ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঢাকা হামলার সময় আইএসে বড় ভূমিকায় ছিল আদনানি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫২:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৩১৪ বার পড়া হয়েছে

werre

সমীকরণ ডেস্ক: গুলশান ক্যাফে হামলার সময় আইএসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিল দলটির মুখমাত্র আবু মোহাম্মদ আল আদনানি। এছাড়াও মঙ্গলবার ‘নিহত’ এই জঙ্গি  নেতা এ বছর বিশ্বজুড়ে চালানো বিভিন্ন হাই প্রোফাইল হামলার সময় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। মার্কিন এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এমন মন্তব্য করেছেন। ওই কর্মকর্তা আদনানিকে আইসিসের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অন্যতম বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আদনানি দলটির মুখপাত্রের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। প্যারিস, ব্রাসেলস ও ইস্তাম্বুলের বিমানবন্দর, ঢাকার ক্যাফে হামলা, আঙ্কারার একটি সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং মিশরের সিনাইতে রাশিয়ার একটি বিমান ভূপাতিত করার মতো হাই প্রোফাইল হামলাগুলোর সময় আইএসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আদনানি। এসব হামলায় ১৮০০’রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০০। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আদনানি একিউআই-এর মেম্বার (আল কায়েদা ইন ইরাক) এবং শূরা কাউন্সিলের সদস্য ছিল। এছাড়া জনসমক্ষে সব থেকে পরিচিত আইসিল কর্মকর্তা ছিল সে।’ মঙ্গলবার আইএস আদনানি নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা বলেছে, সিরিয়ার আলেপ্পোতে নিহত হয় আদনানি। ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে তারা ওই এলাকায় আদনানিকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল। আইএসের ‘সামরিক সূত্রের’ বরাত দিয়ে তাদের নিজস্ব সংবাদ সংস্থা আমাক বলেছে, ‘শেখ আবু মোহাম্মদ আল আদনানি আলেপ্পোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রতিহত করতে কর্মকাণ্ড তদারকি করার সময় নিহত হয়েছেন।’ ওদিকে ওয়াশিংটনে পেন্টাগনের মুখপাত্র পিটার কুক বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষ এখনও হামলার ফল নিশ্চিত হতে পর্যালোচনা করছেন।’ এক বিবৃতিতে পেন্টাগন বলেছে, ‘আদনানির মৃত্যু নিশ্চিত হলে তা হবে আইসিলের ওপর আরেকটি বড় আঘাত।’ মি. কুক জানিয়েছেন, হামলাটি চালানো হয় আলেপ্পো প্রদেশের আল বাব এলাকায়। আদনানিকে বহির্বিশ্বে আইএস হামলার ‘প্রধান কারিগর’ এবং দলটির প্রধান মুখপাত্র আখ্যা দিয়ে কুক বলেন, ‘সে আইসিল যোদ্ধাদের তৎপরতা সমন্বয়ের কাজ করেছে, বেসামরিক মানুষ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর স্বপ্রণোদিত হামলা চালাতে অনুপ্রাণিত করেছে এবং সক্রিয়ভাবে আইসিলের নতুন সদস্য রিক্রুট করেছে। ২০১৪’র সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আদনানিকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদনানিকে ‘বিচারের আওতায় আনতে’ তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কুক বলেন, ‘আমাদের ভূখণ্ড, আমাদের মিত্র ও আমাদের অংশীদারদের নিরাপত্তা দিতে মার্কিন সেনাবাহিনী আইসিল নেতা ও বাইরের ষড়যন্ত্রকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং অবিশ্রান্তভাবে টার্গেট করা অব্যাহত রাখবো। একইসঙ্গে আমরা সিরিয়া ও ইরাকে আইসিলের মূল উৎপাটন করতে এবং বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা-প্রশাখার সঙ্গে লড়াই করতে তৎপরতা অব্যাহত রাখবো।’ বিশ্লেষকরাও আদনানিকে আইএসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞ রোমেইন কাইলেট বলেছেন, ‘জিহাদি সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহের সার্বিক স্মৃতিতে আবু মোহাম্মদ আল আদনানি সবসময়ই ওই ব্যক্তি হিসেবে থাকবে যে ২০১৪ সালের জুনে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিল।’ সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশ থেকে আদনানি ইরাকে জিহাদি আন্দোলনে যোগ দেয়। সেখানে নিহত আল কায়েদা নেতা আবু মুসাব আল জারকাওরির অধীনে কাজ করে আদনানি। বিভিন্ন পদে দায়িত্বও পালন করে। জিহাদি গ্রুপগুলোর বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ আয়মেন জাওয়াদ তামিমি বলেন, ‘আদনানির মৃত্যু প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ আর এটা আইএসের ব্যাপক পতনের দিকে ইঙ্গিত করে।’ তিনি বলেন, ‘জোটের বিমান হামলায় যদি সে নিহত হয়ে থাকে তাহলে এটা স্পষ্ট হয় যে, জোটের গোয়েন্দা তৎপরতার গভীরতা অত্যন্ত জোরালো। তা নাহলে এতো বেশি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বকে ঘায়েল করা সম্ভব হতো না।’ আরেক বিশ্লেষক চার্লস লিস্টার টুইট করেছেন যে আদনানির মৃত্যু ‘আইএসের জন্য বড় একটি ধাক্কা’।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঢাকা হামলার সময় আইএসে বড় ভূমিকায় ছিল আদনানি

আপলোড টাইম : ১১:৫২:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

werre

সমীকরণ ডেস্ক: গুলশান ক্যাফে হামলার সময় আইএসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিল দলটির মুখমাত্র আবু মোহাম্মদ আল আদনানি। এছাড়াও মঙ্গলবার ‘নিহত’ এই জঙ্গি  নেতা এ বছর বিশ্বজুড়ে চালানো বিভিন্ন হাই প্রোফাইল হামলার সময় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। মার্কিন এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এমন মন্তব্য করেছেন। ওই কর্মকর্তা আদনানিকে আইসিসের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অন্যতম বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আদনানি দলটির মুখপাত্রের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। প্যারিস, ব্রাসেলস ও ইস্তাম্বুলের বিমানবন্দর, ঢাকার ক্যাফে হামলা, আঙ্কারার একটি সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং মিশরের সিনাইতে রাশিয়ার একটি বিমান ভূপাতিত করার মতো হাই প্রোফাইল হামলাগুলোর সময় আইএসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আদনানি। এসব হামলায় ১৮০০’রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০০। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আদনানি একিউআই-এর মেম্বার (আল কায়েদা ইন ইরাক) এবং শূরা কাউন্সিলের সদস্য ছিল। এছাড়া জনসমক্ষে সব থেকে পরিচিত আইসিল কর্মকর্তা ছিল সে।’ মঙ্গলবার আইএস আদনানি নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা বলেছে, সিরিয়ার আলেপ্পোতে নিহত হয় আদনানি। ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে তারা ওই এলাকায় আদনানিকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল। আইএসের ‘সামরিক সূত্রের’ বরাত দিয়ে তাদের নিজস্ব সংবাদ সংস্থা আমাক বলেছে, ‘শেখ আবু মোহাম্মদ আল আদনানি আলেপ্পোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রতিহত করতে কর্মকাণ্ড তদারকি করার সময় নিহত হয়েছেন।’ ওদিকে ওয়াশিংটনে পেন্টাগনের মুখপাত্র পিটার কুক বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষ এখনও হামলার ফল নিশ্চিত হতে পর্যালোচনা করছেন।’ এক বিবৃতিতে পেন্টাগন বলেছে, ‘আদনানির মৃত্যু নিশ্চিত হলে তা হবে আইসিলের ওপর আরেকটি বড় আঘাত।’ মি. কুক জানিয়েছেন, হামলাটি চালানো হয় আলেপ্পো প্রদেশের আল বাব এলাকায়। আদনানিকে বহির্বিশ্বে আইএস হামলার ‘প্রধান কারিগর’ এবং দলটির প্রধান মুখপাত্র আখ্যা দিয়ে কুক বলেন, ‘সে আইসিল যোদ্ধাদের তৎপরতা সমন্বয়ের কাজ করেছে, বেসামরিক মানুষ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর স্বপ্রণোদিত হামলা চালাতে অনুপ্রাণিত করেছে এবং সক্রিয়ভাবে আইসিলের নতুন সদস্য রিক্রুট করেছে। ২০১৪’র সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আদনানিকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদনানিকে ‘বিচারের আওতায় আনতে’ তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কুক বলেন, ‘আমাদের ভূখণ্ড, আমাদের মিত্র ও আমাদের অংশীদারদের নিরাপত্তা দিতে মার্কিন সেনাবাহিনী আইসিল নেতা ও বাইরের ষড়যন্ত্রকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং অবিশ্রান্তভাবে টার্গেট করা অব্যাহত রাখবো। একইসঙ্গে আমরা সিরিয়া ও ইরাকে আইসিলের মূল উৎপাটন করতে এবং বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা-প্রশাখার সঙ্গে লড়াই করতে তৎপরতা অব্যাহত রাখবো।’ বিশ্লেষকরাও আদনানিকে আইএসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞ রোমেইন কাইলেট বলেছেন, ‘জিহাদি সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহের সার্বিক স্মৃতিতে আবু মোহাম্মদ আল আদনানি সবসময়ই ওই ব্যক্তি হিসেবে থাকবে যে ২০১৪ সালের জুনে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিল।’ সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশ থেকে আদনানি ইরাকে জিহাদি আন্দোলনে যোগ দেয়। সেখানে নিহত আল কায়েদা নেতা আবু মুসাব আল জারকাওরির অধীনে কাজ করে আদনানি। বিভিন্ন পদে দায়িত্বও পালন করে। জিহাদি গ্রুপগুলোর বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ আয়মেন জাওয়াদ তামিমি বলেন, ‘আদনানির মৃত্যু প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ আর এটা আইএসের ব্যাপক পতনের দিকে ইঙ্গিত করে।’ তিনি বলেন, ‘জোটের বিমান হামলায় যদি সে নিহত হয়ে থাকে তাহলে এটা স্পষ্ট হয় যে, জোটের গোয়েন্দা তৎপরতার গভীরতা অত্যন্ত জোরালো। তা নাহলে এতো বেশি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বকে ঘায়েল করা সম্ভব হতো না।’ আরেক বিশ্লেষক চার্লস লিস্টার টুইট করেছেন যে আদনানির মৃত্যু ‘আইএসের জন্য বড় একটি ধাক্কা’।