ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৩৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস:
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা (জেনারেটর/আইপিএস)। তাই লোডশেডিংয়ে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধ ও উচ্চ রক্ত চাপের সহ সাধারণ রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রাতে রোগীদের থাকতে হচ্ছে অন্ধকারে। একমাত্র ভরসা মোবাইল ও চার্জার লাইট। এছাড়া হাসপাতালের ফ্রিজে থাকা টিকাসহ বিভিন্ন ওষুধ নষ্টের উপক্রম হয়ে পড়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্বজনেরা হাতপাখা, কাগজ ও কাপড় নাড়িয়ে রোগীদের বাতাস দিচ্ছে। রাতে লোডশেডিং হওয়ায় মোবাইল ও চার্জার লাইট জ্বালিয়ে খাবার খাওয়া ও প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। রাতে হাতে স্যালাইনের নল লাগানো ও ক্যাথেটর করা অবস্থায় হাসপাতাল চত্বরে অন্ধকারে বসে ছিলেন আব্দুল হান্নান নামের এক বৃদ্ধ। তিনি বিষপান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভ্যাপসা গরম আর অসহনীয় লোডশেডিংয়ে হাসপাতালের বেড ছেড়ে তিনি বাইরে এসে বসেছেন। তিনি বলেন, ‘বিষ খেয়েছিলাম মরার জন্য, কিন্তু পরিবারের লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছে। এখন দেখছি এখানে এসে প্রাণে বেঁচে গিয়েও মরার উপক্রম হয়েছে। তীব্র গরম, সাথে লোডশেডিং। কারেন্ট গেলেই পুরো হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে যায়। মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে থাকতে হচ্ছে।’

হাসপাতালে ভর্তি রোগী মো. সরফরাজ বলেন, ‘বারবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে সুস্থ হওয়ার জায়গায় আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। গরমে খুব খারাপ লাগছে।’ রোগীর স্বজন মো. জাকির, রহিমা বেগম ও শোভা মন্ডল বলেন, ‘সোমবার দুপুর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কয়েকবার বিদ্যুৎ গেছে। এতে রোগীদের খুব কষ্ট হচ্ছে। গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগীরা। সেই সঙ্গে স্বজনরাও ভোগান্তিতে পড়েছে। রোগীদের স্বস্তির জন্য হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তা নাড়িয়েই বাতাস করার চেষ্টা করছে।’

সদ্য ভূমিষ্ঠ এক নবজাতকের অভিভাবক বলেন, ‘এটা কেমন সেবা প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালে জেনারেটর তো থাকবে। কর্তৃপক্ষের কোনো কথা নেই, তারা যে যার মতো। তীব্র গরমে নবজাতক ও মা দুজনই এখন ছটফট করছে।’ দত্তনগর এলাকার রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু নামেই এতো বড় একটা হাসপাতাল, কাজে কিছু না। সেবার মান খুবই খারাপ। নেই সুযোগ-সুবিধা। চিকিৎসাসেবা নাকি উন্নতি হইছে? তাহলে এত বড় হাসপাতালে একটা জেনারেটর কেন নাই?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, ‘অসহনীয় গরম আর লোডশেডিংয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলেই বিদঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। মোবাইলের টর্চ ও চার্জার লাইট জ্বালিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছে যে, রোগীদের সুস্থ করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘লোডশেডিংয়ে রোগী ও স্বজনেরা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ছে। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের গালিগালাজ করছে। আজেবাজে ভাষায় কথা শোনাচ্ছে। এত কিছু সহ্য করে আমাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাহিদ হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে হাসপাতাল অন্ধকার তো থাকবেই। হাসপাতালের জেনরেটরে তেল নেই, তাই ভোগান্তি হচ্ছে।’ পূর্বের আইপিএস সুবিধার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ওটা শুধু জরুরি বিভাগের জন্য। এদিকে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আগের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আইপিএস থাকলেও তা এখন অকেজো।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা

আপলোড টাইম : ০৫:৩৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩

জীবননগর অফিস:
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা (জেনারেটর/আইপিএস)। তাই লোডশেডিংয়ে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধ ও উচ্চ রক্ত চাপের সহ সাধারণ রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রাতে রোগীদের থাকতে হচ্ছে অন্ধকারে। একমাত্র ভরসা মোবাইল ও চার্জার লাইট। এছাড়া হাসপাতালের ফ্রিজে থাকা টিকাসহ বিভিন্ন ওষুধ নষ্টের উপক্রম হয়ে পড়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্বজনেরা হাতপাখা, কাগজ ও কাপড় নাড়িয়ে রোগীদের বাতাস দিচ্ছে। রাতে লোডশেডিং হওয়ায় মোবাইল ও চার্জার লাইট জ্বালিয়ে খাবার খাওয়া ও প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। রাতে হাতে স্যালাইনের নল লাগানো ও ক্যাথেটর করা অবস্থায় হাসপাতাল চত্বরে অন্ধকারে বসে ছিলেন আব্দুল হান্নান নামের এক বৃদ্ধ। তিনি বিষপান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভ্যাপসা গরম আর অসহনীয় লোডশেডিংয়ে হাসপাতালের বেড ছেড়ে তিনি বাইরে এসে বসেছেন। তিনি বলেন, ‘বিষ খেয়েছিলাম মরার জন্য, কিন্তু পরিবারের লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছে। এখন দেখছি এখানে এসে প্রাণে বেঁচে গিয়েও মরার উপক্রম হয়েছে। তীব্র গরম, সাথে লোডশেডিং। কারেন্ট গেলেই পুরো হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে যায়। মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে থাকতে হচ্ছে।’

হাসপাতালে ভর্তি রোগী মো. সরফরাজ বলেন, ‘বারবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে সুস্থ হওয়ার জায়গায় আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। গরমে খুব খারাপ লাগছে।’ রোগীর স্বজন মো. জাকির, রহিমা বেগম ও শোভা মন্ডল বলেন, ‘সোমবার দুপুর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কয়েকবার বিদ্যুৎ গেছে। এতে রোগীদের খুব কষ্ট হচ্ছে। গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগীরা। সেই সঙ্গে স্বজনরাও ভোগান্তিতে পড়েছে। রোগীদের স্বস্তির জন্য হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তা নাড়িয়েই বাতাস করার চেষ্টা করছে।’

সদ্য ভূমিষ্ঠ এক নবজাতকের অভিভাবক বলেন, ‘এটা কেমন সেবা প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালে জেনারেটর তো থাকবে। কর্তৃপক্ষের কোনো কথা নেই, তারা যে যার মতো। তীব্র গরমে নবজাতক ও মা দুজনই এখন ছটফট করছে।’ দত্তনগর এলাকার রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু নামেই এতো বড় একটা হাসপাতাল, কাজে কিছু না। সেবার মান খুবই খারাপ। নেই সুযোগ-সুবিধা। চিকিৎসাসেবা নাকি উন্নতি হইছে? তাহলে এত বড় হাসপাতালে একটা জেনারেটর কেন নাই?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, ‘অসহনীয় গরম আর লোডশেডিংয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলেই বিদঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। মোবাইলের টর্চ ও চার্জার লাইট জ্বালিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছে যে, রোগীদের সুস্থ করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘লোডশেডিংয়ে রোগী ও স্বজনেরা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ছে। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের গালিগালাজ করছে। আজেবাজে ভাষায় কথা শোনাচ্ছে। এত কিছু সহ্য করে আমাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাহিদ হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে হাসপাতাল অন্ধকার তো থাকবেই। হাসপাতালের জেনরেটরে তেল নেই, তাই ভোগান্তি হচ্ছে।’ পূর্বের আইপিএস সুবিধার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ওটা শুধু জরুরি বিভাগের জন্য। এদিকে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আগের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আইপিএস থাকলেও তা এখন অকেজো।