ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় আ.লীগ নেতা জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১
  • / ৬৭ বার পড়া হয়েছে

যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম জোয়ার্দ্দারসহ ১১ জনের নামে মামলা, একজন গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদরের ছয়ঘরিয়ায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর মল্লিকের ময়নাতদন্ত শেষে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। এসময় নিহতের লাশ নিতে মর্গের সামনে ভিড় করেন নিহতের পরিবারের সদস্যসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এদিকে, লাশ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের বাসভবনের সামনে উপস্থিত হন। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নিহতের লাশ নিয়ে সদর উপজেলার তিতুদহের নুরুল্লাপুর গ্রামে নেওয়া হয়। বিকেলে নুরুল্লাপুর গ্রামে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সমপন্ন করা হয়।
এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আনাছ উদ্দীন নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নুরুল্লাপুর গ্রামে একটি দোতলা বাড়িতে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মৃত জাহাঙ্গীরের পিতা রনজিত মল্লিক বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারসহ মোট ১১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার আনাছ উদ্দীন (৬০) ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত. মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়াতে বালি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার রাতেই নিহত জাহাঙ্গীরের পিতা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামে পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছয়ঘরিয়া গ্রামের জৈনক এক ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই বাড়ির দোতলা থেকে আসামি আনাছকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ আরও জানায়, এই মামলায় অভিযুক্ত বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এজাহারনামীও অন্য আসামিরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা আরামপাড়ার মৃত বরকত আলী জোয়ার্দ্দার ওরফে আলো মিয়ার ছেলে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার (৪৮), চুয়াডঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত আনাছ উদ্দীনের ছেলে মোমিন (৩২), একই গ্রামের কালাম হোসেন ওরফে লিটু বিশ্বাসের ছেলে জিসান (২৮), আব্দুস সালামের ছেলে লিমন হোসেন (২৬), এনামুল হকের ছেলে সাকিব হোসেন (২৫), উসমানের ছেলে শোভন (২৬), মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে গ্রেপ্তার আনাছ উদ্দীন (৫৫), মৃত সানোয়ার হোসেনের ছেলে লিটু বিশ্বাস (৪৫), বিশা শেখের ছেলে সবুজ হোসেন (২৬), মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আপিল উদ্দীন (৫০) ও দর্শনা থানার গোষ্ঠবিহার গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে রাশেদুজ্জামান পলাশ (৩৮)।
এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাজিদ হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করে নিহত জাহাঙ্গীরের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। মেডিকেল টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট ডা. তানভিরুল হক ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এ এস এমফাতেহ আকরাম।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. সাজিদ হাসান বলেন, জাহাঙ্গীরের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরের কোথাও কোপের দাগ না থাকলেও তাঁর একটি হাত ও পায়ের পাতা ভাঙা ছিল। মাথায় লাঠি জাতীয় বস্তুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, কয়েকমাস যাবত ছয়ঘরিয়া কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মাঠে চিত্রা নদীর মোহনার খাল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছিলেন তিতুদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শুকুর আলী। কিছুদিন আগে ছয়ঘরিয়া গ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালো মমিন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শুকুরের কাছে চাঁদা দাবি করেন। এবিষয়ে শুকুর আলী মমিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করলে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত বুধবার জাহাঙ্গীর ট্রাক্টরে করে বালি নিতে গেলে জাহাঙ্গীর ও মমিন বাহিনীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে মমিনসহ কয়েকজন মিলে জাহাঙ্গীরকে বেধড়ক মারধর করে। পরে স্থানীয়রা জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল চারটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গায় আ.লীগ নেতা জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন

আপলোড টাইম : ১০:৩৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১

যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম জোয়ার্দ্দারসহ ১১ জনের নামে মামলা, একজন গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদরের ছয়ঘরিয়ায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর মল্লিকের ময়নাতদন্ত শেষে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। এসময় নিহতের লাশ নিতে মর্গের সামনে ভিড় করেন নিহতের পরিবারের সদস্যসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এদিকে, লাশ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের বাসভবনের সামনে উপস্থিত হন। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নিহতের লাশ নিয়ে সদর উপজেলার তিতুদহের নুরুল্লাপুর গ্রামে নেওয়া হয়। বিকেলে নুরুল্লাপুর গ্রামে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সমপন্ন করা হয়।
এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আনাছ উদ্দীন নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নুরুল্লাপুর গ্রামে একটি দোতলা বাড়িতে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মৃত জাহাঙ্গীরের পিতা রনজিত মল্লিক বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারসহ মোট ১১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার আনাছ উদ্দীন (৬০) ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত. মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়াতে বালি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার রাতেই নিহত জাহাঙ্গীরের পিতা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামে পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছয়ঘরিয়া গ্রামের জৈনক এক ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই বাড়ির দোতলা থেকে আসামি আনাছকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ আরও জানায়, এই মামলায় অভিযুক্ত বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এজাহারনামীও অন্য আসামিরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা আরামপাড়ার মৃত বরকত আলী জোয়ার্দ্দার ওরফে আলো মিয়ার ছেলে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার (৪৮), চুয়াডঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত আনাছ উদ্দীনের ছেলে মোমিন (৩২), একই গ্রামের কালাম হোসেন ওরফে লিটু বিশ্বাসের ছেলে জিসান (২৮), আব্দুস সালামের ছেলে লিমন হোসেন (২৬), এনামুল হকের ছেলে সাকিব হোসেন (২৫), উসমানের ছেলে শোভন (২৬), মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে গ্রেপ্তার আনাছ উদ্দীন (৫৫), মৃত সানোয়ার হোসেনের ছেলে লিটু বিশ্বাস (৪৫), বিশা শেখের ছেলে সবুজ হোসেন (২৬), মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আপিল উদ্দীন (৫০) ও দর্শনা থানার গোষ্ঠবিহার গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে রাশেদুজ্জামান পলাশ (৩৮)।
এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাজিদ হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করে নিহত জাহাঙ্গীরের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। মেডিকেল টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট ডা. তানভিরুল হক ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এ এস এমফাতেহ আকরাম।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. সাজিদ হাসান বলেন, জাহাঙ্গীরের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরের কোথাও কোপের দাগ না থাকলেও তাঁর একটি হাত ও পায়ের পাতা ভাঙা ছিল। মাথায় লাঠি জাতীয় বস্তুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, কয়েকমাস যাবত ছয়ঘরিয়া কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মাঠে চিত্রা নদীর মোহনার খাল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছিলেন তিতুদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শুকুর আলী। কিছুদিন আগে ছয়ঘরিয়া গ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালো মমিন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শুকুরের কাছে চাঁদা দাবি করেন। এবিষয়ে শুকুর আলী মমিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করলে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত বুধবার জাহাঙ্গীর ট্রাক্টরে করে বালি নিতে গেলে জাহাঙ্গীর ও মমিন বাহিনীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে মমিনসহ কয়েকজন মিলে জাহাঙ্গীরকে বেধড়ক মারধর করে। পরে স্থানীয়রা জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল চারটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।