ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জীবননগরে পুলিশ কনস্টেবলকে গণধোলাই!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ৭৫৭ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস:
জীবননগরে এক পুলিশ কনস্টেবল গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের মিনাজপুর গ্রামের রাখাল শাহ মাজারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। গণধোলাইয়ে আহত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামান (২৯) যশোর জেলার ঝিকরগাছা গ্রামের মৃত আব্দুল সাত্তারের ছেলে। তিনি চাকরির সুবাদে মহেশপুর থানার দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। গত শুক্রবার রাতের আঁধারে তৌহিদুজ্জামান ও কাজির বেড়ে গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে ফুহাদ হোসেন (২৪) জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের মিনাজপুরের রাখাল শাহ মাজারের পাশে নুরু মিয়ার বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং নুরু মিয়ার স্ত্রীর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় রুমে থাকা গৃহবধূর চিৎকারে তাঁর স্বামীসহ স্থানীয় লোকজন ছুটে আসে এবং তৌহিদুজ্জামান ও ফুহাদকে আটক করে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে জীবননগর থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং গণধোলাইয়ে আহত দুজনকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
গৃহকর্তা নুরু মিয়া বলেন, ‘দুজন ব্যক্তি আমার বাড়ির সামনে ঘুরতে থাকলে আমি পরিচয় জানতে চাই। তখন তাঁরা নিজেরদেরকে পুলিশ বলে পরিচয় দেয় এবং বাথরুমে যাবার কথা বলে। তাঁদের কথা মতো আমি তাঁদের বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে দোকানে চলে আসি। এমন সময় আমার ছেলে ও স্ত্রী চিৎকার করলে আমরা সবাই ছুটে যাই এবং ঘরের দরজা খুলতে বলি। তাঁরা দরজা না খুললে আমরা ঘরের অন্য দরজা ভেঙ্গে তাঁদের বের করি।’
অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমি কোনো নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত না। আসলে আমার মাথা যন্ত্রণা করছিল। এ জন্য ওই বাড়িতে একটু বিশ্রামের জন্য গেলে তাঁরা আমাকে মারধর করে। এ সময় জীবননগর থানায় ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, ‘শুক্রবার রাতে তৌহিদুজ্জামান ও ফুহাদ নামের দুজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসলে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাঁরা চিকিৎসা শেষে রাতেই বাড়ি চলে যায়।’
দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই তারেক বলেন, ‘কনস্টেবল তৌহিদ আমাকে কিছু না বলেই চলে গেছে। তা ছাড়া আমি যতটুকু জানি, সে তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। এর বেশি কিছু বলতে পরব না।’
মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদুল আলমের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামানের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এটি নারীঘটিত কোনো বিষয় না। তাঁর মাথায় একটু সমস্যা আছে, সে কারণেই হয়তো এ ঘটনা ঘটেছে। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গনি মিয়া বলেন, ‘দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামানের বিষয়টি শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই, সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জানতে পারি, দুইপক্ষের মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। তা ছাড়া তৌহিদুজ্জামানের মানসিক সমস্যা আছে বলে জানতে পেরেছি।’
ঝিনাইদহ জেলার (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর সার্কেল) এএসপি আতিকুর রহমান বলেন, ‘কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামানের বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবননগরে পুলিশ কনস্টেবলকে গণধোলাই!

আপলোড টাইম : ০৯:০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জীবননগর অফিস:
জীবননগরে এক পুলিশ কনস্টেবল গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের মিনাজপুর গ্রামের রাখাল শাহ মাজারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। গণধোলাইয়ে আহত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামান (২৯) যশোর জেলার ঝিকরগাছা গ্রামের মৃত আব্দুল সাত্তারের ছেলে। তিনি চাকরির সুবাদে মহেশপুর থানার দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। গত শুক্রবার রাতের আঁধারে তৌহিদুজ্জামান ও কাজির বেড়ে গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে ফুহাদ হোসেন (২৪) জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের মিনাজপুরের রাখাল শাহ মাজারের পাশে নুরু মিয়ার বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং নুরু মিয়ার স্ত্রীর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় রুমে থাকা গৃহবধূর চিৎকারে তাঁর স্বামীসহ স্থানীয় লোকজন ছুটে আসে এবং তৌহিদুজ্জামান ও ফুহাদকে আটক করে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে জীবননগর থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং গণধোলাইয়ে আহত দুজনকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
গৃহকর্তা নুরু মিয়া বলেন, ‘দুজন ব্যক্তি আমার বাড়ির সামনে ঘুরতে থাকলে আমি পরিচয় জানতে চাই। তখন তাঁরা নিজেরদেরকে পুলিশ বলে পরিচয় দেয় এবং বাথরুমে যাবার কথা বলে। তাঁদের কথা মতো আমি তাঁদের বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে দোকানে চলে আসি। এমন সময় আমার ছেলে ও স্ত্রী চিৎকার করলে আমরা সবাই ছুটে যাই এবং ঘরের দরজা খুলতে বলি। তাঁরা দরজা না খুললে আমরা ঘরের অন্য দরজা ভেঙ্গে তাঁদের বের করি।’
অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমি কোনো নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত না। আসলে আমার মাথা যন্ত্রণা করছিল। এ জন্য ওই বাড়িতে একটু বিশ্রামের জন্য গেলে তাঁরা আমাকে মারধর করে। এ সময় জীবননগর থানায় ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, ‘শুক্রবার রাতে তৌহিদুজ্জামান ও ফুহাদ নামের দুজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসলে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাঁরা চিকিৎসা শেষে রাতেই বাড়ি চলে যায়।’
দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই তারেক বলেন, ‘কনস্টেবল তৌহিদ আমাকে কিছু না বলেই চলে গেছে। তা ছাড়া আমি যতটুকু জানি, সে তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। এর বেশি কিছু বলতে পরব না।’
মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদুল আলমের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামানের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এটি নারীঘটিত কোনো বিষয় না। তাঁর মাথায় একটু সমস্যা আছে, সে কারণেই হয়তো এ ঘটনা ঘটেছে। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গনি মিয়া বলেন, ‘দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামানের বিষয়টি শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই, সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জানতে পারি, দুইপক্ষের মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। তা ছাড়া তৌহিদুজ্জামানের মানসিক সমস্যা আছে বলে জানতে পেরেছি।’
ঝিনাইদহ জেলার (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর সার্কেল) এএসপি আতিকুর রহমান বলেন, ‘কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামানের বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’