ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গুনাহ মাফ হয় যেসব আমলে

ধর্ম প্রতিবেদন:
  • আপলোড টাইম : ১০:২৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে

মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই অপরাধপ্রবণ। তাই প্রায়ই নানা গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছু এমন গুনাহ থাকে যা তওবা ছাড়া মাফ হয় না। আর কিছু এমন থাকে যা তওবা-ইস্তিগফার ছাড়া বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমেও মাফ হয়ে যায়। নিচে গুনাহ মাফের এমন ফজিলতপূর্ণ কিছু আমলের বিবরণ দেওয়া হলো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ: রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কী মনে হয়? কারও বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কিরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজি তখন বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার পাপগুলো মিটিয়ে দেন।’ বুখারি, মুসলিম। নামাজের জন্য মসজিদে গমন: রসুল (সা.) বলেন, ‘জামাতের নামাজ ঘরের বা বাজারের নামাজ অপেক্ষা ২৫ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ বান্দা যখন উত্তমরূপে অজু করে এবং একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গুনাহ মিটিয়ে দেন।’ বুখারি। নবীজির ওপর দরুদ পাঠ: রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল করবেন। তার ১০টি গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।’ নাসায়ি। সালাম দেওয়া: রসুল (সা.) বলেন, ‘যেসব আমলের মাধ্যমে মাগফিরাত লাভ হয় এর অন্যতম প্রধান হলো বেশি বেশি সালাম দেওয়া এবং ভালো কথা বলা।’ মুজামে কাবির। বিপদে ধৈর্য ধারণ: একবার নবীজি প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবীজির কাছে হাজির হলেন। একপর্যায়ে নবীজি বললেন, ‘মুমিন যখন কোনো বিপদ বা কষ্টে নিপতিত হয় তখন আল্লাহ এর বিনিময়ে তার গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন, মাফ করে দেন যেমন শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ে।’ মুসলিম। সৃষ্টির প্রতি দয়া: এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘একবার এক পাপিষ্ঠা নারী পথ দিয়ে যাচ্ছিল। সে একটি কুকুর দেখল, পিপাসায় তার জিব বেরিয়ে এসেছে। মরণপ্রায় অবস্থা। কুকুরটি কুয়ার পাশ দিয়ে ঘুরছিল। কুকুরটির এ অবস্থা দেখে তার দয়া হলো। সে নিজের পায়ের চামড়ার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বেঁধে কুয়া থেকে পানি ওঠাল এবং কুকুরকে পান করাল। তার এ কাজের কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।’ বুখারি। সদাকা করা: আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য আরও ভালো এবং তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্যক অবহিত।’ সুরা বাকারা। ঋণগ্রহীতাকে ক্ষমা বা ছাড় দেওয়া: রসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি লোকদের ঋণ দিত বা বাকিতে পণ্য দিত। সে তার খাদেম বা কর্মচারীকে বলত যদি ব্যক্তি অসচ্ছল হয় তাহলে ছাড় দিও বা মাফ করে দিও; আশা করা যায় এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। এরপর যখন সে ইন্তেকাল করল এবং আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করল আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ বুখারি, মুসলিম। লেনদেনে সহজতা অবলম্বন: রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ পূর্ববর্তী উম্মতের এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন; কারণ সে বেচাকেনার সময় সহজতা অবলম্বন করত। ঋণ আদায়ের সময় সহজতা অবলম্বন করত। অন্যের কাছে ঋণ তলবের সময়ও সহজতা অবলম্বন করত।’ তিরমিজি। ক্ষমা করা: রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা অন্যের প্রতি দয়া কর, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। তোমরা অন্যকে ক্ষমা কর, তোমাদের ক্ষমা করা হবে।’ মুসনাদে আহমাদ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গুনাহ মাফ হয় যেসব আমলে

আপলোড টাইম : ১০:২৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই অপরাধপ্রবণ। তাই প্রায়ই নানা গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছু এমন গুনাহ থাকে যা তওবা ছাড়া মাফ হয় না। আর কিছু এমন থাকে যা তওবা-ইস্তিগফার ছাড়া বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমেও মাফ হয়ে যায়। নিচে গুনাহ মাফের এমন ফজিলতপূর্ণ কিছু আমলের বিবরণ দেওয়া হলো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ: রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কী মনে হয়? কারও বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কিরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজি তখন বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার পাপগুলো মিটিয়ে দেন।’ বুখারি, মুসলিম। নামাজের জন্য মসজিদে গমন: রসুল (সা.) বলেন, ‘জামাতের নামাজ ঘরের বা বাজারের নামাজ অপেক্ষা ২৫ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ বান্দা যখন উত্তমরূপে অজু করে এবং একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গুনাহ মিটিয়ে দেন।’ বুখারি। নবীজির ওপর দরুদ পাঠ: রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল করবেন। তার ১০টি গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।’ নাসায়ি। সালাম দেওয়া: রসুল (সা.) বলেন, ‘যেসব আমলের মাধ্যমে মাগফিরাত লাভ হয় এর অন্যতম প্রধান হলো বেশি বেশি সালাম দেওয়া এবং ভালো কথা বলা।’ মুজামে কাবির। বিপদে ধৈর্য ধারণ: একবার নবীজি প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবীজির কাছে হাজির হলেন। একপর্যায়ে নবীজি বললেন, ‘মুমিন যখন কোনো বিপদ বা কষ্টে নিপতিত হয় তখন আল্লাহ এর বিনিময়ে তার গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন, মাফ করে দেন যেমন শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ে।’ মুসলিম। সৃষ্টির প্রতি দয়া: এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘একবার এক পাপিষ্ঠা নারী পথ দিয়ে যাচ্ছিল। সে একটি কুকুর দেখল, পিপাসায় তার জিব বেরিয়ে এসেছে। মরণপ্রায় অবস্থা। কুকুরটি কুয়ার পাশ দিয়ে ঘুরছিল। কুকুরটির এ অবস্থা দেখে তার দয়া হলো। সে নিজের পায়ের চামড়ার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বেঁধে কুয়া থেকে পানি ওঠাল এবং কুকুরকে পান করাল। তার এ কাজের কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।’ বুখারি। সদাকা করা: আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য আরও ভালো এবং তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্যক অবহিত।’ সুরা বাকারা। ঋণগ্রহীতাকে ক্ষমা বা ছাড় দেওয়া: রসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি লোকদের ঋণ দিত বা বাকিতে পণ্য দিত। সে তার খাদেম বা কর্মচারীকে বলত যদি ব্যক্তি অসচ্ছল হয় তাহলে ছাড় দিও বা মাফ করে দিও; আশা করা যায় এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। এরপর যখন সে ইন্তেকাল করল এবং আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করল আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ বুখারি, মুসলিম। লেনদেনে সহজতা অবলম্বন: রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ পূর্ববর্তী উম্মতের এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন; কারণ সে বেচাকেনার সময় সহজতা অবলম্বন করত। ঋণ আদায়ের সময় সহজতা অবলম্বন করত। অন্যের কাছে ঋণ তলবের সময়ও সহজতা অবলম্বন করত।’ তিরমিজি। ক্ষমা করা: রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা অন্যের প্রতি দয়া কর, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। তোমরা অন্যকে ক্ষমা কর, তোমাদের ক্ষমা করা হবে।’ মুসনাদে আহমাদ।