ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

টানা দুইবার পেছাল বাংলাদেশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২১:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯
  • / ১৯৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
টানা দুইবার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা সূচকে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯’ -তে বলা হয়েছে এবার ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১০৫তম অবস্থানে। আগের বছর ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৩তম অবস্থানে ছিল। ২০১৭ সালে ১৩৫ দেশের মধ্যে ছিল ১০২তম অবস্থানে। চলতি বছরের শুরুতে (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল) চালানো জরিপের ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গতকাল বুধবার বিশ্বব্যাপী একযোগে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। ঢাকার ইকোনমিক রিপোর্টার ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ফোরামের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সাথে সিপিডির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যবসায়িক পরিবেশে সমীক্ষা-২০১৯ও প্রকাশ করা হয়। এই জরিপের বছর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, একটি দেশের অবস্থান বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, পণ্যবাজার, শ্রমবাজার, আর্থিকব্যবস্থা, বাজারের আকার, বাজারের গতিশীলতা, উদ্ভাবনী সক্ষমতা, এই ১২টি মানদ- বা পিলার ব্যবহার করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। এসব মানদ-ের ভিত্তিতে ১০০ ভিত্তিক সূচকে সব মিলিয়ে এবার বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ৫২, যা গত বছরের স্কোরের চেয়ে ০.১ কম। ১২টি মানদ-ের ভেতরে বাংলাদেশে ১০ মানদ- র্যাংকিংয়ের পতন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানের মধ্যে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা( মাইনাস ৭), শ্রমবাজার (মাইনাস ৬), আইসিটি অভিযোজন (মাইনাস ৬) ও অবকাঠামো (মাইনাস ৫)। আমরা দুটি জায়গায় ভালো করেছি, এর একটি হচ্ছে পণ্যবাজার আর অন্যটি হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এই অবস্থার মূল কারণ জটিল আমলাতান্ত্রিক অবস্থা ও দুর্বল উদ্যোক্তা সংস্কৃতি। এ ছাড়া দক্ষতার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশে একসময় বড় রকমের একটি শ্রম শক্তি দেশের জন্য বোঝা হিসেবে দাঁড়াতে পারে। সেই ধরনের ইঙ্গিত এই রিপোর্টে দেয়া হয়েছে।
প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে সিপিডি প্রতিবারের মতো এবারো বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সমীক্ষা ২০১৯ করেছে। গতকাল সেটিও প্রকাশ করা হয়। এই সমীক্ষা ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের ৭৭টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করা হয়। সুশাসন সম্পর্কে জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ৭৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, সরকারি ঠিকাদারি কাজ পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনায় ঘুষ দিয়েছেন। ৭৪ শতাংশই কর পরিশোধের সময় ঘুষ দিয়েছেন এবং ৭৭ শতাংশ মনে করেন, রাজনীতিবিদদের ইথিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড পরে গেছে।
শুধু তা-ই নয়, ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ২০১৮ সালে দুর্নীতির মাত্রা আগের চেয়ে আরো বেড়েছে। দুর্নীতি তাদের ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এতে তারা দেশে ও বিদেশে প্রতিযোগিতার সক্ষমতার হারাচ্ছেন। এই ব্যবসায়ী ব্যয় সাধারণত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার জন্য বাড়াচ্ছে। যারা বড় ব্যবসায়ী তারা একে সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেন। এতে তারা পারও পেয়ে যান। সব ব্যবসায়ীর জন্য সমভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এক অনিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশে কাজ করছেন। বলা হয়েছে, কয়েকটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বেশির ভাগ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
এ দিকে বিশ্বে প্রতিযোগিতার সক্ষমতার দিক দিয়ে এবারের সূচকের শীর্ষে উঠে এসেছে সিঙ্গাপুর; এশিয়ার এই দেশটির স্কোর ৮৪ দশমিক ৮। এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, জাপান, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও ডেনমার্ক। এই ১০টি দেশই গতবারের সূচকে শীর্ষ দশে ছিল, এবার শুধু অবস্থানের হেরফের হয়েছে। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার অবদমনের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। ৬১.৪ স্কোর নিয়ে ভারত আছে সূচকের ৬৮ নম্বরে। তবে গতবারের চেয়ে ১০ ধাপ অবনমন ঘটেছে দেশটির। শ্রীলঙ্কা ৫৭.১ স্কোর নিয়ে সূচকের ৮৪তম, নেপাল ৫১.৬ স্কোর নিয়ে সূচকের ১০৮তম এবং ৫১.৪ স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের সূচকের ১১০ নম্বরে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যবসাবাণিজ্য যদি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে থাকে, তাহলে একচেটিয়া হয়। এটি অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। একক ব্যবসায়ীর হাতে যদি একটি ব্যবসা খাত থাকে, তাহলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ওই ব্যবসা খাতে আসতে পারেন না। ভোক্তাকে বেশি দাম দিয়ে ওই পণ্য বা সেবা কিনতে হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

টানা দুইবার পেছাল বাংলাদেশ

আপলোড টাইম : ১০:২১:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
টানা দুইবার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা সূচকে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯’ -তে বলা হয়েছে এবার ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১০৫তম অবস্থানে। আগের বছর ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৩তম অবস্থানে ছিল। ২০১৭ সালে ১৩৫ দেশের মধ্যে ছিল ১০২তম অবস্থানে। চলতি বছরের শুরুতে (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল) চালানো জরিপের ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গতকাল বুধবার বিশ্বব্যাপী একযোগে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। ঢাকার ইকোনমিক রিপোর্টার ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ফোরামের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সাথে সিপিডির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যবসায়িক পরিবেশে সমীক্ষা-২০১৯ও প্রকাশ করা হয়। এই জরিপের বছর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, একটি দেশের অবস্থান বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, পণ্যবাজার, শ্রমবাজার, আর্থিকব্যবস্থা, বাজারের আকার, বাজারের গতিশীলতা, উদ্ভাবনী সক্ষমতা, এই ১২টি মানদ- বা পিলার ব্যবহার করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। এসব মানদ-ের ভিত্তিতে ১০০ ভিত্তিক সূচকে সব মিলিয়ে এবার বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ৫২, যা গত বছরের স্কোরের চেয়ে ০.১ কম। ১২টি মানদ-ের ভেতরে বাংলাদেশে ১০ মানদ- র্যাংকিংয়ের পতন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানের মধ্যে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা( মাইনাস ৭), শ্রমবাজার (মাইনাস ৬), আইসিটি অভিযোজন (মাইনাস ৬) ও অবকাঠামো (মাইনাস ৫)। আমরা দুটি জায়গায় ভালো করেছি, এর একটি হচ্ছে পণ্যবাজার আর অন্যটি হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এই অবস্থার মূল কারণ জটিল আমলাতান্ত্রিক অবস্থা ও দুর্বল উদ্যোক্তা সংস্কৃতি। এ ছাড়া দক্ষতার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশে একসময় বড় রকমের একটি শ্রম শক্তি দেশের জন্য বোঝা হিসেবে দাঁড়াতে পারে। সেই ধরনের ইঙ্গিত এই রিপোর্টে দেয়া হয়েছে।
প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে সিপিডি প্রতিবারের মতো এবারো বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সমীক্ষা ২০১৯ করেছে। গতকাল সেটিও প্রকাশ করা হয়। এই সমীক্ষা ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের ৭৭টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করা হয়। সুশাসন সম্পর্কে জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ৭৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, সরকারি ঠিকাদারি কাজ পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনায় ঘুষ দিয়েছেন। ৭৪ শতাংশই কর পরিশোধের সময় ঘুষ দিয়েছেন এবং ৭৭ শতাংশ মনে করেন, রাজনীতিবিদদের ইথিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড পরে গেছে।
শুধু তা-ই নয়, ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ২০১৮ সালে দুর্নীতির মাত্রা আগের চেয়ে আরো বেড়েছে। দুর্নীতি তাদের ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এতে তারা দেশে ও বিদেশে প্রতিযোগিতার সক্ষমতার হারাচ্ছেন। এই ব্যবসায়ী ব্যয় সাধারণত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার জন্য বাড়াচ্ছে। যারা বড় ব্যবসায়ী তারা একে সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেন। এতে তারা পারও পেয়ে যান। সব ব্যবসায়ীর জন্য সমভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এক অনিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশে কাজ করছেন। বলা হয়েছে, কয়েকটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বেশির ভাগ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
এ দিকে বিশ্বে প্রতিযোগিতার সক্ষমতার দিক দিয়ে এবারের সূচকের শীর্ষে উঠে এসেছে সিঙ্গাপুর; এশিয়ার এই দেশটির স্কোর ৮৪ দশমিক ৮। এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, জাপান, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও ডেনমার্ক। এই ১০টি দেশই গতবারের সূচকে শীর্ষ দশে ছিল, এবার শুধু অবস্থানের হেরফের হয়েছে। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার অবদমনের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। ৬১.৪ স্কোর নিয়ে ভারত আছে সূচকের ৬৮ নম্বরে। তবে গতবারের চেয়ে ১০ ধাপ অবনমন ঘটেছে দেশটির। শ্রীলঙ্কা ৫৭.১ স্কোর নিয়ে সূচকের ৮৪তম, নেপাল ৫১.৬ স্কোর নিয়ে সূচকের ১০৮তম এবং ৫১.৪ স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের সূচকের ১১০ নম্বরে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যবসাবাণিজ্য যদি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে থাকে, তাহলে একচেটিয়া হয়। এটি অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। একক ব্যবসায়ীর হাতে যদি একটি ব্যবসা খাত থাকে, তাহলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ওই ব্যবসা খাতে আসতে পারেন না। ভোক্তাকে বেশি দাম দিয়ে ওই পণ্য বা সেবা কিনতে হয়।