ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছাত্রলীগের ১২টি ইউনিটের কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ : গুরুত্বপূর্ণ ২৮ নেতার ১৪ জনই বিবাহিত : সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে গঠন করা হবে নতুন কমিটি : সোহাগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:১১:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০১৭
  • / ৪৫৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পদে থাকা বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের সেচ্ছায় পদত্যাগে  বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘন্টা সময়সীমা উত্তীর্ণের পর আরো ৭২ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও কেন্দ্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে  চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছাত্রলীগের কোন ইউনিট কমিটির নেতৃবৃন্দের পদত্যাগ কিম্বা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেছেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে জেলা কমিটির মাধ্যমে উপজেলা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়নসহ সকল ইউনিট কমিটি গঠন করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, অছাত্র ও বিবাহিতদের দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি পরিচালিত হওয়ায় সাধারণ ছাত্ররা এসকল নেতার নেতৃত্বে রাজনীতি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সূত্রমতে, অছাত্ররা ছাত্রলীগের দ্বায়িত্বে থাকায় তাদের চাল চলন, কথাবার্তা ও আচার আচরন কোনটিই ছাত্রদের আকর্ষণ করতে না পারায় সাধারণ ছাত্ররা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হচ্ছেনা। অন্যদিকে অছাত্র নেতৃত্বের কারণে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে এক ধরণের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলেও সূত্রটি দাবী করেন। অপরদিকে এসকল অছাত্র ও বিবাহিতরা তাদের প্রয়োজনে সাধারণ কিছু ছাত্রকে নানা ধরনের অসাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিলুপ্ত ঘোষণার ১৪ মাস পর গত ২জুন চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিককে সভাপতি মনোনিত করে ৪সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংসদ। কমিটির অন্যরা হলেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শাহাবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, যুগ্ম সম্পাদক মো. জাকির হোসাইন জ্যাকী। নবঘোষিত কমিটির মাধ্যমে দ্রুত সকল উপজেলা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়ন ও ইউনিট কমিটি করার কথা থাকলেও এ ধরণের কোন কার্যক্রম এখনও চোখে পড়েনি। তবে এ ব্যাপারে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে বলে নেতারা জানান।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের অধীনে জেলার চারটি উপজেলা, চারটি পৌর ও গুরুত্বপূর্ণ চারটি সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। দু’একটি কমিটি ভাঙা গড়ার জটিলতা এবং নেতার কূকীর্তির কারণে বিলুপ্তও করা হয়েছে। তবে নতুন কমিটি না হওয়ায় বিলুপ্তির পরেও যথাস্থানেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনেক নেতা। এ কমিটিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে ইতোমধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। সাংসারিক জীবনে অনেকে সন্তানের বাবাও হয়ে গেছেন। কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি/বেসরকারি চাকুরীতেও যোগ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি মো. জুয়েল রানা, সাধারণ সম্পাদক সুমন রেজা। ইতিমধ্যে দু’জনেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এরপর আর সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক কাউন্সিল না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে বহাল রয়েছেন তারাই। পৌর ছাত্রলীগের অবস্থা একই। এ কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব থাকা জাবিদুল ইসলাম জাবিদ কিছুদিন আগে বেশ ধুমধাম করে বিয়ের কাজ সেরে ফেলেছেন। সাধারণ সম্পাদক নাঈম পারভেজ সজল এখনও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেকের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে কলেজ শাখার কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন আশিক ইকবাল স্বপন। তিনিও সাংসারিক জীবনে পদার্পণ করেছেন। পাশাপাশি বর্তমানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের অবস্থান সূচনীয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালমুন আহম্মেদ ডন ও সাধারণ সম্পাদক আলাল আহম্মেদ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নয়ন সরকার আলমডাঙ্গাতে আছেন। সাধারণ সম্পাদক মিডেল চাকুরীসূত্রে ঢাকাতে থাকায় নাহিদ হাসান তমাল তার স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা তপন এখনও স্বপদে বহাল থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জামিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাজু আহম্মেদ রিংকু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এদিকে দর্শনা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ববি সাংসারিক জীবনে ২সন্তানের জনক এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বিবাহিত পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকুরীরত। দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ পারভেজও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন তপু এখনও স্বপদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
জীবননগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব আহম্মেদ অঞ্জন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম রাজা প্রত্যেকেই সাংসারিক জীবনে ১ সন্তানের জনক এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও। এরপরেও তারা স্বপদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে অনেক আগেই বিলুপ্ত করা হয়েছে পৌর ও কলেজ কমিটি। জীবননগর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সভাপতি ছিলেন মো. শরীফ হোসেন ও নাজমুল আলম মানিক ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। আর জীবননগর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে মেহেদী হাসান ও রুবেল হোসেন। কিন্তু এরপর আর কমিটি গঠন না হওয়ায় তারাই দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এ প্রতিবেদককে বলেন, ছাত্রলীগের অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগকে একটি সু-শৃঙ্খল ছাত্র সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য গত ১২ জুলাই ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমার মতে যারা বিবাহিত তাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়া উচিত। এ পর্যন্ত সারাদেশের ২১০জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাদের স্ব স্ব পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে। এখনও যারা পদত্যাগপত্র জমা দেয়নি বা দিচ্ছে না তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শিঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের ব্যপারে বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা কমিটির মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা, পৌর ও কলেজসহ সকল ইউনিট কমিটি আনুষ্ঠানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাকিব হাসান সুইম এ প্রতিবেদককে বলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সভায় সংগঠনের সভাপতির দেওয়া ৭২ঘণ্টার মধ্যে পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আল্টিমেটামের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর বিবাহিত ও চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছে। তাদেরকে কাউন্সিলের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে অব্যহতি দেওয়া হবে।
নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস, তাই এ মাসে আমরা কোন কমিটি করিনা। এ মাসের পর পরবর্তী মাসের মধ্যে সকল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাকিম জাবিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের পদধারী কোন নেতা বা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী বিবাহ করেছেন, সরকারি চাকুরী করেন কিন্তু সংগঠন থেকে এখনও অব্যাহতি নেননি’ এমন অভিযোগের উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহায়মেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক বলেন, ছাত্রলীগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে। এ জেলার পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে, এরমধ্যে কেউ বিবাহিত নেই। অন্যান্য ইউনিট কমিটিগুলোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। শিঘ্রই নতুন কমিটি গঠন করে তাদেরকে অব্যহতি দেওয়া হবে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে সকল কমিটির পদে আসীন বিবাহিত ও সরকারি চাকরিজীবীদের কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে স্বসম্মানে অব্যহতি দেওয়া হবে। সকল উপজেলা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সাধারণ সভায় সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগে থাকা বিবাহিত ও সরকারি চাকরিজীবীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে তাগিদ দেন। এ নির্দেশনার মধ্যেই সারাদেশে অনেকেই ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছাত্রলীগের ১২টি ইউনিটের কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ : গুরুত্বপূর্ণ ২৮ নেতার ১৪ জনই বিবাহিত : সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে গঠন করা হবে নতুন কমিটি : সোহাগ

আপলোড টাইম : ০৬:১১:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পদে থাকা বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের সেচ্ছায় পদত্যাগে  বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘন্টা সময়সীমা উত্তীর্ণের পর আরো ৭২ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও কেন্দ্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে  চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছাত্রলীগের কোন ইউনিট কমিটির নেতৃবৃন্দের পদত্যাগ কিম্বা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেছেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে জেলা কমিটির মাধ্যমে উপজেলা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়নসহ সকল ইউনিট কমিটি গঠন করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, অছাত্র ও বিবাহিতদের দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি পরিচালিত হওয়ায় সাধারণ ছাত্ররা এসকল নেতার নেতৃত্বে রাজনীতি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সূত্রমতে, অছাত্ররা ছাত্রলীগের দ্বায়িত্বে থাকায় তাদের চাল চলন, কথাবার্তা ও আচার আচরন কোনটিই ছাত্রদের আকর্ষণ করতে না পারায় সাধারণ ছাত্ররা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হচ্ছেনা। অন্যদিকে অছাত্র নেতৃত্বের কারণে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে এক ধরণের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলেও সূত্রটি দাবী করেন। অপরদিকে এসকল অছাত্র ও বিবাহিতরা তাদের প্রয়োজনে সাধারণ কিছু ছাত্রকে নানা ধরনের অসাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিলুপ্ত ঘোষণার ১৪ মাস পর গত ২জুন চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিককে সভাপতি মনোনিত করে ৪সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংসদ। কমিটির অন্যরা হলেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শাহাবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, যুগ্ম সম্পাদক মো. জাকির হোসাইন জ্যাকী। নবঘোষিত কমিটির মাধ্যমে দ্রুত সকল উপজেলা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়ন ও ইউনিট কমিটি করার কথা থাকলেও এ ধরণের কোন কার্যক্রম এখনও চোখে পড়েনি। তবে এ ব্যাপারে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে বলে নেতারা জানান।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের অধীনে জেলার চারটি উপজেলা, চারটি পৌর ও গুরুত্বপূর্ণ চারটি সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। দু’একটি কমিটি ভাঙা গড়ার জটিলতা এবং নেতার কূকীর্তির কারণে বিলুপ্তও করা হয়েছে। তবে নতুন কমিটি না হওয়ায় বিলুপ্তির পরেও যথাস্থানেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনেক নেতা। এ কমিটিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে ইতোমধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। সাংসারিক জীবনে অনেকে সন্তানের বাবাও হয়ে গেছেন। কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি/বেসরকারি চাকুরীতেও যোগ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি মো. জুয়েল রানা, সাধারণ সম্পাদক সুমন রেজা। ইতিমধ্যে দু’জনেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এরপর আর সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক কাউন্সিল না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে বহাল রয়েছেন তারাই। পৌর ছাত্রলীগের অবস্থা একই। এ কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব থাকা জাবিদুল ইসলাম জাবিদ কিছুদিন আগে বেশ ধুমধাম করে বিয়ের কাজ সেরে ফেলেছেন। সাধারণ সম্পাদক নাঈম পারভেজ সজল এখনও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেকের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে কলেজ শাখার কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন আশিক ইকবাল স্বপন। তিনিও সাংসারিক জীবনে পদার্পণ করেছেন। পাশাপাশি বর্তমানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের অবস্থান সূচনীয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালমুন আহম্মেদ ডন ও সাধারণ সম্পাদক আলাল আহম্মেদ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নয়ন সরকার আলমডাঙ্গাতে আছেন। সাধারণ সম্পাদক মিডেল চাকুরীসূত্রে ঢাকাতে থাকায় নাহিদ হাসান তমাল তার স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা তপন এখনও স্বপদে বহাল থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জামিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাজু আহম্মেদ রিংকু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এদিকে দর্শনা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ববি সাংসারিক জীবনে ২সন্তানের জনক এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বিবাহিত পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকুরীরত। দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ পারভেজও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন তপু এখনও স্বপদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
জীবননগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব আহম্মেদ অঞ্জন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম রাজা প্রত্যেকেই সাংসারিক জীবনে ১ সন্তানের জনক এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও। এরপরেও তারা স্বপদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে অনেক আগেই বিলুপ্ত করা হয়েছে পৌর ও কলেজ কমিটি। জীবননগর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সভাপতি ছিলেন মো. শরীফ হোসেন ও নাজমুল আলম মানিক ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। আর জীবননগর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে মেহেদী হাসান ও রুবেল হোসেন। কিন্তু এরপর আর কমিটি গঠন না হওয়ায় তারাই দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এ প্রতিবেদককে বলেন, ছাত্রলীগের অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগকে একটি সু-শৃঙ্খল ছাত্র সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য গত ১২ জুলাই ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমার মতে যারা বিবাহিত তাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়া উচিত। এ পর্যন্ত সারাদেশের ২১০জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাদের স্ব স্ব পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে। এখনও যারা পদত্যাগপত্র জমা দেয়নি বা দিচ্ছে না তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শিঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের ব্যপারে বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা কমিটির মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা, পৌর ও কলেজসহ সকল ইউনিট কমিটি আনুষ্ঠানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাকিব হাসান সুইম এ প্রতিবেদককে বলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সভায় সংগঠনের সভাপতির দেওয়া ৭২ঘণ্টার মধ্যে পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আল্টিমেটামের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর বিবাহিত ও চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছে। তাদেরকে কাউন্সিলের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে অব্যহতি দেওয়া হবে।
নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস, তাই এ মাসে আমরা কোন কমিটি করিনা। এ মাসের পর পরবর্তী মাসের মধ্যে সকল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাকিম জাবিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের পদধারী কোন নেতা বা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী বিবাহ করেছেন, সরকারি চাকুরী করেন কিন্তু সংগঠন থেকে এখনও অব্যাহতি নেননি’ এমন অভিযোগের উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহায়মেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক বলেন, ছাত্রলীগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে। এ জেলার পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে, এরমধ্যে কেউ বিবাহিত নেই। অন্যান্য ইউনিট কমিটিগুলোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। শিঘ্রই নতুন কমিটি গঠন করে তাদেরকে অব্যহতি দেওয়া হবে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে সকল কমিটির পদে আসীন বিবাহিত ও সরকারি চাকরিজীবীদের কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে স্বসম্মানে অব্যহতি দেওয়া হবে। সকল উপজেলা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সাধারণ সভায় সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগে থাকা বিবাহিত ও সরকারি চাকরিজীবীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে তাগিদ দেন। এ নির্দেশনার মধ্যেই সারাদেশে অনেকেই ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।