ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট চক্ষু হাসপাতালে চোখ হারানোর ঘটনায়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৮
  • / ৫৮০ বার পড়া হয়েছে

?

প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষুশিবিরে চোখের ছানি অপারেশেনের পর চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককেই হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক চোখ হারানো ১৭ জনকে এ টাকা দেয়ার নির্দেশ থাকলেও মানবিক কারণে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্থ অপর তিনজনকেও সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার সময় ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়র”ল আলমের উপস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চোখ হারানো প্রত্যেকের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন। এসময় সিভিল সার্জন ডা. খায়র”ল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গত ৫ মার্চ ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনে গঠিত আই ক্যাম্পের মাধ্যমে ২৪ জন চক্ষু রোগীর চোখের ছানির অপারেশন করা হয়। তার মধ্যে ২০ জন রোগীর চোখের সমস্যা দেখা দেয়। পরে ওই ২০ জনকে ঢাকার আই হাসপাতালে নিলে ১৭ জন রোগীর চোখ পার্মান্টেলি নষ্ট হয়ে যায়। একই সাথে অপর তিনজন রোগীর চোখে সাময়িক অসুবিধা দেখা দেয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন হয়। গত ২১ শে অক্টোবর সেই রিট পিটিশনের রায় হয়। উক্ত রায়ে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনকে চোখ হারানো ১৭ জন রোগীকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন সেই জরিমানার টাকা পরিশোধ করার জন প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করে। এছাড়াও হাইকোর্টের নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্থ অপর তিনজনকেও সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। এছাড়াও মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক এসকল চক্ষু রোগী যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তাদের চোখের চিকিৎসা বাবদ সার্বিক খরচ বহন করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সাথে রোগীদের চোখে যেই আইরিশ ইন্টারপ্রাইজ কোম্পানির ঔষধ ব্যবহার করা হয় সেই ঔষধ কোম্পানিকে চোখ হারানো রোগীদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দেয় মহামান্য হাইকোর্ট। এসময় তিনি আরো বলেন- তিনি জানতে পেরেছেন ঔষুধ কোম্পানি এ বিষয়ে একটি আপিল করেছে। চেক প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন ইম্প্যাক্ট জীবন মেলার প্রশাসক ডা. সাইফুল ইমাম, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আরেফা নাসরিন, গাইনি কনসালটেন্ট ডা. সাহিদা খাতুন, মেডিকেল অফিসার পারভীন ইয়াসমিন ও ফাইন্যান্স ম্যানেজার মনজুর”ল ইসলামসহ ইম্প্যাক্ট ও সিভিল সার্জন অফিসের বেশ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী।
‘উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ চুয়াডাঙ্গা জেলার পৌর শহরের অবস্থিত ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে গঠিত চক্ষুশিবিরে চোখের ছানি অপারেশন করার পর ২৪ জনের মধ্যে ২০ জন রোগীর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্ঠি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুর” হয়। ওই ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হাসপাতালটিতে চক্ষু সংক্রান্ত সব সেবা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত হাইকোর্টে একটি রিট করেন যার ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১ এপ্রিল হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়সহ কয়েকটি বিষয়ে র”ল জারি করেন। পরে ওই র”লের উপর চুড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এই রায় দেন। অপারেশনে চোখ হারানো ১৭ জনকে কক্ষতিপূরণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৫ লাখ ও ঔষধ কোম্পানিকে ৫ লাখ টাকা করে এক মাসের মধ্যে দেয়ার নিদের্শ দেন।
ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেন যারা- চুয়াডাঙ্গা আলুকদিয়ার ওলি মুহাম্মদ, গাইদঘাটের গোলজার হোসেন, আলমডাঙ্গা খাসকররার লাল মোহাম্মদ, রংপুরের এখলাস আলী, খাস বাগুন্দা’র খবিরোন নেছা, মোড়ভাঙ্গার আহাম্মদ আলী, সোনাপট্টি’র অবনী দত্ত, এনায়েতপুরের মীর ইয়াকুব আলী, কুটি পাইকপাড়ার ঊষা রাণী, নতিডাঙ্গার ফাতেমা খাতুন, হারদী’র হাওয়াতন নেছা, আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার কুটিলা খাতুন, দামুড়হুদা সদাবরীর হানিফা খাতুন, দামুড়হুদা লক্ষীপুরের তায়েপ আলী, মদনার মধু হালদার, বড়বলদিয়ার আয়েশা খাতুন, কার্পাসডাঙ্গার গোলজার খাতুন, মজলিসপুরের শফিকুল ইসলাম, চিৎলার নবিছদ্দিন ও জীবননগর শিংনগর গ্রামের আজিজুল হক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গা ইম্প্যাক্ট চক্ষু হাসপাতালে চোখ হারানোর ঘটনায়

আপলোড টাইম : ১০:৪৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষুশিবিরে চোখের ছানি অপারেশেনের পর চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককেই হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক চোখ হারানো ১৭ জনকে এ টাকা দেয়ার নির্দেশ থাকলেও মানবিক কারণে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্থ অপর তিনজনকেও সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার সময় ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খায়র”ল আলমের উপস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চোখ হারানো প্রত্যেকের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন। এসময় সিভিল সার্জন ডা. খায়র”ল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গত ৫ মার্চ ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনে গঠিত আই ক্যাম্পের মাধ্যমে ২৪ জন চক্ষু রোগীর চোখের ছানির অপারেশন করা হয়। তার মধ্যে ২০ জন রোগীর চোখের সমস্যা দেখা দেয়। পরে ওই ২০ জনকে ঢাকার আই হাসপাতালে নিলে ১৭ জন রোগীর চোখ পার্মান্টেলি নষ্ট হয়ে যায়। একই সাথে অপর তিনজন রোগীর চোখে সাময়িক অসুবিধা দেখা দেয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন হয়। গত ২১ শে অক্টোবর সেই রিট পিটিশনের রায় হয়। উক্ত রায়ে ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনকে চোখ হারানো ১৭ জন রোগীকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন সেই জরিমানার টাকা পরিশোধ করার জন প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করে। এছাড়াও হাইকোর্টের নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্থ অপর তিনজনকেও সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। এছাড়াও মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক এসকল চক্ষু রোগী যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তাদের চোখের চিকিৎসা বাবদ সার্বিক খরচ বহন করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সাথে রোগীদের চোখে যেই আইরিশ ইন্টারপ্রাইজ কোম্পানির ঔষধ ব্যবহার করা হয় সেই ঔষধ কোম্পানিকে চোখ হারানো রোগীদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দেয় মহামান্য হাইকোর্ট। এসময় তিনি আরো বলেন- তিনি জানতে পেরেছেন ঔষুধ কোম্পানি এ বিষয়ে একটি আপিল করেছে। চেক প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন ইম্প্যাক্ট জীবন মেলার প্রশাসক ডা. সাইফুল ইমাম, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আরেফা নাসরিন, গাইনি কনসালটেন্ট ডা. সাহিদা খাতুন, মেডিকেল অফিসার পারভীন ইয়াসমিন ও ফাইন্যান্স ম্যানেজার মনজুর”ল ইসলামসহ ইম্প্যাক্ট ও সিভিল সার্জন অফিসের বেশ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী।
‘উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ চুয়াডাঙ্গা জেলার পৌর শহরের অবস্থিত ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে গঠিত চক্ষুশিবিরে চোখের ছানি অপারেশন করার পর ২৪ জনের মধ্যে ২০ জন রোগীর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্ঠি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুর” হয়। ওই ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হাসপাতালটিতে চক্ষু সংক্রান্ত সব সেবা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত হাইকোর্টে একটি রিট করেন যার ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১ এপ্রিল হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়সহ কয়েকটি বিষয়ে র”ল জারি করেন। পরে ওই র”লের উপর চুড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এই রায় দেন। অপারেশনে চোখ হারানো ১৭ জনকে কক্ষতিপূরণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৫ লাখ ও ঔষধ কোম্পানিকে ৫ লাখ টাকা করে এক মাসের মধ্যে দেয়ার নিদের্শ দেন।
ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেন যারা- চুয়াডাঙ্গা আলুকদিয়ার ওলি মুহাম্মদ, গাইদঘাটের গোলজার হোসেন, আলমডাঙ্গা খাসকররার লাল মোহাম্মদ, রংপুরের এখলাস আলী, খাস বাগুন্দা’র খবিরোন নেছা, মোড়ভাঙ্গার আহাম্মদ আলী, সোনাপট্টি’র অবনী দত্ত, এনায়েতপুরের মীর ইয়াকুব আলী, কুটি পাইকপাড়ার ঊষা রাণী, নতিডাঙ্গার ফাতেমা খাতুন, হারদী’র হাওয়াতন নেছা, আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার কুটিলা খাতুন, দামুড়হুদা সদাবরীর হানিফা খাতুন, দামুড়হুদা লক্ষীপুরের তায়েপ আলী, মদনার মধু হালদার, বড়বলদিয়ার আয়েশা খাতুন, কার্পাসডাঙ্গার গোলজার খাতুন, মজলিসপুরের শফিকুল ইসলাম, চিৎলার নবিছদ্দিন ও জীবননগর শিংনগর গ্রামের আজিজুল হক।