ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জীবননগরে নিম্নমানের গাইড বই বিক্রির হিড়িক!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ২৮৩ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস: জীবননগর করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নি¤œমানের গাইড ও গ্রামার বই বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কয়েক বছর আগেও স্কুলে লেখাপড়া করতে হলে, দোকান থেকে বই ক্রয় করে লেখাপড়া করতে হতো। সে সময় কিছু অসাধু শিক্ষকের যোগসাজসে বিভিন্ন লাইব্রেরির মালিকদের সাথে কোম্পানীর মাধ্যমে একটি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিক্ষকরা তাদের নিজেদের মন মতো আর কোম্পানীর দেওয়া বুকলিস্ট অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বই ক্রয় করতে বাধ্য করতো। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষার মানউন্নয়নের লক্ষে এবং কোন শিক্ষার্থী যাতে লেখাপড়া থেকে ঝরে না পড়ে সে জন্য, নতুন বছরের প্রথম দিকেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামুল্যে বই তুলে দিচ্ছেন। যার ফলে বেশ কিছু শিক্ষকের বাৎসরিক কিছু উৎকোস বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কথায় বলে চোরে না শোনে ধর্মেরও কাহিনী। সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দিলেও অসাধু কিছু শিক্ষক নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গাইড ও গ্রামার বইয়ের ব্যবসা শুরু করেছেন। যার ফলে অসহায় হয়ে পড়েছেন দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা।
একটি সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌফিকুর রহমান জীবননগর শহরের একটি লাইব্রেরীর মাধ্যমে অনুপম প্রকাশনীর নিকট থেকে ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে ওই প্রকাশনীর যাবতীয় গাইড, গ্রামার ও ব্যাকরণ বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে। বিদ্যালয়ে গাইড ও গ্রামার বই বিক্রি করতে নিষেধ করা হলেও শিক্ষক কোন কথা না শুনে নিজের খেয়াল খুশিমত অতিরিক্ত দামে বই কিনতে বাধ্য করছেন বলে দাবি শিক্ষর্থীদের।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কামাল হোসেন কাজল জানান, আমার কাছে বেশ কিছু অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যে গাইড গ্রামার ও ব্যাকরণ বই লিখে দিয়েছে তা বাজারে অন্যান্য প্রকাশনীর তুলনায় দ্বিগুন বেশি দাম। তা ছাড়া যে বই লিখে দিয়েছে তার চেয়ে অনেক ভালো প্রকাশনীর বই কিনে নিয়ে গেলেও ওই বই কিনতে বাধ্য করছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি স্কুলে গিয়েছিলাম এবং শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আমাকে দেখে স্কুল থেকে বের হয়ে বলে, বাজারে আমার জরুরি কাজ আছে আপনার সাথে পরে কথা বলবো এই বলে তিনি চলে যায়।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম প্রকাশনীর ৬ষ্ঠ শ্রেণীর যে গ্রামার বই বিক্রি করছেন তার দাম ৮২৩ টাকা আর অন্যসব প্রকাশনী গ্রামারের দাম ৩৫০ টাকা, ৭ম শ্রেণীর যে গ্রামার বই বিক্রি করছেন তার দাম ৮৭১ টাকা আর অন্যসব প্রকাশনীর গ্রামারের দাম ৪শ’ টাকা, ৮ম শ্রেণীর বইয়ের দাম ১১১৭ টাকা আর অন্যসব প্রকাশনীর দাম ৬শ’ টাকা এবং নবম শ্রেণীর বইয়ের দাম ৭শ’ টাকা আর অন্যসব প্রকাশনীর দাম ৪শ’ টাকা। এদিকে অতিরিক্ত দামে বই কিনতে অনেকের হিমসিম খেতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার বিনামূল্যে বই দিলেও করতোয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক যে বই লিখে দিয়েছে এই বই কিনতে আমার চারদিনের জনের (মজুরি) দাম চলে যাচ্ছে। তাহলে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাবো না সংসার চালাবো?
করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌফিকুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এটা বানোয়াট ভিত্তিহীন ঘটনা। আমি কোন প্রকাশনীর নিকট থেকে টাকা গ্রহন করিনি। এ গুলো সব মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
জীবননগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দ্বিনেশচন্দ্র পালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গাইড বই বিক্রি করার যে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আমি কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। যদি অভিযোগ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, স্কুলে গাইড বই বিক্রির ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ পায়নি। তাছাড়া যদি কোন শিক্ষক গাইড বই বিক্রির সাথে জড়িত থাকে তা হলে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবননগরে নিম্নমানের গাইড বই বিক্রির হিড়িক!

আপলোড টাইম : ১০:৩৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০১৯

জীবননগর অফিস: জীবননগর করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নি¤œমানের গাইড ও গ্রামার বই বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কয়েক বছর আগেও স্কুলে লেখাপড়া করতে হলে, দোকান থেকে বই ক্রয় করে লেখাপড়া করতে হতো। সে সময় কিছু অসাধু শিক্ষকের যোগসাজসে বিভিন্ন লাইব্রেরির মালিকদের সাথে কোম্পানীর মাধ্যমে একটি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিক্ষকরা তাদের নিজেদের মন মতো আর কোম্পানীর দেওয়া বুকলিস্ট অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বই ক্রয় করতে বাধ্য করতো। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষার মানউন্নয়নের লক্ষে এবং কোন শিক্ষার্থী যাতে লেখাপড়া থেকে ঝরে না পড়ে সে জন্য, নতুন বছরের প্রথম দিকেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামুল্যে বই তুলে দিচ্ছেন। যার ফলে বেশ কিছু শিক্ষকের বাৎসরিক কিছু উৎকোস বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কথায় বলে চোরে না শোনে ধর্মেরও কাহিনী। সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দিলেও অসাধু কিছু শিক্ষক নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গাইড ও গ্রামার বইয়ের ব্যবসা শুরু করেছেন। যার ফলে অসহায় হয়ে পড়েছেন দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা।
একটি সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌফিকুর রহমান জীবননগর শহরের একটি লাইব্রেরীর মাধ্যমে অনুপম প্রকাশনীর নিকট থেকে ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে ওই প্রকাশনীর যাবতীয় গাইড, গ্রামার ও ব্যাকরণ বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে। বিদ্যালয়ে গাইড ও গ্রামার বই বিক্রি করতে নিষেধ করা হলেও শিক্ষক কোন কথা না শুনে নিজের খেয়াল খুশিমত অতিরিক্ত দামে বই কিনতে বাধ্য করছেন বলে দাবি শিক্ষর্থীদের।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কামাল হোসেন কাজল জানান, আমার কাছে বেশ কিছু অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যে গাইড গ্রামার ও ব্যাকরণ বই লিখে দিয়েছে তা বাজারে অন্যান্য প্রকাশনীর তুলনায় দ্বিগুন বেশি দাম। তা ছাড়া যে বই লিখে দিয়েছে তার চেয়ে অনেক ভালো প্রকাশনীর বই কিনে নিয়ে গেলেও ওই বই কিনতে বাধ্য করছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি স্কুলে গিয়েছিলাম এবং শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আমাকে দেখে স্কুল থেকে বের হয়ে বলে, বাজারে আমার জরুরি কাজ আছে আপনার সাথে পরে কথা বলবো এই বলে তিনি চলে যায়।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম প্রকাশনীর ৬ষ্ঠ শ্রেণীর যে গ্রামার বই বিক্রি করছেন তার দাম ৮২৩ টাকা আর অন্যসব প্রকাশনী গ্রামারের দাম ৩৫০ টাকা, ৭ম শ্রেণীর যে গ্রামার বই বিক্রি করছেন তার দাম ৮৭১ টাকা আর অন্যসব প্রকাশনীর গ্রামারের দাম ৪শ’ টাকা, ৮ম শ্রেণীর বইয়ের দাম ১১১৭ টাকা আর অন্যসব প্রকাশনীর দাম ৬শ’ টাকা এবং নবম শ্রেণীর বইয়ের দাম ৭শ’ টাকা আর অন্যসব প্রকাশনীর দাম ৪শ’ টাকা। এদিকে অতিরিক্ত দামে বই কিনতে অনেকের হিমসিম খেতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার বিনামূল্যে বই দিলেও করতোয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক যে বই লিখে দিয়েছে এই বই কিনতে আমার চারদিনের জনের (মজুরি) দাম চলে যাচ্ছে। তাহলে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাবো না সংসার চালাবো?
করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌফিকুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এটা বানোয়াট ভিত্তিহীন ঘটনা। আমি কোন প্রকাশনীর নিকট থেকে টাকা গ্রহন করিনি। এ গুলো সব মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
জীবননগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দ্বিনেশচন্দ্র পালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, করতোয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গাইড বই বিক্রি করার যে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আমি কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। যদি অভিযোগ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, স্কুলে গাইড বই বিক্রির ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ পায়নি। তাছাড়া যদি কোন শিক্ষক গাইড বই বিক্রির সাথে জড়িত থাকে তা হলে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।