ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী-ডিঙ্গেদহ-নেহালপুর সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির পর বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিত্তিরদাড়ি ও গড়াইটুপির তিন বাড়িতে লুট : দেশীয় অস্ত্রসহ মনির দর্জি আটক : আতঙ্কিত এলাকাবাসী : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : অপরাধী চক্র ধরতে পুলিশের সাড়াশি অভিযান অব্যাহত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:২০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০১৭
  • / ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। একই রাতে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি শেষে পার্শবর্তী গ্রামগুলোর বাড়ীতে বাড়ীতে ডাকাতদলের সংঘবদ্ধ চক্র নির্বিঘেœ লাখ লাখ টাকার মালামাল লুটের ঘটনায় আতঙ্কিত জনসাধারণ। গত সোমবার রাত ১১টা থেকে রাত প্রায় ২টা আড়াইটা পর্যন্ত একটানা ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ কোন ব্যবস্থায় নিতে পারেনি। তবে, এই ডাকাতির ঘটনায় পরেরদিন গতকাল নামমাত্র একজনকে গ্রেফতার করে। অবশ্য পুলিশ বলছে গ্রেফতারকৃতের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারসহ ডাকাতির মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। সংঘবদ্ধ এই ডাকাতদলকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানা যায়। জানা গেছে, গত সোমবার রাত অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে হিজলগাড়ী টু ডিঙ্গেদহ সড়কের নেহালপুর গ্রাম অভিমুখের সড়কে গাছ ফেলে ট্রাক ডাইভার ও পথচারীদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার পর ডিহি ফার্ম সংলগ্ন দুটি বাড়ী থেকেও নগদ টাকা স্বর্ণ অংলকার লুট করে নিয়েছে অজ্ঞাত ১০/১২ জনের একদল ডাকাত। প্রচন্ড কাল বৈশাখী ঝড় বৃষ্টির মধ্যেই এসময় বাড়ীতে তান্ডব চালায় ডাকাতরা। তবে এসময় স্থানীয়রা ডাকাতদের প্রতিহত করার জন্য ধাওয়া দিলে ডাকাতরা ১টি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এসময় ডাকাতরা লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। অন্যদিকে, একই রাতে সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের গড়াইটুপি পশ্চিমপাড়া মেলার মোড় নামক স্থানের ৩টি বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ওই তিন বাড়ির পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে ডাকাত দল। জানা গেছে, সদর উপজেলার গড়াইটুপি মেলার মোড়ে গত সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ১২/১৪ জনের সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তিনটি বাড়ীতে হানা দিয়ে নগদ টাকা, মোবাইলসেট, রুপার চেন, নুপুরসহ স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে ডাকাতদল গড়াইটুপি গ্রামের মোফাজ্জেল জোয়ার্দ্দারের ছেলে হায়দার আলির বাড়ী থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইলসেট, রুপার চেন, নুপুরসহ ৬ভরি গয়না, সোনার নাকের আখড়া ও একই পাড়ার আলম জোয়ার্দ্দারের ছেলে আহাদ আলির বাড়ী থেকে রুপার নুপুর, চেন ও নগদ কিছু টাকা, বকুলের বাড়ী থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা সোনার চেন, বালা, কানের দুলসহ লুট করে। এসময় ডাকাতদলের সদস্যরা গড়াইটুপির হায়দারের ছেলে রাজিবুল ও পাশের বাড়ীর এক মহিলাকে বেধড়ক মারধরও করে। পরে গ্রামবাসী টের পেয়ে ডাকাতদলকে ধাওয়া করলে ডাকাতদল পালিয়ে যায়।
এই ডাকাতির ঘটনার পর থেকে তিতুদহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিটন গাজী ও এএসআই লিয়াকত আলি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কাদায় ডাকাতদের পায়ের চিহ্ন দেখে দেখে গবরগাড়া গ্রামের ছিকিম ব্যাপারীর ছেলে মনির হোসেন (২২) কে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি শাবল, কাস্তে, হাতুড়ী, বাশের লাটি, ডাকাতির করাকালে ব্যবহৃত পোশাক ও লুট করা ৩ হাজার টাকাসহ ভোররাতে গত সোমবার দিনগত রাত শেষে ভোরের দিকে আটক করে। আটকের পর মনির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির কথা অকপটে স্বীকার করে বলে, ডাকাতির সময় আমি তাদের সাথে ছিলাম, আমাকে গবরগাড়া গ্রামের আলি হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর তার মাঠের পুকুরে পোনা মাছ দেখার কথা বলে নিয়ে যায়। পরে দেখতে পায় যে অনেক মানুষ সেখানে আছে তারপর সে বলে গড়াইটুপি মেলার মাঠ সংলগ্ন বাড়িগুলোতে ডাকাতি করতে হবে, আমি রাজি না হলে আমাকে জবাই করার কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সাথে নিয়ে যায় এবং আমাকে রাস্তায় দাড় করিয়ে তারা ১২/১৪ জন ডাকাতি সংঘটিত করে। এবিষয়ে তিতুদহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিটন গাজী বলেন, মনির ও জাহাঙ্গীরের নাম উল্লেখ করে ২০/২৫জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডাকাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) তরিকুর ইসলাম ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তোজাম্মেল হক। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) তরিকুর ইসলাম স্থানীয়দের গ্রাম পাহারা জোর দার করার জন্য তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি ডাকাতদের ধরতে ও ডাকাতি কৃত মামলা উদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী-ডিঙ্গেদহ-নেহালপুর সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির পর বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিত্তিরদাড়ি ও গড়াইটুপির তিন বাড়িতে লুট : দেশীয় অস্ত্রসহ মনির দর্জি আটক : আতঙ্কিত এলাকাবাসী : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : অপরাধী চক্র ধরতে পুলিশের সাড়াশি অভিযান অব্যাহত

আপলোড টাইম : ০৫:২০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। একই রাতে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি শেষে পার্শবর্তী গ্রামগুলোর বাড়ীতে বাড়ীতে ডাকাতদলের সংঘবদ্ধ চক্র নির্বিঘেœ লাখ লাখ টাকার মালামাল লুটের ঘটনায় আতঙ্কিত জনসাধারণ। গত সোমবার রাত ১১টা থেকে রাত প্রায় ২টা আড়াইটা পর্যন্ত একটানা ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ কোন ব্যবস্থায় নিতে পারেনি। তবে, এই ডাকাতির ঘটনায় পরেরদিন গতকাল নামমাত্র একজনকে গ্রেফতার করে। অবশ্য পুলিশ বলছে গ্রেফতারকৃতের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারসহ ডাকাতির মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। সংঘবদ্ধ এই ডাকাতদলকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানা যায়। জানা গেছে, গত সোমবার রাত অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে হিজলগাড়ী টু ডিঙ্গেদহ সড়কের নেহালপুর গ্রাম অভিমুখের সড়কে গাছ ফেলে ট্রাক ডাইভার ও পথচারীদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার পর ডিহি ফার্ম সংলগ্ন দুটি বাড়ী থেকেও নগদ টাকা স্বর্ণ অংলকার লুট করে নিয়েছে অজ্ঞাত ১০/১২ জনের একদল ডাকাত। প্রচন্ড কাল বৈশাখী ঝড় বৃষ্টির মধ্যেই এসময় বাড়ীতে তান্ডব চালায় ডাকাতরা। তবে এসময় স্থানীয়রা ডাকাতদের প্রতিহত করার জন্য ধাওয়া দিলে ডাকাতরা ১টি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এসময় ডাকাতরা লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। অন্যদিকে, একই রাতে সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়নের গড়াইটুপি পশ্চিমপাড়া মেলার মোড় নামক স্থানের ৩টি বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ওই তিন বাড়ির পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে ডাকাত দল। জানা গেছে, সদর উপজেলার গড়াইটুপি মেলার মোড়ে গত সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ১২/১৪ জনের সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তিনটি বাড়ীতে হানা দিয়ে নগদ টাকা, মোবাইলসেট, রুপার চেন, নুপুরসহ স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে ডাকাতদল গড়াইটুপি গ্রামের মোফাজ্জেল জোয়ার্দ্দারের ছেলে হায়দার আলির বাড়ী থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইলসেট, রুপার চেন, নুপুরসহ ৬ভরি গয়না, সোনার নাকের আখড়া ও একই পাড়ার আলম জোয়ার্দ্দারের ছেলে আহাদ আলির বাড়ী থেকে রুপার নুপুর, চেন ও নগদ কিছু টাকা, বকুলের বাড়ী থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা সোনার চেন, বালা, কানের দুলসহ লুট করে। এসময় ডাকাতদলের সদস্যরা গড়াইটুপির হায়দারের ছেলে রাজিবুল ও পাশের বাড়ীর এক মহিলাকে বেধড়ক মারধরও করে। পরে গ্রামবাসী টের পেয়ে ডাকাতদলকে ধাওয়া করলে ডাকাতদল পালিয়ে যায়।
এই ডাকাতির ঘটনার পর থেকে তিতুদহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিটন গাজী ও এএসআই লিয়াকত আলি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কাদায় ডাকাতদের পায়ের চিহ্ন দেখে দেখে গবরগাড়া গ্রামের ছিকিম ব্যাপারীর ছেলে মনির হোসেন (২২) কে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি শাবল, কাস্তে, হাতুড়ী, বাশের লাটি, ডাকাতির করাকালে ব্যবহৃত পোশাক ও লুট করা ৩ হাজার টাকাসহ ভোররাতে গত সোমবার দিনগত রাত শেষে ভোরের দিকে আটক করে। আটকের পর মনির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির কথা অকপটে স্বীকার করে বলে, ডাকাতির সময় আমি তাদের সাথে ছিলাম, আমাকে গবরগাড়া গ্রামের আলি হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর তার মাঠের পুকুরে পোনা মাছ দেখার কথা বলে নিয়ে যায়। পরে দেখতে পায় যে অনেক মানুষ সেখানে আছে তারপর সে বলে গড়াইটুপি মেলার মাঠ সংলগ্ন বাড়িগুলোতে ডাকাতি করতে হবে, আমি রাজি না হলে আমাকে জবাই করার কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সাথে নিয়ে যায় এবং আমাকে রাস্তায় দাড় করিয়ে তারা ১২/১৪ জন ডাকাতি সংঘটিত করে। এবিষয়ে তিতুদহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিটন গাজী বলেন, মনির ও জাহাঙ্গীরের নাম উল্লেখ করে ২০/২৫জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডাকাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) তরিকুর ইসলাম ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তোজাম্মেল হক। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) তরিকুর ইসলাম স্থানীয়দের গ্রাম পাহারা জোর দার করার জন্য তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি ডাকাতদের ধরতে ও ডাকাতি কৃত মামলা উদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।