ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জোটে জোটে আসন নিয়ে দর-কষাকষি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৮
  • / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: অবশেষে সাত দিন পেছাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টসহ কিছু রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকালে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মেনে নতুন তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে নতুন করে আশা জাগল দেশের রাজনীতিতে। এর মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের সদিচ্ছার পুনঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত রোববারও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান করা আমাদের লক্ষ্য। আমি আশা করি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এই নির্বাচনে অংশ নেবে।’ ভোটগ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইসি নির্বাচনের তারিখ না পেছালেও বিএনপি নির্বাচনে আসত। কারণ তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনে এসে গেছে। এর পরও ইসির নতুন তারিখ ঘোষণাকে আমি স্বাগত জানাই। সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে।’
অবশ্য গত বৃহস্পতিবার প্রথম তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নতুন করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ যুক্তফ্রন্ট ও বামজোট তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে সেদিন থেকেই আঁটসাঁট বেঁধে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নামে। পরে গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর ফলে দেশের সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনমুখী। এমনকি ইতোমধ্যেই দলগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। নির্বাচন নিয়ে সংশয় কেটে যাওয়ায় এখন রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া। সেজন্য মূল নজর জোটভুক্ত শরিক দলগুলোর দিকে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগিই মূল চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই বড় দলের জন্য। সামনে চলে আসছে জোটভুক্ত নির্বাচন ও সেক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়টিও। তবে সবার নজর এখন আসন ভাগাভাগির দিকেই। এ নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। কারণ এত দিন বিএনপিকে নিয়েই মূল চিন্তা ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। কারণ এবারের নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসা নিয়ে বড় ধরনের হিসাব রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। বিএনপি নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন নতুন সমীকরণ পেয়ে বসেছে আওয়ামী লীগকে। ফলে এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হিসাব তার শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টি নিয়ে। কারণ আসন ভাগাভাগির হিসাবটা নিজেদের মধ্যেই।
তেমনই আসন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বিএনপিকেও। নিজেদের ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হওয়ায় কঠিন হিসাবের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই দলকে। আর এ কারণেই এবার আসনের হিসাবটা বেশ কঠিন এই দলের জন্য। এরই মধ্যে প্রধান দলগুলো তাদের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়ার কাজও সেরে ফেলছে। পুনঃতফসিল হওয়ায় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমার তারিখ দু-এক দিন করে বাড়িয়েছে দলগুলো। কিন্তু আসন বণ্টনই এখন সবচেয়ে কঠিন সমীকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪-দলীয় জোট এবং ২০-দলীয় জোট আর ঐক্যফ্রন্টের জন্য। কোন দল কতটা আসনে লড়বেÑ অনেক আগে থেকেই শুরু হওয়া এই দরকষাকষি এখন একেবারে শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটে চলছে উত্তেজনা। তেমনই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পাঁচটি দলের মধ্যে বিএনপি বাদে বাকি দল ১৫০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে। প্রতিটি দলই মনে করছে, নিজেদের যথেষ্ট ভোট রয়েছে মাঠে। তবে শেষ পর্যন্ত এসব দল জোট শরিকদের জন্য কতটি আসন ছেড়ে দেয়Ñ সেটাই দেখার বিষয়।
১৪-দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা আওয়ামী লীগ আগেই জানিয়েছিল। বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কথাও তারা বলেছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও বলে আসছিলেন, বিএনপি ভোটে এলে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবে আর বিএনপি না এলে তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। তবে গত রোববার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চাইছে জাতীয় পার্টি। পাশাপাশি ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই জাতীয় পার্টি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলের কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের। অবশ্য এর আগে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসনের তালিকা দিয়েছি। এর মধ্যে ৭০ আসন তো পেতে পারি।’ তবে আওয়ামী লীগ এবার শরিক দলগুলোকে সর্বোচ্চ ৭০টি আসন দিতে পারে বলে দলের নীতির্নির্ধারকরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এবার আসন নিয়ে সবচেয়ে কঠিন মেরুকরণে বিএনপি। এর আগে বিএনপি চারদলীয় জোট ২০০৮ সালে নির্বাচন করে। তখন দলটি শরিকদের জন্য ৪১ আসন ছেড়েছিল। বিএনপি এবার একই সঙ্গে দুটি জোটভুক্ত। একদিকে ২০-দলীয় জোট, অন্যদিকে গত অক্টোবরে গঠিত হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জোটেও তারা সবচেয়ে বড় দল। ফলে এবার বিএনপিকে অন্যবারের চেয়ে বেশি আসন ছাড়তে হবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। এদিকে আসন নিয়ে শরিকদের মধ্যে চাহিদা আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও। এই জোটের অন্যতম শরিক দল গণফোরামের সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিএনপির পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম দল গণফোরাম। এবারের নির্বাচনে তাদের চাওয়া থাকবে ৭০-৭৫ আসন। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। খুব দ্রুত তারা আসন ধরে প্রার্থী ঠিক করবে। ঐক্যফ্রন্টের অপর শরিক জেএসডি এবার ৩০-৩৫ আসন চাইবে বলে জোট সূত্রগুলো জানিয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, জেএসডি পুরনো একটি দল। ভোটেও তারা পিছিয়ে থাকবে না। সে হিসাব করেই তারা সাধ্য অনুযায়ী আসন নেওয়ার চেষ্টা করবে। বিএনপিও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যেসব দল নির্বাচন করবে তার একটি তালিকা ইসিতে জমা দিয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করতে চাওয়া আটটি দলের তালিকা দেওয়া হয়। এসব দল ২০-দলীয় জোটের। এখানে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ দলবহির্ভূত শরিক কোনো দলের নাম নেই। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও গত রোববার নির্বাচন কমিশনে এক চিঠি দিয়ে জানিয়েছে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল হিসেবে নির্বাচন করবে। এ ক্ষেত্রে তারা দলীয় প্রতীক গামছা অথবা ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রতীক ব্যবহার করবে। দলীয় প্রতীক ছাতা ও জোটবদ্ধভাবে বিএনপি দলীয় প্রতীক ধানের শীষÑ উভয় প্রতীকে নির্বাচন করতে চায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জোটে জোটে আসন নিয়ে দর-কষাকষি

আপলোড টাইম : ০৯:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট: অবশেষে সাত দিন পেছাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টসহ কিছু রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকালে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মেনে নতুন তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে নতুন করে আশা জাগল দেশের রাজনীতিতে। এর মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের সদিচ্ছার পুনঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত রোববারও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান করা আমাদের লক্ষ্য। আমি আশা করি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এই নির্বাচনে অংশ নেবে।’ ভোটগ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইসি নির্বাচনের তারিখ না পেছালেও বিএনপি নির্বাচনে আসত। কারণ তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনে এসে গেছে। এর পরও ইসির নতুন তারিখ ঘোষণাকে আমি স্বাগত জানাই। সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে।’
অবশ্য গত বৃহস্পতিবার প্রথম তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নতুন করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ যুক্তফ্রন্ট ও বামজোট তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে সেদিন থেকেই আঁটসাঁট বেঁধে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নামে। পরে গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর ফলে দেশের সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনমুখী। এমনকি ইতোমধ্যেই দলগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। নির্বাচন নিয়ে সংশয় কেটে যাওয়ায় এখন রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া। সেজন্য মূল নজর জোটভুক্ত শরিক দলগুলোর দিকে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগিই মূল চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই বড় দলের জন্য। সামনে চলে আসছে জোটভুক্ত নির্বাচন ও সেক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়টিও। তবে সবার নজর এখন আসন ভাগাভাগির দিকেই। এ নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। কারণ এত দিন বিএনপিকে নিয়েই মূল চিন্তা ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। কারণ এবারের নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসা নিয়ে বড় ধরনের হিসাব রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। বিএনপি নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন নতুন সমীকরণ পেয়ে বসেছে আওয়ামী লীগকে। ফলে এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হিসাব তার শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টি নিয়ে। কারণ আসন ভাগাভাগির হিসাবটা নিজেদের মধ্যেই।
তেমনই আসন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বিএনপিকেও। নিজেদের ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হওয়ায় কঠিন হিসাবের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই দলকে। আর এ কারণেই এবার আসনের হিসাবটা বেশ কঠিন এই দলের জন্য। এরই মধ্যে প্রধান দলগুলো তাদের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়ার কাজও সেরে ফেলছে। পুনঃতফসিল হওয়ায় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমার তারিখ দু-এক দিন করে বাড়িয়েছে দলগুলো। কিন্তু আসন বণ্টনই এখন সবচেয়ে কঠিন সমীকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪-দলীয় জোট এবং ২০-দলীয় জোট আর ঐক্যফ্রন্টের জন্য। কোন দল কতটা আসনে লড়বেÑ অনেক আগে থেকেই শুরু হওয়া এই দরকষাকষি এখন একেবারে শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটে চলছে উত্তেজনা। তেমনই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পাঁচটি দলের মধ্যে বিএনপি বাদে বাকি দল ১৫০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে। প্রতিটি দলই মনে করছে, নিজেদের যথেষ্ট ভোট রয়েছে মাঠে। তবে শেষ পর্যন্ত এসব দল জোট শরিকদের জন্য কতটি আসন ছেড়ে দেয়Ñ সেটাই দেখার বিষয়।
১৪-দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা আওয়ামী লীগ আগেই জানিয়েছিল। বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কথাও তারা বলেছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও বলে আসছিলেন, বিএনপি ভোটে এলে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবে আর বিএনপি না এলে তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। তবে গত রোববার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চাইছে জাতীয় পার্টি। পাশাপাশি ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই জাতীয় পার্টি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলের কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের। অবশ্য এর আগে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসনের তালিকা দিয়েছি। এর মধ্যে ৭০ আসন তো পেতে পারি।’ তবে আওয়ামী লীগ এবার শরিক দলগুলোকে সর্বোচ্চ ৭০টি আসন দিতে পারে বলে দলের নীতির্নির্ধারকরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এবার আসন নিয়ে সবচেয়ে কঠিন মেরুকরণে বিএনপি। এর আগে বিএনপি চারদলীয় জোট ২০০৮ সালে নির্বাচন করে। তখন দলটি শরিকদের জন্য ৪১ আসন ছেড়েছিল। বিএনপি এবার একই সঙ্গে দুটি জোটভুক্ত। একদিকে ২০-দলীয় জোট, অন্যদিকে গত অক্টোবরে গঠিত হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জোটেও তারা সবচেয়ে বড় দল। ফলে এবার বিএনপিকে অন্যবারের চেয়ে বেশি আসন ছাড়তে হবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। এদিকে আসন নিয়ে শরিকদের মধ্যে চাহিদা আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও। এই জোটের অন্যতম শরিক দল গণফোরামের সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিএনপির পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম দল গণফোরাম। এবারের নির্বাচনে তাদের চাওয়া থাকবে ৭০-৭৫ আসন। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। খুব দ্রুত তারা আসন ধরে প্রার্থী ঠিক করবে। ঐক্যফ্রন্টের অপর শরিক জেএসডি এবার ৩০-৩৫ আসন চাইবে বলে জোট সূত্রগুলো জানিয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, জেএসডি পুরনো একটি দল। ভোটেও তারা পিছিয়ে থাকবে না। সে হিসাব করেই তারা সাধ্য অনুযায়ী আসন নেওয়ার চেষ্টা করবে। বিএনপিও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যেসব দল নির্বাচন করবে তার একটি তালিকা ইসিতে জমা দিয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করতে চাওয়া আটটি দলের তালিকা দেওয়া হয়। এসব দল ২০-দলীয় জোটের। এখানে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ দলবহির্ভূত শরিক কোনো দলের নাম নেই। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও গত রোববার নির্বাচন কমিশনে এক চিঠি দিয়ে জানিয়েছে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল হিসেবে নির্বাচন করবে। এ ক্ষেত্রে তারা দলীয় প্রতীক গামছা অথবা ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রতীক ব্যবহার করবে। দলীয় প্রতীক ছাতা ও জোটবদ্ধভাবে বিএনপি দলীয় প্রতীক ধানের শীষÑ উভয় প্রতীকে নির্বাচন করতে চায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।