ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চার কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ, ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের নিম্নমানের চাল বিতরণের ঘটনায় তদন্ত সম্পন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের ভিজিএফের চাল বিতরণে চার কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জানা ড়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ১৮ জুলাই ভিজিএফ কার্ডধারী ৬ শ জনকে খাওয়ার অযোগ্য দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা চাল দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান ১০ হাজার ৫৬০ কেজি নিম্নমানের চাল জব্দ করেন। এ ঘটনায় ২৬ জুলাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। এ কমিটি তদন্ত শেষে ভিজিএফের নিম্নমানের চাল বিতরণে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম, সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) মো. আবু বকর ছিদ্দিক, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ ও সদর উপজেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের কাছে।
জানা গেছে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আবু তারেক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা (ডিটিও) সুফি মো. রফিকুজ্জামান, জেলা বাজার তদারকি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম এ তদন্ত কমিটিতে ছিলেন। তদন্ত চলাকালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধেও ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। এতে ব্রিবত হন কমিটির সদস্যরা। পরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলামকে বাদ দিয়েই তদন্ত কমিটি বাকি তদন্ত করে। অভিযোগ গভীর হওয়ায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলামেরও বক্তব্য নেয় তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটি আরও ১৩ জনের বক্তব্য নেয়। তাঁরা হলেন- জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. খায়রুল আনাম, পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএন এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মো. হাসানুর ইসলাম, বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার, প্যানেল চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, সচিব মো. ফয়জুর রহমান, গ্রাম পুলিশ আবদুল আলী, ভিজিএফ কার্ডধারী মো. মহাসীন, মো. নাসির উদ্দিন ও মো. আবদুল খালেক এবং সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ওসি-এলএসডি মো. আবু বকর ছিদ্দিক, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ ও সদর উপজেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান।
জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়েছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, দুজন ওসি-এলএসডি ও কারিগরি পরিদর্শক নিম্নমানের চালের বিষয়টি সংগ্রহ থেকে বিতরণ পর্যন্ত জানতেন। বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ কর্মসূচিতে বিতরণকৃত চাল জীবননগর খাদ্যগুদাম থেকে পাঠানো। জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ অসৎ উদ্দেশ্যে যোগসাজশ করে স্থানীয় সাথী রাইস মিল, দেশবাংলা ও এঅ্যান্ডজেএম অটোরাইস মিল থেকে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করেন।
তদন্ত কমিটি মতামত দিয়েছে, ওই চাল নিম্নমানের। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জীবননগর ওসি-এলএসডি, সদর ওসি-এলএসডি ও কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সবাই চাল নিম্নমানের জানা সত্ত্বেও জীবননগর ও সদর খাদ্যগুদামে গুদামজাত এবং বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ কর্মসূচিতে চালগুলো সরবরাহ করেছেন। এটা স্পষ্ট যে জীবননগর ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ অসৎ উদ্দেশ্যে যোগসাজশে এই নিম্নমানের চাল গুদামে গ্রহণ করেন, যা পরবর্তীকালে বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে বিতরণ করা হয়। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার তদন্তের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেছে। তাঁরা সবাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চার কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ, ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন

আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের নিম্নমানের চাল বিতরণের ঘটনায় তদন্ত সম্পন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় নিম্নমানের ভিজিএফের চাল বিতরণে চার কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জানা ড়েছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ১৮ জুলাই ভিজিএফ কার্ডধারী ৬ শ জনকে খাওয়ার অযোগ্য দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা চাল দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান ১০ হাজার ৫৬০ কেজি নিম্নমানের চাল জব্দ করেন। এ ঘটনায় ২৬ জুলাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। এ কমিটি তদন্ত শেষে ভিজিএফের নিম্নমানের চাল বিতরণে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম, সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) মো. আবু বকর ছিদ্দিক, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ ও সদর উপজেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের কাছে।
জানা গেছে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আবু তারেক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা (ডিটিও) সুফি মো. রফিকুজ্জামান, জেলা বাজার তদারকি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম এ তদন্ত কমিটিতে ছিলেন। তদন্ত চলাকালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধেও ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। এতে ব্রিবত হন কমিটির সদস্যরা। পরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলামকে বাদ দিয়েই তদন্ত কমিটি বাকি তদন্ত করে। অভিযোগ গভীর হওয়ায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলামেরও বক্তব্য নেয় তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটি আরও ১৩ জনের বক্তব্য নেয়। তাঁরা হলেন- জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. খায়রুল আনাম, পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএন এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মো. হাসানুর ইসলাম, বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার, প্যানেল চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, সচিব মো. ফয়জুর রহমান, গ্রাম পুলিশ আবদুল আলী, ভিজিএফ কার্ডধারী মো. মহাসীন, মো. নাসির উদ্দিন ও মো. আবদুল খালেক এবং সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ওসি-এলএসডি মো. আবু বকর ছিদ্দিক, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ ও সদর উপজেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান।
জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়েছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, দুজন ওসি-এলএসডি ও কারিগরি পরিদর্শক নিম্নমানের চালের বিষয়টি সংগ্রহ থেকে বিতরণ পর্যন্ত জানতেন। বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ কর্মসূচিতে বিতরণকৃত চাল জীবননগর খাদ্যগুদাম থেকে পাঠানো। জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ অসৎ উদ্দেশ্যে যোগসাজশ করে স্থানীয় সাথী রাইস মিল, দেশবাংলা ও এঅ্যান্ডজেএম অটোরাইস মিল থেকে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করেন।
তদন্ত কমিটি মতামত দিয়েছে, ওই চাল নিম্নমানের। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জীবননগর ওসি-এলএসডি, সদর ওসি-এলএসডি ও কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সবাই চাল নিম্নমানের জানা সত্ত্বেও জীবননগর ও সদর খাদ্যগুদামে গুদামজাত এবং বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ কর্মসূচিতে চালগুলো সরবরাহ করেছেন। এটা স্পষ্ট যে জীবননগর ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ অসৎ উদ্দেশ্যে যোগসাজশে এই নিম্নমানের চাল গুদামে গ্রহণ করেন, যা পরবর্তীকালে বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে বিতরণ করা হয়। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার তদন্তের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেছে। তাঁরা সবাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।