ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মীর ফাঁসি, ৫ জনের যাবজ্জীবন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫২:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার দায়ে ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আরও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে গতকাল ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বাকি তিনজন আসামি মামলার শুরু থেকেই পলাতক। রায় ঘোষণার পর ২২ আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর আগে রায় শুনে উপস্থিত ২২ আসামি আদালতে স্বাভাবিক ছিলেন। আসামিদের কেউই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। প্রতিবাদ বা কোনো কথাও বলেননি। আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

এদিকে আবরারের বাবা এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। দ্রুত এই রায় কার্যকর করার দাবি জানান তিনি। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এই রায়ে অসন্তুষ্ট। তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। আমরা আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। আবরারের মতো আর যেন কোনো শিক্ষার্থীকে এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে না হয় সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। আদালতের এই রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে আবরারের বাবা-মাসহ সারা দেশের মানুষ যেভাবে ব্যথিত হয়েছিল, রায়ের মাধ্যমে তা সমাপ্ত হয়েছে।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ আসামির বিষয়ে বিচারক বলেন, ‘মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অনাদায়ে তাদের আরও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আদালত আরও বলেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে, যা বাংলাদেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সব আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো।

এ মামলার মৃত্যুদণ্ডের ২০ আসামি হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু  (কেমিকৌশল)।

যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ৫ আসামি, বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)। পলাতক তিনজন হলেন, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তা আমলে নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। পরে মামলার অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। ১৪ নভেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিল আদালত। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল, আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, প্রশান্ত কুমার কর্মকার প্রমুখ। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মাহাবুব আহমেদ, গাজী জিল্লুর রহমান, আজিজুর রহমান দুল প্রমুখ।

আবরার হত্যা মামলার রায়ে ন্যায়বিচার করা হয়েছে-আইনমন্ত্রী

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আবরার হত্যা মামলার রায়ে এটা প্রমাণ হয় যে দেশে আইনের শাসন আছে। গতকাল  রাজধানীর গুলশানে নিজ আবাসিক কার্যালয়ে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যা মামলার রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। আনিসুল হক বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে যে, এই মামলায়  প্রকৃত ও ন্যায়বিচার করা হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে যে, দেশে আইনের শাসন আছে। এখন কেউ এ রকম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বা কোনোরকম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে কোনো অপরাধী ঘুরে বেড়াতে পারবে না। তারা রাজনীতি করতে পারবে না।

তিনি বলেন, এই রায়ের নথিপত্র আগামী সাত দিনের মধ্যে হাই কোর্টে চলে যাবে। সেখানে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ার ব্যাপারে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। মন্ত্রী বলেন, সমাজে কিছু কিছু হত্যাকাণ্ড আছে যা সমাজকে নাড়া দেয়, সমাজের বিবেককে নাড়া দেয়। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করা না হলে সমাজে হতাশা দেখা দেয়। সরকারের দায়িত্ব এই মামলাগুলো তড়িৎ বিচার করে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে সমাজকে আশ্বস্ত করা যে, দেশে আইনের শাসন আছে। তিনি বলেন, এই দায়িত্ব পালনে শেখ হাসিনার সরকার সক্ষম হয়েছে।

আলোচিত রায়ের পর বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া

আবরারের বাবা এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। মাস্টারমাইন্ড ও বড় ভাইদের নাম জাজমেন্টে আসা উচিত ছিলো।’ রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আজকের রায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। আমরা আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। আবরারের মতো আর যেনো কোনো শিক্ষার্থীকে এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে না হয় সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে অবশ্যই শাস্তি হবে। আদালতের এই রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে আবরারের বাবা-মাসহ সারা দেশের মানুষ যেভাবে ব্যথিত হয়েছিল, রায়ের মাধ্যমে তা সমাপ্ত হয়েছে।’ এদিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাসা থেকে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, আদলত যে রায় দিয়েছেন আমরা তাতে সন্তোষ প্রকাশ করছি। সেই সাথে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি করছি। যেদিন এ রায় কার্যকর হবে সেদিন ভাববো আমরা বিচার পেয়েছি।’

এদিকে রায় নিয়ে চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে আসামিদের পরিবার। তারা অভিযোগ তুলে বলেন, ‘মানুষ মুখে মুখে তাদের আসামি বানিয়ে ফেলেছে।’ তারা বলেন, ‘মামলার প্রকৃত ফ্যাক্টগুলো মানুষ দেখতে চায়নি, বুঝতে চায়নি। সবার আবেগের কারণে আমাদের সন্তানদের এই সাজা দেয়া হয়েছে।’ প্রশ্ন তুলে তারা আরও বলেন, হত্যার উদ্দেশে যদি এ ঘটনা হতো, তাহলে তারা আবরারের মরদেহ গুম করে ফেলতো। কিন্তু তারা তো সেটা করেনি। একজন মানুষকে মারতে কি ২২ জনের প্রয়োজন হয়। মানুষের মাথায় কেন এ বিষয়গুলো ঢুকে না। আবরার হত্যামামলার রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আসামি মুহতাসিম ফুয়াদের বাবা আব্দুর তাহের বলেন, আমরা ন্যায্যবিচার পাইনি। জীবন তো শেষ। উচ্চ আদালতে আপিল করার সামর্থ্য নেই।

রায়ে আদালত বলেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী  ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। জনাকীর্ণ আদালতে ২০ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে বিচারক বলেন, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ দিতে না পারলে তাদের আরও এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে। এর আগে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে এসেছিল। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক এ মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রেখেছিলেন। কিন্তু আরও কিছু ‘সময় দরকার’ জানিয়ে সেদিন রায় পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ রাখেন বিচারক। সে অনুযায়ী বুধবার সকালেই কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেককে এজলাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহও উপস্থিত ছিলেন এজলাস কক্ষে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মীর ফাঁসি, ৫ জনের যাবজ্জীবন

আপলোড টাইম : ০৮:৫২:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার দায়ে ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আরও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে গতকাল ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বাকি তিনজন আসামি মামলার শুরু থেকেই পলাতক। রায় ঘোষণার পর ২২ আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর আগে রায় শুনে উপস্থিত ২২ আসামি আদালতে স্বাভাবিক ছিলেন। আসামিদের কেউই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। প্রতিবাদ বা কোনো কথাও বলেননি। আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

এদিকে আবরারের বাবা এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। দ্রুত এই রায় কার্যকর করার দাবি জানান তিনি। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এই রায়ে অসন্তুষ্ট। তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। আমরা আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। আবরারের মতো আর যেন কোনো শিক্ষার্থীকে এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে না হয় সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। আদালতের এই রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে আবরারের বাবা-মাসহ সারা দেশের মানুষ যেভাবে ব্যথিত হয়েছিল, রায়ের মাধ্যমে তা সমাপ্ত হয়েছে।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ আসামির বিষয়ে বিচারক বলেন, ‘মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অনাদায়ে তাদের আরও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আদালত আরও বলেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে, যা বাংলাদেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সব আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো।

এ মামলার মৃত্যুদণ্ডের ২০ আসামি হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু  (কেমিকৌশল)।

যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ৫ আসামি, বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)। পলাতক তিনজন হলেন, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তা আমলে নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। পরে মামলার অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। ১৪ নভেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিল আদালত। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল, আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, প্রশান্ত কুমার কর্মকার প্রমুখ। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মাহাবুব আহমেদ, গাজী জিল্লুর রহমান, আজিজুর রহমান দুল প্রমুখ।

আবরার হত্যা মামলার রায়ে ন্যায়বিচার করা হয়েছে-আইনমন্ত্রী

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আবরার হত্যা মামলার রায়ে এটা প্রমাণ হয় যে দেশে আইনের শাসন আছে। গতকাল  রাজধানীর গুলশানে নিজ আবাসিক কার্যালয়ে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যা মামলার রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। আনিসুল হক বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে যে, এই মামলায়  প্রকৃত ও ন্যায়বিচার করা হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে যে, দেশে আইনের শাসন আছে। এখন কেউ এ রকম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বা কোনোরকম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে কোনো অপরাধী ঘুরে বেড়াতে পারবে না। তারা রাজনীতি করতে পারবে না।

তিনি বলেন, এই রায়ের নথিপত্র আগামী সাত দিনের মধ্যে হাই কোর্টে চলে যাবে। সেখানে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ার ব্যাপারে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। মন্ত্রী বলেন, সমাজে কিছু কিছু হত্যাকাণ্ড আছে যা সমাজকে নাড়া দেয়, সমাজের বিবেককে নাড়া দেয়। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করা না হলে সমাজে হতাশা দেখা দেয়। সরকারের দায়িত্ব এই মামলাগুলো তড়িৎ বিচার করে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে সমাজকে আশ্বস্ত করা যে, দেশে আইনের শাসন আছে। তিনি বলেন, এই দায়িত্ব পালনে শেখ হাসিনার সরকার সক্ষম হয়েছে।

আলোচিত রায়ের পর বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া

আবরারের বাবা এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। মাস্টারমাইন্ড ও বড় ভাইদের নাম জাজমেন্টে আসা উচিত ছিলো।’ রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আজকের রায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। আমরা আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। আবরারের মতো আর যেনো কোনো শিক্ষার্থীকে এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে না হয় সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধ করলে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে অবশ্যই শাস্তি হবে। আদালতের এই রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে আবরারের বাবা-মাসহ সারা দেশের মানুষ যেভাবে ব্যথিত হয়েছিল, রায়ের মাধ্যমে তা সমাপ্ত হয়েছে।’ এদিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাসা থেকে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, আদলত যে রায় দিয়েছেন আমরা তাতে সন্তোষ প্রকাশ করছি। সেই সাথে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি করছি। যেদিন এ রায় কার্যকর হবে সেদিন ভাববো আমরা বিচার পেয়েছি।’

এদিকে রায় নিয়ে চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে আসামিদের পরিবার। তারা অভিযোগ তুলে বলেন, ‘মানুষ মুখে মুখে তাদের আসামি বানিয়ে ফেলেছে।’ তারা বলেন, ‘মামলার প্রকৃত ফ্যাক্টগুলো মানুষ দেখতে চায়নি, বুঝতে চায়নি। সবার আবেগের কারণে আমাদের সন্তানদের এই সাজা দেয়া হয়েছে।’ প্রশ্ন তুলে তারা আরও বলেন, হত্যার উদ্দেশে যদি এ ঘটনা হতো, তাহলে তারা আবরারের মরদেহ গুম করে ফেলতো। কিন্তু তারা তো সেটা করেনি। একজন মানুষকে মারতে কি ২২ জনের প্রয়োজন হয়। মানুষের মাথায় কেন এ বিষয়গুলো ঢুকে না। আবরার হত্যামামলার রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আসামি মুহতাসিম ফুয়াদের বাবা আব্দুর তাহের বলেন, আমরা ন্যায্যবিচার পাইনি। জীবন তো শেষ। উচ্চ আদালতে আপিল করার সামর্থ্য নেই।

রায়ে আদালত বলেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী  ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। জনাকীর্ণ আদালতে ২০ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে বিচারক বলেন, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ দিতে না পারলে তাদের আরও এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে। এর আগে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে এসেছিল। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক এ মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রেখেছিলেন। কিন্তু আরও কিছু ‘সময় দরকার’ জানিয়ে সেদিন রায় পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ রাখেন বিচারক। সে অনুযায়ী বুধবার সকালেই কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেককে এজলাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহও উপস্থিত ছিলেন এজলাস কক্ষে।