএনএফের’ মাত্রা ৮ শতাংশসহ অন্যান্য প্যারামিটার ঠিক রাখতেই নাকি পাস্তুরিত দুধের সঙ্গে ‘স্কিমড মিল্ক পাউডার’ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশুদ্ধ তরল দুধে ‘এসএনএফের’ মাত্রা কখনই ৮ শতাংশের কম পাওয়া যায় না। তাই ‘এসএনএফের’ ন্যূনতম মাত্রা ৮ শতাংশ বজায় রাখতে ‘স্কিমড মিল্ক পাউডার’ ব্যবহারের যুক্তি ধোপে টেকে না। একইসঙ্গে দেশের তরল দুধ উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও তারা অভিমত প্রকাশ করেছেন। বস্তুত, পানিতে গুঁড়োদুধ মিশিয়ে তৈরি করা দুধকে পাস্তুরিত বলে বিক্রি করা অনৈতিক তো বটেই, একইসঙ্গে তা দেশ ও দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। গুঁড়োদুধ পানিতে মিশিয়ে বিক্রি করতে হলে প্যাকেটের গায়ে অবশ্যই তা উল্লেখ করতে হবে এবং ‘পাস্তুরিত’ বলে বিক্রি করা যাবে না। ভুলে গেলে চলবে না, দুধ এমন একটি খাবার, যার সঙ্গে কেবল মুনাফা নয়; সুস্থ-সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার মতো মৌলিক বিষয়ও জড়িত। আশঙ্কার বিষয় হল, কেবল দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নয়; দেশে মাছ-মাংস, দুধ-ডিম ও ফল-মূল থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ভেজালের মিশ্রণসহ নানা প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করা হচ্ছে। সংশোধিত ভোক্তা আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে সরকার খাদ্যপণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভেজাল ও প্রতারণার হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে, এটাই প্রত্যাশা।