ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার পৃথকস্থানে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে তিনজন অসুস্থ : হাসপাতালে ভর্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় পৃথকস্থানে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তিনজন অসুস্থ হয়েছেন। গতকাল সোমবার তাঁদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া তিনজন হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলার খুদিয়াখালি গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে এনামুল হক (৩৫), একই উপজেলার আলিহাট নগর গ্রামের মাঝের পাড়ার মৃত ইয়াকুবের ছেলে আফাজ উদ্দীন (৫০) ও একই এলাকার ফাকের আলীর ছেলে আব্দুল মাজিদ (৬০)।
জানা যায়, আলমডাঙ্গা থেকে পূর্বাশা পরিবহনযোগে ঢাকা নারায়নগঞ্জ যাওয়ার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে সর্বস্ব খুইয়েছেন এনামুল হক। গত রোববার চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বাসের মধ্যে অচেতন অবস্থায় দেখে বাসের কন্ট্রাক্টর পূর্বাশা পরিবহনের অন্য একটি বাসে তাঁকে আলমডাঙ্গায় ফেরত পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা গতকাল রাত আটটার দিকে এনামুল হককে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এনামুলের পারিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকা নারায়নগঞ্জে আকিজ কোম্পানিতে পণ্য পরিবহনের গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত আছেন এনামুল হক। কয়েকদিন পূর্বে ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। গত রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন এনামুল। আলমডাঙ্গা থেকে পূর্বাশা পরিবহনযোগে কর্মক্ষেত্রে ফিরছিলেন তিনি। পথের মধ্যে বাসের ভেতরেই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ের তিনি। পরে বাসের কন্ট্রাক্টর এনামুলকে অচেতন অবস্থায় পেয়ে অন্য পূর্বাশা পরিবহনের অন্য একটি বাসযোগে তাঁকে আলমডাঙ্গা ফেরত পাঠিয়ে দেয়। খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যার দিকে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক এনামুলকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
এদিকে, গতকাল দামুড়হুদার ডুগডুগি পশুহাটে গরু কিনতে যেয়ে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে গরু কেনার ৭০ হাজার টাকা খুইয়েছেন আফাজ উদ্দীন ও আব্দুল মাজিদ। বাসের মধ্যে তাঁদের দুজনকে অচেতন অবস্থায় দেখে বাসের কন্ট্রাক্টর তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে খবর দিয়ে পথের মধ্যে নামিয়ে দেয়। গতকাল সোমবার বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া আব্দুল মজিদের স্ত্রী বলেন, ‘দুপুরে গরু কেনার জন্য আব্দুল হাই তাঁর চাচা আফাজউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে ডুগডুগি হাটের উদ্দেশ্যে দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন। আব্দুল মজিদ গরু কেনার জন্য বাড়ি থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে যান। এদিকে, বিকেলে মোবাইলে মাধ্যমে জানতে পারি দুজনেই বাসের মধ্যে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েছে। দুজনকেই বাস থেকে দর্শনায় নামিয়ে দিয়েছে। পরে আমরা তাঁদেরকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে এসে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। মোবাইল ছাড়া তাঁদের নিকট কোনো টাকা পয়সা ছিল না। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সব নিয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, প্রায়ই সদর হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অসুস্থ দু-একজন ভর্তি হয়। আজ (গতকাল) এক দিনে তিনজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ধরনের ঘটনায় দেখা যায় অজ্ঞান পার্টি বা প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীদেরকে ওষুধ মেশানো খাদ্র্যদ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে। তারপর তাঁদের নিকটে থাকা সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। গণপরিবহনে যাত্রীদের অজ্ঞান করতে একটি বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে দুষ্কৃতকারীরা। যাকে ট্রাঙ্কুলাইজার বা চেতনানাশক বলা হয়। এই ওষুধ দ্রুত কাজ করে। এতে গভীর ঘুম হয়, আর পরিমাণে কম লাগে। এর বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার আগের বা পরের ঘটনা মানুষ মনে করতে পারে না। তবে যাদের কিডনি বা যকৃতের সমস্যা আছে, তাদের ওপর এই ওষুধ মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ধারণা করা হচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা এই তিনজনকেও খাবারে সঙ্গে মিশিয়ে ট্রাঙ্কুলাইজার জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে। জরুরি বিভাগ থেকে তিনজনের পাকস্তলী ওয়াশ করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁদের হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, পৃথক স্থানে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তিনজন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমরা তিনজনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তবে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া তিনজনই অচেতন অবস্থায় সদর হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গার পৃথকস্থানে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে তিনজন অসুস্থ : হাসপাতালে ভর্তি

আপলোড টাইম : ০৯:৩৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় পৃথকস্থানে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তিনজন অসুস্থ হয়েছেন। গতকাল সোমবার তাঁদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া তিনজন হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলার খুদিয়াখালি গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে এনামুল হক (৩৫), একই উপজেলার আলিহাট নগর গ্রামের মাঝের পাড়ার মৃত ইয়াকুবের ছেলে আফাজ উদ্দীন (৫০) ও একই এলাকার ফাকের আলীর ছেলে আব্দুল মাজিদ (৬০)।
জানা যায়, আলমডাঙ্গা থেকে পূর্বাশা পরিবহনযোগে ঢাকা নারায়নগঞ্জ যাওয়ার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে সর্বস্ব খুইয়েছেন এনামুল হক। গত রোববার চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বাসের মধ্যে অচেতন অবস্থায় দেখে বাসের কন্ট্রাক্টর পূর্বাশা পরিবহনের অন্য একটি বাসে তাঁকে আলমডাঙ্গায় ফেরত পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা গতকাল রাত আটটার দিকে এনামুল হককে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এনামুলের পারিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকা নারায়নগঞ্জে আকিজ কোম্পানিতে পণ্য পরিবহনের গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত আছেন এনামুল হক। কয়েকদিন পূর্বে ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। গত রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন এনামুল। আলমডাঙ্গা থেকে পূর্বাশা পরিবহনযোগে কর্মক্ষেত্রে ফিরছিলেন তিনি। পথের মধ্যে বাসের ভেতরেই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ের তিনি। পরে বাসের কন্ট্রাক্টর এনামুলকে অচেতন অবস্থায় পেয়ে অন্য পূর্বাশা পরিবহনের অন্য একটি বাসযোগে তাঁকে আলমডাঙ্গা ফেরত পাঠিয়ে দেয়। খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যার দিকে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক এনামুলকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
এদিকে, গতকাল দামুড়হুদার ডুগডুগি পশুহাটে গরু কিনতে যেয়ে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে গরু কেনার ৭০ হাজার টাকা খুইয়েছেন আফাজ উদ্দীন ও আব্দুল মাজিদ। বাসের মধ্যে তাঁদের দুজনকে অচেতন অবস্থায় দেখে বাসের কন্ট্রাক্টর তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে খবর দিয়ে পথের মধ্যে নামিয়ে দেয়। গতকাল সোমবার বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া আব্দুল মজিদের স্ত্রী বলেন, ‘দুপুরে গরু কেনার জন্য আব্দুল হাই তাঁর চাচা আফাজউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে ডুগডুগি হাটের উদ্দেশ্যে দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন। আব্দুল মজিদ গরু কেনার জন্য বাড়ি থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে যান। এদিকে, বিকেলে মোবাইলে মাধ্যমে জানতে পারি দুজনেই বাসের মধ্যে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েছে। দুজনকেই বাস থেকে দর্শনায় নামিয়ে দিয়েছে। পরে আমরা তাঁদেরকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে এসে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। মোবাইল ছাড়া তাঁদের নিকট কোনো টাকা পয়সা ছিল না। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সব নিয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, প্রায়ই সদর হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অসুস্থ দু-একজন ভর্তি হয়। আজ (গতকাল) এক দিনে তিনজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ধরনের ঘটনায় দেখা যায় অজ্ঞান পার্টি বা প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীদেরকে ওষুধ মেশানো খাদ্র্যদ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে। তারপর তাঁদের নিকটে থাকা সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। গণপরিবহনে যাত্রীদের অজ্ঞান করতে একটি বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে দুষ্কৃতকারীরা। যাকে ট্রাঙ্কুলাইজার বা চেতনানাশক বলা হয়। এই ওষুধ দ্রুত কাজ করে। এতে গভীর ঘুম হয়, আর পরিমাণে কম লাগে। এর বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার আগের বা পরের ঘটনা মানুষ মনে করতে পারে না। তবে যাদের কিডনি বা যকৃতের সমস্যা আছে, তাদের ওপর এই ওষুধ মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ধারণা করা হচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা এই তিনজনকেও খাবারে সঙ্গে মিশিয়ে ট্রাঙ্কুলাইজার জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে। জরুরি বিভাগ থেকে তিনজনের পাকস্তলী ওয়াশ করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁদের হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, পৃথক স্থানে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তিনজন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমরা তিনজনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তবে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া তিনজনই অচেতন অবস্থায় সদর হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল।