ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় সাপ আতঙ্ক!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০১:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০
  • / ৯১৬ বার পড়া হয়েছে

রুদ্র রাসেল:
চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় মানুষ সাপের আতঙ্কে রয়েছে। ঘরের মেঝে, উঠানে, পথে-ঘাটে, গাছের নিচে, সড়কে, আনাচে-কানাচে সাপের দেখা মিলছে। জেলায় চলতি জুলাই মাসের শুরুর পাঁচ দিনেই সাপের কামড়ে দুই শিশু নিহত ও চারজন আহত হয়েছে। এরমধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই উক্ত দুই শিশুর মৃত্যু হয়। আহত চার জনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩ জন ও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে ১ জন।
জুলাই মাসের প্রথম দিনেই সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নবীননগর গ্রামের পূর্বপাড়ার নয়ন আহম্মেদের মেয়ে তানিয়া খাতুন (৮) ও শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের ভাণ্ডারদোয়া গ্রামের আমান হোসেনের ছেলে ওলিয়ার রহমান ওলিসহ (৫) দুই শিশুর।
জুলায়ের শুরুর পাঁচ দিনে সাপের কামড়ে আহত হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নুরনগর গ্রামের আতিয়া রহমানের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৩৫), দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার জিরেট গ্রামের কালামের স্ত্রী জেসমিন বেগম (৩০) ও মদনা গ্রামের দক্ষীনপাড়ার ওমর ফারুকের ছেলে কিতাবুল হোসেন (২০) এবং দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের হঠাৎপাড়ার মৃত আফসদ্দীনের ছেলে শাহিদুল ইসলাম (৬০)।
জানা যায়, গত বুধবার ( জুলাই ১) দুপুর ১২ টার দিকে মায়ের সাথে নিজ বাড়িতে সুয়ে ছিলো তানিয়া খাতুন। এ সময় হঠাৎ করেই একটি সাপ তাকে কামড় দেয়। সাপের কামড়ে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা তানিয়াকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। একই দিনে সন্ধ্যা ৭ টায় বাড়ির পাশে খেলা করার সময় সাপের কামড়ের শিকার হয় শিশু ওলিয়ার রহমান ওলি। পরিবারের সদস্যরা রাত আটটায় তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বাড়ির পিছনে সাংসারিক কাজ করা সময় সাপের কামড়ের শিকার হন তাসলিমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়ে পরদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। শুক্রবার (৩ জুলাই) সন্ধা ৭ টার দিকে নিজ বাড়ির উঠান থেকে সাপের কামড়ে আহত হন জেসমিন বেগম (৩০)। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন সুস্থ্য হয়ে উঠলে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয় তাঁকে।
এদিকে, গত শনিবার (৪ জুলাই) মাঠের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় সাপের কামড়ে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয় কিতাবুল হোসেন। পরিবারের সদস্যরা কিতাবুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখেন। গতকাল সকালে সুস্থ বোধ করলে হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দেয়া হয়। গতকাল রোববার (৫ জুলাই) ভোড়ে নিজ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের কামড়ের শিকার হন শহিদুল ইসলাম। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে গ্রাম্য ওঝার কাছে নেয়। ওঝার ২ ঘন্টা ঝাড়ফুঁকেও কোনো কাজ না হলে তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাঁকে ভর্তি রাখেন। গতকাল সকালেই তাঁর শরীরে ১০ টি অ্যান্টিভেনম স্নেক ইনজেকশন পুম করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শহিদুল ইসলাম হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলো।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, আষাড়-শ্রাবণ মাসে সাপের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এ সময় বাচ্চা সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে আসছে। যে কারণে বর্ষাকালে মানুষ অনেক বেশি সাপের কামড়ে হয়ে আক্রান্ত থাকে। তবে সব সাপ বিষধর নয়। বিষধর সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় রোগীর অবস্থা বুঝে অ্যান্টিভেনম স্নেক ভ্যাকসিন পুশ করতে হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম স্নেক ভ্যাকসিন সরবরাহ রয়েছে। সাপে কামড়ালে রোগীকে ওঝা বা কবিরাজের নিকট না নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। এ সময় তিনি মানুষের বাড়ির আশপাশে কার্বলিক অ্যাসিড, হারপিক, ফিনাইল ছিটিয়ে রাখাসহ রাতে টর্চ-লাইট নিয়ে চলাফেরার পরামর্শও দিয়েছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় সাপ আতঙ্ক!

আপলোড টাইম : ০৯:০১:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০

রুদ্র রাসেল:
চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় মানুষ সাপের আতঙ্কে রয়েছে। ঘরের মেঝে, উঠানে, পথে-ঘাটে, গাছের নিচে, সড়কে, আনাচে-কানাচে সাপের দেখা মিলছে। জেলায় চলতি জুলাই মাসের শুরুর পাঁচ দিনেই সাপের কামড়ে দুই শিশু নিহত ও চারজন আহত হয়েছে। এরমধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই উক্ত দুই শিশুর মৃত্যু হয়। আহত চার জনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩ জন ও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে ১ জন।
জুলাই মাসের প্রথম দিনেই সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নবীননগর গ্রামের পূর্বপাড়ার নয়ন আহম্মেদের মেয়ে তানিয়া খাতুন (৮) ও শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের ভাণ্ডারদোয়া গ্রামের আমান হোসেনের ছেলে ওলিয়ার রহমান ওলিসহ (৫) দুই শিশুর।
জুলায়ের শুরুর পাঁচ দিনে সাপের কামড়ে আহত হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নুরনগর গ্রামের আতিয়া রহমানের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৩৫), দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার জিরেট গ্রামের কালামের স্ত্রী জেসমিন বেগম (৩০) ও মদনা গ্রামের দক্ষীনপাড়ার ওমর ফারুকের ছেলে কিতাবুল হোসেন (২০) এবং দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের হঠাৎপাড়ার মৃত আফসদ্দীনের ছেলে শাহিদুল ইসলাম (৬০)।
জানা যায়, গত বুধবার ( জুলাই ১) দুপুর ১২ টার দিকে মায়ের সাথে নিজ বাড়িতে সুয়ে ছিলো তানিয়া খাতুন। এ সময় হঠাৎ করেই একটি সাপ তাকে কামড় দেয়। সাপের কামড়ে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা তানিয়াকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। একই দিনে সন্ধ্যা ৭ টায় বাড়ির পাশে খেলা করার সময় সাপের কামড়ের শিকার হয় শিশু ওলিয়ার রহমান ওলি। পরিবারের সদস্যরা রাত আটটায় তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বাড়ির পিছনে সাংসারিক কাজ করা সময় সাপের কামড়ের শিকার হন তাসলিমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়ে পরদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। শুক্রবার (৩ জুলাই) সন্ধা ৭ টার দিকে নিজ বাড়ির উঠান থেকে সাপের কামড়ে আহত হন জেসমিন বেগম (৩০)। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন সুস্থ্য হয়ে উঠলে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয় তাঁকে।
এদিকে, গত শনিবার (৪ জুলাই) মাঠের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় সাপের কামড়ে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয় কিতাবুল হোসেন। পরিবারের সদস্যরা কিতাবুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখেন। গতকাল সকালে সুস্থ বোধ করলে হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দেয়া হয়। গতকাল রোববার (৫ জুলাই) ভোড়ে নিজ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের কামড়ের শিকার হন শহিদুল ইসলাম। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে গ্রাম্য ওঝার কাছে নেয়। ওঝার ২ ঘন্টা ঝাড়ফুঁকেও কোনো কাজ না হলে তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাঁকে ভর্তি রাখেন। গতকাল সকালেই তাঁর শরীরে ১০ টি অ্যান্টিভেনম স্নেক ইনজেকশন পুম করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শহিদুল ইসলাম হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলো।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, আষাড়-শ্রাবণ মাসে সাপের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এ সময় বাচ্চা সাপ গর্ত থেকে বেরিয়ে আসছে। যে কারণে বর্ষাকালে মানুষ অনেক বেশি সাপের কামড়ে হয়ে আক্রান্ত থাকে। তবে সব সাপ বিষধর নয়। বিষধর সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় রোগীর অবস্থা বুঝে অ্যান্টিভেনম স্নেক ভ্যাকসিন পুশ করতে হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম স্নেক ভ্যাকসিন সরবরাহ রয়েছে। সাপে কামড়ালে রোগীকে ওঝা বা কবিরাজের নিকট না নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। এ সময় তিনি মানুষের বাড়ির আশপাশে কার্বলিক অ্যাসিড, হারপিক, ফিনাইল ছিটিয়ে রাখাসহ রাতে টর্চ-লাইট নিয়ে চলাফেরার পরামর্শও দিয়েছেন।