ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চোখের জলে চিরশায়িত নুসরাত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩০:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯
  • / ৭৩২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দাদীর পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা নুসরাত জাহান রাফি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সোনাগাজী সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় প্রায় ২০ হাজার লোকের উপস্থিতি ছিল। ফেনী সদরসহ ৬টি উপজেলার ও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলা থেকেও শত শত লোক এ জানাজায় শরীক হন। বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নুসরাতের মরদেহবাহী গাড়িটি তার গ্রামের বাড়ি চফেনীর ছান্দিয়া গ্রামে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে লাশ কিছুক্ষণ রাখা হয়। পরে নুসরাতকে সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজার সময় সোনাগাজী বাজারের সড়কগুলি ভিড়ে লোকারণ্য হয়ে উঠে। মাঠে তিল ধরনের উপায় ছিল না। জানাজার নামাজে ফেনী জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। নুসরাতের জানাজা পড়ান তার বাবা মাওলানা আবুল কাশেম। এ সময় কফিনের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার বাবা। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদীর পাশে নুসরাতকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। নুসরাত জাহানের বাবা তার মেয়ের কফিনকে সামনে রেখে খুনিদের বিচার ও ফাঁসির দাবি করেন। একই সঙ্গে খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সোনগাজী শহর উত্তাল হয়ে উঠে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা খুনিদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করে।
উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। তার বান্ধবী নিশাতকে মাদ্রাসার ছাদে মারধর করা হচ্ছে বলে একজন এসে তাকে জানায়। এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকা পরা চারজন তাকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। এসময় নুসরাত বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ব। এরপর তার হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের অনুসারীরা। ১০৮ ঘণ্টা আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা নুসরাত। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুর আগে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। আর এই মামলায় আসামিদের আইনি সহায়তা দেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা বুলবুল। এর আগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। আর এ মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হচ্ছিল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চোখের জলে চিরশায়িত নুসরাত

আপলোড টাইম : ১০:৩০:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দাদীর পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা নুসরাত জাহান রাফি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সোনাগাজী সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় প্রায় ২০ হাজার লোকের উপস্থিতি ছিল। ফেনী সদরসহ ৬টি উপজেলার ও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলা থেকেও শত শত লোক এ জানাজায় শরীক হন। বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নুসরাতের মরদেহবাহী গাড়িটি তার গ্রামের বাড়ি চফেনীর ছান্দিয়া গ্রামে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে লাশ কিছুক্ষণ রাখা হয়। পরে নুসরাতকে সাবের পাইলট হাইস্কুল মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজার সময় সোনাগাজী বাজারের সড়কগুলি ভিড়ে লোকারণ্য হয়ে উঠে। মাঠে তিল ধরনের উপায় ছিল না। জানাজার নামাজে ফেনী জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। নুসরাতের জানাজা পড়ান তার বাবা মাওলানা আবুল কাশেম। এ সময় কফিনের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার বাবা। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদীর পাশে নুসরাতকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। নুসরাত জাহানের বাবা তার মেয়ের কফিনকে সামনে রেখে খুনিদের বিচার ও ফাঁসির দাবি করেন। একই সঙ্গে খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সোনগাজী শহর উত্তাল হয়ে উঠে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা খুনিদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করে।
উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। তার বান্ধবী নিশাতকে মাদ্রাসার ছাদে মারধর করা হচ্ছে বলে একজন এসে তাকে জানায়। এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকা পরা চারজন তাকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। এসময় নুসরাত বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ব। এরপর তার হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের অনুসারীরা। ১০৮ ঘণ্টা আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা নুসরাত। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুর আগে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। আর এই মামলায় আসামিদের আইনি সহায়তা দেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা বুলবুল। এর আগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। আর এ মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হচ্ছিল।