ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্রলীগ-গোপালগঞ্জের জন্য ‘বিশেষ নিয়োগ’: প্রশাসনে যোগ্যদের দরকার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৩৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৪ বার পড়া হয়েছে

পতিত হাসিনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে মাফিয়াতন্ত্রে চালিয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হতো একইভাবে। সর্বোচ্চ নিয়োগ প্রতিষ্ঠান পিএসসি থেকে একেবারে নিচু পদের দারোয়ান-আরদালি নিয়োগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হতো। চেতনা রক্ষার নামে দলীয় লোকজন ও স্বজনদের নিয়োগ দেয়া হতো। আওয়ামী লীগের দলীয় আদর্শের বাইরে কেউ বিশেষত সরকারের উঁচু পদে নিয়োগ দুষ্কর ছিল। মেধার জোরে ভাগ্যক্রমে কেউ নিয়োগের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে শেষ পর্যন্ত তাদের অনেককেই আটকে দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে দেশের হাজারো তরুণ যুবককে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন এবং ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার চলমান সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পতিত সরকারের সন্ত্রাসী পেটোয়া ছাত্রলীগকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জায়গা করে দিতে এসব নিয়োগ বোর্ড কাজ করেছে। ৪৩তম বিসিএসে দুই হাজার ৬৪ কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এ সরকারের আমলে পিএসসির মাধ্যমে প্রশাসন পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারে বাছাই করে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ কাজ করতে গিয়ে সব ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস, আলাদা করে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা, ভাইভাতে আলাদা করে বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়া হয়েছে। নিজের লোকদের নির্বাচিত করার স্বার্থে লিখিত পরীক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রার্থীকে পাস করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাবেক জনপ্রশাসন উপদেষ্টা মরহুম এইচ টি ইমাম ২০১৪ সালে ছাত্রলীগকে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তোমরা লিখিত পরীক্ষা দাও বাকিটা আমরা দেখব। যদিও নিয়োগে আওয়ামীকরণ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শুরু। পিএসসির বাইরে প্রশাসনের অন্যান্য নিয়োগেও মেধা ও যোগ্যতা উপেক্ষা করে চরম দলীয়করণ করা হয়েছে।
এর প্রধান শিকার পুলিশ বাহিনী। হাসিনা আমলে পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। সেবার বদলে এই সময়ে দেশের মানুষ এ বাহিনীর দ্বারা ভয়াবহ পীড়নের শিকার হন। পুলিশ পেশাদারিত্ব হারিয়ে ফেলে। পুলিশে নিয়োগের প্রধান দু’টি শর্ত ছাত্রলীগ ও গোপালগঞ্জ হওয়া। এতে পুরো পুলিশ সুনাম খোয়ায়। সালাহউদ্দিন আহমেদ সর্বশেষ কর্মস্থলে যোগদানের অপেক্ষায় থাকা ৮০৩ পুলিশ উপপরিদর্শক নিয়োগ বাতিলের দাবিও তোলেন। তিনি জানান, তাদের ৪০৩ জন ছাত্রলীগের সদস্য। ২০০ জনের বাড়ি গোপালগঞ্জে। পুলিশ ও প্রশাসনে অতি আওয়ামীকরণ দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে জাতিকে। এ অবস্থায় নিয়োগ পেতে যাওয়া আওয়ামী ঘরানার লোকদের পথ রুদ্ধ করা জরুরি। এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, এসব লোক পদে থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষার বদলে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে বিদেশীদের হয়ে কাজ করবেন।
ইতোমধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যানসহ সবাই পদত্যাগ করেছেন। নিয়োগ হয়েছে নতুন কমিশন। এর ধারাবাহিকতায় আশা করা যায়, বিতর্কিত নিয়োগ বন্ধ করা হবে। একইভাবে বাছাইকৃত ছাত্রলীগ ও গোপালগঞ্জের লোকদের পুলিশে নিয়োগ বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হবে। নতুন করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। শূন্য আসনগুলোতে মেধাবী ও যোগ্যদের বসাতে যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগ নিতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ছাত্রলীগ-গোপালগঞ্জের জন্য ‘বিশেষ নিয়োগ’: প্রশাসনে যোগ্যদের দরকার

আপলোড টাইম : ০৩:৩৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

পতিত হাসিনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে মাফিয়াতন্ত্রে চালিয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হতো একইভাবে। সর্বোচ্চ নিয়োগ প্রতিষ্ঠান পিএসসি থেকে একেবারে নিচু পদের দারোয়ান-আরদালি নিয়োগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হতো। চেতনা রক্ষার নামে দলীয় লোকজন ও স্বজনদের নিয়োগ দেয়া হতো। আওয়ামী লীগের দলীয় আদর্শের বাইরে কেউ বিশেষত সরকারের উঁচু পদে নিয়োগ দুষ্কর ছিল। মেধার জোরে ভাগ্যক্রমে কেউ নিয়োগের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে শেষ পর্যন্ত তাদের অনেককেই আটকে দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে দেশের হাজারো তরুণ যুবককে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন এবং ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার চলমান সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পতিত সরকারের সন্ত্রাসী পেটোয়া ছাত্রলীগকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জায়গা করে দিতে এসব নিয়োগ বোর্ড কাজ করেছে। ৪৩তম বিসিএসে দুই হাজার ৬৪ কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এ সরকারের আমলে পিএসসির মাধ্যমে প্রশাসন পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারে বাছাই করে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ কাজ করতে গিয়ে সব ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস, আলাদা করে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা, ভাইভাতে আলাদা করে বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়া হয়েছে। নিজের লোকদের নির্বাচিত করার স্বার্থে লিখিত পরীক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রার্থীকে পাস করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাবেক জনপ্রশাসন উপদেষ্টা মরহুম এইচ টি ইমাম ২০১৪ সালে ছাত্রলীগকে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তোমরা লিখিত পরীক্ষা দাও বাকিটা আমরা দেখব। যদিও নিয়োগে আওয়ামীকরণ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শুরু। পিএসসির বাইরে প্রশাসনের অন্যান্য নিয়োগেও মেধা ও যোগ্যতা উপেক্ষা করে চরম দলীয়করণ করা হয়েছে।
এর প্রধান শিকার পুলিশ বাহিনী। হাসিনা আমলে পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। সেবার বদলে এই সময়ে দেশের মানুষ এ বাহিনীর দ্বারা ভয়াবহ পীড়নের শিকার হন। পুলিশ পেশাদারিত্ব হারিয়ে ফেলে। পুলিশে নিয়োগের প্রধান দু’টি শর্ত ছাত্রলীগ ও গোপালগঞ্জ হওয়া। এতে পুরো পুলিশ সুনাম খোয়ায়। সালাহউদ্দিন আহমেদ সর্বশেষ কর্মস্থলে যোগদানের অপেক্ষায় থাকা ৮০৩ পুলিশ উপপরিদর্শক নিয়োগ বাতিলের দাবিও তোলেন। তিনি জানান, তাদের ৪০৩ জন ছাত্রলীগের সদস্য। ২০০ জনের বাড়ি গোপালগঞ্জে। পুলিশ ও প্রশাসনে অতি আওয়ামীকরণ দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে জাতিকে। এ অবস্থায় নিয়োগ পেতে যাওয়া আওয়ামী ঘরানার লোকদের পথ রুদ্ধ করা জরুরি। এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, এসব লোক পদে থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষার বদলে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে বিদেশীদের হয়ে কাজ করবেন।
ইতোমধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যানসহ সবাই পদত্যাগ করেছেন। নিয়োগ হয়েছে নতুন কমিশন। এর ধারাবাহিকতায় আশা করা যায়, বিতর্কিত নিয়োগ বন্ধ করা হবে। একইভাবে বাছাইকৃত ছাত্রলীগ ও গোপালগঞ্জের লোকদের পুলিশে নিয়োগ বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হবে। নতুন করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। শূন্য আসনগুলোতে মেধাবী ও যোগ্যদের বসাতে যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগ নিতে হবে।