ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চক্রে দুই দেশের ৫০ জন সদস্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১
  • / ৫০ বার পড়া হয়েছে

টিকটক হৃদয়ের হাত ধরে অর্ধশত নারী পাচার
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ভারতে পাচার হওয়া তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারী পাচারচক্রের অন্যতম হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফিসহ পাচারচক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। টিকটক মডেল বানানো, চাকরির প্রলোভনসহ নানা ফাঁদে ফেলে দুই বছরে টিকটক হৃদয় বাবুর মাধ্যমে অন্তত ৫০ নারীকে পাচার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা এসব জানান। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন রাফির সহযোগী সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদা (৪৬), ইসমাইল সরদার (৩৮) ও আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ (২৬)।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নারী পাচারচক্রের মূলহোতা হলো আশরাফুল ইসলাম রাফি। গ্রেফতার অন্যরা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। রাফির অন্যতম নারী সরবরাহকারী হলো ভারতে আটক টিকটক হৃদয় বাবু। রাফির আরও সরবরাহকারী রয়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দুই বছর আগে বস রাফির সঙ্গে হৃদয় বাবুর পরিচয় হয়। এ চক্রে দুই দেশের অন্তত ৫০ জন রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন শহরে এ চক্রের গোপন আস্তানা রয়েছে। এসব আস্তানাকে তারা সেফ হোম বলে অভিহিত করে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করার কারণ হিসাবে রাফি র‌্যাবকে জানায়, অন্য দুই ভুক্তভোগীকে ভারত থেকে দেশে পালিয়ে আসতে ওই তরুণী সহযোগিতা করেছিলেন। এ কারণে তার ওপর নির্যাতন করা হয়। তাকে বলা হয়, তিনি পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে ভিডিওটি করে তার স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে টিকটক হৃদয় বাবু সম্পর্কে বলা হয়, অনলাইনে টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে তরুণীদের টিকটক মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত করাত। পরে তাদের পাশের দেশসহ উন্নত দেশে মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করত। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করতে তাদের পাশের দেশে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে পাচারের পর তাদের বিভিন্ন নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে অশালীন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করত।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ভুক্তভোগী তরুণীদের বৈধ ও অবৈধ পথে ভারতে নেওয়া হতো। পাচারকারীরা কয়েকটি ধাপে পাচারের কাজটি সম্পন্ন করত। প্রথমত, ভুক্তভোগীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখান থেকে সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে ভারতে পাঠানো হতো। এরপর ভারতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হতো। বেঙ্গালুরু পৌঁছানোর পর রাফি তাদের গ্রহণ করত। বিভিন্ন গোপন আস্তানায় রেখে অমানবিক নির্যাতন ও মাদকসেবন করানো হতো ভুক্তভোগীদের। এভাবে তাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো। পাচারের শিকার তরুণীদের ১০/১৫ দিনের জন্য বিভিন্ন খদ্দেরের কাছে সরবরাহ করা হতো।
রাফি সম্পর্কে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, রাফি একসময় পাচার হওয়া নারীদের খদ্দেরের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত। এজন্য ভারতের এজেন্টরা তাকে খদ্দেরপ্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা কমিশন দিত। কখনো কখনো সে নিজেই পাচারের শিকার নারীদের বিক্রির সুযোগ পেত। একপর্যায়ে সে নিজেই পাচারকারী চক্রের ‘বস’ হয়ে ওঠে। এ কাজ করতে গিয়ে সে তামিল ভাষা রপ্ত করে। অষ্টম শ্রেণি পাশ রাফি আট বছর ধরে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়া-আসা করে। সেখানে রাফি ট্যাক্সি চালানো, রিসোর্ট কর্মচারী এবং কাপড়ের ব্যবসাও করেছে। গ্রেফতার অন্য তিনজন সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, ম্যাডাম সাহিদার দুই মেয়ে সোনিয়া ও তানিয়া এ চক্রের সক্রিয় সদস্য। সোনিয়া ও তানিয়া এখন বেঙ্গালুরুতে অবস্থান করছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নির্যাতনকারী নারী তানিয়া। সাহিদা বাংলাদেশে একটি গোপন আস্তানার নিয়ন্ত্রক। তিনি ১০ বছর ধরে নারী পাচার করছেন। গ্রেফতার ইসমাইল ও আব্দুর রহমান দুজনই রাফির বিশেষ সহযোগী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চক্রে দুই দেশের ৫০ জন সদস্য

আপলোড টাইম : ১০:৫৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১

টিকটক হৃদয়ের হাত ধরে অর্ধশত নারী পাচার
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ভারতে পাচার হওয়া তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারী পাচারচক্রের অন্যতম হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফিসহ পাচারচক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। টিকটক মডেল বানানো, চাকরির প্রলোভনসহ নানা ফাঁদে ফেলে দুই বছরে টিকটক হৃদয় বাবুর মাধ্যমে অন্তত ৫০ নারীকে পাচার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা এসব জানান। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন রাফির সহযোগী সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদা (৪৬), ইসমাইল সরদার (৩৮) ও আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ (২৬)।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নারী পাচারচক্রের মূলহোতা হলো আশরাফুল ইসলাম রাফি। গ্রেফতার অন্যরা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। রাফির অন্যতম নারী সরবরাহকারী হলো ভারতে আটক টিকটক হৃদয় বাবু। রাফির আরও সরবরাহকারী রয়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দুই বছর আগে বস রাফির সঙ্গে হৃদয় বাবুর পরিচয় হয়। এ চক্রে দুই দেশের অন্তত ৫০ জন রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন শহরে এ চক্রের গোপন আস্তানা রয়েছে। এসব আস্তানাকে তারা সেফ হোম বলে অভিহিত করে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করার কারণ হিসাবে রাফি র‌্যাবকে জানায়, অন্য দুই ভুক্তভোগীকে ভারত থেকে দেশে পালিয়ে আসতে ওই তরুণী সহযোগিতা করেছিলেন। এ কারণে তার ওপর নির্যাতন করা হয়। তাকে বলা হয়, তিনি পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে ভিডিওটি করে তার স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে টিকটক হৃদয় বাবু সম্পর্কে বলা হয়, অনলাইনে টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে তরুণীদের টিকটক মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত করাত। পরে তাদের পাশের দেশসহ উন্নত দেশে মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করত। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করতে তাদের পাশের দেশে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে পাচারের পর তাদের বিভিন্ন নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে অশালীন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করত।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ভুক্তভোগী তরুণীদের বৈধ ও অবৈধ পথে ভারতে নেওয়া হতো। পাচারকারীরা কয়েকটি ধাপে পাচারের কাজটি সম্পন্ন করত। প্রথমত, ভুক্তভোগীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখান থেকে সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে ভারতে পাঠানো হতো। এরপর ভারতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া হতো। বেঙ্গালুরু পৌঁছানোর পর রাফি তাদের গ্রহণ করত। বিভিন্ন গোপন আস্তানায় রেখে অমানবিক নির্যাতন ও মাদকসেবন করানো হতো ভুক্তভোগীদের। এভাবে তাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো। পাচারের শিকার তরুণীদের ১০/১৫ দিনের জন্য বিভিন্ন খদ্দেরের কাছে সরবরাহ করা হতো।
রাফি সম্পর্কে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, রাফি একসময় পাচার হওয়া নারীদের খদ্দেরের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত। এজন্য ভারতের এজেন্টরা তাকে খদ্দেরপ্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা কমিশন দিত। কখনো কখনো সে নিজেই পাচারের শিকার নারীদের বিক্রির সুযোগ পেত। একপর্যায়ে সে নিজেই পাচারকারী চক্রের ‘বস’ হয়ে ওঠে। এ কাজ করতে গিয়ে সে তামিল ভাষা রপ্ত করে। অষ্টম শ্রেণি পাশ রাফি আট বছর ধরে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়া-আসা করে। সেখানে রাফি ট্যাক্সি চালানো, রিসোর্ট কর্মচারী এবং কাপড়ের ব্যবসাও করেছে। গ্রেফতার অন্য তিনজন সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, ম্যাডাম সাহিদার দুই মেয়ে সোনিয়া ও তানিয়া এ চক্রের সক্রিয় সদস্য। সোনিয়া ও তানিয়া এখন বেঙ্গালুরুতে অবস্থান করছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নির্যাতনকারী নারী তানিয়া। সাহিদা বাংলাদেশে একটি গোপন আস্তানার নিয়ন্ত্রক। তিনি ১০ বছর ধরে নারী পাচার করছেন। গ্রেফতার ইসমাইল ও আব্দুর রহমান দুজনই রাফির বিশেষ সহযোগী।