ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে যোগদানের একদিন আগে মারা গেলেন প্রধান শিক্ষক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪১:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহে বদিউজ্জামান এ্যাপো (৫০) নামে হাইস্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে সর্পদংশনে মৃত্যু বলে প্রচারের পর লাশ দাফন করা হচ্ছিল। এসময় দেখা যায় মৃত ব্যক্তির কান ও মাথার পেছন দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ বদিউজ্জামান এ্যাপোর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার বিকেলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এস্তেফাপুর গ্রামে। মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামান এ্যাপো পোড়াহাটি ইউনিয়নের এস্তেফাপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম লতার ছেলে।

প্রথমে প্রচার করা হয় গত শনিবার রাতে তিনি সর্পদংশনের শিকার হন। মধ্যরাতে কিছু অজ্ঞাত যুবক বদিউজ্জামান এ্যাপোর বড় মেয়ে চৈতীকে ফোন করে জানায় তার পিতাকে সর্পদংশন করেছে। খবর পেয়ে তার মেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে অজ্ঞাত ওই যুবকদের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় লিপ্ত হয় এবং বলেন ‘তোরা আমার পিতাকে হত্যা করেছিস’। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রহস্যময় এই মৃত্যুর ঘটনা পারিবারিকভাবে এড়িয়ে গতকাল রোববার জোহর বাদ লাশ দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। মৃত ব্যক্তির জানাযা শেষে লাশ যখন কবরস্থ করা হচ্ছিল, তখন তার মাথার পেছন ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দাফনে বাধা দেন এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

প্রতিবেশীরা জানান, বদিউজ্জামানের যদি সাপে দংশন করত, তাহলে তার মুখ দিয়ে লালা ও চেহারা কালো বর্র্ণ ধারণ করত। কিন্তু সাপে কাটার কোনো লক্ষন মৃত ব্যক্তির শরীরে নেই। তাছাড়া নিজের পুকুরপাড়ে দংশন করা ব্যক্তিকে কারা পাশর্^বর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে গেল, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাতের আধারে ডেকে প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামানকে নেশা জাতীয়দ্রব্য সেবন করিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তার স্ত্রী পাখি খাতুন অভিযোগ করেন।

ছোট ভাই কলেজ শিক্ষক খায়রুজ্জামান সাইফুল জানান, ‘আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দেখি বড় ভাই মারা গেছেন। কীভাবে ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে আমরা সঠিকভাবে জানি না।’ এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, মৃত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার নামে অনেক মিথ্যা মামলাও করা হয়। দীর্ঘ মামলা-মোকদ্দমা শেষে আদালতের নির্দেশে আজ সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বদিউজ্জামানের মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করা কথা ছিল। স্কুলে যোগদানের আগেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে বলে গ্রামবাসী সন্দেহ করছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, বদিউজ্জামানের মৃত্যু রহস্যজনক। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল বলে শুনেছি। এ কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওসি জানান, আদালতের নির্দেশে সোমবার স্কুলে যোগদান করার কথা ছিল তার। স্কুলে যোগদানের একদিন আগে তার এমন মৃত্যু আমরা রহস্যের চোখে দেখছি এবং লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঝিনাইদহে যোগদানের একদিন আগে মারা গেলেন প্রধান শিক্ষক

আপলোড টাইম : ০৮:৪১:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহে বদিউজ্জামান এ্যাপো (৫০) নামে হাইস্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে সর্পদংশনে মৃত্যু বলে প্রচারের পর লাশ দাফন করা হচ্ছিল। এসময় দেখা যায় মৃত ব্যক্তির কান ও মাথার পেছন দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ বদিউজ্জামান এ্যাপোর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার বিকেলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এস্তেফাপুর গ্রামে। মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামান এ্যাপো পোড়াহাটি ইউনিয়নের এস্তেফাপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম লতার ছেলে।

প্রথমে প্রচার করা হয় গত শনিবার রাতে তিনি সর্পদংশনের শিকার হন। মধ্যরাতে কিছু অজ্ঞাত যুবক বদিউজ্জামান এ্যাপোর বড় মেয়ে চৈতীকে ফোন করে জানায় তার পিতাকে সর্পদংশন করেছে। খবর পেয়ে তার মেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে অজ্ঞাত ওই যুবকদের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় লিপ্ত হয় এবং বলেন ‘তোরা আমার পিতাকে হত্যা করেছিস’। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রহস্যময় এই মৃত্যুর ঘটনা পারিবারিকভাবে এড়িয়ে গতকাল রোববার জোহর বাদ লাশ দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। মৃত ব্যক্তির জানাযা শেষে লাশ যখন কবরস্থ করা হচ্ছিল, তখন তার মাথার পেছন ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দাফনে বাধা দেন এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

প্রতিবেশীরা জানান, বদিউজ্জামানের যদি সাপে দংশন করত, তাহলে তার মুখ দিয়ে লালা ও চেহারা কালো বর্র্ণ ধারণ করত। কিন্তু সাপে কাটার কোনো লক্ষন মৃত ব্যক্তির শরীরে নেই। তাছাড়া নিজের পুকুরপাড়ে দংশন করা ব্যক্তিকে কারা পাশর্^বর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে গেল, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাতের আধারে ডেকে প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামানকে নেশা জাতীয়দ্রব্য সেবন করিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তার স্ত্রী পাখি খাতুন অভিযোগ করেন।

ছোট ভাই কলেজ শিক্ষক খায়রুজ্জামান সাইফুল জানান, ‘আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দেখি বড় ভাই মারা গেছেন। কীভাবে ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে আমরা সঠিকভাবে জানি না।’ এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, মৃত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার নামে অনেক মিথ্যা মামলাও করা হয়। দীর্ঘ মামলা-মোকদ্দমা শেষে আদালতের নির্দেশে আজ সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বদিউজ্জামানের মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করা কথা ছিল। স্কুলে যোগদানের আগেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে বলে গ্রামবাসী সন্দেহ করছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, বদিউজ্জামানের মৃত্যু রহস্যজনক। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল বলে শুনেছি। এ কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওসি জানান, আদালতের নির্দেশে সোমবার স্কুলে যোগদান করার কথা ছিল তার। স্কুলে যোগদানের একদিন আগে তার এমন মৃত্যু আমরা রহস্যের চোখে দেখছি এবং লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।