ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে প্রতিদিন বিনামূল্যে বিতরণ হয় ২০ হাজার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪৫:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
৪৫ বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন ডায়াবেটিসে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি নিয়মিত আসেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে। এর ফাকে তিনি প্রতিবারই হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে নেন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। সমস্যা না থাকলেও এই বড়ি খান নিয়মিত। আনোয়ারা বেগমের মতো অনেকেই সমস্যা না থাকলেও হাসপাতাল থেকে বিনা মূল্যে গ্যাস্ট্রিকের বড়ি নিয়ে সেবন করেন। অহেতুক এই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে তারা পড়ছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে এসে বেশিরভাগ মানুষ নিজের সমস্যার কথা না বলে সরাসরি গ্যাস্ট্রিকের বড়ি চান। অহেতুক আর দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে এটা বোঝে না।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন হাসপাতালের বহিঃবিভাগ থেকে বিনামূল্যে ২০ হাজার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ (এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগ) বিতরণ করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিদিন চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ১০ হাজার প্যারাসিটামল ও ক্যালসিয়াম বড়ি সমপরিমাণ বিতরণ করা হয়। সদর হাসপাতালের ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট রুহুল আমিন বলেন, দিন যতই যাচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের বড়ি সেবনের প্রবণতা বাড়ছে। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে বছরে ৫৭ লাখ এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগের চাহিদা রয়েছে। ২ থেকে ৩ বছর আগে এতো চাহিদা ছিল না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যদি কেউ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করে, তাহলে তার হাড়ক্ষয় রোগ হতে পারে। এখন হাড়ক্ষয় রোগ বেশি ধরা পড়ছে। এই রোগ ৪০ বছর পার হলে দেখা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের পরই সর্বোচ্চ বিক্রিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। অনেক মানুষ কোনো ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এসব ওষুধ সেবন করে। এতে নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সাবেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বর্তমান ঢাকার গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগ চিকিৎসক কখন প্রেসক্রাইব করে বা কতদিনের জন্য করা হয়, সেটা জানা প্রয়োজন। সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তা হচ্ছে বুক জ্বালা-পোড়া, পেটে ব্যথা, হজম না হওয়া, গ্যাস নির্গত হওয়া ও ক্ষুধা অনুভূত না হওয়া। এসব লক্ষণ সাধারণত পেপটিক আলসার ডিজিজ। এগুলো নন আলসার ডিসপেপসিয়া বা গল স্টোন জাতীয় সমস্যার জন্য হয়। তবে বেশিরভাগই লাইফ স্টাইল সঠিক না হওয়ার কারণে এই সমস্যা হয়। যেমন সময়মত আহার না করা, পানি কম পান করা, তেল, মসলা ও ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া।
আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগের ইতিহাসের পাশাপাশি কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন। রোগ নির্ণয় হলেই শুধুমাত্র এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগ প্রেসক্রাইব করা উচিত। তাও সর্বোচ্চ ৮ সপ্তাহের জন্য। এর বেশি কোনোভাবেই নয়।’ আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, ‘লম্বা সময় ধরে এসব ওষুধ খেলে ডায়রিয়া, বমিভাব, পেটে ব্যথা হতে পারে। আর জটিল ও মারাত্মক পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে আরও বেশি গ্যাস্ট্রিক হওয়া।’ তিনি বলেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ পাকস্থলিতে সব ধরণের অ্যাসিড সিক্রেশন বন্ধ করে দয়। ফলে খাবারের সঙ্গে যে খারাপ জিনিসগুলো প্রবেশ কওে, তা অ্যাসিড সিক্রেশন বন্ধ হলে জীবাণু ধ্বংস হয় না। ফলে অ্যাসিডের অভাবে আবারও পাকস্থলিতে গন্ডগোল বাধতে পারে।
চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়ার মতো ইনফেকশন হতে পারে অ্যাসিড সিক্রেশন কমে যাওয়ার কারণে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এসব মিনারেল শরীরে কমে গিয়ে ফ্র্যাকচার পর্যন্ত হতে পারে। তবে সবচেয়ে মারাত্মক পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে পাকস্থলীর ক্যানসার। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এই গ্যাসের ওষুধ সেবনের প্রবণতা রোধ করা যাবে না। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ হাসপাতাল থেকে সবচেয়ে বেশি গ্যাসের বড়ি নেন নারীরা। তারা সময়মতো পানি পান করেন না। ফলে গ্যাস্ট্রিকের প্রথম ধাপে তারা আক্রান্ত হন। তারা সঠিক নিয়মে পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়বে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে প্রতিদিন বিনামূল্যে বিতরণ হয় ২০ হাজার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ

আপলোড টাইম : ০৭:৪৫:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
৪৫ বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন ডায়াবেটিসে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি নিয়মিত আসেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে। এর ফাকে তিনি প্রতিবারই হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে নেন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। সমস্যা না থাকলেও এই বড়ি খান নিয়মিত। আনোয়ারা বেগমের মতো অনেকেই সমস্যা না থাকলেও হাসপাতাল থেকে বিনা মূল্যে গ্যাস্ট্রিকের বড়ি নিয়ে সেবন করেন। অহেতুক এই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে তারা পড়ছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে এসে বেশিরভাগ মানুষ নিজের সমস্যার কথা না বলে সরাসরি গ্যাস্ট্রিকের বড়ি চান। অহেতুক আর দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে এটা বোঝে না।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন হাসপাতালের বহিঃবিভাগ থেকে বিনামূল্যে ২০ হাজার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ (এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগ) বিতরণ করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিদিন চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ১০ হাজার প্যারাসিটামল ও ক্যালসিয়াম বড়ি সমপরিমাণ বিতরণ করা হয়। সদর হাসপাতালের ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট রুহুল আমিন বলেন, দিন যতই যাচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের বড়ি সেবনের প্রবণতা বাড়ছে। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে বছরে ৫৭ লাখ এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগের চাহিদা রয়েছে। ২ থেকে ৩ বছর আগে এতো চাহিদা ছিল না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যদি কেউ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করে, তাহলে তার হাড়ক্ষয় রোগ হতে পারে। এখন হাড়ক্ষয় রোগ বেশি ধরা পড়ছে। এই রোগ ৪০ বছর পার হলে দেখা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের পরই সর্বোচ্চ বিক্রিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। অনেক মানুষ কোনো ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এসব ওষুধ সেবন করে। এতে নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সাবেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বর্তমান ঢাকার গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগ চিকিৎসক কখন প্রেসক্রাইব করে বা কতদিনের জন্য করা হয়, সেটা জানা প্রয়োজন। সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তা হচ্ছে বুক জ্বালা-পোড়া, পেটে ব্যথা, হজম না হওয়া, গ্যাস নির্গত হওয়া ও ক্ষুধা অনুভূত না হওয়া। এসব লক্ষণ সাধারণত পেপটিক আলসার ডিজিজ। এগুলো নন আলসার ডিসপেপসিয়া বা গল স্টোন জাতীয় সমস্যার জন্য হয়। তবে বেশিরভাগই লাইফ স্টাইল সঠিক না হওয়ার কারণে এই সমস্যা হয়। যেমন সময়মত আহার না করা, পানি কম পান করা, তেল, মসলা ও ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া।
আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগের ইতিহাসের পাশাপাশি কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন। রোগ নির্ণয় হলেই শুধুমাত্র এন্টি আলসারেন্ট ড্রাগ প্রেসক্রাইব করা উচিত। তাও সর্বোচ্চ ৮ সপ্তাহের জন্য। এর বেশি কোনোভাবেই নয়।’ আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, ‘লম্বা সময় ধরে এসব ওষুধ খেলে ডায়রিয়া, বমিভাব, পেটে ব্যথা হতে পারে। আর জটিল ও মারাত্মক পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে আরও বেশি গ্যাস্ট্রিক হওয়া।’ তিনি বলেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ পাকস্থলিতে সব ধরণের অ্যাসিড সিক্রেশন বন্ধ করে দয়। ফলে খাবারের সঙ্গে যে খারাপ জিনিসগুলো প্রবেশ কওে, তা অ্যাসিড সিক্রেশন বন্ধ হলে জীবাণু ধ্বংস হয় না। ফলে অ্যাসিডের অভাবে আবারও পাকস্থলিতে গন্ডগোল বাধতে পারে।
চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়ার মতো ইনফেকশন হতে পারে অ্যাসিড সিক্রেশন কমে যাওয়ার কারণে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এসব মিনারেল শরীরে কমে গিয়ে ফ্র্যাকচার পর্যন্ত হতে পারে। তবে সবচেয়ে মারাত্মক পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে পাকস্থলীর ক্যানসার। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এই গ্যাসের ওষুধ সেবনের প্রবণতা রোধ করা যাবে না। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ হাসপাতাল থেকে সবচেয়ে বেশি গ্যাসের বড়ি নেন নারীরা। তারা সময়মতো পানি পান করেন না। ফলে গ্যাস্ট্রিকের প্রথম ধাপে তারা আক্রান্ত হন। তারা সঠিক নিয়মে পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়বে না।