ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুরে তিন বছরের শিশু মুক্তিকে থাপ্পড় মেরে অজ্ঞান : মৃত ভেবে লাশ গুমের চেষ্টা প্রথমে ঘরের সাব-বাক্সে, রাতে সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে দিই -পপির স্বীকারোক্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৫২:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মার্চ ২০১৭
  • / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক/দর্শনা অফিস: মায়ের সম্পর্কের সূত্র ধরেই পপিকে ভাবী বলে ডাকতো ছোট্ট শিশু মুক্তি মনি। পপির ছেলে সমবয়সী সাদিকের সাথে সারাদিন খেলাধুলা করেই সময় কাটতো তার। সেই সুবাদে দিনের বেশকিছু সময় সাদিকের বাড়িতেই থাকতো মুক্তি। তিন বছর বয়সী মুক্তি মনির ঠিক মতো কথা বলাও শেখেনি। তবুও যেন ভালোবাসার কমতি ছিলো না তার মধ্যে। আধো আদো কন্ঠে পপিকে ভাবী বলে ডেকে জড়িয়ে ধরতো সে।
বুধবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি মুক্তি। সন্ধ্যায় মুক্তি বাড়ি না ফিরলে তাকে খুজতে সাদিকের বাড়ি যায় পরিবারের লোকজন। এসময় সাদিকের মা পপি জানায়, সাদিক বাড়িতে আছে। মুক্তি অনেক আগেই বাড়ির দিকে চলে গেছে। শুরু হয় খোঁজাখুজি। পপিও তাদের সাথে খোঁজাখুজিতে বের হয়। গ্রামে মাইকিং করে সন্ধান করা হয় মুক্তির। গভীর রাত পর্যন্ত হন্যে হয়ে খুঁজেও গতরাতে তার সন্ধান মেলানো সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার ভোর হওয়ার সাথে সাথে আবারও শুরু হয় খোঁজ। মুক্তি মনির বাবা মনিরুজ্জামান ওরফে মিস্টার প্রতিবেশী নাসিরের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার চোখে পড়ে সেফটিক ট্যাংকির ঢাকনা খোলা। আবেগের বশেই ট্যাংকির ভিতর তাকাতেই দেখতে পান মেয়ের লাশ। মেয়ের লাশ দেখে পাথর হয়ে যান তিনি। খবর দেয়া হয় পুলিশে। সকাল ৭টার দিকে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ আসার সাথে সাথে এলাকায় খবর রটে, মুক্তির নেশাখোর বাবা মিস্টার তার মেয়েকে হত্যা করে ট্যাংকির ভেতর ফেলে রেখেছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাসাদের জন্য মনিরুজ্জামান ওরফে মিস্টার এবং বাড়ির মালিক নাসির উদ্দীনকে আটক করে। এসময় মুক্তি ও সাদিকের খেলার সূত্র ধরে পুলিশ গ্রামবাসী সাদিকের মা পপিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মুক্তি হত্যার কথা স্বীকার করে পপি।
দামুড়হুদা উপজেলার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মাঠপাড়ার নাসির উদ্দীনের স্ত্রী পপি জানায়, মুক্তিকে হত্যা করতে চাইনি সে। তার ছেলে সাদিক খেলার সাথী মুক্তির বিরুদ্ধে নালিশ করে তার মা পপির কাছে। ছেলের নালিশে ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তিকে সজোরে থাপ্পর দেয় পপি। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে মুক্তি। হতবিহ্বল হয়ে পড়েন পপি। মুক্তি মারা গেছে ভেবে তার লাশ প্রথমে ঘরের ভেতর টিনের সাব বাক্সের মধ্যে রাখে। পরে নিজের দোষ ঢাকতে রাতের অন্ধকারে বাড়ির সেফটিক ট্যাংকের মধ্যের মুক্তির লাশ ফেলে দেয় পপি।
দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শোনিত কুমার গায়েন সমীকরণকে জানান, সকাল ৭টার দিকে প্রতিবেশী নাসির উদ্দীনের বাড়ির সেফটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে মুক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকালই ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন সমীকরণকে জানান, মুক্তির খেলার সাথী সাদিকের সাথে খেলার বিষয় জানার জন্য পুলিশ ও প্রতিবেশীরা সাদিকের মা পপিকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে পপিকে আটক করে দামুড়হুদা মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়। এ বিষয়ে নিহত মুক্তির মা শাহানাজ বেগম বাদী হয়ে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের নাসির উদ্দীনের স্ত্রী পপিকে আসামী করে দন্ডবিধির ৩০২/২০১ এর ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গা দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুরে তিন বছরের শিশু মুক্তিকে থাপ্পড় মেরে অজ্ঞান : মৃত ভেবে লাশ গুমের চেষ্টা প্রথমে ঘরের সাব-বাক্সে, রাতে সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলে দিই -পপির স্বীকারোক্তি

আপলোড টাইম : ০৫:৫২:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মার্চ ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক/দর্শনা অফিস: মায়ের সম্পর্কের সূত্র ধরেই পপিকে ভাবী বলে ডাকতো ছোট্ট শিশু মুক্তি মনি। পপির ছেলে সমবয়সী সাদিকের সাথে সারাদিন খেলাধুলা করেই সময় কাটতো তার। সেই সুবাদে দিনের বেশকিছু সময় সাদিকের বাড়িতেই থাকতো মুক্তি। তিন বছর বয়সী মুক্তি মনির ঠিক মতো কথা বলাও শেখেনি। তবুও যেন ভালোবাসার কমতি ছিলো না তার মধ্যে। আধো আদো কন্ঠে পপিকে ভাবী বলে ডেকে জড়িয়ে ধরতো সে।
বুধবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি মুক্তি। সন্ধ্যায় মুক্তি বাড়ি না ফিরলে তাকে খুজতে সাদিকের বাড়ি যায় পরিবারের লোকজন। এসময় সাদিকের মা পপি জানায়, সাদিক বাড়িতে আছে। মুক্তি অনেক আগেই বাড়ির দিকে চলে গেছে। শুরু হয় খোঁজাখুজি। পপিও তাদের সাথে খোঁজাখুজিতে বের হয়। গ্রামে মাইকিং করে সন্ধান করা হয় মুক্তির। গভীর রাত পর্যন্ত হন্যে হয়ে খুঁজেও গতরাতে তার সন্ধান মেলানো সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার ভোর হওয়ার সাথে সাথে আবারও শুরু হয় খোঁজ। মুক্তি মনির বাবা মনিরুজ্জামান ওরফে মিস্টার প্রতিবেশী নাসিরের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার চোখে পড়ে সেফটিক ট্যাংকির ঢাকনা খোলা। আবেগের বশেই ট্যাংকির ভিতর তাকাতেই দেখতে পান মেয়ের লাশ। মেয়ের লাশ দেখে পাথর হয়ে যান তিনি। খবর দেয়া হয় পুলিশে। সকাল ৭টার দিকে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ আসার সাথে সাথে এলাকায় খবর রটে, মুক্তির নেশাখোর বাবা মিস্টার তার মেয়েকে হত্যা করে ট্যাংকির ভেতর ফেলে রেখেছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাসাদের জন্য মনিরুজ্জামান ওরফে মিস্টার এবং বাড়ির মালিক নাসির উদ্দীনকে আটক করে। এসময় মুক্তি ও সাদিকের খেলার সূত্র ধরে পুলিশ গ্রামবাসী সাদিকের মা পপিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মুক্তি হত্যার কথা স্বীকার করে পপি।
দামুড়হুদা উপজেলার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মাঠপাড়ার নাসির উদ্দীনের স্ত্রী পপি জানায়, মুক্তিকে হত্যা করতে চাইনি সে। তার ছেলে সাদিক খেলার সাথী মুক্তির বিরুদ্ধে নালিশ করে তার মা পপির কাছে। ছেলের নালিশে ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তিকে সজোরে থাপ্পর দেয় পপি। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে মুক্তি। হতবিহ্বল হয়ে পড়েন পপি। মুক্তি মারা গেছে ভেবে তার লাশ প্রথমে ঘরের ভেতর টিনের সাব বাক্সের মধ্যে রাখে। পরে নিজের দোষ ঢাকতে রাতের অন্ধকারে বাড়ির সেফটিক ট্যাংকের মধ্যের মুক্তির লাশ ফেলে দেয় পপি।
দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শোনিত কুমার গায়েন সমীকরণকে জানান, সকাল ৭টার দিকে প্রতিবেশী নাসির উদ্দীনের বাড়ির সেফটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে মুক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকালই ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন সমীকরণকে জানান, মুক্তির খেলার সাথী সাদিকের সাথে খেলার বিষয় জানার জন্য পুলিশ ও প্রতিবেশীরা সাদিকের মা পপিকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে পপিকে আটক করে দামুড়হুদা মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়। এ বিষয়ে নিহত মুক্তির মা শাহানাজ বেগম বাদী হয়ে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের নাসির উদ্দীনের স্ত্রী পপিকে আসামী করে দন্ডবিধির ৩০২/২০১ এর ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।