ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এলো বাপ্পী ও শামীমের নানা কু-কীর্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
  • / ৪৪৯ বার পড়া হয়েছে

দশম শ্রেণির দুই ছাত্রের ফেসবুকে ডাক্তার পরিচয়ে একাধিক তরুণী ও গৃহবধূর সঙ্গে প্রতারণা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেসবুকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের একাধিক তরুণী ও গৃহবধূকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ছবির আদান-প্রদান এবং পরে অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভরি ভরি সোনার গয়না ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুই স্কুলছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া স্কুলছাত্ররা হলো- কুড়ুলগাছি গ্রামের লাল মোহাম্মদ পল্টুর ছেলে প্রতারণার মাস্টার মাইন্ড ডাক্তার পরিচয় দেওয়া মোস্তাইন আহম্মেদ বাপ্পী (১৮)। সে একই এলাকার দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র। গ্রেপ্তার হওয়া অপর জন হলো একই এলাকার সফিউল হোসেনের ছেলে তাঁর সহযোগী শামীম হোসেন (১৭)। সে কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
জানা যায়, প্রতারক বাপ্পী তার এক বন্ধুর মারফত জানতে পারে, মেহেরপুর জেলায় এক তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরণের প্রতারণার শিকার হয়ে বেশ কিছু টাকা-পয়সা খুইয়েছেন। ওই ঘটনা থেকেই বাপ্পী প্রতারণার ফাঁদ পাতা শুরু করে। সোনার গয়না ও টাকা-পয়সা নেওয়ার জন্য শামীমকে সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নেই সে। দুই-তিন মাস পূর্বে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মাঝের পাড়ার এক তরুণীকে ফাঁদে ফেলে বাপ্পী। ফেসবুকে এডিট করে সুন্দর ছবি দিয়ে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। সুন্দর কথা-বার্তার মাধ্যমে ওই তরুণীর বিশ্বাস অর্জন করে শুরু হয় বিবস্ত্র ছবি চাওয়া। ডাক্তার ছেলে হাত ছাড়া হওয়ার ভয়ে একটা সময় ওই ধরণের বিবস্ত্র ছবি দিয়েই ফাঁদে পড়ে মাঝের পাড়ার ওই তরুণী। পরে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে কিছু টাকা-পয়সাসহ দুটি মোবাইলের সিম কার্ড চায় প্রতারক বাপ্পী। পরে ওই তরুণী তার বড় ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা দুটি সিম দেয় বাপ্পাীকে।
নতুন দুটি সিম হাতে পেয়ে ফেসবুকে নতুন আইডি খুলে তার দ্বিতীয় শিকার হয় চুয়াডাঙ্গা পলাশ পাড়ার এক কলেজছাত্রী। ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে ডাক্তার পরিচয়ে শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্ক গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই কলেজছাত্রীর কাছেও বাপ্পী বিবস্ত্র ছবি চায়। তার ছবি পেয়ে তাকেও ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় দুই-তিন ভরি সোনার গয়না। পরে আবার তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে প্রতারক বাপ্পী। ওই কলেজছাত্রীর পরিবার ঘটনাটি জানতে পেরে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে মাঠে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে সিমের মলিক মাঝের পাড়ার ওই তরুণীর ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, সিম দুটি তিনি তাঁর বোনকে দিয়েছেন। পরে তাঁর বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে পুলিশ। এদিকে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে সঙ্গে মাঝের পাড়ার আর এক গৃহবধূকে ফাঁদে ফেলে প্রতারক বাপ্পী। ওই গৃহবধূর কাছ থেকেও বিবস্ত্র ছবি নিয়ে তাকেও ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রথমে তাঁর কাছ থেকে কিছু টাকা নেয় বাপ্পী। পরে সোনার গয়ণা বিক্রি করে টাকা দিতে বললে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
একই ঘটনার দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর ও উপপরিদর্শক (এসআই) জসিমসহ সদর থানা পুলিশের একটি টিম তাদের তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে গতকাল দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রাম থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা ও সোনার গয়না নেওয়ার কথা স্বীকার করাসহ সোনার গয়নাগুলো গলিয়ে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করার কথাও তারা স্বীকার করেছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ আরও বলছে, মান সম্মানের ভয়ে এ ধরণের প্রতারণার শিকার অনেক পরিবারই অভিযোগ না করলেও এরা আরও অনেককেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অনুমান করছে তারা।
প্রেমের ফাঁদে ফেলে সোনার গয়না ও নগদ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত বাপ্পাী ও শামীমকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর বলেন, গত ২৪ জুন ও ৪ জুলাই এই প্রতারণার বিষয়ে দুটি অভিযোগ আসে সদর থানায়। প্রথম অভিযোগ আসার পর থকেই প্রতারক চক্রটিকে আটক করতে মাঠে নামে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাদেরকে আটক করা সম্ভব হলেও হাতিয়ে নেওয়া টাকা ও সোনার গয়নাগুলো উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এলো বাপ্পী ও শামীমের নানা কু-কীর্তি

আপলোড টাইম : ০৯:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০

দশম শ্রেণির দুই ছাত্রের ফেসবুকে ডাক্তার পরিচয়ে একাধিক তরুণী ও গৃহবধূর সঙ্গে প্রতারণা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেসবুকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের একাধিক তরুণী ও গৃহবধূকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ছবির আদান-প্রদান এবং পরে অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভরি ভরি সোনার গয়না ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুই স্কুলছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া স্কুলছাত্ররা হলো- কুড়ুলগাছি গ্রামের লাল মোহাম্মদ পল্টুর ছেলে প্রতারণার মাস্টার মাইন্ড ডাক্তার পরিচয় দেওয়া মোস্তাইন আহম্মেদ বাপ্পী (১৮)। সে একই এলাকার দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র। গ্রেপ্তার হওয়া অপর জন হলো একই এলাকার সফিউল হোসেনের ছেলে তাঁর সহযোগী শামীম হোসেন (১৭)। সে কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
জানা যায়, প্রতারক বাপ্পী তার এক বন্ধুর মারফত জানতে পারে, মেহেরপুর জেলায় এক তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরণের প্রতারণার শিকার হয়ে বেশ কিছু টাকা-পয়সা খুইয়েছেন। ওই ঘটনা থেকেই বাপ্পী প্রতারণার ফাঁদ পাতা শুরু করে। সোনার গয়না ও টাকা-পয়সা নেওয়ার জন্য শামীমকে সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নেই সে। দুই-তিন মাস পূর্বে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মাঝের পাড়ার এক তরুণীকে ফাঁদে ফেলে বাপ্পী। ফেসবুকে এডিট করে সুন্দর ছবি দিয়ে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। সুন্দর কথা-বার্তার মাধ্যমে ওই তরুণীর বিশ্বাস অর্জন করে শুরু হয় বিবস্ত্র ছবি চাওয়া। ডাক্তার ছেলে হাত ছাড়া হওয়ার ভয়ে একটা সময় ওই ধরণের বিবস্ত্র ছবি দিয়েই ফাঁদে পড়ে মাঝের পাড়ার ওই তরুণী। পরে ওই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে কিছু টাকা-পয়সাসহ দুটি মোবাইলের সিম কার্ড চায় প্রতারক বাপ্পী। পরে ওই তরুণী তার বড় ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা দুটি সিম দেয় বাপ্পাীকে।
নতুন দুটি সিম হাতে পেয়ে ফেসবুকে নতুন আইডি খুলে তার দ্বিতীয় শিকার হয় চুয়াডাঙ্গা পলাশ পাড়ার এক কলেজছাত্রী। ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে ডাক্তার পরিচয়ে শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্ক গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই কলেজছাত্রীর কাছেও বাপ্পী বিবস্ত্র ছবি চায়। তার ছবি পেয়ে তাকেও ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় দুই-তিন ভরি সোনার গয়না। পরে আবার তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে প্রতারক বাপ্পী। ওই কলেজছাত্রীর পরিবার ঘটনাটি জানতে পেরে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে মাঠে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে সিমের মলিক মাঝের পাড়ার ওই তরুণীর ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, সিম দুটি তিনি তাঁর বোনকে দিয়েছেন। পরে তাঁর বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে পুলিশ। এদিকে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে সঙ্গে মাঝের পাড়ার আর এক গৃহবধূকে ফাঁদে ফেলে প্রতারক বাপ্পী। ওই গৃহবধূর কাছ থেকেও বিবস্ত্র ছবি নিয়ে তাকেও ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রথমে তাঁর কাছ থেকে কিছু টাকা নেয় বাপ্পী। পরে সোনার গয়ণা বিক্রি করে টাকা দিতে বললে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
একই ঘটনার দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর ও উপপরিদর্শক (এসআই) জসিমসহ সদর থানা পুলিশের একটি টিম তাদের তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে গতকাল দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রাম থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা ও সোনার গয়না নেওয়ার কথা স্বীকার করাসহ সোনার গয়নাগুলো গলিয়ে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করার কথাও তারা স্বীকার করেছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ আরও বলছে, মান সম্মানের ভয়ে এ ধরণের প্রতারণার শিকার অনেক পরিবারই অভিযোগ না করলেও এরা আরও অনেককেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অনুমান করছে তারা।
প্রেমের ফাঁদে ফেলে সোনার গয়না ও নগদ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত বাপ্পাী ও শামীমকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর বলেন, গত ২৪ জুন ও ৪ জুলাই এই প্রতারণার বিষয়ে দুটি অভিযোগ আসে সদর থানায়। প্রথম অভিযোগ আসার পর থকেই প্রতারক চক্রটিকে আটক করতে মাঠে নামে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাদেরকে আটক করা সম্ভব হলেও হাতিয়ে নেওয়া টাকা ও সোনার গয়নাগুলো উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।