ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চারপাশ ভর্তি রিজিক বাড়ানোর আমল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
  • / ৪৮ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন:
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আর তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার জন্য আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন গাছ, পাখি, পাহাড়, নদী, সাগর, মহাসাগর। সূর্য পৃথিবীকে আলো দেয়, চাঁদ রাতকে মহিমান্বিত করে, সমুদ্রের উত্তাল স্রোত খেলা করে, নদী বয়ে চলে, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য ও চমক, মানুষের সুখশান্তির জন্যই। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যই। কিন্তু মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ, তারা পালনকর্তার শুকরিয়া আদায় করে না। মানুষ আজ ভুলেই গেছে যে তার পালনকর্তা সবই দেখেন। দয়াময় মাবুদকে ভুলে যাওয়া মানুষটিও যেন সুখে থাকে এপার এবং ওপারের জীবনে তা-ই তাঁর ইচ্ছা। তাঁর দেওয়া রিজিক দিয়ে চলা বান্দাদের কাছে যেন তাকে হাত পাততে না হয়, কাজের মাধ্যমেই যেন বাড়িয়ে নিতে পারে তার রিজিক সে পথ বাতলে দিয়েছেন তিনি। পাঠক আসুন কোরআন-হাদিসের আয়নায় দেখে নিই কোন কোন আমল করলে রিজিক বেড়ে যায়। অভাব-অনটনে আল্লাহকে ডাকা: কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট। অভাব হলেই যে স্বভাব নষ্ট করতে হবে তা ইসলাম আমাদের শেখায়নি বরং রিজিক বাড়াতে চাইলে সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহকে মনে রাখতে হবে। আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ সুরা মুমিন, আয়াত ৬০। আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা : বিপদে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে যেমন আল্লাহ বলছেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ সুরা তালাক, আয়াত ২-৩। আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয়: আল্লাহর রাস্তায় সঠিক নিয়মে ব্যয় করলে তা কখনো বৃথা যায় না। বরং আল্লাহ বহুগুণ বৃদ্ধি করে বান্দাকে ফেরত দেন। আল্লাহর পথে ব্যয় করলে রিজিক বাড়বে মর্মে আল্লাহ বলেন, ‘…নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ সুরা সাবা, আয়াত ৩৯। আল্লাহর জন্য হিজরত করা: কোনো বান্দা আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করলে আল্লাহ তার রিজিক বাড়িয়ে দেন যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে জমিনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উদ্দেশে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয়, তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর ওপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা নিসা, আয়াত ১০০। স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ বুখারি, মুসলিম। পরিবারের দুর্বলদের প্রতি সদয় হওয়া: পরিবারের দুর্বলদের প্রতি অবিচার না করা। কারণ মোসআব বিন সাদ (রা.) যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধহয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের কারণে অন্যের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। এমন প্রেক্ষাপটে মহানবী (সা.) তাকে বলেন, তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়। বুখারি। বেশি বেশি তওবা করা: নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইসতিগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ মুস্তাদরাকে হাকেম। ইবাদতে প্রাণবন্ত হওয়া: আল্লাহর ইবাদতের জন্য আমাদের অন্তরকে খালি করতে হবে রিজিক বৃদ্ধি করতে চাইলে কারণ রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আদমসন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না। তিরমিজি। বিয়ে: বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহে রিজিক বৃদ্ধি পায়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ সুরা নুর, আয়াত ৩২। দুর্দিনে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়া: ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, এরপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরীকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনতিবিলম্বে আল্লাহ তাকে রিজিক দেবেন। তিরমিজি, মুসনাদ আহমদ। এ ছাড়া বারবার হজ ও ওমরাহ পালন এবং ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হওয়ার মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রিজিকের পুরস্কার সবাইকে গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চারপাশ ভর্তি রিজিক বাড়ানোর আমল

আপলোড টাইম : ১০:৪৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

ধর্ম প্রতিবেদন:
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আর তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার জন্য আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন গাছ, পাখি, পাহাড়, নদী, সাগর, মহাসাগর। সূর্য পৃথিবীকে আলো দেয়, চাঁদ রাতকে মহিমান্বিত করে, সমুদ্রের উত্তাল স্রোত খেলা করে, নদী বয়ে চলে, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য ও চমক, মানুষের সুখশান্তির জন্যই। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যই। কিন্তু মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ, তারা পালনকর্তার শুকরিয়া আদায় করে না। মানুষ আজ ভুলেই গেছে যে তার পালনকর্তা সবই দেখেন। দয়াময় মাবুদকে ভুলে যাওয়া মানুষটিও যেন সুখে থাকে এপার এবং ওপারের জীবনে তা-ই তাঁর ইচ্ছা। তাঁর দেওয়া রিজিক দিয়ে চলা বান্দাদের কাছে যেন তাকে হাত পাততে না হয়, কাজের মাধ্যমেই যেন বাড়িয়ে নিতে পারে তার রিজিক সে পথ বাতলে দিয়েছেন তিনি। পাঠক আসুন কোরআন-হাদিসের আয়নায় দেখে নিই কোন কোন আমল করলে রিজিক বেড়ে যায়। অভাব-অনটনে আল্লাহকে ডাকা: কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট। অভাব হলেই যে স্বভাব নষ্ট করতে হবে তা ইসলাম আমাদের শেখায়নি বরং রিজিক বাড়াতে চাইলে সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহকে মনে রাখতে হবে। আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ সুরা মুমিন, আয়াত ৬০। আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা : বিপদে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে যেমন আল্লাহ বলছেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ সুরা তালাক, আয়াত ২-৩। আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয়: আল্লাহর রাস্তায় সঠিক নিয়মে ব্যয় করলে তা কখনো বৃথা যায় না। বরং আল্লাহ বহুগুণ বৃদ্ধি করে বান্দাকে ফেরত দেন। আল্লাহর পথে ব্যয় করলে রিজিক বাড়বে মর্মে আল্লাহ বলেন, ‘…নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ সুরা সাবা, আয়াত ৩৯। আল্লাহর জন্য হিজরত করা: কোনো বান্দা আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করলে আল্লাহ তার রিজিক বাড়িয়ে দেন যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে জমিনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উদ্দেশে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয়, তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর ওপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা নিসা, আয়াত ১০০। স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ বুখারি, মুসলিম। পরিবারের দুর্বলদের প্রতি সদয় হওয়া: পরিবারের দুর্বলদের প্রতি অবিচার না করা। কারণ মোসআব বিন সাদ (রা.) যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধহয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের কারণে অন্যের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। এমন প্রেক্ষাপটে মহানবী (সা.) তাকে বলেন, তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়। বুখারি। বেশি বেশি তওবা করা: নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইসতিগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ মুস্তাদরাকে হাকেম। ইবাদতে প্রাণবন্ত হওয়া: আল্লাহর ইবাদতের জন্য আমাদের অন্তরকে খালি করতে হবে রিজিক বৃদ্ধি করতে চাইলে কারণ রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আদমসন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না। তিরমিজি। বিয়ে: বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহে রিজিক বৃদ্ধি পায়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ সুরা নুর, আয়াত ৩২। দুর্দিনে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়া: ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, এরপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরীকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনতিবিলম্বে আল্লাহ তাকে রিজিক দেবেন। তিরমিজি, মুসনাদ আহমদ। এ ছাড়া বারবার হজ ও ওমরাহ পালন এবং ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হওয়ার মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রিজিকের পুরস্কার সবাইকে গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন।