ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড়ে বোরকা পড়ে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে বিপত্তি : নারী অপহরক সন্দেহে আজমুল ও সাগরকে স্থানীয়দের গণপিটুনি জনরোষের মুখে দু’জনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ইন্সপেক্টর আমির আব্বাস ও এসআই খালিদ আহত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৫৩:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০১৭
  • / ৩৮৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বোরকা পড়ে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সিনেমাহলপাড়ার যুবক আজমুল ও তার সহযোগী  বেলগাছী তেঁতুলতলাপাড়ার যুবক সাগর। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে প্রেমিকার সাথে দেখা করার জন্য সাগরকে নিয়ে দৌলতদিয়াড়ে যান প্রেমিক আজমুল। টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গিয়ে আজমুল বোরকা পরা অবস্থায় হাটাহাটি করলেও বোঝা যায় সে পুরুষ। এসময় বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে যাবে বলে ফিরে যেতে চায় তার সহযোগী সাগর। পরে ইজিবাইক নিয়ে ফেরার সময় মোটরসাইকেলযোগে এসে তাদের থামিয়ে পরিচয় জানতে চায় এক ব্যাক্তি। এসময় বেরিয়ে আসে প্রকৃত রহস্য। স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে তাদের গণপিটুনি দেয়া শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে গেলে পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আজমুল ও সাগরকে আটক করে পুলিশ।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিনেমাহলপাড়ার মৃত আবু তাহেরের ছেলে একেএম আজমল উল্লাহ ওরফে আজমুলের (২৫) সাথে দীর্ঘ আড়াইবছরের প্রেমজ সম্পর্ক রয়েছে শহরতলীর দৌলতদিয়াড়ের ফারুক ড্রাইভারের মেয়ে রজনীর। মাসখানেক আগে রজনীকে জোরপূর্বক দৌলতদিয়াড়ের মামুন নামের এক যুবকের সাথে বিয়ে দেয় তার পরিবার। বিয়ের পর রজনী ও আজমুল বাড়ি থেকে পালিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। তবে পরেরদিনই বাড়ি ফিরে আসে তারা। এদিকে, পালানোর ঘটনার পর থেকেই রজনীকে কড়া নজরদারিতে রাখে তার পরিবারের লোকজন।
গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে বেলগাছি তেঁতুলতলাপাড়ার কামরুজ্জামান পান্নুর ছেলে স’মিলের ফার্নিচার মিস্ত্রী সাগরকে (২১) নিয়ে দৌলতদিয়াড়ে যায় আজমুল। রজনীকে মোবাইলফোন দেয়ার জন্য আজমুল বোরকা পড়ে এবং সাগর শার্ট-প্যান্ট পড়ে সেখানে যায়। টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গিয়ে আজমুল বোরকা পড়ে হাটাহাটি করলে স্থানীয় কয়েকজনের সন্দেহ হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে চায় সাগর। এসময় সাগরের সাথে আজমুলও সেখান থেকে বাড়ি ফেরার জন্য ইজিবাইকে ওঠে। এসময় হঠাৎ মোটরসাইকেলযোগে এক ব্যাক্তি এসে তাদের পরিচয় জানতে চায়। এছাড়া, ইজিবাইকে ওঠার সময় আজমুলের বোরকা উপরে উঠে যাওয়ায় পরনের জিন্সের প্যান্ট দেখে ফেলে স্থানীয় কয়েকজন। স্থানীয়দের ভিড় বাড়তে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজের প্রকৃত পরিচয় দিয়ে দেয় আজমুল। এসময় আজমুল ও তার সহযোগী সাগরকে নারী অপহরণকারী সন্দেহে গণপিটুনি দেয় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা।
খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে। আজমুল ও সাগরকে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আমির আব্বাস, এসআই ইবনে খালিদ স্ট্যালিন আহত হন। এছাড়া, সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জসিম উদ্দিনসহ কয়েজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকও আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আজমুল ও সাগরকে উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। গণপিটুনিতে আহত হওয়ায় তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় সোপর্দ করা হয়।
এদিকে, গতরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন বলেন, প্রেমজ সম্পর্কের কারণে আজমুল একটা বোরকা পড়ে সাগরকে সাথে নিয়ে দৌলতদিয়াড়ের ওই এলাকাতে যায়। এ সময় তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় স্থানীয় জনতা তাদের ধরে গণপিটুনি দেয়। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড়ে বোরকা পড়ে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে বিপত্তি : নারী অপহরক সন্দেহে আজমুল ও সাগরকে স্থানীয়দের গণপিটুনি জনরোষের মুখে দু’জনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ইন্সপেক্টর আমির আব্বাস ও এসআই খালিদ আহত

আপলোড টাইম : ০৫:৫৩:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: বোরকা পড়ে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সিনেমাহলপাড়ার যুবক আজমুল ও তার সহযোগী  বেলগাছী তেঁতুলতলাপাড়ার যুবক সাগর। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে প্রেমিকার সাথে দেখা করার জন্য সাগরকে নিয়ে দৌলতদিয়াড়ে যান প্রেমিক আজমুল। টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গিয়ে আজমুল বোরকা পরা অবস্থায় হাটাহাটি করলেও বোঝা যায় সে পুরুষ। এসময় বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে যাবে বলে ফিরে যেতে চায় তার সহযোগী সাগর। পরে ইজিবাইক নিয়ে ফেরার সময় মোটরসাইকেলযোগে এসে তাদের থামিয়ে পরিচয় জানতে চায় এক ব্যাক্তি। এসময় বেরিয়ে আসে প্রকৃত রহস্য। স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে তাদের গণপিটুনি দেয়া শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে গেলে পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আজমুল ও সাগরকে আটক করে পুলিশ।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিনেমাহলপাড়ার মৃত আবু তাহেরের ছেলে একেএম আজমল উল্লাহ ওরফে আজমুলের (২৫) সাথে দীর্ঘ আড়াইবছরের প্রেমজ সম্পর্ক রয়েছে শহরতলীর দৌলতদিয়াড়ের ফারুক ড্রাইভারের মেয়ে রজনীর। মাসখানেক আগে রজনীকে জোরপূর্বক দৌলতদিয়াড়ের মামুন নামের এক যুবকের সাথে বিয়ে দেয় তার পরিবার। বিয়ের পর রজনী ও আজমুল বাড়ি থেকে পালিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। তবে পরেরদিনই বাড়ি ফিরে আসে তারা। এদিকে, পালানোর ঘটনার পর থেকেই রজনীকে কড়া নজরদারিতে রাখে তার পরিবারের লোকজন।
গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে বেলগাছি তেঁতুলতলাপাড়ার কামরুজ্জামান পান্নুর ছেলে স’মিলের ফার্নিচার মিস্ত্রী সাগরকে (২১) নিয়ে দৌলতদিয়াড়ে যায় আজমুল। রজনীকে মোবাইলফোন দেয়ার জন্য আজমুল বোরকা পড়ে এবং সাগর শার্ট-প্যান্ট পড়ে সেখানে যায়। টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গিয়ে আজমুল বোরকা পড়ে হাটাহাটি করলে স্থানীয় কয়েকজনের সন্দেহ হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে চায় সাগর। এসময় সাগরের সাথে আজমুলও সেখান থেকে বাড়ি ফেরার জন্য ইজিবাইকে ওঠে। এসময় হঠাৎ মোটরসাইকেলযোগে এক ব্যাক্তি এসে তাদের পরিচয় জানতে চায়। এছাড়া, ইজিবাইকে ওঠার সময় আজমুলের বোরকা উপরে উঠে যাওয়ায় পরনের জিন্সের প্যান্ট দেখে ফেলে স্থানীয় কয়েকজন। স্থানীয়দের ভিড় বাড়তে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজের প্রকৃত পরিচয় দিয়ে দেয় আজমুল। এসময় আজমুল ও তার সহযোগী সাগরকে নারী অপহরণকারী সন্দেহে গণপিটুনি দেয় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা।
খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে। আজমুল ও সাগরকে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আমির আব্বাস, এসআই ইবনে খালিদ স্ট্যালিন আহত হন। এছাড়া, সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জসিম উদ্দিনসহ কয়েজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকও আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আজমুল ও সাগরকে উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। গণপিটুনিতে আহত হওয়ায় তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় সোপর্দ করা হয়।
এদিকে, গতরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন বলেন, প্রেমজ সম্পর্কের কারণে আজমুল একটা বোরকা পড়ে সাগরকে সাথে নিয়ে দৌলতদিয়াড়ের ওই এলাকাতে যায়। এ সময় তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় স্থানীয় জনতা তাদের ধরে গণপিটুনি দেয়। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।