ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গালটেবিলে বক্তারা : সংখ্যালঘু নির্যাতনের পর প্রশাসন নীরব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭
  • / ৪০৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ স্বার্থের জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, হত্যা ও নির্যাতন করছে। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় এই সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এএলআরডি থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও উচ্ছেদের একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ১১টি ঘটনার বিশ্লেষণ করে বলা হয়, রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ স্বার্থের জন্য হামলা, হত্যা ও নির্যাতন করেছেন। প্রশাসন প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নীরব ভূমিকা পালন করে। এসব ঘটনার বিচার না হওয়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এক গোলটেবিলে ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ১১টি ঘটনার বিশ্লেষণ করে এ কথা বলা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব মানবাধিকার বনাম বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, গত পাঁচ দশকে আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী দেশান্তরিত হয়েছেন। সে হিসেবে গড়ে বছরে দেশ ছেড়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৬১২ জন। এ ছাড়া বলেন, দেশে ৫০টিরও বেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ‘আদিবাসী’ পরিচয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি মেলেনি। জনসংখ্যা ব্যুরোর হিসেব তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমছে। সত্তরের দশকে এ দেশে ২০ দশমিক ১ শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। ২০১১ সালে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তির অনেকগুলোর অগ্রগতি হলেও চুক্তির মূল বিষয় ভূমি অধিকারের অগ্রগতি নেই।’ বিচারহীনতার কথা উল্লেখ করে বলেন, শাস্তি যদি দৃশ্যমান না হয়, এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে আমরা প্রশংসিত হচ্ছি। কিন্তু সংখ্যালঘুদের বিতাড়নের চেষ্টা করে সেই দোষে দোষী হচ্ছি কি না।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের সময়ে এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটবে। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেছেন, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই নির্যাতন-বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা আরও বেশি শিকার। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত যে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন করতে হবে। বেসরকারি সংগঠন নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, মানবাধিকার দিবস ৩৬৫ দিনই পালন করতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে যারা দুর্বল, তাদের আরও কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ধরনের নির্যাতনে নারীরা আরও বেশি নির্যাতনের শিকার। আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। আরও বক্তব্য দেন সাংসদ উষাতন তালুকদার, অধ্যাপক স্বপন আদনান এবং হামলা ও নির্যাতনের শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

গালটেবিলে বক্তারা : সংখ্যালঘু নির্যাতনের পর প্রশাসন নীরব

আপলোড টাইম : ১১:৫৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ স্বার্থের জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, হত্যা ও নির্যাতন করছে। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় এই সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এএলআরডি থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও উচ্ছেদের একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ১১টি ঘটনার বিশ্লেষণ করে বলা হয়, রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ স্বার্থের জন্য হামলা, হত্যা ও নির্যাতন করেছেন। প্রশাসন প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নীরব ভূমিকা পালন করে। এসব ঘটনার বিচার না হওয়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এক গোলটেবিলে ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ১১টি ঘটনার বিশ্লেষণ করে এ কথা বলা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব মানবাধিকার বনাম বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, গত পাঁচ দশকে আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী দেশান্তরিত হয়েছেন। সে হিসেবে গড়ে বছরে দেশ ছেড়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৬১২ জন। এ ছাড়া বলেন, দেশে ৫০টিরও বেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ‘আদিবাসী’ পরিচয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি মেলেনি। জনসংখ্যা ব্যুরোর হিসেব তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমছে। সত্তরের দশকে এ দেশে ২০ দশমিক ১ শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। ২০১১ সালে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তির অনেকগুলোর অগ্রগতি হলেও চুক্তির মূল বিষয় ভূমি অধিকারের অগ্রগতি নেই।’ বিচারহীনতার কথা উল্লেখ করে বলেন, শাস্তি যদি দৃশ্যমান না হয়, এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে আমরা প্রশংসিত হচ্ছি। কিন্তু সংখ্যালঘুদের বিতাড়নের চেষ্টা করে সেই দোষে দোষী হচ্ছি কি না।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের সময়ে এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটবে। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেছেন, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই নির্যাতন-বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা আরও বেশি শিকার। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত যে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন করতে হবে। বেসরকারি সংগঠন নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, মানবাধিকার দিবস ৩৬৫ দিনই পালন করতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে যারা দুর্বল, তাদের আরও কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ধরনের নির্যাতনে নারীরা আরও বেশি নির্যাতনের শিকার। আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। আরও বক্তব্য দেন সাংসদ উষাতন তালুকদার, অধ্যাপক স্বপন আদনান এবং হামলা ও নির্যাতনের শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগী।