ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জনজীবনে নতুন চাপ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
শিল্পকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে :: কৃষকের ঘুম হারাম :: করোনার অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়রত মানুষ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির চাপে ফের বিপাকে, এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। আয় আর ব্যায়ের মধ্যে সমন্বয় করতেই পারছে না সাধারণ মানুষ। পণ্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে পেশাজীবী, শ্রমজীবী নিম্ন ও মধ্যআয়ের পরিবারগুলোর কর্তাব্যাক্তিদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলো নিত্যদিনের খাবার কমিয়ে, প্রত্যাহিক ব্যয় এবং ছেলেমেয়েদের পাড়ালেখার খরচ কাঁটছাট করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। এর মধ্যেই ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন বছর গত ১২ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছ। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এক সাপ্তাহের মধ্যেই শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকার বার্তা দিয়েছে আগামী মাসের প্রথম সাপ্তাহে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। পরের মাসে গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে। গ্যাস বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধি যাপিত জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। এমনিতে ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় পণ্য আমদানী বিলম্বিত হচ্ছে। সামনের রমজান মাসে নিত্যপণ্যের জোগান কমে গেলে ‘পণ্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা কঠিন হবে। তার মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে খাদ্যপণ্য, যাতায়াত, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া সবকিছুতেই খবর বেড়ে যাবে। ফলে নতুন করে চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ধাক্কা এমনিতেই বাজারে পড়েছে। এখন নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি তছনছ করে দিতে পারে করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইতোমধ্যেই ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া মধ্য ও নিম্নবিত্তের জীবন।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, একের পর এক সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু মানুষের আয় তো বাড়ছে না। জনগণ দিশেহারা। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে, কীভাবে জীবন চালাবে- কঠিন কষ্টে থাকা এই মানুষগুলোর চিন্তা সরকার করছে বলে মনে হচ্ছে না। ভোক্তারা আতঙ্কিত। তারা এমনিতেই আর্থিক চাপে রয়েছেন। এর ওপর বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি আর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবর তাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। ফের গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খবরে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। যারা স্বল্প আয় দিয়েই এতদিন নির্বাহ করে এসেছেন পরিবারের ব্যয়; তাদের এখন মাথায় হাত। প্রতিনিয়তই ভর করছে দুশ্চিন্তা। নিত্য পণ্য-সংসারের অন্যান্য খরচ বাড়লে কীভাবে সামলাবেন অর্থসংকটে আগে থেকেই টানাটানিতে পড়া সংসার, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
ভুক্তোভোগীরা মনে করছেন গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি যাপিত জীবনের জন্য শুধুই দুঃসংবাদ। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন এমন সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। তেল, চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মাছ গোশত, পেঁয়াজ ও শাক-সবজিসহ এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম সহনীয় মাত্রায় আছে। গতকাল চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এসব পণ্যের দাম লাগামহীন। এছাড়াও বেড়েছে বাড়িভাড়া, পরিবহণ ব্যয়, চিকিৎসা ও শিক্ষা উপকরণের দাম। কিন্তু পেশাজীবী শ্রমজীবী মানুষের আয় বাড়েনি। ফলে জীবনযাত্রায় বাড়তি ব্যয়ের জাঁতাকলে রীতিমতো পিষ্ট মানুষের জীবন। এসব দেখার যেন কেউ নেই। বিশেষ করে হাঁপিয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরে আনিসুল হক স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর শনির আখড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির খবরে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিল বাড়ল। শুনছি- ফের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল বাড়বে। বাড়িওয়ালা জানুয়ারি মাসে এক হাজার টাকা বাসা ভাড়া বাড়িয়েছেন। ১২ বছর বয়সী ছেলে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। ৮ বছর বয়সী মেয়েটি এবার টুতে উঠেছে। দু’জনের স্কুলের খরচ বেড়েছে। বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাতে হয়। সব কিছুর দাম বাড়তি। আরো যদি বাড়ে, কি করব- কূল পাচ্ছি না। আবু জাফর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। মাসে ৪০ হাজার টাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই শহরে আছেন ১০ বছর। স্ত্রী বাজার করেন। একদিন নিত্যপণ্যের দোকানে গিয়ে দেখেন, নারকেল তেল, সাবান, পাউডার, স্নো, পাউরুটি, বিস্কুট সব পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে অর্ধেক বাজার করে তিনি ঘরে ফেরেন। রমজান আলী ঢাকায থাকেন ৮ বছর। সিএনপি চালক রমজান মেসে থাকলেও তিন বেলাই হোটেলে খান। আগে সকালের নাস্তা ২৫ টাকা এবং দুপুর ও রাতের ভাত খেতে ৭০ টাকা করে মোট ১৬৫ টাকা খরচ হতো। এখন তার তিন বেলা খাওয়ায় খরচ হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। তিনি জানান রাজধানীসহ সারাদেশে হোটেল- রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম বেড়ে গেছে। ৩ টাকার আলুপুরি এখন ৫ টাকা। ৩০ টাকার সবজির প্লেট ৫০ টাকা। আর ২০ টাকার রুটি ৩০ টাকা হয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কৃষিতে পড়ে গেছে। গত বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সেচের খরচ ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। বীজ প্রতি কেজি ছিল ২০০ টাকা, এবার তা হয়েছে ৩৫০ টাকা। এছাড়া জমি তৈরি ৯০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা, সার খরচ ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, কীটনাশক ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ধান রোপণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ধান কাটা-মাড়াই ৩ হাজার থেকে বেড়ে ৪ হাজার টাকা হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হবে জমির ভাড়া ৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে গত মৌসুমে এক বিঘা জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল ১৪ হাজার ৯০০ টাকা। আর এ বছর তা দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৪৫০ টাকায়। বিঘায় খরচ বাড়ছে ৪ হাজার ৫৫০ টাকা।
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার ছাওলা গ্রামের বড় কৃষক মামুন সরকার জানালেন, এ সময় কৃষকের চোখে ঘুম নাই। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে চারদিকে বোরোর জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। সরকারের উচিত ছিল কৃষি এবং কৃষকের কথা চিন্তা করে ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা। এখন ডিজেল-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষকের ওপর দিয়েই ধকল যাচ্ছে। এমন করি যদি প্রতি বছর উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকলে কৃষক বাঁচবে কেমন করি! এটা কৃষকের জন্য দু:খজনক।
শুধু আনিসুল হক আবু জাফর, মামুন আর রমজানই নয়, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর প্রায় অভিন্ন অবস্থা। এই ধাক্কা সামলাবেন কীভাবে সে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। গত বছর থেকে জ্বালানি আর ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াতে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এরই মধ্যে এবার রেস্টুরেন্টে গ্যাসের দামও বাড়ানো হলো। এর ফলে বাইরের খাবারের দাম আরো বাড়বে। চাপে পড়বে মধ্যবিত্ত। জহিরুল আলম নামের একজন সংবাদকর্মী জানালেন, করোনার সময় একদিকে চাকরি হারানো এবং চাকরি থাকলেও বেতন কমে যাওয়ায় অন্যদিকে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খাবারের মেন্যুতে কাটছাঁট করেছেন। বিশেষত প্রতি বেলার খাবার থালার আমিষ বা প্রোটিন কমিয়ে দেন। এতে সবচেয় বেশি ক্ষতির স্বীকার হন গৃহিণীরা। তাদের জন্য ঝোল, পড়ে থাকা সবজি আর ভাঙা মাছের টুকরো ছাড়া কিছুই থাকে না। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই সব রকম পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এবার মানুষ ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। সরকারি হিসেবে সাড়ে আট ভাগ মূল্যস্ফীতির চাপে জীবন যেখানে বেহাল, সেখানে গ্যস-বিদ্যুতের দফায় দফায় এই মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা (তিনগুন) করেছে। শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা (দ্বিগুন) করা হয়েছে। মাঝারি শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা (প্রায় তিনগুন) করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা (তিনগুন) করা হয়েছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক শ্রেণির গ্রাহকদের বিদ্যুৎমূল্য ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে প্রতি ইউনিটে দাম দেবেন ৩০ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এফবিসিসিআই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে।
শুধু শিল্পপতিরাই নয়, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে দেশীয় পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। কৃষিতে সেচসহ আরো কয়েকটি প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ যুক্ত থাকায় কৃষি উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। ফলে কৃষিপণ্যের দামও স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। এছাড়াও মানুষের জীবনযাপনে সম্পর্কিত বেশিরভাগ দ্রব্যের (পণ্য) সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎ জড়িত। বিদ্যুতের মূল্য বাড়লে জামা-কাপড়, কসমেটিকস, ওষুধসহ প্রায় সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বাধ্য হয়ে পড়বেন উৎপাদকরা। উন্নত দেশগুলোতে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে তেমন প্রভাব না পড়লেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঝুঁকি থেকে যায়। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে এক পয়সা বাড়লেও হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে মূল্যস্ফীতিতে পড়ে এর প্রভাব। মূল্যস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না; ফলে সাধারণ মানুষের জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব এখনও বাজারে আসেনি। তবে বৃদ্ধি করা বিদ্যুৎ মূল্যের একদফা বিল পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সব কিছুর মূল্য বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরকারের ওপর আমার ভরসা নেই।
গত বছরের শেষ দিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে দেখা যায়, এক বছরে পামঅয়েলের দাম ৬১ শতাংশ বেড়েছে। আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৫৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৫৬ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ৪৭ শতাংশ, অ্যাঙ্কর ৩১ শতাংশ, ডিমের দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ, খোলা আটা ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ফ্রেশ মিল্ক পাউডার ১০ শতাংশ, রুই মাছ ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ, প্যাকেট লবণ ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, চিনি ৭ শতাংশ, আলু ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘোষণার পর বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, নিত্যপণ্য, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ব্যয়, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা খাতে বেশি মাত্রায় খরচ বেড়েছে। এই বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে সঞ্চয় ভেঙ্গে খেতে হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ বড় কোনো অসুখ না হলে চিকিৎসা নিচ্ছেন না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নতুন করে বেড়ে গেলে পেশাজীবী-শ্রমজীবী নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আরো দুর্দিনে পড়তে হবে।
এ প্রসঙ্গে তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং তা আরো বাড়তে পারে। এছাড়া চড়া মূল্যস্ফীতি মানুষের আয় খেয়ে ফেলার তাদের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে। এখন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে সহনীয় যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে যেতে পারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জনজীবনে নতুন চাপ

আপলোড টাইম : ০৮:২৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
শিল্পকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে :: কৃষকের ঘুম হারাম :: করোনার অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়রত মানুষ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির চাপে ফের বিপাকে, এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। আয় আর ব্যায়ের মধ্যে সমন্বয় করতেই পারছে না সাধারণ মানুষ। পণ্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে পেশাজীবী, শ্রমজীবী নিম্ন ও মধ্যআয়ের পরিবারগুলোর কর্তাব্যাক্তিদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলো নিত্যদিনের খাবার কমিয়ে, প্রত্যাহিক ব্যয় এবং ছেলেমেয়েদের পাড়ালেখার খরচ কাঁটছাট করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। এর মধ্যেই ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন বছর গত ১২ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছ। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এক সাপ্তাহের মধ্যেই শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকার বার্তা দিয়েছে আগামী মাসের প্রথম সাপ্তাহে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। পরের মাসে গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে। গ্যাস বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধি যাপিত জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। এমনিতে ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় পণ্য আমদানী বিলম্বিত হচ্ছে। সামনের রমজান মাসে নিত্যপণ্যের জোগান কমে গেলে ‘পণ্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা কঠিন হবে। তার মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে খাদ্যপণ্য, যাতায়াত, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া সবকিছুতেই খবর বেড়ে যাবে। ফলে নতুন করে চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ধাক্কা এমনিতেই বাজারে পড়েছে। এখন নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি তছনছ করে দিতে পারে করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইতোমধ্যেই ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া মধ্য ও নিম্নবিত্তের জীবন।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, একের পর এক সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু মানুষের আয় তো বাড়ছে না। জনগণ দিশেহারা। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে, কীভাবে জীবন চালাবে- কঠিন কষ্টে থাকা এই মানুষগুলোর চিন্তা সরকার করছে বলে মনে হচ্ছে না। ভোক্তারা আতঙ্কিত। তারা এমনিতেই আর্থিক চাপে রয়েছেন। এর ওপর বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি আর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবর তাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। ফের গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খবরে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। যারা স্বল্প আয় দিয়েই এতদিন নির্বাহ করে এসেছেন পরিবারের ব্যয়; তাদের এখন মাথায় হাত। প্রতিনিয়তই ভর করছে দুশ্চিন্তা। নিত্য পণ্য-সংসারের অন্যান্য খরচ বাড়লে কীভাবে সামলাবেন অর্থসংকটে আগে থেকেই টানাটানিতে পড়া সংসার, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
ভুক্তোভোগীরা মনে করছেন গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি যাপিত জীবনের জন্য শুধুই দুঃসংবাদ। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন এমন সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। তেল, চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মাছ গোশত, পেঁয়াজ ও শাক-সবজিসহ এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম সহনীয় মাত্রায় আছে। গতকাল চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এসব পণ্যের দাম লাগামহীন। এছাড়াও বেড়েছে বাড়িভাড়া, পরিবহণ ব্যয়, চিকিৎসা ও শিক্ষা উপকরণের দাম। কিন্তু পেশাজীবী শ্রমজীবী মানুষের আয় বাড়েনি। ফলে জীবনযাত্রায় বাড়তি ব্যয়ের জাঁতাকলে রীতিমতো পিষ্ট মানুষের জীবন। এসব দেখার যেন কেউ নেই। বিশেষ করে হাঁপিয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরে আনিসুল হক স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর শনির আখড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির খবরে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিল বাড়ল। শুনছি- ফের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল বাড়বে। বাড়িওয়ালা জানুয়ারি মাসে এক হাজার টাকা বাসা ভাড়া বাড়িয়েছেন। ১২ বছর বয়সী ছেলে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। ৮ বছর বয়সী মেয়েটি এবার টুতে উঠেছে। দু’জনের স্কুলের খরচ বেড়েছে। বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাতে হয়। সব কিছুর দাম বাড়তি। আরো যদি বাড়ে, কি করব- কূল পাচ্ছি না। আবু জাফর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। মাসে ৪০ হাজার টাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই শহরে আছেন ১০ বছর। স্ত্রী বাজার করেন। একদিন নিত্যপণ্যের দোকানে গিয়ে দেখেন, নারকেল তেল, সাবান, পাউডার, স্নো, পাউরুটি, বিস্কুট সব পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে অর্ধেক বাজার করে তিনি ঘরে ফেরেন। রমজান আলী ঢাকায থাকেন ৮ বছর। সিএনপি চালক রমজান মেসে থাকলেও তিন বেলাই হোটেলে খান। আগে সকালের নাস্তা ২৫ টাকা এবং দুপুর ও রাতের ভাত খেতে ৭০ টাকা করে মোট ১৬৫ টাকা খরচ হতো। এখন তার তিন বেলা খাওয়ায় খরচ হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। তিনি জানান রাজধানীসহ সারাদেশে হোটেল- রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম বেড়ে গেছে। ৩ টাকার আলুপুরি এখন ৫ টাকা। ৩০ টাকার সবজির প্লেট ৫০ টাকা। আর ২০ টাকার রুটি ৩০ টাকা হয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কৃষিতে পড়ে গেছে। গত বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সেচের খরচ ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। বীজ প্রতি কেজি ছিল ২০০ টাকা, এবার তা হয়েছে ৩৫০ টাকা। এছাড়া জমি তৈরি ৯০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা, সার খরচ ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, কীটনাশক ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ধান রোপণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ধান কাটা-মাড়াই ৩ হাজার থেকে বেড়ে ৪ হাজার টাকা হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হবে জমির ভাড়া ৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে গত মৌসুমে এক বিঘা জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল ১৪ হাজার ৯০০ টাকা। আর এ বছর তা দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৪৫০ টাকায়। বিঘায় খরচ বাড়ছে ৪ হাজার ৫৫০ টাকা।
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার ছাওলা গ্রামের বড় কৃষক মামুন সরকার জানালেন, এ সময় কৃষকের চোখে ঘুম নাই। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে চারদিকে বোরোর জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। সরকারের উচিত ছিল কৃষি এবং কৃষকের কথা চিন্তা করে ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা। এখন ডিজেল-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষকের ওপর দিয়েই ধকল যাচ্ছে। এমন করি যদি প্রতি বছর উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকলে কৃষক বাঁচবে কেমন করি! এটা কৃষকের জন্য দু:খজনক।
শুধু আনিসুল হক আবু জাফর, মামুন আর রমজানই নয়, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর প্রায় অভিন্ন অবস্থা। এই ধাক্কা সামলাবেন কীভাবে সে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। গত বছর থেকে জ্বালানি আর ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াতে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এরই মধ্যে এবার রেস্টুরেন্টে গ্যাসের দামও বাড়ানো হলো। এর ফলে বাইরের খাবারের দাম আরো বাড়বে। চাপে পড়বে মধ্যবিত্ত। জহিরুল আলম নামের একজন সংবাদকর্মী জানালেন, করোনার সময় একদিকে চাকরি হারানো এবং চাকরি থাকলেও বেতন কমে যাওয়ায় অন্যদিকে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খাবারের মেন্যুতে কাটছাঁট করেছেন। বিশেষত প্রতি বেলার খাবার থালার আমিষ বা প্রোটিন কমিয়ে দেন। এতে সবচেয় বেশি ক্ষতির স্বীকার হন গৃহিণীরা। তাদের জন্য ঝোল, পড়ে থাকা সবজি আর ভাঙা মাছের টুকরো ছাড়া কিছুই থাকে না। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই সব রকম পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এবার মানুষ ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। সরকারি হিসেবে সাড়ে আট ভাগ মূল্যস্ফীতির চাপে জীবন যেখানে বেহাল, সেখানে গ্যস-বিদ্যুতের দফায় দফায় এই মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা (তিনগুন) করেছে। শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা (দ্বিগুন) করা হয়েছে। মাঝারি শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা (প্রায় তিনগুন) করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা (তিনগুন) করা হয়েছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক শ্রেণির গ্রাহকদের বিদ্যুৎমূল্য ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে প্রতি ইউনিটে দাম দেবেন ৩০ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এফবিসিসিআই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে।
শুধু শিল্পপতিরাই নয়, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে দেশীয় পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। কৃষিতে সেচসহ আরো কয়েকটি প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ যুক্ত থাকায় কৃষি উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। ফলে কৃষিপণ্যের দামও স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। এছাড়াও মানুষের জীবনযাপনে সম্পর্কিত বেশিরভাগ দ্রব্যের (পণ্য) সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎ জড়িত। বিদ্যুতের মূল্য বাড়লে জামা-কাপড়, কসমেটিকস, ওষুধসহ প্রায় সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বাধ্য হয়ে পড়বেন উৎপাদকরা। উন্নত দেশগুলোতে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে তেমন প্রভাব না পড়লেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঝুঁকি থেকে যায়। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে এক পয়সা বাড়লেও হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে মূল্যস্ফীতিতে পড়ে এর প্রভাব। মূল্যস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না; ফলে সাধারণ মানুষের জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব এখনও বাজারে আসেনি। তবে বৃদ্ধি করা বিদ্যুৎ মূল্যের একদফা বিল পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সব কিছুর মূল্য বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরকারের ওপর আমার ভরসা নেই।
গত বছরের শেষ দিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে দেখা যায়, এক বছরে পামঅয়েলের দাম ৬১ শতাংশ বেড়েছে। আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৫৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৫৬ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ৪৭ শতাংশ, অ্যাঙ্কর ৩১ শতাংশ, ডিমের দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ, খোলা আটা ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ফ্রেশ মিল্ক পাউডার ১০ শতাংশ, রুই মাছ ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ, প্যাকেট লবণ ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, চিনি ৭ শতাংশ, আলু ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘোষণার পর বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, নিত্যপণ্য, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ব্যয়, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা খাতে বেশি মাত্রায় খরচ বেড়েছে। এই বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে সঞ্চয় ভেঙ্গে খেতে হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ বড় কোনো অসুখ না হলে চিকিৎসা নিচ্ছেন না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নতুন করে বেড়ে গেলে পেশাজীবী-শ্রমজীবী নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আরো দুর্দিনে পড়তে হবে।
এ প্রসঙ্গে তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং তা আরো বাড়তে পারে। এছাড়া চড়া মূল্যস্ফীতি মানুষের আয় খেয়ে ফেলার তাদের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে। এখন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে সহনীয় যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে যেতে পারে।