ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে হতাশায় ভর্তিচ্ছুরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৮৪ বার পড়া হয়েছে

ধাপে ধাপে নয়, সবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবি, মেধা যাচাই না হলে বঞ্চিতদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সাড়ে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। এর আগের বছর ২০১৯ সালে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সোয়া ১৩ লাখের বেশি। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। ২০২০ সালের উত্তীর্ণদের সঙ্গে ভর্তি প্রতিযোগিতায় যুক্ত হবে আগের বছরে (২০১৯) ভর্তি হতে পারেননি এমন শিক্ষার্থীরাও অথবা ভালো সাবজেক্ট পাননি- এমন শিক্ষার্থীরাও। আটোপাসের কারণে এমনিতেই এবারের ভর্তি প্রতিযোগিতায় চাপ পড়বে অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিগত বছরের (২০১৯) কাঙ্ক্ষিত সাবজেক্ট না পাওয়ারাও। এবার জিপিএ ৫ পাওয়া এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন কাঙ্ক্ষিত মেডিকেল ও বুয়েটে অথবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না বলে আসন পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ২০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যে নিয়ম করেছে, এতে মেধা যাচাইয়ের জন্য সবাই সুযোগ পাবে না। ভর্তির জন্য অবশ্যই জিপিএ-৫ এর পাশাপাশি জিপিএ-৪ প্রাপ্ত সবাইকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। অন্যথায় গরিব মেধাবীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যয় করার সক্ষমতা তাদের নেই। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে মাত্র ১১০০’র মতো। আর সরকারি-বেসরকারি মিলে মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষায় আসন হচ্ছে ১২ হাজার ৭৪০টি। অপরদিকে দেশের ১৩টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার। এর বাইরে ছয়টি কৃষি এবং তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্য হচ্ছে ১০ হাজারের মতো। ফলে জিপিএ-৫ পাওয়া দেড় লক্ষাধিকের জন্যও আসন নেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। অপরদিকে, অটোপাসের কারণে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের চেয়ে জিপিএ-৪ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হচ্ছে চার লাখ ৯৯ হাজার ৭৪০ জন। এ জন্য জিপিএ-৪ পাওয়া শিক্ষার্থীদের হাতাশা অনেক বেশি। কারণ, তাদের অনেকেরই ধারণা পরীক্ষা হলে তারা অবশ্যই জিপিএ-৫ পেতেন। পরীক্ষা প্রস্তুতি ভালো থাকলেও অটোপাসের খড়গে তারা বঞ্চিত হয়েছেন।
জিপিএ- ৪ পাওয়া শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের হতাশার কারণ হচ্ছে, সম্প্রতি ২৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভর্তির নিয়ম-কানুন। গত বৃহস্পতিবার সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির জন্য যে নীতিমালা নির্ধারণ করেছেন, তা হলো বিজ্ঞান শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৭, বাণিজ্য শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৬.৫ এবং মানবিক শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৬ থাকতে হবে। এ ছাড়া কয়েক ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় বসতে হবে ভর্তিচ্ছুদের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রথম ধাপের বাছাই। এই বাছাইতে বাদ পড়বেন জিপিএ-৪ পাওয়াদের সবাই। অথচ আটোপাসের কারণে তাদের অনেকে মনে করছেন, তারা জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। জানা গেছে, গুচ্ছভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে যতজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, মেধার ভিত্তিতে ততজন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত করা হবে। ওই শিক্ষার্থীরাই শুধু লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। সে কারণে মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এইচএসসির ফলাফলকে মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করাটা সঠিক ও যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মনে করেন ভর্তিচ্ছুরা।
ভর্তিচ্ছু জিপিএ-৫ না পাওয়া অনেকে সঙ্গে আলাপকালে ২০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছভর্তির জন্য আবেদনকারী সবার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দাবি করেছেন। তাদের মতে, তবেই মেধা যাচাই হবে। অন্যথায় তারা সবাই বঞ্চিত হবে এবং অনেকের শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটতে পারে।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা সীমিত। আমরা যেভাবে পরীক্ষা নেব, এতে বিজ্ঞান বিভাগের সব শিক্ষার্থী হয়ত পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে না। আমরা আগের ভর্তি পরীক্ষায় দেখেছি, জিপিএ-৫ ছাড়া সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগও পায় না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মিলিয়ে কীভাবে সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসানো যায়, সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। ‘

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে হতাশায় ভর্তিচ্ছুরা

আপলোড টাইম : ১১:০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১

ধাপে ধাপে নয়, সবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবি, মেধা যাচাই না হলে বঞ্চিতদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সাড়ে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। এর আগের বছর ২০১৯ সালে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সোয়া ১৩ লাখের বেশি। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। ২০২০ সালের উত্তীর্ণদের সঙ্গে ভর্তি প্রতিযোগিতায় যুক্ত হবে আগের বছরে (২০১৯) ভর্তি হতে পারেননি এমন শিক্ষার্থীরাও অথবা ভালো সাবজেক্ট পাননি- এমন শিক্ষার্থীরাও। আটোপাসের কারণে এমনিতেই এবারের ভর্তি প্রতিযোগিতায় চাপ পড়বে অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিগত বছরের (২০১৯) কাঙ্ক্ষিত সাবজেক্ট না পাওয়ারাও। এবার জিপিএ ৫ পাওয়া এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন কাঙ্ক্ষিত মেডিকেল ও বুয়েটে অথবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না বলে আসন পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ২০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যে নিয়ম করেছে, এতে মেধা যাচাইয়ের জন্য সবাই সুযোগ পাবে না। ভর্তির জন্য অবশ্যই জিপিএ-৫ এর পাশাপাশি জিপিএ-৪ প্রাপ্ত সবাইকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। অন্যথায় গরিব মেধাবীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যয় করার সক্ষমতা তাদের নেই। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে মাত্র ১১০০’র মতো। আর সরকারি-বেসরকারি মিলে মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষায় আসন হচ্ছে ১২ হাজার ৭৪০টি। অপরদিকে দেশের ১৩টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার। এর বাইরে ছয়টি কৃষি এবং তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্য হচ্ছে ১০ হাজারের মতো। ফলে জিপিএ-৫ পাওয়া দেড় লক্ষাধিকের জন্যও আসন নেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। অপরদিকে, অটোপাসের কারণে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের চেয়ে জিপিএ-৪ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হচ্ছে চার লাখ ৯৯ হাজার ৭৪০ জন। এ জন্য জিপিএ-৪ পাওয়া শিক্ষার্থীদের হাতাশা অনেক বেশি। কারণ, তাদের অনেকেরই ধারণা পরীক্ষা হলে তারা অবশ্যই জিপিএ-৫ পেতেন। পরীক্ষা প্রস্তুতি ভালো থাকলেও অটোপাসের খড়গে তারা বঞ্চিত হয়েছেন।
জিপিএ- ৪ পাওয়া শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের হতাশার কারণ হচ্ছে, সম্প্রতি ২৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভর্তির নিয়ম-কানুন। গত বৃহস্পতিবার সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির জন্য যে নীতিমালা নির্ধারণ করেছেন, তা হলো বিজ্ঞান শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৭, বাণিজ্য শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৬.৫ এবং মানবিক শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৬ থাকতে হবে। এ ছাড়া কয়েক ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় বসতে হবে ভর্তিচ্ছুদের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রথম ধাপের বাছাই। এই বাছাইতে বাদ পড়বেন জিপিএ-৪ পাওয়াদের সবাই। অথচ আটোপাসের কারণে তাদের অনেকে মনে করছেন, তারা জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। জানা গেছে, গুচ্ছভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে যতজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, মেধার ভিত্তিতে ততজন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত করা হবে। ওই শিক্ষার্থীরাই শুধু লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। সে কারণে মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এইচএসসির ফলাফলকে মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করাটা সঠিক ও যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মনে করেন ভর্তিচ্ছুরা।
ভর্তিচ্ছু জিপিএ-৫ না পাওয়া অনেকে সঙ্গে আলাপকালে ২০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছভর্তির জন্য আবেদনকারী সবার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দাবি করেছেন। তাদের মতে, তবেই মেধা যাচাই হবে। অন্যথায় তারা সবাই বঞ্চিত হবে এবং অনেকের শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটতে পারে।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা সীমিত। আমরা যেভাবে পরীক্ষা নেব, এতে বিজ্ঞান বিভাগের সব শিক্ষার্থী হয়ত পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে না। আমরা আগের ভর্তি পরীক্ষায় দেখেছি, জিপিএ-৫ ছাড়া সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগও পায় না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মিলিয়ে কীভাবে সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসানো যায়, সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। ‘