চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের গৌরবের ৫৫ বছর উদ্যাপন : দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন
- আপলোড টাইম : ০৮:৪১:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
- / ৫০ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পূর্তিতে সদস্যরা মেতে ছিলেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। গৌরবের ৫৫ বছর উদ্যাপনে দিনব্যাপী ছিল রকমারি কর্মসূচি। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, কেক কাটাসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই ছড়িয়েছে উল্লাসের ছোঁয়া। একইদিনে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভাও অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন পরিচালনা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের গৌরবের ৫৫ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে ক্লাব মিলনায়তনে কেক কাটা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ অয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। সস্ত্রীক সদস্যদের উপস্থিতিতে কেক কাটা ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন। স্বাগত বক্তব্য দেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি। সহসাধারণ সম্পাদক ইসলাম রকিবের উপস্থাপিত সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলদেশ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য শাহ আলম সনি।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবকে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সবসময়ই আমরা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাথে রয়েছি। প্রেসক্লাবও সরকারি সকল প্রকার ভালো কাজের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে অসংখ্যবার এসেছি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন এসে প্রথমবারের মতো দেখলাম সদস্যরা সপত্নীক উপস্থিত। সাংবাদিকেরা সৃজনশীল কাজ করেন। এ কাজে স্ত্রীদের সহযোগিতা অপরিহার্য। স্ত্রীদের সাথে নিয়ে প্রেসক্লাবের জন্মদিন পালন হচ্ছে দেখে খুবই ভালো লাগছে। সাংবাদিকসমাজ শুধু নারী অগ্রযাত্রার কথা লেখেন না, নিজেদের পরিবারের নারীদেরও যে এগিয়ে নেওয়ার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেন, এটা তার অনন্য দৃষ্টান্ত। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সুনামের সাথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। আরও শত শত বছর সুনামের সাথে পাড়ি দিয়ে সমাজের অগ্রযাত্রা আরও সুন্দর করবে বলে আমার বিশ^াস। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা।’
বিশেষ অতিথি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সংসারে ঘর সামলানো একটা বিষয়। আমরা যারা বাইরে আছি, ভাবীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে বলছি, আপনারা ঘর সামলান বলে নিশ্চিন্তে আমরা আমাদের কাজগুলো করতে পারি। প্রচলিত একটি কথা আছে, রাজ্য চালায় রাজা, আর রাজাকে চালায় রাণী। এখানে উপস্থিত সকল রাণীর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।’
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন যেমন গান পরিবেশন করেন, তেমনই বেশ কজন সদস্যের সন্তানেরাও গান পরিবেশনসহ কবিতা আবৃত্তি করে বিনোদনের পরিবেশ গড়ে তোলেন। চুয়াডাঙ্গার সন্তান ঢাকা এটিএন বাংলার সংগীত শিল্পী ইশরাত জাহান লিটা গান গেয়ে মাতিয়ে তোলেন। চুয়াডাঙ্গার সংগীত শিল্পী শান্ত ও তার দলসহ শাওন রায় সুরের মূর্ছনায় ভরিয়ে তোলেন প্রেসক্লাব।
এর আগে বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা। সরদার আল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি। কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন প্রবীণ সাংবাদিক এমএম আলাউদ্দীন। প্রয়াত সদস্য ও দাতা সদস্যদের স্মরণসহ তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা কর্মসূচি পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ক্লাব প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহতাব উদ্দীন। দপ্তর সম্পাদক আবুল হাশেম গত সভার কার্যবিবরণী পাঠ করেন। একটি সংশোধনের মধ্যদিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে তা অনুমোদন হয়।
দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি উপস্থাপন করেন তাঁর দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা ধন্যবাদচিত্তে অনুমোদন হয়। অর্থ সম্পাদক আতিয়ার রহমান পেশ করেন দ্বিবার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব। তাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুমোদন হয়। সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক দ্বিবার্ষিক নির্বাচন যথাসময়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে গঠিত হয় নির্বাচন কমিশন। অ্যাড. সোহরাব হোসেনকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটিও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সহসভাপতি কামাল উদ্দীন জোয়ার্দ্দার, দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নামজুল হক স্বপন, ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আহাদ আলী মোল্লা, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খাইরুজ্জামান সেতু, কার্যকরী সদস্য অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, শাহ আলম সনি, রফিক রহমান, ফাইজার চৌধুরী, সদস্যদের মধ্যে মাহতাব উদ্দীন, আজাদ মালিতা, শেখ সেলিম, এমএম আলাউদ্দীন, চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু, রফিকুল ইসলাম, মিজানুল হক, মাহফুজ খান, বিপুল আশরাফ, এমএম মামুন, আব্দুস সালাম, রানা কাদির, আনজাম খালেক, আলমগীর কবীর শিপলু, শামীম রেজা, রেজাউল করিম লিটন, ফজলে রাব্বী সাগর, কামরুজ্জামান চাঁদ, উজ্জ্বল মাসুদ, মো. আব্দুস সালাম, রুহুল আমিন রতন, সনজিত কর্মকার, মফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দার, হুসাইন মালিক, জহির রায়হান সোহাগ, সোহেল সজিব, পলাশ উদ্দীন, খাইরুল ইসলাম, মাহফুজ মামুন, জামান আখতার, মশিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত থেকে তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
দুপুরে আপ্যায়ন পর্বের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয় দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা। এরপরই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মোটরসাইকেল, ছোট ট্রাকসহ ভ্যান নিয়ে বের করা হয় শোভাযাত্রা। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রা বাজনার তালে তালে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় শহরে ছড়ায় সৃষ্টি সুখের উল্লাস। সড়কের দু’ধারে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানান অনেকে।