ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আলাউদ্দীন হেলা লাঞ্ছিত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪০:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২০
  • / ১৮৯ বার পড়া হয়েছে

সড়ক অবরোধ করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা; পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, শহরজুড়ে নিন্দার ঝড়
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আলাউদ্দীন হেলাকে লাঞ্ছিত করেছেন পূর্বাশা পরিবহনের প্রতিষ্ঠান রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেটের সামনে রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেনাকাটা করতে গেলে দোকান-কর্মচারীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন তিনি। আলাউদ্দীন হেলাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা জানার পর ওই দোকান-কর্মচারীদের মারধর করেন জ্বিনতলা পাড়ার কয়েক যুবক। এরপর প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে কয়েকটি বাস দিয়ে সড়কে বেরিকেড সৃষ্টি করে পূর্বাশা পরিবহনের মালিকপক্ষ। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর দ্রুতই সড়কে বেরিকেট দেওয়া বাসগুলো সরিয়ে নেয় তারা।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল চুয়াডাঙ্গা পূর্বাশা পরিবহনের রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নামের দোকনটি খোলার সময় দোকানে বাটার অয়েল কিনতে যান আলাউদ্দীন হেলা। দোকান খোলার পর দোকানের ভেতর ঢুকে দোকান-কর্মচারীর কাছে এক কৌটা বাটার অয়েল চান তিনি। কর্মচারীরা দোকান খোলার সময় ক্রেতার উপস্থিতি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘দোকান খোলার সময় কোনো মালামাল বিক্রি করা যাবে না, আপনি পরে আসেন।’ রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারীদের এ আচরণে হতবাক হয়ে পুনরায় তাঁদের কাছে বাটার অয়েল চান আলাউদ্দীন হেলা। আবারও বিরক্তি প্রকাশ করে আলাউদ্দীন হেলাকে দোকান থেকে চলে যেতে বলেন কর্মচারীরা। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দোকানের এক কর্মচারী হেলার দিকে তেড়ে এসে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় হেলাও ওই যুবককে দু-একটি চড়-থাপ্পড় মারেন।
এদিকে, রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারীদের দ্বারা চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আলাউদ্দীন হেলাকে লাঞ্ছিত করার খবরটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। এ খবর জানার পর শহরের জ্বিনতলাপাড়ার কয়েক যুবক রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের গিয়ে দোকানের দুই কর্মচারী দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার আনান্দ বিশ্বাসের ছেলে সেতু বিশ্বাস ও বড় মসজিদপাড়ার রিপন আলীর ছেলে লিখনকে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মেরে আহত করেন। খবর পেয়ে দ্রুতই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে সদর থানার পুলিশের একটি দল। এ সময় আহত ওই দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন আরও জানান, পুরো ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পূর্বাশা পরিবহন ও রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক স্বপন মুন্সি ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের নিজস্ব পরিবহনসহ কয়েকটি বাস দিয়ে সড়কে বেরিকেড সৃষ্টি করেন। এ ঘটনায় শহীদ হাসান চত্বর থেকে ফাতেমা প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে যায়। এরপর সদর থানা পুলিশসহ ট্রাফিক পুলিশ দ্রুতই ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়ক থেকে বাসগুলো সরিয়ে যানচলাচল স্বভাবিক করে।
তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি মীমাংসা হলেও গতকাল শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই সাধারণ মানুষের আলোচনা-সমালোচনায় পরিণত হয় আলাউদ্দীন হেলার লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি।
এ বিষয়ে লাঞ্ছিতের শিকার পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আলাউদ্দীন হেলার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কিছু দরকারি জিনিস কিনতে সকালে রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে যান তিনি। এ সময় উপস্থিত কর্মচারীদের কাছে বাটার অয়েল চাইলে তাঁরা দোকান খোলার সময় মালামাল বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। বিষয়টি বুঝতে না পেরে তিনি পুনরায় বাটার অয়েল চাইলে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন ওই কর্মচারীরা। এমনকি দোকান থেকেও বেরিয়ে যেতে বলেন তাঁকে। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিসহ এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষিও মারেন তাঁকে।
পূর্বাশা পরিবহন ও রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক স্বপন মুন্সির সঙ্গে মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও স্থানীয় নেতারা একত্রে বসে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান দৈনিক সময়ের সমীকরণকে জানান, রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে মালামাল কিনতে গিয়ে কর্মচারীদের দ্বারা পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় পর পূর্বাশা পরিবহনসহ কয়েকটি বাস সড়কে বেরিকেড সৃষ্টি করে যানচলাচলে বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। এরপর সদর থানার পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশসহ জেলা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে যানচলাচল স্বভাবিক করে। বিষয়টি নিয়ে মামলা না করার শর্তে উভয়পক্ষই আপস-মীমাংসায় পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গায় আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আলাউদ্দীন হেলা লাঞ্ছিত

আপলোড টাইম : ১০:৪০:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২০

সড়ক অবরোধ করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা; পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, শহরজুড়ে নিন্দার ঝড়
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আলাউদ্দীন হেলাকে লাঞ্ছিত করেছেন পূর্বাশা পরিবহনের প্রতিষ্ঠান রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেটের সামনে রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেনাকাটা করতে গেলে দোকান-কর্মচারীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন তিনি। আলাউদ্দীন হেলাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা জানার পর ওই দোকান-কর্মচারীদের মারধর করেন জ্বিনতলা পাড়ার কয়েক যুবক। এরপর প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে কয়েকটি বাস দিয়ে সড়কে বেরিকেড সৃষ্টি করে পূর্বাশা পরিবহনের মালিকপক্ষ। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর দ্রুতই সড়কে বেরিকেট দেওয়া বাসগুলো সরিয়ে নেয় তারা।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল চুয়াডাঙ্গা পূর্বাশা পরিবহনের রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নামের দোকনটি খোলার সময় দোকানে বাটার অয়েল কিনতে যান আলাউদ্দীন হেলা। দোকান খোলার পর দোকানের ভেতর ঢুকে দোকান-কর্মচারীর কাছে এক কৌটা বাটার অয়েল চান তিনি। কর্মচারীরা দোকান খোলার সময় ক্রেতার উপস্থিতি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘দোকান খোলার সময় কোনো মালামাল বিক্রি করা যাবে না, আপনি পরে আসেন।’ রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারীদের এ আচরণে হতবাক হয়ে পুনরায় তাঁদের কাছে বাটার অয়েল চান আলাউদ্দীন হেলা। আবারও বিরক্তি প্রকাশ করে আলাউদ্দীন হেলাকে দোকান থেকে চলে যেতে বলেন কর্মচারীরা। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দোকানের এক কর্মচারী হেলার দিকে তেড়ে এসে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় হেলাও ওই যুবককে দু-একটি চড়-থাপ্পড় মারেন।
এদিকে, রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারীদের দ্বারা চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আলাউদ্দীন হেলাকে লাঞ্ছিত করার খবরটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। এ খবর জানার পর শহরের জ্বিনতলাপাড়ার কয়েক যুবক রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের গিয়ে দোকানের দুই কর্মচারী দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার আনান্দ বিশ্বাসের ছেলে সেতু বিশ্বাস ও বড় মসজিদপাড়ার রিপন আলীর ছেলে লিখনকে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মেরে আহত করেন। খবর পেয়ে দ্রুতই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে সদর থানার পুলিশের একটি দল। এ সময় আহত ওই দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন আরও জানান, পুরো ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পূর্বাশা পরিবহন ও রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক স্বপন মুন্সি ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের নিজস্ব পরিবহনসহ কয়েকটি বাস দিয়ে সড়কে বেরিকেড সৃষ্টি করেন। এ ঘটনায় শহীদ হাসান চত্বর থেকে ফাতেমা প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে যায়। এরপর সদর থানা পুলিশসহ ট্রাফিক পুলিশ দ্রুতই ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়ক থেকে বাসগুলো সরিয়ে যানচলাচল স্বভাবিক করে।
তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি মীমাংসা হলেও গতকাল শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই সাধারণ মানুষের আলোচনা-সমালোচনায় পরিণত হয় আলাউদ্দীন হেলার লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি।
এ বিষয়ে লাঞ্ছিতের শিকার পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আলাউদ্দীন হেলার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কিছু দরকারি জিনিস কিনতে সকালে রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে যান তিনি। এ সময় উপস্থিত কর্মচারীদের কাছে বাটার অয়েল চাইলে তাঁরা দোকান খোলার সময় মালামাল বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। বিষয়টি বুঝতে না পেরে তিনি পুনরায় বাটার অয়েল চাইলে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন ওই কর্মচারীরা। এমনকি দোকান থেকেও বেরিয়ে যেতে বলেন তাঁকে। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিসহ এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষিও মারেন তাঁকে।
পূর্বাশা পরিবহন ও রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক স্বপন মুন্সির সঙ্গে মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও স্থানীয় নেতারা একত্রে বসে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান দৈনিক সময়ের সমীকরণকে জানান, রতন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে মালামাল কিনতে গিয়ে কর্মচারীদের দ্বারা পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় পর পূর্বাশা পরিবহনসহ কয়েকটি বাস সড়কে বেরিকেড সৃষ্টি করে যানচলাচলে বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। এরপর সদর থানার পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশসহ জেলা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে যানচলাচল স্বভাবিক করে। বিষয়টি নিয়ে মামলা না করার শর্তে উভয়পক্ষই আপস-মীমাংসায় পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।