চুয়াডাঙ্গায় মোবাইল অ্যাপস ‘বি-টাইগার শপিং’-এর প্রতারণা, গরু-ছাগল বিক্রি করে বড় বিনিয়োগ
- আপলোড টাইম : ০৩:৫১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ অগাস্ট ২০২২
- / ১২ বার পড়া হয়েছে
আকিমুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গায় রিং আইডি, এসপিসির পর এবার ‘বি–টাইগার শপিং’ নামের মোবাইল অ্যাপসের প্রতারণায় পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে। স্কুল–কলেজ পড়ুয়া ছাত্রসহ নানা পেশার মানুষের মুখে মুখে এখন শোনা যাচ্ছে ‘বি–টাইগার’ নামের মোবাইল অ্যাপসের প্রতারণা। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও কারো কাছ থেকে শুনতে পাওয়া যায়নি নামটি। তবে সবার গোপনে ‘বি–টাইগার’ নামটি এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের কিছু দালাল চক্র স্কুল–কলেজের ছাত্রদের মাথার ব্রেন ওয়াশ করে অল্প বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে ঘরে বসে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করায়। তা পরবর্তীতে দেড় লাখের বেশি দাঁড়ায়। তবে শুধু ছাত্র নয়, এই ফাঁদে পা দিয়েছে স্থানীয় স্বনামধন্য ব্যবসায়ীরাসহ বেকার যুবসমাজের লোকজন।
জানা গেছে, আনুমানিক দেড় মাস পূর্বে ‘বি–টাইগার শপিং’ নামের মোবাইল অ্যাপসের সাথে পরিচয় হয় গহেরপুর গ্রামের তাহের শেখের ছেলে সুমন শেখের। পরে গ্রামের অনেক মানুষকে সে নানা ধরণের লোভ দেখিয়ে টাকা বিনিয়োগের পরামর্শ দেয় এবং অনেকে তাতে টাকা দেয়। তারপর অ্যাপসের অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বাড়তে দেখে এলাকার মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করায় সুমন। পরে গড়াইটুপি গ্রামের মাঠপাড়ায় বাদলের ছেলে জনি ও প্রবাসী ফারুকের ছেলে রানাকে টেনে নেয় ওই ফাঁদে। পরবর্তীতে জনি ও রানা খাড়াগোদার অনেক যুবককে আমেরিকান অর্ডার কনফর্ম করা অনলাইন জব বলে টাকা বিনিয়োগ করায়। যা কয়েকদিনের মধ্যেই অ্যাপসসহ ডিজাবল হয়ে যায়।
গহেরপুর গ্রামের কয়েকজন যুবক বলেন, ‘অ্যাপসের লাভ সম্পর্কে ধারণা দিলেও আমরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেছি।’ এ বিষয়ে খাড়াগোদা বাজারের ব্যবসায়ী নেপাল কর্মকার বলেন, ‘লোভ দেখিয়ে কাজ করার কথা বললেও কোনো টাকার সন্ধান আমি পায়নি।’ জানা গেছে, অ্যাপস থেকে যদি কেউ নতুন সদস্যকে ওই অ্যাপসের রেফার করে তাহলে সেখান থেকে লাভের কিছু অংশ সে পাবে। আর সেই সুযোগটি নিয়েছিল সুমন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় দুই শতাধিক যুবক এই ফাঁদে পা দিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে গরু বিক্রি, ধার–দেনা, ছাগল বিক্রিসহ নানা ধরণের ক্ষেত্র থেকে টাকা ম্যানেজ করে এই অ্যাপসে বিনিয়োগ করে সুমনের কথা মতো। এলাকা ঘুরে জানা গেছে, তিন গ্রাম খাড়াগোদা, গড়াইটুপি ও গহেরপুরের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ অধিক লাভের আশায় এই মোবাইল অ্যাপসে ৪০ লাখের বেশি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যা থেকে কোনো উপার্জন তো দূরের কথা, ৪–৫ দিনের মধ্যে অ্যাপসই নিজেদের ফোন থেকে হারিয়ে গেছে। কারণ এই প্রতারণার পিছনে বড় ধরণের হাত সুমনেরও রয়েছে।
এদিকে, মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে এ ধরণের ক্ষতির সম্মুখে পড়ায় স্থানীয়রা সুমনের ওপর ক্ষোভে ফুঁসছেন। ইতঃমধ্যে সুমন এলাকা থেকে গা–ঢাকা দিয়েছে। এ বিষয়ে সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি। সুমন ভয়ে এলাকা ছাড়লেও জনি ও রানাকে মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে বলে জানান অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘আমি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছি এই অ্যাপসে এবং মোট ব্যালেন্স ছিল ২ লাখের উপরে। আমি কিছুই করতে পারলাম না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতো অগনিত মানুষ এই ফাঁদে পড়ে তাদের ভবিষ্যৎ শেষ করেছে।’
তবে বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠলেও এখন পর্যন্ত কেউই আইনত ব্যবস্থা নেয়নি। অ্যাপসে টাকা বিনিয়োগ করা এবং তাতে নিজের মতো অগনিত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অর্ডার কনফার্ম করার মধ্যে ঘরে বসে টাকা আয় করা, এছাড়া যত বেশি বিনিয়োগ, তত বেশি লাভের আশায় এমন বোকামি করাটাকে স্থানীয় সচেতন মহল মূর্খতা বলে প্রকাশ করেছেন। তবে কিছু লোক প্রকাশ্যে কথা বললেও বেশিরভাগ মানুষ তাদের অতি লোভের বোকামি ঢাকতে চুপ করে গোপনে বুক চাপাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।