ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে গণটিকাদান কর্মসূচিতে গণহয়রানি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২০:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
রেজিস্ট্রেশন বেশি টিকার সরবরাহ কম, এমন পরিস্থিতি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে গণটিকা কার্যক্রমে গণহয়রানির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রথম দিনেই মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে নাজেহাল হয়। টিকা রেজিস্ট্রেশন করার সময় ভুল ইনফরমেশনে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে উঠে এসে ভোগান্তিতে পড়েন। তারা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান।
এমনই একজন সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন। তিনি টিকা রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুল করে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিস উল্লেখ করেন। গতকাল সকালে তিনি টিকা গ্রহণের জন্য হলিধানী ইউনিয়ন পরিষদ টিকাদান কেন্দ্র ছেড়ে চলে আসেন শহরে। কিন্তু কোথাও তিনি টিকা পাননি। ইউনিয়নে গেলেও কেন্দ্র দেখে তাঁকে আবার ঝিনাইদহে আসতে বলা হয়। এভাবে লোকমান হোসেন হয়রানির শিকার হন।
ঝিনাইদহ পৌর এলাকার মুরারীদহ গ্রামের আবুল হাসেম জানান, তাঁর রেজিস্ট্রেশন কার্ডে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিস উল্লেখ করা হয়। সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দপ্তর থেকে তাঁকে পাঠানো হয় সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে আবারো তাঁকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়। এভাবে তিনি রিকশা ভাড়া দিয়ে কয়েকবার যাতায়াত করে হয়রানির শিকার হয়ে জানতে পারেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিসে কোনো টিকাদান কেন্দ্র নেই। এভাবে শত শত নারী-পুরুষকে রেজিস্ট্রেশনে কেন্দ্র সঠিকভাবে উল্লেখ না থাকায় হয়রানি হতে হয়। ইউনিয়ন ও শহরের সবখানে এমন হয়রানিতে মানুষদের নাকাল হতে দেখা যায়।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গ্রাম ও শহরের হাজার হাজার মানুষ টিকা নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কিন্তু প্রথম দিনে প্রতিটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয় ৬ শ জনের। ফলে বিপুল সংখ্যাক মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নিতে পারেননি। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের মান্দিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ শমসের মণ্ডল ও কালাপাড়িয়া গ্রামের শেফালী বেগম শুধুমাত্র ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে আসেন টিকা নিতে। কিন্তু তাঁরা গণটিকার আওতায় না পড়ায় (রেজিস্ট্রেশন বিহীন) টিকা দেওয়া হয়নি। শৈলকুপার মির্জাপুর ইউনিয়নেও অনেক মানুষকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নে টিকা নিয়ে তর্কবিতর্ক হতে দেখা গেছে। প্রায় সব কেন্দ্রেই একই অবস্থা বিরাজমান।
সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, তাঁর ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ৭ শ জনের।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শামীম কবীর বলেন, রেজিস্ট্রেশন বেশি কিন্তু টিকার সরবরাহ কম হওয়ায় প্রথম দিনে একটু ভিড় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার অফিসে কোনো টিকাদান কেন্দ্র নেই। অথচ রেজিস্ট্রেশনে কেন্দ্র উল্লেখ করা হয়েছে। এতো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।’
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভায় ৭৩টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব কেন্দ্রে ৬ শ জন করে সর্বমোট ৪৩ হাজার ৮ শ জনকে টিকা দেওয়ার কথা। সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সময় থাকলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে দুপুরের আগেই টিকা শেষ হয়ে যায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঝিনাইদহে গণটিকাদান কর্মসূচিতে গণহয়রানি!

আপলোড টাইম : ০৯:২০:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১

ঝিনাইদহ অফিস:
রেজিস্ট্রেশন বেশি টিকার সরবরাহ কম, এমন পরিস্থিতি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে গণটিকা কার্যক্রমে গণহয়রানির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রথম দিনেই মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে নাজেহাল হয়। টিকা রেজিস্ট্রেশন করার সময় ভুল ইনফরমেশনে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে উঠে এসে ভোগান্তিতে পড়েন। তারা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান।
এমনই একজন সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন। তিনি টিকা রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুল করে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিস উল্লেখ করেন। গতকাল সকালে তিনি টিকা গ্রহণের জন্য হলিধানী ইউনিয়ন পরিষদ টিকাদান কেন্দ্র ছেড়ে চলে আসেন শহরে। কিন্তু কোথাও তিনি টিকা পাননি। ইউনিয়নে গেলেও কেন্দ্র দেখে তাঁকে আবার ঝিনাইদহে আসতে বলা হয়। এভাবে লোকমান হোসেন হয়রানির শিকার হন।
ঝিনাইদহ পৌর এলাকার মুরারীদহ গ্রামের আবুল হাসেম জানান, তাঁর রেজিস্ট্রেশন কার্ডে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিস উল্লেখ করা হয়। সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দপ্তর থেকে তাঁকে পাঠানো হয় সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে আবারো তাঁকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়। এভাবে তিনি রিকশা ভাড়া দিয়ে কয়েকবার যাতায়াত করে হয়রানির শিকার হয়ে জানতে পারেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিসে কোনো টিকাদান কেন্দ্র নেই। এভাবে শত শত নারী-পুরুষকে রেজিস্ট্রেশনে কেন্দ্র সঠিকভাবে উল্লেখ না থাকায় হয়রানি হতে হয়। ইউনিয়ন ও শহরের সবখানে এমন হয়রানিতে মানুষদের নাকাল হতে দেখা যায়।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গ্রাম ও শহরের হাজার হাজার মানুষ টিকা নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কিন্তু প্রথম দিনে প্রতিটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয় ৬ শ জনের। ফলে বিপুল সংখ্যাক মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নিতে পারেননি। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের মান্দিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ শমসের মণ্ডল ও কালাপাড়িয়া গ্রামের শেফালী বেগম শুধুমাত্র ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে আসেন টিকা নিতে। কিন্তু তাঁরা গণটিকার আওতায় না পড়ায় (রেজিস্ট্রেশন বিহীন) টিকা দেওয়া হয়নি। শৈলকুপার মির্জাপুর ইউনিয়নেও অনেক মানুষকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার হরিশঙ্করপুর ইউনিয়নে টিকা নিয়ে তর্কবিতর্ক হতে দেখা গেছে। প্রায় সব কেন্দ্রেই একই অবস্থা বিরাজমান।
সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, তাঁর ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ৭ শ জনের।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শামীম কবীর বলেন, রেজিস্ট্রেশন বেশি কিন্তু টিকার সরবরাহ কম হওয়ায় প্রথম দিনে একটু ভিড় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার অফিসে কোনো টিকাদান কেন্দ্র নেই। অথচ রেজিস্ট্রেশনে কেন্দ্র উল্লেখ করা হয়েছে। এতো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।’
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভায় ৭৩টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব কেন্দ্রে ৬ শ জন করে সর্বমোট ৪৩ হাজার ৮ শ জনকে টিকা দেওয়ার কথা। সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সময় থাকলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে দুপুরের আগেই টিকা শেষ হয়ে যায়।