ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জীবননগরে আইপিএল নিয়ে বেপরোয়া জুয়ায় নিঃস্ব মানুষ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মে ২০১৮
  • / ৭৫৩ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস: জীবননগরে চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নিয়ে রমরমা জুয়ার আসর। নিঃস্ব হচ্ছে যুব সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর অবধি পর্যন্ত চলছে এ জুয়া খেলা। গ্রাম ও শহরের কিছু মোড়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার চায়ের দোকান ও খেলার মাঠে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয়ে যায় আইপিএল নিয়ে হৈ-হুল্লোড়, হট্টগোল। এসবের পাশাপাশি বাজি ধরার নামে চলছে জুয়ার আসর। আইপিএল নিয়ে জুয়ার আসর এখানে নতুন কিছু নয়। এই লীগ শুরুর পর থেকে বাজিকরদের একটা অংশ তরুন যুবকদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে এ ধরনের নেশার দিকে।
এছাড়াও বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, দেশে-বিদেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রতিদিন আইপিএল ম্যাচের উপর বাজি ধরছেন কিছু সংখ্যক ডিজিটাল জুয়াড়িরা। একদিনে কেউ জিতে হচ্ছেন হাজারপতি থেকে লাখপতি আবার কেউবা সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। এই জুয়ার আসরকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত মারামারী, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড নিত্যদিনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। যার ফলে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের ঘটনা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জুয়া কেনা-বেচাও হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে টাকা হয়ে যাচ্ছে দিগুণ। এই লোভে অনেকেই নিঃস্ব হতে দেখা যাচ্ছে। সুদে টাকা ধার নিয়ে এই ভয়ঙ্কার জুয়ার আসরে নেমে পড়ছে অনেকেই।
চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ঘিরে বাজি ধরার কৌশল হচ্ছে ম্যাচের কোন একটি দলের জয়ী হওয়া, ফ্লিডিং চার অথবা ছক্কাবাজি, উইকেট বাজি, কোন ওভারে কত রান, কোন ওভারে কত উইকেট, শেষ বলে কত রান হবে, টসে কোন দল জিতবে, কোন খেলোয়াড় বেশি রান করবে, কে বেশি উইকেট পাবে ইত্যাদি। চলছে ১’শ টাকা থেকে শুরু করে লাখ লাখ টাকার বাজিমাত। কিছু জুয়াড়ীরা এক পক্ষের সাথে অপর পক্ষের মোবাইলের মাধ্যমে বাজি ধরিয়ে দিতে সাহায্য করছে। কিন্তু যে জুয়াড়ী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে দিচ্ছে সেই ব্যক্তিই টাকা উঠিয়ে দিচ্ছে। যে টাকা থেকে ওই ব্যক্তি নির্দিষ্ট শতকরা হারে কমিশন পেয়ে যাচ্ছেন। এসব কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসন কোন ধরনের ভূমিকা রাখছেন না বলে মনে করছেন সচেতন মহল। আইপিএল খেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত চায়ের দোকান, চাকাপট্টি, কফির দোকান, ক্লাব, সেলুনগুলোতে ক্রিকেট দর্শককে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এ দৃর্শ্যগুলি দেখে ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে খেলা উপভোগ করছে বলে মনে হলেও বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। কিছু ব্যতিক্রম ব্যক্তি ছাড়া সবাই এই জুয়া নিয়ে ব্যস্ত।
জুয়াড়ীরা যোগাযোগ করছে মোবাইল ফোনে, লেনদেন হচ্ছে বিকাশে। তবে পাড়ার অলি গলিতে স্ক্রিন লাগিয়ে ও টিভিতে খেলা দেখার সময় টাকা হাতবদল হচ্ছে সরাসরিই। এখন আইপিএল জুয়াকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে কেউ কেউ। প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তবে বেশিরভাগ সময়ই জুয়া জেতেন না ভুক্তভোগিরা। এ ধরনের জুয়ার আসরে নি¤œ আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে বিত্তশালীদের ছেলেরা জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। জুয়ার টাকা দিতে না পারায় ঘটেছে আত্মহত্যার ঘটনাও। টাকার অভাবে কেউ কেউ বাইসাইকেল, সোনার গহনা, দামি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, স্ত্রীর সোনার গহনাসহ নানা দামি জিনিসপত্র বিক্রিসহ কেউ কেউ বন্ধকও রাখছে। এরপরও এসব বিষয় নিরব রয়েছে প্রশাসন। জুয়ার আসর বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সূধীজন ও নগরবাসী।
জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল বলেন, ক্রিকেট খেলা একটি আনন্দ ও বিনোদনের খেলা। কিন্তু বর্তমানে এটি উঠতি বয়সের ছেলেসহ বিভন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে ক্রিকেট জুয়ার নেশায় পরিণত হয়েছে। এটি আসলেই দু:খজনক ব্যাপার। এই জুয়ার টাকা ব্যবস্থা করার জন্য অনেকেই অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, এই জুয়া খেলার বিষয়ে যদি কোন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ্যে অনিইচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তারই এলাকার এক যুবক ৫০ হাজার টাকা সুদের উপর ধার নিয়ে আইপিএল জুয়ার আসরে বসেছিল। হেরে গিয়ে টাকা ফেরত দিতে না পারাই সে বর্তমানে এলাকা ছাড়া। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই জুয়ার আসর বসে। জীবননগর পৌর এলাকার পানবাজার, কাঁচাবাজার, স্বর্ণপট্টি, চাকাপট্টি, লক্ষিপুর চাতালে-মিলে, থানার সামনে রাজনগর, ষ্টেডিয়ামে, নারায়নপুর মোড়ে মল্লিক মার্কেটে, মোল্লা মার্কেটে, মদিনা মার্কেটের চায়ের দোকানের গলিতে, মেশিনপট্টি, ডাকবাংলা, হাসপাতালের আমবাগানেসহ আরো বিভিন্ন জায়গায় চলছে জুয়ার আসর।
এ বিষয়ে জীবননগর থানা অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মাহমুদুর রহমান সময়ের সমীকরণকে বলেন, আইপিএল খেলাকে কেন্দ্র করে যদি কোন স্থানে জুয়া খেলার খবর পাওয়া যায় তাহলে সে স্থানে অভিযান চালানো হবে। তিনি আরো বলেন, এটা এক ধরনের ক্রাইম। এ বিষয়ে পুলিশের কঠোর নজরদারী রয়েছে। তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ঠ অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবননগরে আইপিএল নিয়ে বেপরোয়া জুয়ায় নিঃস্ব মানুষ!

আপলোড টাইম : ১১:২০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মে ২০১৮

জীবননগর অফিস: জীবননগরে চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নিয়ে রমরমা জুয়ার আসর। নিঃস্ব হচ্ছে যুব সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর অবধি পর্যন্ত চলছে এ জুয়া খেলা। গ্রাম ও শহরের কিছু মোড়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার চায়ের দোকান ও খেলার মাঠে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয়ে যায় আইপিএল নিয়ে হৈ-হুল্লোড়, হট্টগোল। এসবের পাশাপাশি বাজি ধরার নামে চলছে জুয়ার আসর। আইপিএল নিয়ে জুয়ার আসর এখানে নতুন কিছু নয়। এই লীগ শুরুর পর থেকে বাজিকরদের একটা অংশ তরুন যুবকদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে এ ধরনের নেশার দিকে।
এছাড়াও বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, দেশে-বিদেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রতিদিন আইপিএল ম্যাচের উপর বাজি ধরছেন কিছু সংখ্যক ডিজিটাল জুয়াড়িরা। একদিনে কেউ জিতে হচ্ছেন হাজারপতি থেকে লাখপতি আবার কেউবা সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। এই জুয়ার আসরকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত মারামারী, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড নিত্যদিনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। যার ফলে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের ঘটনা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জুয়া কেনা-বেচাও হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে টাকা হয়ে যাচ্ছে দিগুণ। এই লোভে অনেকেই নিঃস্ব হতে দেখা যাচ্ছে। সুদে টাকা ধার নিয়ে এই ভয়ঙ্কার জুয়ার আসরে নেমে পড়ছে অনেকেই।
চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ঘিরে বাজি ধরার কৌশল হচ্ছে ম্যাচের কোন একটি দলের জয়ী হওয়া, ফ্লিডিং চার অথবা ছক্কাবাজি, উইকেট বাজি, কোন ওভারে কত রান, কোন ওভারে কত উইকেট, শেষ বলে কত রান হবে, টসে কোন দল জিতবে, কোন খেলোয়াড় বেশি রান করবে, কে বেশি উইকেট পাবে ইত্যাদি। চলছে ১’শ টাকা থেকে শুরু করে লাখ লাখ টাকার বাজিমাত। কিছু জুয়াড়ীরা এক পক্ষের সাথে অপর পক্ষের মোবাইলের মাধ্যমে বাজি ধরিয়ে দিতে সাহায্য করছে। কিন্তু যে জুয়াড়ী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে দিচ্ছে সেই ব্যক্তিই টাকা উঠিয়ে দিচ্ছে। যে টাকা থেকে ওই ব্যক্তি নির্দিষ্ট শতকরা হারে কমিশন পেয়ে যাচ্ছেন। এসব কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসন কোন ধরনের ভূমিকা রাখছেন না বলে মনে করছেন সচেতন মহল। আইপিএল খেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত চায়ের দোকান, চাকাপট্টি, কফির দোকান, ক্লাব, সেলুনগুলোতে ক্রিকেট দর্শককে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এ দৃর্শ্যগুলি দেখে ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে খেলা উপভোগ করছে বলে মনে হলেও বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। কিছু ব্যতিক্রম ব্যক্তি ছাড়া সবাই এই জুয়া নিয়ে ব্যস্ত।
জুয়াড়ীরা যোগাযোগ করছে মোবাইল ফোনে, লেনদেন হচ্ছে বিকাশে। তবে পাড়ার অলি গলিতে স্ক্রিন লাগিয়ে ও টিভিতে খেলা দেখার সময় টাকা হাতবদল হচ্ছে সরাসরিই। এখন আইপিএল জুয়াকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে কেউ কেউ। প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তবে বেশিরভাগ সময়ই জুয়া জেতেন না ভুক্তভোগিরা। এ ধরনের জুয়ার আসরে নি¤œ আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে বিত্তশালীদের ছেলেরা জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। জুয়ার টাকা দিতে না পারায় ঘটেছে আত্মহত্যার ঘটনাও। টাকার অভাবে কেউ কেউ বাইসাইকেল, সোনার গহনা, দামি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, স্ত্রীর সোনার গহনাসহ নানা দামি জিনিসপত্র বিক্রিসহ কেউ কেউ বন্ধকও রাখছে। এরপরও এসব বিষয় নিরব রয়েছে প্রশাসন। জুয়ার আসর বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সূধীজন ও নগরবাসী।
জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল বলেন, ক্রিকেট খেলা একটি আনন্দ ও বিনোদনের খেলা। কিন্তু বর্তমানে এটি উঠতি বয়সের ছেলেসহ বিভন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে ক্রিকেট জুয়ার নেশায় পরিণত হয়েছে। এটি আসলেই দু:খজনক ব্যাপার। এই জুয়ার টাকা ব্যবস্থা করার জন্য অনেকেই অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, এই জুয়া খেলার বিষয়ে যদি কোন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ্যে অনিইচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তারই এলাকার এক যুবক ৫০ হাজার টাকা সুদের উপর ধার নিয়ে আইপিএল জুয়ার আসরে বসেছিল। হেরে গিয়ে টাকা ফেরত দিতে না পারাই সে বর্তমানে এলাকা ছাড়া। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই জুয়ার আসর বসে। জীবননগর পৌর এলাকার পানবাজার, কাঁচাবাজার, স্বর্ণপট্টি, চাকাপট্টি, লক্ষিপুর চাতালে-মিলে, থানার সামনে রাজনগর, ষ্টেডিয়ামে, নারায়নপুর মোড়ে মল্লিক মার্কেটে, মোল্লা মার্কেটে, মদিনা মার্কেটের চায়ের দোকানের গলিতে, মেশিনপট্টি, ডাকবাংলা, হাসপাতালের আমবাগানেসহ আরো বিভিন্ন জায়গায় চলছে জুয়ার আসর।
এ বিষয়ে জীবননগর থানা অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মাহমুদুর রহমান সময়ের সমীকরণকে বলেন, আইপিএল খেলাকে কেন্দ্র করে যদি কোন স্থানে জুয়া খেলার খবর পাওয়া যায় তাহলে সে স্থানে অভিযান চালানো হবে। তিনি আরো বলেন, এটা এক ধরনের ক্রাইম। এ বিষয়ে পুলিশের কঠোর নজরদারী রয়েছে। তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ঠ অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।