ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

জেলা প্রশাসক দপ্তরে দুর্নীতির গণশুনানি কাল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩
  • / ৮ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হওয়া ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক এস এম আল কামালসহ অফিসের একটি সিন্ডিকেট এই বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম বিষয়টি তদন্তের জন্য গণশুনানির নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার বেলা ৩টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া এসএম আল কামাল, একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহা. মোজাম্মেল করিম, সুপার মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র গাইনকে শুনানিতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, তদন্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য গত ২২ মে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরিফুল ইসলাম (৯৬)/২৫ নম্বর স্মারকে একটি চিঠি ইস্যু করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম আল কামালের পক্ষে ওই দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরি দেওয়ার নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেছেন। এ নিয়ে চাকরি প্রত্যাশীরা অভিযোগ করেছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে রাজস্ব খাতভুক্ত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শূন্যপদ পূরণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ৭ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী (শুধু মহিলা) পদে ৬৭ জন এবং আয়া ৮টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়। ৮২টি পদের বিপরীতে তিন হাজার ৭৪২ জন আবেদন করেন। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর শহরের চারটি প্রতিষ্ঠানে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২৩ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ২৩৬ এবং আয়া পদে ৩০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় বলে ১৫ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। ওই বছরের ৭ নভেম্বর তাদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে বলে ভাইভা কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে ‘জনবল নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে নিয়োগের সব কার্যক্রম বন্ধ করে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম। সে সময় ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তর, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে লিখিত পরীক্ষায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

নির্দেশনা মোতাবেক চলতি মাসের ১৯, ২০ ও ২১ মে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এসএম আল কামালকে তাৎক্ষণিকভাবে ঠাকুরগাঁও জেলায় স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। তাকে অপরাহ্ণে যোগদানের জন্য বলা হলেও তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর না করে রাত অবধি মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কি কারণে এবং কোনো প্রার্থীর পক্ষে তিনি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে ফলাফল শীটে সাক্ষর করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অন্যদিকে তিনি ভারপ্রাপ্ত হলেও চিঠিপত্রে ভারপ্রাপ্ত না লিখে সরাসরি উপ-পরিচালক লিখে চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করেন। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলেও তিনি সরাসরি উপ-পরিচালক লিখেছেন বলে অভিযোগ।

বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এসএম আল কামাল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তার ব্যাপারে ওঠা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরিফুল ইসলাম তদন্তের খবর নিশ্চিত করে বলেন, নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। ২৯ মে তার দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই গণশুনানীতে অভিযোগকারীদের তথ্য প্রমাণসহ উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

জেলা প্রশাসক দপ্তরে দুর্নীতির গণশুনানি কাল

আপলোড টাইম : ১১:৩৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হওয়া ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক এস এম আল কামালসহ অফিসের একটি সিন্ডিকেট এই বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম বিষয়টি তদন্তের জন্য গণশুনানির নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার বেলা ৩টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া এসএম আল কামাল, একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহা. মোজাম্মেল করিম, সুপার মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র গাইনকে শুনানিতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, তদন্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য গত ২২ মে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরিফুল ইসলাম (৯৬)/২৫ নম্বর স্মারকে একটি চিঠি ইস্যু করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম আল কামালের পক্ষে ওই দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরি দেওয়ার নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেছেন। এ নিয়ে চাকরি প্রত্যাশীরা অভিযোগ করেছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে রাজস্ব খাতভুক্ত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শূন্যপদ পূরণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ৭ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী (শুধু মহিলা) পদে ৬৭ জন এবং আয়া ৮টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়। ৮২টি পদের বিপরীতে তিন হাজার ৭৪২ জন আবেদন করেন। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর শহরের চারটি প্রতিষ্ঠানে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২৩ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ২৩৬ এবং আয়া পদে ৩০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় বলে ১৫ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। ওই বছরের ৭ নভেম্বর তাদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে বলে ভাইভা কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে ‘জনবল নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে নিয়োগের সব কার্যক্রম বন্ধ করে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম। সে সময় ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তর, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে লিখিত পরীক্ষায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

নির্দেশনা মোতাবেক চলতি মাসের ১৯, ২০ ও ২১ মে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এসএম আল কামালকে তাৎক্ষণিকভাবে ঠাকুরগাঁও জেলায় স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। তাকে অপরাহ্ণে যোগদানের জন্য বলা হলেও তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর না করে রাত অবধি মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কি কারণে এবং কোনো প্রার্থীর পক্ষে তিনি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে ফলাফল শীটে সাক্ষর করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অন্যদিকে তিনি ভারপ্রাপ্ত হলেও চিঠিপত্রে ভারপ্রাপ্ত না লিখে সরাসরি উপ-পরিচালক লিখে চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করেন। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলেও তিনি সরাসরি উপ-পরিচালক লিখেছেন বলে অভিযোগ।

বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এসএম আল কামাল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তার ব্যাপারে ওঠা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরিফুল ইসলাম তদন্তের খবর নিশ্চিত করে বলেন, নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। ২৯ মে তার দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই গণশুনানীতে অভিযোগকারীদের তথ্য প্রমাণসহ উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।