ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : শঙ্কা দূর করতে ব্যবস্থা নিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ অক্টোবর ২০১৮
  • / ২৭৩ বার পড়া হয়েছে

গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। নতুন এ আইনে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে দেশের সাংবাদিকসমাজ ও মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা ছিল। ২০১৩ সালে দেশে আইসিটি আইন পাস হলে ওই আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানানো হচ্ছিল। সরকার ধারাটি বাতিল করে সাইবার অপরাধ দমনে নতুন একটি আইন প্রণয়নের কথা জানিয়েছিল। সেই আইনটিই সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, যেখানে চারটি ধারায় বিতর্কিত ৫৭ ধারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত। সম্পাদক পরিষদ, বিএফইউজে, ডিইউজেসহ গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশকে একতরফা গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, এ আইনের ফলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের সুযোগ সীমিত হবে। আইনের একটি ধারায় পুলিশকে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা গণমাধ্যমকে চাপের মুখে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজকের দিনে সারা বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে। এর বড় প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রযুক্তির এই প্রসার যে সব ক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনছে, তা নয়। এর বিপরীতে নেতিবাচক একটি দিকও আছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রায়ই বাংলাদেশে ঘটেছে। মিথ্যা আইডি দিয়ে অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে। এসব অবশ্যই বন্ধ করা দরকার। সাইবার ক্রাইম বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যম তো এক হতে পারে না। গণমাধ্যমকে কোনোভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে মেলানো যাবে না। সাইবার অপরাধীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এর সঙ্গে গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করা কেন? সর্বোপরি আইনের অপব্যবহার যে হবে না, এই নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে। সম্প্রতি পাস হওয়া আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারো মানহানি কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো বিষয়গুলোকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ ধারাগুলোতে অপরাধগুলো সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা মনে করছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদকে বৈঠকে ডেকেছেন তথ্যমন্ত্রী। আমরা আশা করি, এ বৈঠক থেকে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : শঙ্কা দূর করতে ব্যবস্থা নিন

আপলোড টাইম : ০৮:৫৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ অক্টোবর ২০১৮

গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। নতুন এ আইনে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে দেশের সাংবাদিকসমাজ ও মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা ছিল। ২০১৩ সালে দেশে আইসিটি আইন পাস হলে ওই আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানানো হচ্ছিল। সরকার ধারাটি বাতিল করে সাইবার অপরাধ দমনে নতুন একটি আইন প্রণয়নের কথা জানিয়েছিল। সেই আইনটিই সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, যেখানে চারটি ধারায় বিতর্কিত ৫৭ ধারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত। সম্পাদক পরিষদ, বিএফইউজে, ডিইউজেসহ গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশকে একতরফা গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, এ আইনের ফলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের সুযোগ সীমিত হবে। আইনের একটি ধারায় পুলিশকে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা গণমাধ্যমকে চাপের মুখে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজকের দিনে সারা বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে। এর বড় প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রযুক্তির এই প্রসার যে সব ক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনছে, তা নয়। এর বিপরীতে নেতিবাচক একটি দিকও আছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রায়ই বাংলাদেশে ঘটেছে। মিথ্যা আইডি দিয়ে অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে। এসব অবশ্যই বন্ধ করা দরকার। সাইবার ক্রাইম বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যম তো এক হতে পারে না। গণমাধ্যমকে কোনোভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে মেলানো যাবে না। সাইবার অপরাধীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এর সঙ্গে গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করা কেন? সর্বোপরি আইনের অপব্যবহার যে হবে না, এই নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে। সম্প্রতি পাস হওয়া আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারো মানহানি কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো বিষয়গুলোকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ ধারাগুলোতে অপরাধগুলো সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা মনে করছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদকে বৈঠকে ডেকেছেন তথ্যমন্ত্রী। আমরা আশা করি, এ বৈঠক থেকে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।