ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চরম ঝুঁকি নিয়েই নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৯:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১
  • / ৫৫ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ঈদের ছুটির পরদিন থেকে আবারো কঠোর লকডাউনের ঘোষণা রয়েছে। ছুটিতে বাড়ি গিয়ে মানুষ কিভাবে আবার শহরে ফিরবে এর কোনোই নিশ্চয়তা নেই। রয়েছে করোনা সংক্রমণের চরম ঝুঁকি। এ অবস্থায়ও তিল ধারণের ঠাঁই নেই বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল, কমলপুর রেলস্টেশনে। দিশেহারা হয়ে মানুষ ছুটছে গ্রামে। যারা বাস-ট্রেন আর লঞ্চের টিকিট পাচ্ছেন না, তারা বিকল্পভাবে ঘরে ফিরছেন। কখনো হেঁটে, কখনো রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা বা অন্য কোনো বাহনে চড়ে ছুটছেন গ্রামের উদ্দেশে। অনেকেই বলেছেন, তারা স্বজনদের সাথে ঈদটা কাটাতে বাড়ি যাচ্ছেন। ঝুঁকি হলেও যেতে হবে। তাদের বাবা-মা, ভাইবোন, স্ত্রী-সন্তান গ্রামে থাকেন। আগামীকাল ঈদুল আজহা। সরকারিভাবে আজ থেকে অফিস-আদালত বন্ধ। বন্ধ গার্মেন্ট কারখানাও। যে কারণে শেষ মুহূর্তে শহর ছাড়ছে মানুষ। ঘরমুখো মানুষের চাপে গতকাল সোমবার ঈদের এক দিন আগে ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে প্রচণ্ড যানজট দেখা গেছে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার মুখগুলোতে প্রচণ্ড যানজট।
রাজধানীর বনানী হয়ে বিমানবন্দর এলাকা দিয়ে যেসব গাড়ি টঙ্গী ও গাজীপুরে প্রবেশ করছে সেসব গাড়ির যাত্রীদের পোহাতে হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এই সড়কে সকাল ৮টা থেকেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় গাড়িতে বসে কাটাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এ যানজট দেখা দিয়েছে। বিমানবন্দরের এ যানজটের প্রভাব পড়ে কুড়িল-বিশ্ব রোড ও প্রগতি সরণির রাস্তায়ও। সকাল থেকে প্রগতি সরণি এলাকায় হালকা যানজট সৃষ্টি হয়; যা বেলা বাড়ার সাথে সাথে তীব্র যানজটে রূপ নেয়। যানজট দেখা গেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ ও পোস্তগোলা এলাকায়ও। এসব রাস্তায় ভোর থেকেই তীব্র যানজট লক্ষ করা গেছে; যা দিনভরই ছিল। গাবতলী টার্মিনালে যেতেও মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। শ্যামলী থেকে ছিল তীব্র জট। আর গরুর হাটের কারণে গাবতলী টার্মিনাল থেকে বের হতেই যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ দিকে লকডাউনের কারণে আগের মতো অগ্রিম টিকিট দেয়া না হলেও টিকিট পেতে মানুষের ভোগান্তি রয়েছে চরমে। গাড়িগুলোতে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্দেশনা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানা হলেও মানা হচ্ছে না ভাড়ার বিষয়ের নির্দেশনা। শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির অনুমতি থাকলেও বাসগুলোতে দ্বিগুণ, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সায়েদাবাদ থেকে ঝালকাঠির রাজাপুরের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে সাড়ে চার শ’ টাকা। লকডাউনের কারণে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা ও শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া আদায়ের কথা থাকলেও এখন যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১১ শ’ টাকা। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এই ভাড়া সাড়ে ছয় শ’ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। গুলিস্তান থেকে মাওয়ার স্বাভাবিক ভাড়া ৭০ টাকা। বিধিনিষেধের কারণে সেই ভাড়া জনপ্রতি ৬০ ভাগ বৃদ্ধির কথা। কিন্তু ভাড়া আদায় করা হচ্ছে জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একাধিক যাত্রী বলেছেন, তারা ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি যাচ্ছেন। ছুটি শেষ হতেই ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরু। সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনেও এই ঘরে ফেরা মানুষগুলো আর স্বাভাবিকভাবে ঢাকায় ফিরতে পারবেন না। আবু বকর নামের এক যাত্রী গতকাল সায়েদাবাদ এলাকায় জানান, ঈদের রাতেই হয়তো বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে হবে। যেভাবেই হোক ঢাকায় আসতে হবে। জামিল নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ২২ জুলাইয়ে ঢাকায় ফেরার কোন টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। বুঝতে পেরেছেন, এই যাওয়ার চরম ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার পরও যাচ্ছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চরম ঝুঁকি নিয়েই নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষ

আপলোড টাইম : ০৯:২৯:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ঈদের ছুটির পরদিন থেকে আবারো কঠোর লকডাউনের ঘোষণা রয়েছে। ছুটিতে বাড়ি গিয়ে মানুষ কিভাবে আবার শহরে ফিরবে এর কোনোই নিশ্চয়তা নেই। রয়েছে করোনা সংক্রমণের চরম ঝুঁকি। এ অবস্থায়ও তিল ধারণের ঠাঁই নেই বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল, কমলপুর রেলস্টেশনে। দিশেহারা হয়ে মানুষ ছুটছে গ্রামে। যারা বাস-ট্রেন আর লঞ্চের টিকিট পাচ্ছেন না, তারা বিকল্পভাবে ঘরে ফিরছেন। কখনো হেঁটে, কখনো রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা বা অন্য কোনো বাহনে চড়ে ছুটছেন গ্রামের উদ্দেশে। অনেকেই বলেছেন, তারা স্বজনদের সাথে ঈদটা কাটাতে বাড়ি যাচ্ছেন। ঝুঁকি হলেও যেতে হবে। তাদের বাবা-মা, ভাইবোন, স্ত্রী-সন্তান গ্রামে থাকেন। আগামীকাল ঈদুল আজহা। সরকারিভাবে আজ থেকে অফিস-আদালত বন্ধ। বন্ধ গার্মেন্ট কারখানাও। যে কারণে শেষ মুহূর্তে শহর ছাড়ছে মানুষ। ঘরমুখো মানুষের চাপে গতকাল সোমবার ঈদের এক দিন আগে ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে প্রচণ্ড যানজট দেখা গেছে। রাজধানী থেকে বের হওয়ার মুখগুলোতে প্রচণ্ড যানজট।
রাজধানীর বনানী হয়ে বিমানবন্দর এলাকা দিয়ে যেসব গাড়ি টঙ্গী ও গাজীপুরে প্রবেশ করছে সেসব গাড়ির যাত্রীদের পোহাতে হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এই সড়কে সকাল ৮টা থেকেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় গাড়িতে বসে কাটাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এ যানজট দেখা দিয়েছে। বিমানবন্দরের এ যানজটের প্রভাব পড়ে কুড়িল-বিশ্ব রোড ও প্রগতি সরণির রাস্তায়ও। সকাল থেকে প্রগতি সরণি এলাকায় হালকা যানজট সৃষ্টি হয়; যা বেলা বাড়ার সাথে সাথে তীব্র যানজটে রূপ নেয়। যানজট দেখা গেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ ও পোস্তগোলা এলাকায়ও। এসব রাস্তায় ভোর থেকেই তীব্র যানজট লক্ষ করা গেছে; যা দিনভরই ছিল। গাবতলী টার্মিনালে যেতেও মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। শ্যামলী থেকে ছিল তীব্র জট। আর গরুর হাটের কারণে গাবতলী টার্মিনাল থেকে বের হতেই যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ দিকে লকডাউনের কারণে আগের মতো অগ্রিম টিকিট দেয়া না হলেও টিকিট পেতে মানুষের ভোগান্তি রয়েছে চরমে। গাড়িগুলোতে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্দেশনা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানা হলেও মানা হচ্ছে না ভাড়ার বিষয়ের নির্দেশনা। শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির অনুমতি থাকলেও বাসগুলোতে দ্বিগুণ, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সায়েদাবাদ থেকে ঝালকাঠির রাজাপুরের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে সাড়ে চার শ’ টাকা। লকডাউনের কারণে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা ও শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া আদায়ের কথা থাকলেও এখন যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১১ শ’ টাকা। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এই ভাড়া সাড়ে ছয় শ’ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। গুলিস্তান থেকে মাওয়ার স্বাভাবিক ভাড়া ৭০ টাকা। বিধিনিষেধের কারণে সেই ভাড়া জনপ্রতি ৬০ ভাগ বৃদ্ধির কথা। কিন্তু ভাড়া আদায় করা হচ্ছে জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একাধিক যাত্রী বলেছেন, তারা ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি যাচ্ছেন। ছুটি শেষ হতেই ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরু। সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনেও এই ঘরে ফেরা মানুষগুলো আর স্বাভাবিকভাবে ঢাকায় ফিরতে পারবেন না। আবু বকর নামের এক যাত্রী গতকাল সায়েদাবাদ এলাকায় জানান, ঈদের রাতেই হয়তো বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে হবে। যেভাবেই হোক ঢাকায় আসতে হবে। জামিল নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ২২ জুলাইয়ে ঢাকায় ফেরার কোন টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। বুঝতে পেরেছেন, এই যাওয়ার চরম ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার পরও যাচ্ছেন।