ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জীবননগরে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ৩৭১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবননগরে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্কুলে ছাত্র ভর্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, মেরামত, আসবাবপত্র ও শিক্ষাসরঞ্জাম কেনাকাটা ও সরবরাহের প্রতিটি ধাপেই চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। সাথে সাথে প্রধান শিক্ষকদের উদাসীনতা আর খামখেয়ালিপনাভাবে ক্লাস নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে। যার ফলে প্রতি বছরে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের হার বাড়লেও প্রকৃতভাবে স্বশিক্ষায়-শিক্ষিত হচ্ছে অনেক কম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জীবননগর উপজেলায় যে সমস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে তার মধ্যে ৫০% বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস না নিয়ে শিক্ষা অফিসের বিভিন্ন মিটিংয়ের দোহায় দিয়ে বাজারে নিজেদের পারিবারিক কাজ করে থাকে। ফলে ওই শিক্ষকের নির্ধারিত বিষয়সমূহ জ্ঞান অর্জন থেকে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, এ সমস্ত প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্যালয়ের মেরামত ও বিদ্যালয়ের সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্ধকৃত অর্থ ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গঙ্গাদাশপুর গ্রামের এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, গঙ্গাদাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাইরুল ইসলাম আমার মেয়ের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেছে। তিনি আমার মেয়ের নাম দিয়ে বলে, তোমার মেয়ের টাকা এ বছর দেওয়া হবে না। অথছ আমি সন্ধান নিয়ে দেখি, আমার মেয়ের নাম দিয়ে অন্য একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে হেড মাস্টার টাকা তুলে নিয়েছে। বিষয়টি আমি তাকে বললে সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে পরবর্তীতে অল্প কিছু টাকা দিয়ে বলে এই দিলাম আর পরে দিব এই বলে আর টাকা দেয়নি।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, গঙ্গাদাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও স্কুলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিলো এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি স্বরুপ যে পরিমাণের টাকা আত্মসাত করেছিলো, সে অনুযায়ী স্কুলে ফ্যান কিনে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। এদিকে পরবর্তীতে ওই ফ্যান স্কুলের টাকা দিয়েই ওই শিক্ষক ক্রয় করে। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষক হওয়ায় তিনি স্কুলে ক্লাস নিতে আগ্রহ নয় বলেও জানা গেছে। যার ফলে ওই বিদ্যালয়ের লেখাপড়া একেবারে লাজুক হয়ে পড়েছে। শুধু গঙ্গাদাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় এ রকম উপজেলার বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা করে থাকে সরকারিভাবে বরাদ্ধকৃত অর্থ বেশির ভাগ স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম না করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি আর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের মন রাখতে তাদের নিকট হাওলাদ দিয়ে থাকে নতুবা স্কুলে খাওয়া দাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর হিসেব চাইলে পুরাতন স্লিপ আর নতুন স্লিপ দিয়ে নয়-ছয় করে শিক্ষা অফিসারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ সমস্ত অসাধু কিছু শিক্ষকদের কারণে আজ শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ দশা হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে গঙ্গাদাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাইরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জীবননগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবননগরে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম

আপলোড টাইম : ১০:৩২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবননগরে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্কুলে ছাত্র ভর্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, মেরামত, আসবাবপত্র ও শিক্ষাসরঞ্জাম কেনাকাটা ও সরবরাহের প্রতিটি ধাপেই চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। সাথে সাথে প্রধান শিক্ষকদের উদাসীনতা আর খামখেয়ালিপনাভাবে ক্লাস নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে। যার ফলে প্রতি বছরে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের হার বাড়লেও প্রকৃতভাবে স্বশিক্ষায়-শিক্ষিত হচ্ছে অনেক কম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জীবননগর উপজেলায় যে সমস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে তার মধ্যে ৫০% বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস না নিয়ে শিক্ষা অফিসের বিভিন্ন মিটিংয়ের দোহায় দিয়ে বাজারে নিজেদের পারিবারিক কাজ করে থাকে। ফলে ওই শিক্ষকের নির্ধারিত বিষয়সমূহ জ্ঞান অর্জন থেকে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, এ সমস্ত প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্যালয়ের মেরামত ও বিদ্যালয়ের সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্ধকৃত অর্থ ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গঙ্গাদাশপুর গ্রামের এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, গঙ্গাদাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাইরুল ইসলাম আমার মেয়ের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেছে। তিনি আমার মেয়ের নাম দিয়ে বলে, তোমার মেয়ের টাকা এ বছর দেওয়া হবে না। অথছ আমি সন্ধান নিয়ে দেখি, আমার মেয়ের নাম দিয়ে অন্য একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে হেড মাস্টার টাকা তুলে নিয়েছে। বিষয়টি আমি তাকে বললে সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে পরবর্তীতে অল্প কিছু টাকা দিয়ে বলে এই দিলাম আর পরে দিব এই বলে আর টাকা দেয়নি।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, গঙ্গাদাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও স্কুলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিলো এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি স্বরুপ যে পরিমাণের টাকা আত্মসাত করেছিলো, সে অনুযায়ী স্কুলে ফ্যান কিনে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। এদিকে পরবর্তীতে ওই ফ্যান স্কুলের টাকা দিয়েই ওই শিক্ষক ক্রয় করে। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষক হওয়ায় তিনি স্কুলে ক্লাস নিতে আগ্রহ নয় বলেও জানা গেছে। যার ফলে ওই বিদ্যালয়ের লেখাপড়া একেবারে লাজুক হয়ে পড়েছে। শুধু গঙ্গাদাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় এ রকম উপজেলার বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা করে থাকে সরকারিভাবে বরাদ্ধকৃত অর্থ বেশির ভাগ স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম না করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি আর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের মন রাখতে তাদের নিকট হাওলাদ দিয়ে থাকে নতুবা স্কুলে খাওয়া দাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর হিসেব চাইলে পুরাতন স্লিপ আর নতুন স্লিপ দিয়ে নয়-ছয় করে শিক্ষা অফিসারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ সমস্ত অসাধু কিছু শিক্ষকদের কারণে আজ শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ দশা হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে গঙ্গাদাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাইরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জীবননগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।