ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জাহাঙ্গীরনগরে অচলাবস্থা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯
  • / ১৯০ বার পড়া হয়েছে

সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নিন
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানো যায়নি। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নিন্দনীয় হামলার ঘটনায় আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, মূলত প্যানেল ছাড়া উপাচার্য নিয়োগ নিয়েই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটের শুরু হলেও শিক্ষকদের একটি অংশকে বাদ দিয়ে একপেশে মহাপরিকল্পনা বা উন্নয়ন পরিকল্পনা, গাছ কাটা, দরপত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েই দানা বেঁধেছে আন্দোলন। গত আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে হল নির্মাণ ও গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। জানা গেছে, এই প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উপাচার্যের পক্ষে থাকা শিক্ষকরা চান বর্তমান উপাচার্যের সময়েই এই কাজ শেষ করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অনুসারী একটি অংশ এবং বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকরা তাতে রাজি নন। আর এই আন্দোলনের মধ্যেই দরপত্রসংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসে। তখন আন্দোলন আরো দানা বাঁধে, যা পরবর্তী সময়ে চরম আকার ধারণ করে। উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে প্রায় আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। দুর্নীতি তদন্তের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পরবর্তী সময়ে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে পরিণত হয়। গত মঙ্গলবার বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার আগে থেকেই দৃশ্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে গত রবিবার বৈঠকও করেছেন আন্দোলনকারীরা। কোনো ফললাভ হয়নি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিন থেকেই এ ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এখন ভর্তি মৌসুম। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি কার্যক্রম চলছে। সামনের দুটি মাসের মধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। নতুন শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম শুরু হবে বছরের শুরু থেকেই। এ অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভর্তি প্রক্রিয়ায়ও প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করা জরুরি। তবে একই সঙ্গে বারবার কেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে তার কারণ খুঁজে বের করাও জরুরি। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে কিছু ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার। সরকার একটি তদন্ত কমিটি করে বিষয়ের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আমরা আশা করব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দূর হবে। সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই আমরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জাহাঙ্গীরনগরে অচলাবস্থা

আপলোড টাইম : ০৯:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯

সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নিন
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানো যায়নি। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নিন্দনীয় হামলার ঘটনায় আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, মূলত প্যানেল ছাড়া উপাচার্য নিয়োগ নিয়েই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটের শুরু হলেও শিক্ষকদের একটি অংশকে বাদ দিয়ে একপেশে মহাপরিকল্পনা বা উন্নয়ন পরিকল্পনা, গাছ কাটা, দরপত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েই দানা বেঁধেছে আন্দোলন। গত আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে হল নির্মাণ ও গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। জানা গেছে, এই প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উপাচার্যের পক্ষে থাকা শিক্ষকরা চান বর্তমান উপাচার্যের সময়েই এই কাজ শেষ করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অনুসারী একটি অংশ এবং বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকরা তাতে রাজি নন। আর এই আন্দোলনের মধ্যেই দরপত্রসংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসে। তখন আন্দোলন আরো দানা বাঁধে, যা পরবর্তী সময়ে চরম আকার ধারণ করে। উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে প্রায় আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। দুর্নীতি তদন্তের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পরবর্তী সময়ে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে পরিণত হয়। গত মঙ্গলবার বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার আগে থেকেই দৃশ্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে গত রবিবার বৈঠকও করেছেন আন্দোলনকারীরা। কোনো ফললাভ হয়নি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিন থেকেই এ ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এখন ভর্তি মৌসুম। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি কার্যক্রম চলছে। সামনের দুটি মাসের মধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। নতুন শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম শুরু হবে বছরের শুরু থেকেই। এ অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভর্তি প্রক্রিয়ায়ও প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করা জরুরি। তবে একই সঙ্গে বারবার কেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে তার কারণ খুঁজে বের করাও জরুরি। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে কিছু ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার। সরকার একটি তদন্ত কমিটি করে বিষয়ের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আমরা আশা করব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দূর হবে। সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই আমরা।