ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ২৭৬ বার পড়া হয়েছে

অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন করতে হবে
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৮ সদস্যের এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এবং কো-চেয়ারম্যান ছিলেন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এই কমিটি মাত্র চার মাসের মাথায় একটি খসড়া শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে, যা পরে ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। সমাজের বিভিন্ন মহলের মতামত, সুপারিশ ও পরামর্শ বিবেচনা করে খসড়া শিক্ষানীতি সংশোধন ও সংযোজনপূর্বক ২০১০ সালে চূড়ান্ত শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলেও এখন পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। যদিও শিক্ষানীতির ২৮টি অধ্যায়ে শিক্ষার বিভিন্ন স্তর, ধারা, ক্ষেত্র, পাঠক্রম, নারীশিক্ষা, শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষার্থীকল্যাণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকার, স্তর-নির্বিশেষে গৃহীতব্য পদক্ষেপ প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। শিক্ষানীতির ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষানীতি দেশে গণমুখী, সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানমনস্ক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে। অধ্যায়টি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে জাতীয় শিক্ষানীতির ২০১০-এর মূল ভিত্তি। এখানে ৩০টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়ন ও অর্জনের লক্ষ্যে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে বিভিন্ন নীতি-দর্শন, সুপারিশ ও করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১০ সালে প্রণীত চূড়ান্ত শিক্ষানীতিতে বলা আছে, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হবে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আট বছরব্যাপী। শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধি ও সৃজনশীল চিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া ও শিক্ষার মান অর্জনের জন্য গাইড বই, নোট বই, প্রাইভেট, টিউশনি ও কোচিং বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এসবের অপকারিতা বিষয়ে সচেতন করা হবে; শিক্ষকদের মর্যাদা, অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য নিশ্চিত করতে স্তর-নির্বিশেষে সব শিক্ষকের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো প্রণয়ন করা হবে। কিন্তু এসবের বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়নি শুধু একটি আইনের অভাবে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে যে আইনের প্রয়োজন ছিল, তা ছয় বছর ধরে নানা জটিলতায় আটকে আছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মত ও পরামর্শ ধারণ করেই শিক্ষানীতি প্রণীত ও গৃহীত হয়েছিল। শিক্ষার ধারা-নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সমান সুযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা শিক্ষানীতির একটি মৌলিক দর্শন। মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক চেতনার কর্মমুখী মানবসম্পদ বিনির্মাণে সহায়ক, গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা রয়েছে এই শিক্ষানীতিতে। মৌলিক অধিকার হিসেবে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা যে রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব, তার প্রতিফলনও ঘটেছে এখানে। শুধু একটি আইনের অভাবে শিক্ষানীতি কেন আটকে থাকবে? আমরা আশা করব, নতুন সরকার শিক্ষানীতির পূর্ণ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন

আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৯

অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন করতে হবে
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৮ সদস্যের এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এবং কো-চেয়ারম্যান ছিলেন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এই কমিটি মাত্র চার মাসের মাথায় একটি খসড়া শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে, যা পরে ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। সমাজের বিভিন্ন মহলের মতামত, সুপারিশ ও পরামর্শ বিবেচনা করে খসড়া শিক্ষানীতি সংশোধন ও সংযোজনপূর্বক ২০১০ সালে চূড়ান্ত শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলেও এখন পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। যদিও শিক্ষানীতির ২৮টি অধ্যায়ে শিক্ষার বিভিন্ন স্তর, ধারা, ক্ষেত্র, পাঠক্রম, নারীশিক্ষা, শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষার্থীকল্যাণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকার, স্তর-নির্বিশেষে গৃহীতব্য পদক্ষেপ প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। শিক্ষানীতির ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষানীতি দেশে গণমুখী, সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানমনস্ক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে। অধ্যায়টি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে জাতীয় শিক্ষানীতির ২০১০-এর মূল ভিত্তি। এখানে ৩০টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়ন ও অর্জনের লক্ষ্যে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে বিভিন্ন নীতি-দর্শন, সুপারিশ ও করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১০ সালে প্রণীত চূড়ান্ত শিক্ষানীতিতে বলা আছে, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হবে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আট বছরব্যাপী। শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধি ও সৃজনশীল চিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া ও শিক্ষার মান অর্জনের জন্য গাইড বই, নোট বই, প্রাইভেট, টিউশনি ও কোচিং বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এসবের অপকারিতা বিষয়ে সচেতন করা হবে; শিক্ষকদের মর্যাদা, অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য নিশ্চিত করতে স্তর-নির্বিশেষে সব শিক্ষকের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো প্রণয়ন করা হবে। কিন্তু এসবের বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়নি শুধু একটি আইনের অভাবে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে যে আইনের প্রয়োজন ছিল, তা ছয় বছর ধরে নানা জটিলতায় আটকে আছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মত ও পরামর্শ ধারণ করেই শিক্ষানীতি প্রণীত ও গৃহীত হয়েছিল। শিক্ষার ধারা-নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সমান সুযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা শিক্ষানীতির একটি মৌলিক দর্শন। মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক চেতনার কর্মমুখী মানবসম্পদ বিনির্মাণে সহায়ক, গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা রয়েছে এই শিক্ষানীতিতে। মৌলিক অধিকার হিসেবে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা যে রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব, তার প্রতিফলনও ঘটেছে এখানে। শুধু একটি আইনের অভাবে শিক্ষানীতি কেন আটকে থাকবে? আমরা আশা করব, নতুন সরকার শিক্ষানীতির পূর্ণ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।